আমার যোগ্যতা কিছুই নেই। জীবনে ঈদ ঘটেছে কিন্ত মজার ঘটনা ঘটেনি এমন মানুষ খুজে পাওয়া খুবই কষ্টকর। তাই আসুন আপনাদের সেই মজার ঘটনা গুলো শেয়ার করুণ আমাদের সাথে। তবে তার আগে আমার ঘটনা খানি তুলে ধরি। মজার কিনা জানি না তয় আমার জীবনের একটি অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা।
ঘটনাঃ১৯৯৭ সন। ব্যপক উৎসাহ উদ্দীপনা এবং বিরাট ভাব গাম্ভীর্য নিয়ে পবিত্র ঈদ উল আযহা উপস্থিত হল। গরুর এক ভাগ ক্রয় করতেই আমার পিতা সর্ব শান্ত হওয়ায় ওইবার আমি নতুন কাপড় প্রাপ্তিতে বঞ্চিত হই । স্বভাবতই মন নামক বস্তুটি সেই শোকে পাথর হয়ে রইল। তারপরও বাড়ির সবার সামনে চিতল মাছের মত মাঝে মাঝেই ভেটকি দিয়ে দুই পাটি দাঁত বের করে তাদেরকে জানান দিতে হল যে আমি ভালো আছি।
সকালে ঈদের নামাজ পড়ে ধীর লয়ে যেখানে গরু কোরবানী হবে সেই পথ ধরলাম। পথেই বন্ধু জুবায়ের মতান্তরে বিজাত বাবুর সাথে দেখা । বাংলা অবিধানে বিজাত নাম আছে কিনা আমার জানা নেই তদীয় আমরা একে এই নামে সম্বোধন করতাম তার কার্যকারণে। শুনলাম আমাদের কোরবানির গরুর এক পার্টের মালিক অরাও। তাই ওর সাথেই রওনা দিলাম।
কিছুক্ষণ পর গন্তব্যে পৌঁছলাম। ছোট বেলা থেকেই আমি কাপুরুষ হিসেবে বন্ধু মহলে বিশেষ ভাবে পরিচিত । গরু,ছাগল এমনকি মুরগী জবাইও আমার কাছে বিরাট ভীতীকর কাজের একটা হিসেবে বিবেচিত হত। তাই গরু জবাই দেখে তা সামলাতে পারবো না ভেবে একটু অদুরে দাড়িয়ে রইলাম। যে জায়গাটাতে গিয়ে আশ্রয় নিলাম সেটা ছিল একটা কালী মন্দির।
আমাদের এলাকাটা হিন্দু অধ্যুষিত হওয়ায় সব জায়গাতেই মন্দির লক্ষ্য করা যায়। কিছুক্ষণ পড়ে আমার বন্ধুটি দৌড়ে আমার কাছে এসে বলল চল সবাই গরু ধরার জন্য ডাকছে। আমি বললাম না আমি এই কাজ পারবো না এবং আমি তাকে আমার সব ভীতির কথা বললাম। সে তখন আমার দিকে তাকিয়ে আর কিছু না বলে চলে গেলো। যাবার আনুমানিক বিশ মিনিট পড়ে ও আমার দিকে দৌড়ে আসতে আসতে বলল দ্বারা তোরে আজকে পাইছি।
তোরে গরুর রক্ত দিয়ে গোসল দিয়ামু । আমি মোটামুটি হতভম্ব হয়ে লক্ষ্য করলাম ওর দুই হাতে পলিথিনে ভরা রক্ত। আমি আর কই যায়,মারে বাবারে কইয়া দিলাম খিচচা দৌর । দৌড়াদৌড়ির একপর্যায়ে ওর হাতে থাকা রক্ত ভর্তি পলিথিনের ব্যাগ ও আমার দিকে ছুরে মারল। আমি বাংলা সিনেমার নায়কদের কাত হয়ে ওর ছুরে দেওয়া রক্ত থেকে বাচলাম।
কিন্তু আমার পিছনে থাকা কালী মন্দির টি আর বাচল না । কিছুক্ষণ দুই জন দুই জনের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম আমরা কি করেছি। যেই ভাবা সেই দৌর। এক দৌড়ে বাড়ি গিয়ে ঘাপটি মেরে পড়ে রইলাম। ঈদ কেমন কাটল তা আর নাই বা জানলেন।
পরদিন মন্দির কমিটি আমার বাবা সহ যারা কোরবানির ঐখানে ছিল তাদের কে ডাকলেন। আমার বাবা তো পুরা হতভম্ব নালিশ শুনে। তাদের নালিশ একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতে একটি বাচ্চা ছেলে এই আকাম টা করছে। আমার বাপ তো মোটামুটি নালিশ শুনে বাসায় এসে কোন কথা না শুনেই আমাকে মারাই করা শুরু করলেন । কিছুক্ষণ মারাই করার পর টানতে টানতে আমাকে ঐখানে উপস্থিত করে বললেন এই নিন আমার ছেলে আপনাদের যা করার করুণ।
প্রায় তখন সেই প্রত্যক্ষদর্শী দেবদুতের মত উপস্থিত হয়ে বলল এই ছেলে সে নয় যে রক্ত লাগিয়েছে । তখন আর কারো বুঝতে বাকি রইলো না যে কাজটা কে ঘটিয়েছে। পড়ে শুনলাম ওর বাবাও ওকে আখ মারাই করেছে এবং ১২০০০ টাকা গচ্ছা দিয়েছেন সাথে সমস্ত মন্দিরের শুদ্ধতার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সমস্ত ব্যয়ভার ও উনি বহন করেছেন।
আপনাদের যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে মন্তব্য আকারে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন । অগ্রীম ঈদ মোবারক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।