প্রবাসী আজ থেকে অনেক বছর আগে প্রথমবার যখন কানাডায় বেড়াতে এসেছিলাম বড় বড় দোকানের সামনে কুমড়ো’র গাদা দেখে অবাক হয়েছিলাম, জিজ্ঞেষ করে জেনেছিলাম ও গুলো হল “হ্যালোউইনের কুমড়ো” ।
এবার , দিন ১৫/২০ আগে থেকেই যখন দেখছি দোকানের সামনে কুমড়োর গাদা তখনি বুঝেছিলাম হ্যালোউইন এসে গেছে। আজ ৩১ অক্টোবর কানাডাতে হালোউইন।
হ্যালোউইন হল ভূতোৎসব। এই দিনে সবাই স্মরন করেন ভূত পেত্নীদের ।
প্রাচীন কালে মানুষেরা বিশ্বাস করত মৃতেরা বিশেষ দিনে ফিরে আসে জীবিতদের মধ্যে। ইন্দো-ইউরোপিয় বা সেল্টিক বিশ্বাস থেকে এসেছে হ্যালোউইন। কথাটা এসেছে All-Hallows-Even ("evening"), the night before All Hallows Day থেকে। খৃস্টান ধর্মমতে ১লা নভেম্বর হল “All Hallows Day “ যেদিন সমস্ত ধর্মীয় ব্যাক্তিত্ব বা সেইন্টদেরকে স্মরন করা হয়। হ্যালোউইন বিশ্বাস মতে ভূত প্রেত বা মৃতদের আত্মা ৩১ শে অক্টোবর রাতে ফিরে আসে জীবিতদের মধ্যে।
এই সমস্ত প্রেতাত্মা জীবিতদের ক্ষতি করতে পারে বা তাদের কে নিয়ে যেতে পারে অন্ধকারের জগতে। তা থেকে বাঁচার জন্য উপায় হল, ভুতের বা পেত্নীর পোষাকে ৩১শে অক্টোবর রাতে বাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়া , যাতে প্রেতাত্মারা জীবিতদের খুজে না পায় বা পেলেও চিনতে না পারে। অনেক দেশে অবিবাহিত মেয়েরা পানির মধ্যে গলন্ত শীশা ঢেলে দেন পানিতে। মেয়েরা বিশ্বাস করে শিশা জমে গিয়ে যে আকার ধারন করবে তা বলে দেবে ভবিষ্যত স্বামীর পেশা।
কি কি করা হয় এ দিনে।
জ্যাক-ও-ল্যান্টার্ন( jack-o'-lanterns) এ দিনে মৃতদের স্মরন করতে কুমড়োর উপর আঁকা হয় ভুত ,প্রেত, কংকাল, বা ভয়ঙ্কর সব ছবি। অনেকে তাদের বাড়ীকে সাঁজান ভুত প্রেত, দৈত্য দানবের , ছবি দিয়ে, বাসার আঙ্গিনায় ঝুলিয়ে রাখেন, বিভিন্ন ভয়ঙ্কর দৃশ্য আকা কুমড়ো বা আপেল। প্লাস্টিক বা কাঁচ দিয়ে তৈরী কংকাল, মাথার খুলি ইত্যাদি দিয়ে সাঁজান হয় বাড়ী ঘরকে।
হালোউইন পার্টিঃ – অনেকে আয়োজন করেন হ্যালোউইন পার্টির। তাতে সবায় যোগ দেয় বিভিন্ন ধরনের ভূত প্রেত, পিশাচ আকা পোষাক পরে।
সেখানে পানাহারের পাশাপাশি থাকে ভূতের গল্প , দেখানো হয় হরর ফিল্ম । থাকে ভূত আকা গিফট কার্ড। চলে বিভিন্ন ধরনের ভূত প্রেতের বা ভয়ংকর কৌতুক, খেলাধুলা। একটা খেলা হল বেসিন বা বড় গামলার মধ্যে আপেল ছেড়ে দিয়ে দাঁত দিয়ে তা কামড়ে তোলা। থাকে কেক দিয়ে তৈরী ভূত বা মাথার খুলি, মাকড়শা’র কেক, ও অনান্য সামগ্রী।
কোথাও কোথাও তৈরী করা হয় “Haunted House” বা ভুতুড়ে বাড়ী।
ট্রিক অর ট্রিটিং (Trick-or-treating) ,
বাচ্চা ছেলেমেয়েরা পরে বিশেষ পোষাক “হ্যালোউইন কস্টিউম” যার উপর আঁকা থাকে ড্রাকুলা, ফ্রাঙ্কেনস্টাইন, নরকঙ্কাল বা মাথার খুলি। পোষাক পরে গিয়ে হাজির হয় প্রতিবেশীর বাড়ীতে। দরজায় টোকা দিয়ে দাবী জানায় উপহারের। দাবী মেটানো না হলে প্রেতাত্মা’র প্রতিশোধের ভয় দেখায়।
সাধারনতঃ চকোলেট, লজেন্স, বা “কুকি” দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় বাচ্চাদের।
যে সমস্ত প্রতীক হ্যালোউইনে ব্যাবহৃত হয় তা হল কংকাল, কালো বিড়াল, কবরখানা, মাকড়শা, ভুতুড়ে বাড়ী, ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বা ড্রাকুলা। কালো এবং কমলা এই দুই রঙ্গই বেশী ব্যাবহার করা হয়।
উপসংহারঃ- আমরা ভূত বিশ্বাস করি বা না করি হ্যালোউইন কে বিশ্বাস করতেই হবে। যারা বিশ্বাস করবেন না তাদের জন্য রয়েছে প্রেতাত্মার প্রতিশোধ Trick-or-treating ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।