আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাদ্দাফীর করুন মৃত্যু এবং বাংলাদেশী ৮ জনের শিরোচ্ছেদঃ ডাকাত সাব্যস্তকারীদের বিবেচনাহীন মন্তব্য দেশপ্রেম নয়, তবুও...।

www.theeconomist2011@yahoo.com একজন শাসক গাদ্দাফী, পিতা গাদ্দাফী, সন্তান গাদ্দাফী, সৈনিক গাদ্দাফী, গোয়ার গাদ্দাফী ও একজন ধৃত অসহায় গাদ্দাফীর জীবন এবং নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডকে আমরা দেখলাম। যিনি ৪২ বছর ক্ষমতাসীন ছিলেন দোর্দন্ড প্রতাবের সাথে। তার কর্মময় জীবনের সত্যাসত্য মূল্যায়ন একদিন বিশ্ববাসীর সামনে ঠিকিই আসবে, এনটিসি যাই বলুক। শাসক গাদ্দাফীর করুন মৃত্যুতে বিশ্ববাসী হতবাক হয়েছে সন্দেহ নেই। জাতিসংঘ, এ্যামিনেস্টিসহ বহু বিবেকবান মানুষ ও মিডিয়া এই হত্যাকান্ডের তদন্ত এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী করেছে।

কিন্তু খুশী হয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব, খুশীতে গদগদ হিলারীর শেষ ইচ্ছাই যেন পূরণ করলো লিবিয়ার পশ্চিমা দালাল মুসলিমরা। বাংলাদেশের অনেকেই, এমনকি আমাদের ব্লগারদের মধ্যেও দেখলাম অনেকে অভিযোগ করছেন, গাদ্দাফীর নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডকে কেন আমাদের মানবতাবাদী ব্লগাররা অগ্রহনযোগ্য মনে করছেনা? এখানে কেন তাদের মানবতাবাদী কলমের কালি নেই? একদম সত্য কথা, থাকা উচিত ছিলো। আমাদের দেশের বিষয় না হলেও গাদ্দাফীর বিষয়টি বিশ্বের একটি আলোচিত বিষয়, অন্তত ব্লগারদের লেখায় এটি আসাটা একান্তই যৌক্তিক। তবে কেন আমাদের দায়িত্বশীল ব্লগাররা গাদ্দাফীর এই অপমানজনক অযৌক্তিক নিষ্ঠুর মৃত্যুকে নিয়ে কথা বলছে না। নাকি গাদ্দাফীর মৃত্যুতে মানবিকতা থাকতে নেই? এ পর্যন্ত অভিযোগের যথার্থতা আমার কাছে আছে বিধায় আমি এ লেখাটি লিখতে বাধ্য হলাম।

বাংলাদেশের ৮ নাগরিকের শিরোচ্ছেদ নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলাম, সৌদি সরকারের ইসলামের নামে বর্বর বিচার প্রক্রিয়াকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি, স্বদেশীদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছি, বাংলাদেশের সরকার এর সীমাহীন ব্যর্থতার জন্যও সরকারের সমালোচনা করেছি, সৌদিপ্রেমী মুর্খধার্মিকদের সমালোচনাও করেছি। তখন সৌদিপ্রেমীরা কেবল ইসলামের কারণে এই বর্বর বিচারকে যায়েজ করতে স্বদেশী হতভাগাদের সরাসরি ডাকাত হিসাবে উল্লেখ করেছে-যা দেখে হতবাক হয়েছি। এখন তারাই গাদ্দাফীর মৃত্যুকে নিষ্ঠুর বলছে, সৌদিদের বেলায় বলেনি। দেশপ্রেম কেবল ব্লগে থাকলেই চলেনা, স্বদেশী নাগরিকের বিচার হওয়াতে কোনো অসুবিধা নেই, কিন্তু ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চয় আছে। সৌদিতে বিচারাধীন আরো কয়েকজনের জীবন রক্ষা, সরকারকে চাপে রাখা এবং বিশ্ববাসীকে জানানোর জন্য একটি প্রতিবাদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে একটি সংগঠন এবং সেখানে শিরোচ্ছেদের নিষ্ঠুরতাকে তুলে ধরার জন্য ডামি শিরোচ্ছেদ করা হয়।

