অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া! ঈদের লম্বা ছুটি শুরু হয়েছে। আজ তার দ্বিতীয় দিন। কাল মোটামুটি ছুটি কাটিয়েছি এবং আজকে সারাদিন হাম্বা হাটে ছিলাম। হাম্বা হাটে আমরা ৪ পরিবার গিয়েছিলাম।
আমার ছেলে, রুবাই কয়েকবছর ধরে হাটে যাচ্ছে। ওর একটা অভিজ্ঞতা হচ্ছে। গরুর সঙ্গে হেটে হেটে বাসায় ফেরার অভিজ্ঞতা আমাদের ছোট বেলা থেকে হয়েছে। ওরও সেটা হোক, এটা আমি চেয়েছি।
আজকে অনেক মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি বিস্মিত হয়েছি এক “ভদ্রলোকে”র অসহিষ্ণুতা দেখে। আমি যে লোকের কাছ থেকে গরু কিনেছি সেখানে বসেছিলাম অনেকক্ষণ। ঐ ভদ্রলোক এসে গরুর দাম জিজ্ঞাষা করলেন। শুনে টুনে তার মনে হল বেপারিরা বেশি টাকা হাকছে (সেটা তার মনে হতেই পারে)। কিন্তু বাজারে অনেক গরু কাজে তিনি জোরে জোরে বললেন, “আজ তো অনেক তেজ।
কাল যখন গরু বিক্রি করতে পারবে না, তখন তো বসে বসে কাঁদবে। একজনের জন্য তো পাচঁটা গরু আছে এই হাটে। “
এ পর্যন্ত ব্যাপারটা ঠিক আছে। শুনে পাবনার আতাইকুলা থেকে আসা মনসুর সর্দার স্বগোতোক্তির মতো করে বললো,” হ! কালকে কতোজন দড়ি কিনবে, কতোজন কিনবে খুটি। “ মনসুর সর্দারের এই কথা বলার কারণটা আমি জানি।
তিনি আতাইকুলা থেকে নিজের ৫টি গরু নিয়ে ঐ বাজারে এসেছেন। আমার সামনেই তার ৪টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। বাকীটারও অনেক খরিদ্দার ঘোরাঘুরি করছে। কাজে তার ধারণা কালকে গরু কমে যাবে। সেটাতে আমি কোন দোষের কিছু দেখি না।
কিন্তু এরপর ঐ ভদ্রলোক যা করলেন তা তুলনাবিহীন। তিনি মনসুর সর্দারকে তুই তোকারি করে গালি গালাজ করে এমন একটা অবস্থা তৈরি করলেন যে সবাই খুবই হতচকিত হয়ে গেল। তার বক্তব্য হলো, “আমি কি ধার করে কোরবান করবো নাকি? তোরা এতো বেশি দামি নিবি” ইত্যাদি ইত্যাদি। তাঁর সঙ্গের লোকেরা তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে গেল।
আমি খুব অবাক হয়ে দেখলাম কত অবলীলায় ঐ ভদ্রলোক ন্যুনতম সৌজন্য দেখালেন না মনসুর সর্দারের প্রতি।
কতো অবলীলায় তাঁকে তুই তোকারি করলেন। তার আশেপাশের লোকের একটু সাপোর্ট পেলে তিনি মনে হয় সর্দারকে মারতেন!!!
আমি প্রায় ৫ ঘন্টা হাটে ছিলাম। এর মধ্যে মাত্র পাচটি দলে মহিলা দেখেছি যারা কোরবানির পশু কিনতে এসেছেন! এমনকি বাবাদের সঙ্গে কেবল ছেলেরা এসেছে (আমি জানি আরো ২ বছর পরে বিদুষীকে আমার হাটে নিতে হবে) । তারমানে গরুর হাটে মহিলাদের উপস্থিতি এখনো সেরকম হয়নি।
কাচাবাজার আর পাকাবাজার করছি আমি ক্লাশ সেভেন এইট থেকে।
তখন চট্টগ্রামের চকবাজারে যেতাম। সেখানে কালেভদ্রে আমি মহিলাদের দেখেছি। এখন আমি বাজার করি কারওয়ান বাজার থেকে এবং আমি সেখানে, বিশেষ করে শুক্রবারে, গড়ে ২০% মহিলা দেখি, যারা বাজার করছেন, মিন্তির কাধে বাজার তুলে অবলীলায় নিজের বাসায় ফিরে যাচ্ছেন।
গরু নিয়ে আফতাবনগর থেকে হেটে মগবাজার পর্যন্ত এসেছি। তারপর আর পারিনি, রিকশায় উঠে পড়েছি।
রুবাই আর বিদুষী এখন গরু নিয়ে ব্যস্ত!!!
