আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্রিটিক্যাল মাস-২: দুষনমুক্ত যান-সাইকেল, ঢাকা শহরে চলাচলের জন্যে যথেষ্ঠ

শরীরে শরীর নয়, ঠোঁটে ঠোঁট রাখাও নয়, মূহুর্তের ছোঁয়াও নয়, একটু দেখাতেই লিটার খানেক অগ্নিজলের ঘোর। চতুর্মুখী পাওয়া বসবাসের জন্য পৃথিবীর দ্বিতীয় অযোগ্যতম শহরে কি পরিমান সময় আপনাকে যানযটে নষ্ট করতে হয়? নাগরিক জীবনে প্রতিদিনের যাতায়তে আপনি কি পরিমান কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করেন?? চব্বিশ ঘন্টার ক’'ঘন্টা আপনি কায়িক পরিশ্রম করেন??? প্রতিদিন যাতায়তে আপনার ব্যয় হয় কত???? কোন এক ঈদের গভীর রাতে উত্তরা থেকে সদর ঘাট পর্যন্ত যে কোন যান্ত্রিক যানে করে যদি আপনি যান, বুঝবেন আয়তনে ঢাকা আসলে কত ছোট শহর। আর হৃদয়ংগম করবেন যে প্রতিদিন ঢাকা শহরের যানজটে কি পরিমান সময় আপনার নষ্ট হয়। সচরাচর যে সব বাহন আমরা ব্যাবহার করি তা পরিবেশের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকারক কার্বন ডাই অক্সাইড প্রচুর পরিমানে নির্গত করে। একজন মানুষকে সুস্থ্য থাকার জন্যে সপ্তাহে নুন্যপক্ষে তিন দিন, প্রতিদিন একঘন্টা করে শারিরীক পরিশ্রম করার প্রয়োজন।

এই নগরে আমরা ক’'জন এই সময়টুকু দেই বা দিতে পারি? যাতায়ত ভাড়া যে হারে বেড়েছে সে হারে কি আমাদের আয় বা অভিভাবকের দেয়া ভাতার পরিমান বেড়েছে? না বাড়ার সম্ভাবনাই বেশী। এই সমস্যাগুলো নিয়ে সবাই আমরা কম বেশী ভাবি। খরচের কথা তো প্রায় সবাই, সব সময়ই। কিন্তু বলতে গেলে কেউই মনে করিনা এগুলো সমাধান করা আমাদের পক্ষে সম্ভব। একদল তরুণ তরুনী, যাদের কেউ কেউ প্রকৌশলী, চিকিৎসক, পদস্থ চাকুরে, উদ্যোক্তা, ব্যাবসায়ী আবার কেউ শিক্ষার্থী আমাদের মত শুধু ভেবেই থেমে থাকেনি।

তারা এই সমস্যা চারটির একটি সরল, বাস্তব সম্মত ও গ্রহনযোগ্য সমাধান বের করেছে- সাইক্লিং। আর যার সাথে উপরি পাওয়া –সুস্থ্য বিনোদোন। সময় পুরান ঢাকার বাংলা বাজার থেকে তিন নেতার মাজার পর্যন্ত বাসে, গাড়ীতে বা সি এন জিতে যেখানে এক থেকে থেকে আড়াই ঘন্টা পর্যন্ত লাগে সেখানে সাইকেলে পনেরো মিনিটে সেটা মেরে দেয়া যায়। এভাবে হিসেব করুন মিরপুর থেকে ধানমন্ডি, ধানমন্ডি থেকে মতিঝিল, কাকলীর মোড় থেকে মহাখালি, আবদুল্লাহপুর থেকে বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন বা শাহজাহানপুর থেকে যাত্রা বাড়ি। প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘন্টা থেকে ৬ ঘন্টা পর্যন্ত বাঁচানো যায় ক্ষেত্রভেদে।

পরিবেশ সাইকেলে আপনি কোন জ্বালানী ব্যাবহার করেন না। জ্বালানী হল আপনার কায়িক শক্তি। এই যাতায়তে আপনি কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করেন না বা আপনার যাতায়তের জন্যে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয় না। সুস্থ্যতা সুস্থ থাকার জন্যে যে পরিমান শারিরিক পরিশ্রমের প্রয়োজন নিয়মিত সাইকেল চালালে সে প্রয়োজন ভালভাবেই মিটে যায়। কড়ি আগের যে কোন সময়ের চেয়ে এই প্রসংগটি এখনকার সময়ে সবচে' অর্থবহ।

আজ থেকে বছর সাতেক আগেও যাতায়তের খরচ নিয়ে কেউই আমরা তেমন চিন্তা করতাম না। কারন আমাদের মোট খরচের অল্প একটা অংশ ছিল যাতায়ত ব্যয়। এখন আর তা না। শুধুমাত্র এই একটা কারনেই সাইকেল চালানো যেতে পারে। এইতো গত মাসেই আরেক দফা বাড়লো যানবাহনের ভাড়া।

সাইকেল চালিয়ে যাতায়তের ভাড়ার পুরোটাই বাঁচানো যায়। যা মাসে পাঁচশ টাকা থেকে দশ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। আমার পরিচিত একজন সাইকেলে অফিসে যাতায়ত করা শুরু করার পর প্রনোদিত হয়ে অফিসের সাত আটজন সাইকেল ব্যাবহার করছে। সাইক্লিং সংগঠন ঢাকায় বেশ ক’টি সাইক্লিং সংগঠন আছে। এই সংগঠনগুলো নিয়মিত অনেকগুলো রাইডের আয়োজন করে, যেমন দৈনিক, রাত্রিকালীন, সাপ্তাহিক শিক্ষা নবিশী ও দক্ষদের, দুরপাল্লার , ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় ক'’দিনের জন্যে ইত্যাদি।

