আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি। কিস্তি ৬৫:
রেওয়াজটা পুরনো। বছরে একবার ডাটস যাবে সীতাকুণ্ড। সেখানকার চন্দ্র পাহাড়ের রূপ যৌবনের ভেতর কাটাবে পুরো একটি দিন।
সে মতে, সীতাকুণ্ড ট্যুরের আয়োজন করা হলো। আমরা সবাই সেখানে যাওয়ার জন্য উৎসাহের সাথে জড়ো হলাম টিএসসি চত্বরে। সে সময় আমাদের বেশির ভাগ ট্যুরের বাস নেয়া হতো বাবুল মামার কাছ থেকে। যথা সময়ে টিএসসি চত্বরে বাবুল মামা হাজির। ১১ টার দিকে আমরা রওয়ানা করলাম।
বাস ছাড়ার সাথে সাথে আমাদের সিনিয়ররা সবাই হই হুল্লোড় শুরু করলেন। প্রিন্স ভাই, সালেহীন ভাই ও তানিম ভাইয়েরা সেই পুরনেরা গান ধরলেন ... পিরীতের খ্যাতা দিয়া যইত্তা ধইরা মাইরালা...। আমরা সবাই গলা মেলাচ্ছি। সেই সাথে নাচানাচি। বাবুল মামা এ সবের সাথে পরিচিত।
বরিশালের বাবুল মামা সব সময় হাসি খুশি। তিনি কখনো বেজার হয়েছেন , এমনটা আমি দেখিনি। শহীদ ভাইয়ের আমল থেকে আমার নিজের আমলেও তার গাড়ি নিয়ে আমরা ঘুরতে গেছি। এত সহযোগি চালক আমার চোখে সাত্তার ও মোখলেস ছাড়া দ্বিতীয়টি চোখে পড়েনি।
সকালে আমরা সীতাকুণ্ড পৌঁছালাম।
সেখানকার থানা নির্বাহি কর্মকর্তাকে আগে থেকে ইনফরম করা ছিল। আমাদের ফ্রেশ হওয়ার জন্য দু চারটে কক্ষ খুলে দেয়া হলো। মেয়েদের জন্য পাশের একটি বাসা। সীতাকুণ্ডে সে সময় কোনো হোটেল ছিল না। এখনো সে রকম কোনো হোটেল নেই।
ফ্রেশ হয়ে আমরা বের হলাম চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পথে। সে সময় বর্ষার শুরু। ভেজা পথ ধরে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। কিছু দূর যাওয়ার পর অন্যদের বিশেষ করে নারী সদস্যদের জন্য সহযোগিতার জন্য হাত বাড়াতে হলো। এই হাত বাড়ানোর জন্য অনেকে প্রস্তুত।
কিন্তু সব নারী কিন্তু সবার হাত ধরবেন, এটা হতে পারে না । হয়নি। বয়সে যেহেতু আমি ও বাবু ছোট তাই অনেকে আমাদের ওপর ভরসা করলেন। আমি একাই দুজনওকে টেনে তুলেছিলাম চন্দ্রনাথের চূড়ায়!!!
চন্দ্রনাথে ওঠার জন্য সিঁড়ি পথ আছে। কিন্তু ডাটসের ট্যুরে সেটাকে নামার জন্য ব্যবহার করা হতো।
ওঠা হতো এবড়ো থেবড়ো পথ ধরে। ঝর্ণার বাম পাশ ঘেঁষে উঠে যাওয়া ট্রেইলটিই ছিল আমাদের ওঠার রুট। এটা আমরা পরেও ফলো করতাম। ওঠার মাঝ পথে বিরতি দিলাম। কেউ কিছু দূরে, কেউ কাছাকাছি, সবাই আসলে এরকসাথে চন্দ্রনাথ মন্দিরে আমরা যাবো।
এর মধ্যে সবাই পানি, চকলেট , পেয়ারা চিবুচ্ছেন। কেউ হাত-পা ছড়িয়ে বসে পড়েছেন। কান্তিতে অনেকের অবস্থা খারাব।
ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে আমরা চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় উঠলাম। সেখানকার মন্দিরে অনেকক্ষণ অপেক্ষা, ছবি তোলা এবং জিরিয়ে নিয়ে এবং পাহাড়ের চূড়া থেকে চট্টগ্রাম পোর্ট দেখে আমরা নামতে শুরু করলাম।
নামার পথে ঝর্ণায় ভেজা। পানি দেখলে নিজেকে সামলানো কঠিন। কিন্তু আপুরা যেহেতু ভিজবেন, তাই ভাইয়াদের আগেই ভিজে সরে যেতে হবে। আমরা তাই করলাম। এর মধ্যে এক বজ্জাত গোপনে আপুদের ছবি তোলার চেষ্টা করছিল।
আমাদের কারো চোখে পড়েনি। তবে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়লো। জানা গেলো উনি একজন গেস্ট হিসাবে আমাদের সাথে অংশ নিয়েছেন!
সীতাকুণ্ড থেকে আমরা ফিরে এলাম। অনেক ভালো লাগা একটা স্মৃতি নিয়ে। আমার প্রথম পাহাড়ে চড়ার অভিজ্ঞতা সেটিই।
পাহাড় থেকে নেমে আমরা আবার থানা নির্বাহি কর্মকর্তার কার্যালয়ে। সেখানে মস্ত বড় একটা পুকুর। সেই পুকুরে আমরা অনেকে সাঁতরালাম। সেখান থেকে উঠে দুপুরের খাবার শেষে আমরা ফিরলাম ক্যাম্পাসে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।