"April Fool" এর মূল ঘটনাটা বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই অষ্টম শতাব্দীতে স্পেনে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী শাসন। মুসলমানদের নিরলস প্রচেষ্টায় স্পেনে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সভ্যতায় বিস্ময়কর উন্নতি লাভ করে। মুসলমানদের এ উন্নতি দেখে খৃষ্টানজাতি ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠে এবং তারা স্পেন থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ করার জন্য বদ্ধ পরিকর হয়। এরই রেশ ধরে তারা স্পেনের গ্রামান্তরে মুসলমানদের বাড়ী ঘর শষ্যক্ষেত্র জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং তাদের উপর নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। ১৪৭৯ খৃষ্টাব্দে চরম মুসলিম বিদ্বেষী এরাগান রাজ ফার্ডিন্যান্ড এবং ক্যাষ্টাইলের রাণী ইসাবেলা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হবার পর থেকে স্পেনে খৃষ্টানদের শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
অপরদিকে মুসলমানদের মধ্যে দেখা দেয় বিশ্বাসঘাতকতা। ইসলাম থেকে দূরে সরে যাবার কারণে সম্মিলিত খৃষ্টান শক্তি আক্রমণ করে কর্ডোভা, সেভিল, ভেলেপিয়া দখলের পর মুসলিম সভ্যতা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের কেন্দ্রস্থল গ্রানাডা রাজ্যের দোর গোড়ায় উপনীত হয়। গ্রানাডার শেষ রাজা আবুল হাসানের ক্ষমতালোভী পুত্র বিশ্বাসঘাতক আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ খৃষ্টান নেতা ফার্ডিন্যান্ড ও ইসাবেলার সাথে যোগ দিয়ে নিজ পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গ্রানাডা দখল করে খৃষ্টানদের হাতে তুলে দেয়। কার্যসিদ্ধির পর খৃষ্টানরা তাকে বিতাড়িত করে। খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মুসলমানরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
এমনিভাবে ৬২ বছর পর্যন্ত ভয়ানক যুদ্ধ চলতে থাকে। এ সময় প্রতারক ফার্ডিন্যান্ড ঘোষণা করল মুসলমানরা যদি শহরের গ্রানাডার প্রধান ফটক খুলে দেয় এবং নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে আশ্রয় নেয় তাহলে তাদের মুক্তি দেয়া হবে। নেতৃত্ববিহীন রণক্লান্ত, হতাশাগ্রস্ত মুসলমানরা খৃষ্টানদের প্রতারণা বুঝতে না পেরে সরল বিশ্বাসে শহরের বিভিন্ন মসজিদে আশ্রয় নেয় নিজেদের জান বাঁচানোর আশায়। ১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল সকালে ঘাতক খৃষ্টান নেতার অনুচররা একযোগে শহরের সমস্ত মসজিদের দরজাগুলোতে তালা লাগিয়ে দেয়। ঘাতক ফার্ডিন্যান্ড আন্তর্জাতিক যুদ্ধনীতি উপেক্ষা করে নিরীহ বেসামরিক শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের আশ্রয় স্থল মসজিদের কামানদেগে চারিদিক ঘেরাও করে আগুন জ্বালিয়ে ৭ লাখ ৩৪ হাজার মুসলিম নর-নারী ও শিশুকে পৈশাচিকভাবে হত্যা করে।
এরগান রাজ ফার্ডিন্যান্ড এর কুটচালে মুসলমানদের বিপর্যয়ের এ ঘটনা শুনে তার স্ত্রী ক্যাষ্টাইলের রানী ইসাবেলা বলেছিল সত্যিই মুসলমান! You are April Fool অর্থাৎ এপ্রিলের বোকা। সেদিনের জঘন্য হত্যাকান্ড ঘটেছিল সকাল ৯.৩০ মিনিট ১লা এপ্রিল ১৪৯২ খৃষ্টাব্দ। আর মুসলমানদের সাথে এই প্রতারণার স্মৃতির স্মরণ করে খৃষ্টান দুনিয়ায় আনন্দ উৎসব হিসেবে এপ্রিল মাসের ১ তারিখ April Fool অর্থাৎ এপ্রিলের বোকা দিবস পালিত হয়।
ইতিহাসের জঘন্যতম এই হত্যাকান্ড কেন্দ্র করে এদিন আমোদ ফূর্তি করা কতটুকু বিবেকবানের কাজ তা বিচারের ভার পাঠকের কাছে রইল।