কিন্তু ব্লগের বহু ব্লগার সেই প্রতিবাদকে নাটক হিসাবে আখ্যায়িত করে এবং বহু কটু মন্তব্য করে। আজ আবার তারাই গাদ্দাফীর করুন মৃত্যু নিয়ে এই আয়োজকদের কাছ থেকে মানবতাবাদী লেখা আশা করছে এবং তাদের সমালোচনা করছে। সত্যিই আমরা লেখা আশা করতে পারি, কিন্তু সেদিন যারা দায়িত্বহীন কথা বললেন তাদের সেই মুখেই গাদ্দাফীর মৃত্যুকে বর্বরতা বলার সুযোগ কি থাকে? গাদ্দাফীর জীবন নেওয়া বর্বররা যেভাবে উল্লাস করছে, সেদিন ৮ স্বদেশীর শিরোচ্ছেদেও আমাদের এখানের সৌদিপ্রেমীরা উল্লাস করেছিলো এবং স্বদেশীদের ডাকাত হিসাবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু আমরা বার বার বলেছি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার কথা। গাদ্দাফীর শত শত ভুল থাকতে পারে, অন্যায় থাকতে পারে, অপরাধ থাকতে পারে, কিন্তু গ্রেফতার হওয়ার পর তার কি ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার ছিলোনা? কিন্তু পশ্চিমাদের দালাল তথাকথিত এই সব মুসলিম জঙ্গীরা পশ্চিমা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ন্যাটোর ছত্রছায়ায় আজ যা করলো তার জন্য তাদের একদিন মুল্য দিতে হবেই।

যেমন করে আমাদের সৌদিপ্রেমীরা স্বদেশীদেরকে গাদ্দাফীর মতো ডাকাত খুনী ধরে নিয়ে শিরোচ্ছেদের মতো বর্বরতাকে গ্রহনযোগ্য মনে করছে। সৌদি যেমন পশ্চিমাদের দালাল, তেমনি প্রকাশ্য নির্লজ্জ এই এনটিসিও পশ্চিমাদের দালাল। লিবীয় দালালরা পশ্চিমাদের ইচ্ছাকেই বাস্তবায়ন করলো এতদিন যা তারা করতে পারেনি, তাই তারা করলো এবং মুসলমানদের কে নিষ্ঠুর এবং নৃশংসক হিসাবে দেখলো সারা বিশ্ব। কিন্তু যে লিবিয়ার জন্য গাদ্দাফীর জীবন গেলো, সন্তানের জীবন গেলো সেই লিবীয় নাগরিকরা সত্যিই কি এভাবে গাদ্দাফীর পতন চেয়েছিলো? এটা বুঝতে হয়তো আমাদের সময় লাগবে। কিন্তু মিশর এবং তিউনিয়ার মতো লিবিয়ার আন্দোলন যে মানুষের ছিলোনা-তা বুঝা যায় জনগণের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং ন্যাটোর বিমান হামলার মধ্য দিয়ে, হিলারী গদগদ হওয়া দেখে।

এভাবে মুসলমানরা সারা বিশ্বে ব্যবহৃত হচ্ছে সাময়িক সুবিধা আর ধর্মী উন্মদনার কারণে। যে নিষ্ঠুরতারি মধ্য দিয়ে গাদ্দাফীর জীবনাবসান হলো-তা নিঃসন্দেহে মানবতা বিরোধী এবং এর উপযুক্ত বিচার আজ না হলেও একদিন হবে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবেনা। কিন্তু যে দালালরা পশ্চিমাদের হাতের পুতুল হয়ে, হিলারীদের হয়ে লিবিয়াকে তছনছ করলো-তারা কি কোনোদিন অনুধাবন করবেনা তারা কি করলো? আট স্বদেশীর শিরোচ্ছেদকে আমাদের সৌদিপ্রেমীরা কোনোদিন কি অনুধাবন করবেনা, সৌদি ন্যায়বিচার থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি-যে সৌদিও পশ্চিমাদের দালাল। জানিনা আমাদের হতভাগা ৮ স্বদেশীর কোথায় দাফন-কাফন হয়েছে, জানেনা তাদের পরিবারের প্রিয়জনরা-এখানেই দুঃখ পাই।

