শী ওয়াজ বর্ণ ইন স্প্রীঙ, বাট আই ওয়াজ বর্ণ টুউ লেইট; ব্লেইম ইট অন অ্যা সিম্পল টুইস্ট অভ ফেইট!
আমার ছেলেবেলা কেটেছে দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তের এক কৃষি খামারে, দাদু বাড়িতে। ছেলেবেলার সব স্মৃতিই তাই দাদু বাড়ীকে ঘিরে। বিস্তীর্ণ এলাকার মাঝে এক হলুদ দালান, বাড়ীর সামনে জুঁই, চামেলি, হাস্নুহেনার বাগান, বাগানের সীমানায় গন্ধরাজ, কেয়া, লিলি, পাতাবাহারের কেয়ারি; বাড়ীর পিছে কলা আর পেয়ারা গাছের বন। চারদিকে যতদূর চোখ যায়, ফসলের মাঠ, ইতি উতি নানা ফলের বাগান। বাতাসে গাছের আন্দোলন, মড়মড় শব্দ, কাশবনে, ফসলের ক্ষেতে বাতাসের খেলা, দিগন্তে বৃষ্টির সাদা চাদর।
রাত হলে, ঝিঁঝিঁ, শেয়ালের আর নিশুতির ডাকের এক অদ্ভুত রহস্যময়তা। এই নিয়েই ছিল দিনগুলি।
বাড়িতে ছিল অসংখ্য বই - তখন জানতাম 'অনেক বই' আর এখন জানি, তিন হাজারেরও বেশি বই ছিল বাড়িটিতে। কিছু বই ছিল ছোটদের, বাকিগুলো ছিল আমার জন্যে নিষিদ্ধ। আর ছিল রেডিও।
তখন আমার কাছে রেডিও মানেই আকাশবাণী কলকাতায়, রোববার দুপুরের 'অনুরোধের আসর'। আধঘণ্টার অনুষ্ঠানে ৯/১০ টি গান। এছাড়াও শনিবার দুপুরে ছায়াছবির গান হত, আরও ছিল শুক্রবার, শনিবার রাতের অনুষ্ঠান, সোমবারে তিন কবির গান। তবে মুল আকর্ষণ ছিল ওই 'অনুরোধের আসর'। সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করতাম অনুষ্ঠানটির জন্যে, ৯/১০ টি গানের কম হলে, মনটা যেন ভেঙে যেত।
দাদুর ছিল খবর শোনার বাতিক। বাংলা উর্দু হিন্দি খবর। শনি, রোববারে বাসায় থাকলেই রেডিও নিয়ে নিতেন। তাই অনেকসময় 'অনুরোধের আসর' এর সময়, রেডিওটি, এক টুকরো কাগজ আর পেন্সিল নিয়ে চলে যেতাম বাড়ীর পিছের পেয়ারা বনে, ঝোপের পিছে চলত গান শোনা। সে এক অদ্ভুত নেশা।
আর হবে নাইবা কেন ! কি সব গান !
কিছু কিছু গান হৃদয় দিয়ে বুঝতাম। মা থাকতেন দূরে, বছরে দুবার দেখা হ্ত। দাদু দাদিমা কাকু ফুপুমা সবাই আগলে রাখতেন। কিন্তু মা তো মা'ই। তখন একটি গান মন দিয়ে উপলদ্ধি করতাম, শুনলেই কাঁদতাম মনে আছে।
ও তোতা পাখি রে,
শেকল খুলে উড়িয়ে দেবো, আমার মাকে যদি এনে দাও;
ঘুমিয়ে ছিলাম মায়ের কোলে, কখন যে মা গেলো চলে!