গতকাল ৪ নভেম্বর প্রথম আলোর জন্মদিন ছিল। সকালেই ৮৮ পৃষ্ঠার ঢাউস প্রথম আলো হাতে পেয়েছি। প্রতিটা বিশেষ সংখ্যায় প্রথম আলো একটি বিষয় অনেককে দিয়ে লেখানোর চেষ্টা করে। কালকের বিশেষ সংখ্যার বিষয় স্বপ্নের স্বদেশ । মোট ৪০ জন লেখক এই সংখ্যাটিতে লিখেছেন তাদের স্বপ্নের স্বদেশের নানা বিষয় নিয়ে (আমারও একটি লেখা সেখানে আছে, তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে )।
রাজনীতি, শিক্ষা, তরুন প্রজন্ম, তথ্য প্রযুক্তি , অর্থনীতি, কৃষি গণশিক্ষা, বই পড়া অর্থাৎ মোট ৪০টি বিষয়। আমি ছাড়া বাকী সব লেখকই ঋদ্ধ এবং অভিজ্ঞ। আমি একটু আগে হাতে কলমে লেখকদের গড় বয়স বের করার চেষ্টা করেছি। আমার রেজাল্ট হলো লেখকদের গড় বয়স হলো ৫৮.৮ বছর। এটির তাৎপর্য কী?
আমি এখন লেখাগুলো পড়ছি।
আমার মনে হয় যারা দেশ নিয়ে একটু ভাবে তাদের এই সংখ্যার সব লেখা পড়া দরকার। সেটা শুয়ে শুয়ে নয়। পারলে কাগজ কলম নিয়ে। কেন?
আমার কাছে মনে হচ্ছে - সংক্ষেপে দেশের বর্তমান অবস্থার বিশ্লেষন বোঝা এবং ভবিষ্যতের রাস্তা নির্মানে একটি ধারণা পাওয়া যাবে এখান থেকে। কারণ বেশিরভাগ লেখাতে বর্তমানের একটা নির্মোহ বিশ্লেষন পাওয়া যাবে (আমি অবশ্য এই লাইনে যাইনি)।
ইচ্ছে করলে বিভিন্ন সেক্টরের প্রধান দূর্বলতাগুলো বের করে ফেলা কঠিন হবে না। এগুলোর বেশিরভাগই আমাদের জানা। কারণ, আমাদের দেশে এমন সব চ্যালেঞ্জে আমাদের জান কয়লা হয়ে যায় সেগুলো অনেক দেশ এরই মধ্যে সমাধান করে ফেলেছে।
সে সঙ্গে আমরা যে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছি সেখানে যাওয়ার রাস্তাটারও একটি হদিশ পাওয়া যাবে। যেমন ধরা যাক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণা।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন আর গবেষণা হয় না। কারণ সেখানে উন্নতির শিখরে উঠতে গবেষণা করতে হয় না, রঙের তকমা লাগালে হয়। আমার প্রিয় মানুষদের একজন মোহাম্মদ আতাউল করিম কত অবলীলায় বলেছেন যে ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের কারণে এখন গবেষণা হচ্ছে না। কভ আশ্চর্য তাই না ! ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর সেখানে কাজ করতে আসেন সত্যেন বসু। ১৯২৪ সালে (নাকি তার কিছু পরে) আইনস্টাইনের সঙ্গে তার সংখ্যায়ন প্রকাশিত হয়।
এখন এই দুনিয়ার যতো বস্তু বিজ্ঞানীরা সেটিকে দুইট দলে ভাগ করেন। এই ভাগটা হয় বস্তুটির নানান দিক বিবেচনা করে তবে স্পিনের ব্যাপারটা মুখ্য। আমাদের সাধারণভাবে মনে হয় কোন একটি বস্তুর সবটুকু কীরকম জানতে হলে সেটির প্রতিসাম্য কেমন জানলে চলে। একটি রুবিক কিউবের একপৃষ্ঠ দেখলে বোঝা যায় বাকী পৃষ্ঠ গুলো কেমন। কাজে সর্বোচ্চ হতে পারে সে পুরো জিনিষটাকে একবার চোখের সামনে ঘুরিয়ে আনলে সেটির সবটুকু বোঝা যাবে।
কিন্তু এই দুনিয়ার এমন অনেক বস্তু আছে যা আপনার সামনে একবার ঘুরে আসলেও আপনি এরপুরোটা দেখবেন না, দুইবার, তিনবার ঘুরিয়ে দেখতে হবে!!! (যেমন ইলেকট্রন, দুইবার)। প্রথমোক্ত দলটিকে এখন সাধারণভাবে বোসন কনা বলা হয় সত্যেন বসুর নামে! সে বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ১১ জন শিক্ষক গড়ে একটি জার্নাল পেপার করেন। স্যার সেভাবে বলেন নি, কিন্তু ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যেহেতু বিশিষ্ট জার্নালে পেপার প্রকাশ করা যাচ্ছে না, সেহেতু নিজেরাই জার্নাল প্রকাশ করে ফেলছে যা কীনা অনিয়মিত এবং সে মাত্রায় আন্তর্জাতিকতা নেই!!! চুলা, কুপী আর আচার নিয়ে যে সব গবেষণা সংষ্থা ব্যস্ত থাকে তাদের জন্য স্যার অবশ্য একলাইন লিখেছেন।
একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা লেখাগুলো থেকে পাওয়া যাবে যার মর্মার্থ হলো ইচ্ছে করলে সাধারণ মানুষেরাই বিষয়গুলো পরিবর্তন করতে পারে।
স্যার অবশ্য বলেননি, গবেষণার জন্য যে টাকাটা লাগে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোথা থেকে পাবে? তার কী অবস্থা? এই প্রশ্নের জবাব অবশ্য আর একটি লেখা (এটা মূল পত্রিকায় ছাপা হয়েছে )তে পাওয়া যাবে।
রাজস্বনীতি নিয়ে ঐ লেখায় বলা হয়েছে চাকুরিজীবী ৩ লাখ টাকা কামালে ২৫ হাজার টাকা আয়কর দেন। আর শেয়ার ব্যবসায়ী মূলধনী ব্যবসার নামে ৮-১০ লাখ টাকা কামালেও কোন আয়কর দেয় না। এ ধরণের রাজস্বছাড়ের ফলে সরকারকে কৃচ্ছতা সাধন করতে হয়। তখন নানা রকম সামাজিক বিষয়গুলোকে বাদ দেওয়া হয় যার মধ্যে শিক্ষা হলো অন্যতম। এটি কেবল যে আমাদের দেশে সত্য তা নয়, এটি পূজি বিকাশের সর্বোচ্চ স্তরের দেশটিতেও সমানভাবে সত্য।
সেখানে ১% লোক ৯৯%কে কলা দেখিয়ে বড়লোক হচ্ছে। মূল পত্রিকার আর একটি নিবন্ধে ব্যাপারটি এসেছে।
খারাপ ব্যাপারগুলোর পাশাপাশি আশার বিষয়গুলোও খুব ভালভাবে এসেছে। সবাই প্রায় তরুনদের কথা বলেছেন ( বাংলাদেশের যুবনীতি অনুসারে ১৮-৩৩ বছর যার যেই যুবা। দু:খজনকহলেও এ কথা সত্য যে, প্রথম আলোর বিশেষ সংখ্যায় যুবাদের কোন অংশগ্রহণ নেই)।
ফজলে হাসান আবেদের মতো লোকেরা বলছেন তাঁর স্বপ্নের স্বদেশে সবার কাছে ইন্টারনেট থাকবে। ড. ইউনুস বলছেন যুবাদের বড়ো অংশ সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে প্রযুক্তিকে মানুষের আরো কাছে আনবে। যদিও জাফর ইকবাল স্যার বলছেন আমাদের আলাপ আলোচনার বড় একটা অংশ জুড়ে যে তরুন প্রজন্ম সেটি বড় ক্ষুদ্র! প্রজন্মের বৃহত্তর অংশকেই আমরা আমাদের আলোচনা থেকে বাদ দিয়েছি।
আমি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছি কারণ আমি যাদের নিয়ে কাজ করি তারাও সম্ভবত খুবই ছোট একটি গোষ্টী। তবে, আমার মনে হয় একটি ক্ষুদ্রগোষ্ঠী কিন্তু সমগ্রকে পাল্টাতে পারে।
এই ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর কথা আতাউল করিম স্যার তার লেখার শেষে বলেছেন। এই গোষ্ঠীরই আন্তর্জাতিক অংশটি ওয়াল স্ট্রিট অকুপাই করেছে। একসঙ্গে অনেক দেশে এই ব্যাপারগুলো ঘটছে।
প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কী খালি পড়বো আর ব্লগে ঝড় তুলবো!!!
আমাদের কী করণীয় সেটাও মনে হয় ৪ তারিখের প্রথম আলোতে পাওয়া যাবে -“ ডেমোক্রেসি ইজ নট এ স্পেকটেটর স্পোর্ট। এই নামে প্রকাশিত একটি বইয়ের মোদ্দা কথা, গ্যালারিতে বসে বসে দেখবে আর নিরাপদ দূরত্ব থেকে হয় হাততালি দেবে, নয়তো দুয়ো দুয়ো করবে—গণতন্ত্র ব্যাপারটা এ রকম নয়।
নিজেকে মাঠে নামতে হবে, দরকার পড়লে পুলিশের লাঠির বাড়ি বা বুটের গুঁতো খেতে হবে। মাটি কামড়ে থাকতে হবে দিনের পর দিন। ”
আমি ভাবছি পড়ার পর আমার অনুভুতি আমি শেয়ার করবো এখানে যদিও জানি কমিটমেন্টের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত।
সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।