জানিনা কোথায় জায়গা হবে মরুর রাজা আফ্রিকার সিংহ রাজা বিচার বঞ্চিত হয়ে কোথায় অন্তিম শয়ান হবেন-প্রিয়জনদের দূরে রেখেই-এখানেও কষ্টটা থেকেই গেলো। সবশেষে বলতে চাই, মানবতা লংঘন হলে সৌদির বেলা প্রেম থাকবে, আর লিবীয়ার বেলায় থাকবেনা-এটা যেমন কাম্য নয়, তেমনি শিরোচ্ছেদকে ঘৃনা করলে গাদ্দাফীর বর্বর হত্যাকান্ডকেও ঘৃনা করার মানসিকতা থাকাটাই যৌক্তিক। গাদ্দাফীর মৃত্যু ছাড়া কখনোই কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছিলা লিবিয়ার তেলকে শুষে নিতে-তাই তার মৃত্যুই পশ্চিমাদের একান্ত কাম্য ছিলো। বুঝলোনা মাথামোটা দালাল বিদ্রোহী মুসলমানরা-কি ক্ষতি তারা নিজেরা বরণ করলো নিজেদের এবং আগামী প্রজন্মের জন্য। আমরা সমর্থন করতাম যদি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ তাহরীর স্কোয়ারের মতোই নিরস্ত্র হয়ে ত্রিপোলীতে এসে গাদ্দাফীকে গ্রেফতার করে বিচারের সন্মুখীন করতো।

তাই এখানে মানুষের আন্দোলন ছিলোনা, ছিলো পশ্চিমা দালাল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বর্বর অমানুষরা-এদের জন্য কেবলই ঘৃনা। এই মুর্খতার কারনেই আমরা বলতে চেয়েছি, সৌদি কোনো অন্যায় করলেই তা যেমন ইসলামের নামে যায়েজ হয়ে যায়না, তেমনি কোনো বাংলাদেশীর শিরোচ্ছেদ হলেই তারা ডাকাত হয়না, বাংলাদেশ ডাকাতদের দেশও হয়না। একজন ইসরাইলী সৈনিকের জন্য +১০০০ জন প্যালেস্টাইনীর মুক্তি কিভাবে হয়-তা দেখেও স্বদেশীদের ডাকাত বলা যায় কিনা, এটা বিবেচনার ভার রইলো। হ্যা দ্বিধাহীন বলতে চাই, গাদ্দাফীর মৃত্যু নিষ্ঠুর ও অমানবিক-কোনো সন্দেহ নেই। তবে সৌদিপ্রেমীদের এ বিষয়ে বলার আগে অবশ্যই ভাবতে হবে পশ্চিমাদালালরাও তো মুসলমান, যেমন দালাল সৌদিরাও মুসলমান।

তাই ন্যায্যতার জন্যই স্বদেশীদের ডাকাত বলার আগে বিবেককে জিজ্ঞাসা করাটাও জরুরী; মুসলমানরা কবে বুদ্ধি দিয়ে, মেধা দিয়ে পশ্চিমা তেল-দস্যুদের প্রতিরোধ করতে পারবে, কবে জাতীয় সংহতির জন্য বিচারের নামে বর্বরতাকে ইসলামের কলংক বিবেচনা করে দেখবে। এক কথায় বলতে চাই, যারা সৌদিপ্রেম দেখিয়ে ৮জনকে ডাকাত বলে শিরোচ্ছেদকে সঠিক বলেছে, তারাই আবার গাদ্দাফীর হত্যার জন্য মানবতার দাবী করে শিরোচ্ছেদ বিরোধীদের সমালোচনা করছে-কেন তারা গাদ্দাফীর বেলায় কথা বলছেনা এটা বলে বিলাপ করছে। এটা কি সৌদিপ্রেমী বর্বরদের হিপোক্রেসী নয়?  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।