সবাই বলে ওই আকাশে লুকিয়ে আছে, খুঁজে নাও।
কিছু কিছু গান অনেকটাই বুঝতাম, আবার বুঝতাম না। যেমন,
মনে কর আমি নেই, বসন্ত এসে গেছে
কৃষ্ণচূড়ার বন্যায়, চৈতালি ভেসে গেছে।
কিছু কিছু গান শুনলে, বুঝি বা না বুঝি, মনটা আনন্দে ভরে যেত, যেমন -
সাতটি তারার এই তিমির
একটি প্রেমের শান্ত নীড়;
আজ আকাশের নেই ভাবনা
চন্দ্রকলায় ছন্দ মীড়।
কিছু গান শুনলে মনটা অকারনে বিষাদিত হত।
যেমন,
আঁধার আমার ভালো লাগে,
তারা দিয়ে সাজিয়ো না আমার আকাশ।
অথবা,
বড় একা লাগে এই আঁধারে,
মেঘের খেলা, আকাশ পারে।
কিছু কিছু গান শুনলে, আমার অবুঝ মন আনন্দে উদ্বেলিত হত, কিন্তু গানটি আসলে ছিল নিরাশার, দুঃখের; যেমন -
কঙ্কাবতীর কাঁকন বাজে ইছামতীর কূলে
কাজলা শাড়ি নাকে নোলক, চলে এলো চুলে।
আবার কিছু গান শুনলে মন আবেশে ভরে যেত, কিন্তু অর্থ বুঝতাম না। যেমন,
নয়নে তার ভোমরা কাজল কালো
দুই কানে তার ঝুমকো লতা দোলে;
কালো কেশে, সর্বনাশের নেশা
ছলনা দেখে পলকে মন ভোলে।
গানের রহস্যময় জগতে সেই আমার প্রবেশ; ছোট্ট আমি তখন কতোটুকই বা বুঝতাম, তবু বোঝা না বোঝার দোলাচালে সেই ছেলেবেলাটিই হয়ে উঠেছিলো আমার সঙ্গীতবেলা।
'অনুরোধের আসর' নিয়ে আমার যে সঙ্গীত অনুরাগের শুরু, সেই স্মৃতি আবার জাগ্রত হল জানাপু'র একটি কমেন্টে। ভাবলাম আমার সেই দিনের গানগুলো আবার এই দিনে আনলে কেমন হয় ! অনুরোধের আসরে গান শুনেছি অসংখ্য, শত শত। স্মৃতি হাতড়ে, তারই ৫০ টি নিয়ে আজ এই 'প্রথম পর্ব' পেশ করছি জানাপু'র সৌজন্যে।
অনুরোধের আসর ১.১
০১ শিপ্রা নদীর তীরে সন্ধ্যা নামে গো ওই - অখিলবন্ধু ঘোষ
০২ পিয়াল শাখার ফাঁকে (১৯৫৭) - অখিলবন্ধু ঘোষ
০৩ আমি আঙুল কাটিয়া (১৯৫৬) - ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য
০৪ অন্তবিহীন এই অন্ধ রাতের (১৯৬৩) - ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য
০৫ বাসরের দীপ আর আকাশের তারাগুলি (১৯৫৩) - ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য
০৬ নয়নে তারই ভোমরা কাজল কালো - ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য
০৭ ভবের খেয়া এবার বাওয়া হইল আমার শেষ- গীতা দত্ত
০৮ শচীমাতা গো, আমি চার যুগে হই - গীতা দত্ত
০৯ আহা কৃষ্ণ কালো, আঁধার কালো (১৯৬৪) - হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
১০ অমন ডাগর ডাগর চোখে কেন (১৯৭৫) - হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
১১ যে আছে দাঁড়ায়ে দ্বারে (১৯৬২) - হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
১২ আকাশে আজ রঙের খেলা (১৯৫৮) - আশা ভোঁসলে
১৩ ওগো মনের দুয়ারে দাঁড়িয়ে (১৯৬৫) - আরতি মুখোপাধ্যায়
১৪ গান ফুরালো জলসাঘরে (১৯৬৮) - ইলা বসু
১৫ কত রাজপথ জনপদ ঘুরেছি (১৯৬২) - ইলা বসু
১৬ অশ্রু-মুকুতা কেন তোমার চোখে (১৯৫৫) - জগন্ময় মিত্র
১৭ বঁধুয়া আমার চোখে জল এনেছে (১৯৬৮) - জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়
অনুরোধের আসর ১.২
১৮ এমনই বরষা ছিল সেদিন (১৯৫০) - যূথিকা রায়
১৯ আমি এতো যে তোমায় ভালবেসেছি (১৯৫৭) - মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়