মেয়েদের সাইক্লিং আমাদের ঢাকায় মেয়েরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন অফিস করছে সাইকেলে। এটা বাস্তব, যদিও অবিশ্বাস্য। সংখ্যায় স্বল্প হলেও এটা শুভ সূচনা। মেয়েদের মানসিকভাবে সাবলম্বী হবার ক্ষেত্রে এটা একটা বিশাল পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে সাইক্লিং সংগঠনগুলোর অবদান পরিসীম।

সংগঠনগুলোর সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগের সবচে’ বড় মাধ্যম ফেইসবুক । প্রত্যেকটি সাইক্লিং সংগঠনের ফেইসবুক পেইজ বা গ্রুপ আছে। যখন একটি মেয়ে অফিসে সাইকেলে যাতায়ত করতে চায়, তখন যে সাইক্লিং সংগঠনের সদস্য সে, সেই সংগঠনের ফেইসবুক পাতায় তার বাসার কাছাকাছি থাকা এবং তার অফিসের কাছাকাছি অফিস করা কোন সংগী সাইক্লিস্টের খোঁজ করে এবং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে পেয়েও যায়। এছাড়াও এই সংগঠনগুলোর সদস্যেরা ব্যাক্তিগত উদ্যোগে সাইকেল চালানো শেখায়ও (ছেলেদেরকেও)। ক্রিটিক্যাল মাস ঢাকায় সাইক্লিংএর সবচে বড় ইভেন্ট হচ্ছে ক্রিটিক্যাল মাস।

ঢাকার সাইক্লিং সংগঠন গুলো একসাথে মিলে এটার আয়োজন করে থাকে। প্রতি মাসের শেষ শুক্রবার এরা সবাই মিলে সাইক্লিং করে, বিশেষ করে ঢাকার রাজপথগুলোতে। এই ইভেন্টের উদ্দেশ্য হল যাদের নিজস্ব গাড়ি (car) আছে তাদের দেখানো যে স্থানীয় প্রয়োজন মেটানোর জন্যে সাইকেলই যথেষ্ঠ (To demonstrate to the car-owning crowd that bicycles are completely adequate for their local needs)। ক্রিটিক্যাল মাস-১ ক্রিটিক্যাল মাস শুরু হয়েছে গত মাসে। প্রথমবারেই বিপুল সাড়া পাওয়া গিয়েছিল।

অংশ নিয়েছিল ১৭৫ + রাইডার। রাইড, বিরতি, হুল্লোড়ে কেটেছে অপূর্ব সময়। ঢাকা শহরে গত মাসের শেষ শুক্রবারে যারা সকালের দিকে রাস্তায় বের হয়েছিলেন তাদের অনেকেরই চোখে পড়েছে। ক্রিটিক্যাল মাস-১ এর কিছু আটকে রাখা সময়ঃ রাইডিং, ঢাকা শহরে। একটু বিরতি আড্ডা অল্পস্বল্প জ্বী, ওজন কমাতেও ফেরা ক্রিটিক্যাল মাস-২ আগামী ২৮ শে অক্টোবর, শুক্রবার সকাল আটটায় ক্রিটিক্যাল মাস-২ শুরু হবে সংসদ ভবনের সামনে থেকে।

রুটঃ http://goo.gl/MpRx5 ক্রিটিক্যাল মাস-২ এর প্রোমোঃ ঢাকার মানুষদের সময় বাঁচাতে, সাস্থ্য রক্ষা করতে, অর্থ বাঁচাতে, আর পরিবেশ বান্ধব হতে সচেতন করুন। সাইকেল চালাতে চলে আসুণ ক্রিটিক্যাল মাস-২ তে। __________________________________________ যাদের সাইকেল নেই কিন্তু যোগ দিতে চান, আগেভাগে জানালে তাদের একটা ব্যাবস্থা হলেও হয়ে যেতে পারে। পত্রিকায় ক্রিটিক্যাল মাস-২ ২৯ অক্টোবর, ২০১১, শনিবার ডেইলি স্টারে ক্রিটিক্যাল মাস-২ এর ছবিসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়ঃ বিকল্প বাহন, ট্রাফিক ব্যাবস্থার উন্নতি সাধন এবং জনসাস্থ্য উন্নয়নে সাইকেল ব্যাবহারকে জনপ্রিয় করে তুলতে ২০০ জনেরও বেশী সাইক্লিস্ট "ক্রিটিক্যাল মাস" রাইডে অংশ গ্রহণ করে।

বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠি যেমন বিডি সাইক্লিস্ট, রয়্যাল বেংগল রাইডারস, ভ্রমণ বাংলাদেশ, ঢাকা সাইক্লিং ক্লাব আর বিবর্তন ইভেন্টটি আয়োজন করে। এই ইভেন্টটি পৃথিবীর আরো ৩০০ টি একই দিনে অনুষ্ঠিত হয়। সুত্রঃ More than 200 cyclists joined a 'Critical Mass' ride একই দিনে ইন্ডিপেন্ডেন্টে আরেকটি প্রতিবেদন বের হয়। সে প্রতিবেদনেও ক্রিটিকাল মাস-২ ইভেন্ট কাভার কোড়া হয়। ইনডিপেন্ডেন্টে আরেকটি আয়োজক সংগঠনের কথা উল্লেখ করা হয় -বাংলাদেশ সাইকেল টুরিষ্ট সাঈদ।

ইনডিপেন্ডেন্টে ওঠা ক্রিটিক্যাল মাস-২ এর ছবি সাথে খবরঃ সুত্রঃ Pedal Peddling ______________________________________________ ফুয়াদ হাসান চৌধুরীর উৎসাহ ও সহযোগিতায় লেখা।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।