২০ এমন একটা ঝিনুক খুঁজে পেলাম না - নির্মলা মিশ্র
২১ নয়নে কাজল নেই, কপালেও টিপ নেই (১৯৭৬) - নির্মলা মিশ্র
২২ ও তোতা পাখী রে (১৯৬৫) - নির্মলা মিশ্র
২৩ শেষ দেখা সেই রাতে - পিন্টু ভট্টাচার্য
২৪ সোনা রোদের গান আমার - পিন্টু ভট্টাচার্য
২৫ আমার যেমন বেণী তেমনি রবে - প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়
২৬ আঁধার আমার ভালো লাগে - প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়
২৭ বাঁশ বাগানের মাথার উপর (১৯৫৫) - প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়
২৮ একটা গান লিখো আমার জন্য (১৯৬১) - প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়
২৯ এপারে গঙ্গা, ওপারে গঙ্গা, মধ্যিখানে চর - প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়
৩০ কঙ্কাবতীর কাঁকন বাজে (১৯৫৬) প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়
৩১ নাও গান ভরে, নাও প্রান ভরে (১৯৫৫) - প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়
৩২ সাতটি তারার এই তিমির (১৯৬১) - প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৩ গা গা রে পাখী গা (১৯৬৯) - সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
৩৪ গুন গুন মন ভ্রমরা (১৯৬৬) - সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
অনুরোধের আসর ১.৩
৩৫ যদি নাম ধরে তারে ডাকি (১৯৬৭) - সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
৩৬ মায়াবতী মেঘে এলো তন্দ্রা (১৯৬২) - সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
৩৭ নেবো না সোনার চাঁপা (১৯৬০) - সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
৩৮ উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা (১৯৫৩) - সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
৩৯ আকাশ এতো মেঘলা (১৯৬২) - সতীনাথ মুখোপাধ্যায়
৪০ এলো বরষা যে সহসা মনে তাই (১৯৫৬) - সতীনাথ মুখোপাধ্যায়
৪১ ওই আকাশ প্রদীপ তারা (১৯৫৯) - সতীনাথ মুখোপাধ্যায়
৪২ আহা ওই আঁকা বাঁকা যে পথ যায় সুদূরে (১৯৬২) - শ্যামল মিত্র
৪৩ ভীরু ভীরু চোখে চেয়ে চলে গেলে (১৯৬১) - শ্যামল মিত্র
৪৪ দূর নয় বেশী দূর ওই (১৯৬৩) - শ্যামল মিত্র
৪৫ যা যারে যা, যা পাখী (১৯৬২) - শ্যামল মিত্র
৪৬ সারাবেলা আজ কে ডাকে (১৯৫৫) - শ্যামল মিত্র
৪৭ চলো রিনা, ক্যাসুরিনায় (১৯৬৯) - তরুন বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৮ কনক চাঁপা ধান (১৯৬৭) - তরুন বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৯ কাজল নদীর জলে (১৯৫৬) - তরুন বন্দ্যোপাধ্যায়
৫০ প্রান্তরের গান আমার (১৯৫৩) - উৎপলা সেন
কোয়ালিটি : ১২৮ - ১৯২ কেবিপিএস মিক্সড বিটরেট এমপি৩
ফাইল সাইজ : ৫৪ + ৫৬ + ৫৯ মেগাবাইটস
ডাউনলোড :
অনুরোধের আসর ১.১
অনুরোধের আসর ১.২
অনুরোধের আসর ১.৩
পূর্বশর্ত : ডাউনলোড করতে হলে ফোরশেয়ারড -এ অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
অত্যন্ত সহজেই এই অ্যাকাউন্ট করা যায়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।