অশিক্ষা-কুশিক্ষা, অজ্ঞানতা এমনকি সামাজিকতা রক্ষার নামে আমরা Birthday, Marriageday এক মিনিট নিরবতা (নীরবে মনে মনে কি বলতে হয়?) পালন করছি, কবরে পুষ্পস্তবক অর্পন, 31st Night উদযাপন, Valentine day ,পালন April Fool day , (১লা এপ্রিল) পালন, হিন্দু ধর্মেরঅনুসরণে পালন করছি গায়ে হলুদ (ভারতে এটিকে বলা হয় গাত্রে হরিদ্রা) অনেকেই আরো Advance হয়ে অতি Cultured আর বিত্তশালীরা পালন করছে রাখী বন্ধন, মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন, বিশেষ পদ্ধতিতে টিপ চন্দনের ব্যবহার ইত্যাদি।
মোমবাতি জ্বালিয়ে, ছুরি দিয়ে কেক কেটে জন্মদিন পালন করছি, যার জন্মদিন তাকে জানাই Happy birth day to you (শুভ জন্মদিন তোমার)। এর মানেটা কি? যার জন্মদিন তার জন্য আল্লাহর নিকট এটা কি কোন দোয়া হলো? যাদের দাওয়াত দেওয়া হয় তাদেরকেও ফেলা হয় বিপদে, তারা ভাবে আর একটা ঝামেলায় পড়া গেল, কিছু একটা উপহার তো দিতে হবে। এভাবে যখন একজনকে বিপদে ফেলা হয় তখন তার দোয়া করার মানসিকতার আর ফুরসত থাকে না।
সেক্যুলার (ঔপনিবেশিক আমলের উদ্দেশ্যহীন) শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণায় ঔদাসীন্য ও নির্লিপ্ততা ইসলামী সংস্কৃতি প্রচার প্রসারে অনগ্রসরতার অন্যতম কারণ। যাদের পূর্বপুরুষরা শতাব্দী যাবত পৃথিবীর মানুষকে বিজ্ঞানের নানা শাখা-প্রশাখার সাথে পরিচিত করিয়েছে তারা আজ অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত।
বর্তমানে ১৫৬ কোটি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত মুসলিম বিশ্বের মাত্র ৪৫ হাজার বিজ্ঞানী বিজ্ঞান গবেষণায় নিয়োজিত আছেন, অথচ মাত্র ৪৫ লাখ আধুষিত ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলে বিজ্ঞান গবেষণায় নিয়োজিত ৩৫ হাজার বিজ্ঞানী।
তারা ইহুদী-খৃষ্টানরা ঠিকই জ্ঞান গবেষণায় রয়েছে আর আমরা তাদের বস্তাপচা কালচারকে নিজেদের অজান্তেই অনুসরণ করে চলছি। বাজে বন্ধুদের সাথে অতিরিক্ত আড্ডা, অবৈধ প্রেম, নগ্নতা, মেয়েদের নিজেকে আকর্ষণীয় করে অন্যের চোখে মেলে ধরার কৌশল, হিরোইন, মদ, গাঁজা, আফিম, কোকেন, ফেনসিডিল, ড্রাগ, সম্প্রতি আবিস্কৃত এলএসডি ইত্যাদি আসক্তি আজ বিস্তার লাভ করছে।
বর্তমান সময়ের যে ভালবাসা তার জন্য হতবাক হতে হয়। শপিং মল, মেলা, উৎসবে, মানুষ গড়ার আঙ্গিনায় ভালবাসার ছড়াছড়ি।
তরুণ-তরুণীর ভালবাসা Transfer হয়ে চলে যাচ্ছে কোন তারকার দিকে। কয়েক বছর পূর্বে বাংলাদেশে এক নায়ক মারা গেল, তার মোহে পাগল হয়ে সারা দেশে শোকে মুহ্যমান হয়ে মারা যায় কয়েকজন মেয়ে। ঢাকা ষ্টেডিয়ামে ক’বছর পূর্বে ক্রিকেট খেলতে নেমেছিল পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা, গ্যালারী ভর্তি দর্শকের বেশিরভাগ তরুণ-তরুণী। ডজনের উপরে তরুণী সেদিন গলায়, বুকে বিজ্ঞান লটকিয়ে ছিল Afridi Please maray me. যা দেশের জাতীয় দৈনিকগুলো ফলাও করে প্রচার করেছে ছবি সমেত। কত বড় নির্লজ্জ বসাত্বতা বিবর্জিত, বিবেকহীন কান্ডকারখানা।
আজকের পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞান যে মধ্যযুগের মুসলমানদের দান, সে ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারের ধারাবাহিকতা আমরা মুসলমানরা রক্ষা করতে পারিনি। ইহুদীবাদের জনক থিওডোর হার্টজেল তার জাতির প্রকৃত সমস্যা অনুধাবন করে শিক্ষাকে তাদের উন্নতির একমাত্র পথ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।
সানডে টাইম এর খবর অনুযায়ী ইসরাইলের প্রধান রাসায়নিক ও জীবানু অস্ত্র নির্মাণ গবেষণাগার নেস আইওনার বায়োলজিক্যাল ইনষ্টিটিউট এমন জীবাণু অস্ত্র নির্মাণে সক্ষম হয়েছে যা মানব জিনের পার্থক্য নিরুপনের মাধ্যমে বেছে বেছে আরব জনগোষ্ঠীর উপর আঘাত হানবে। এ জীবাণু অস্ত্রের মাধ্যম হলো পানি ও বায়ু। দৈনিক ভোরের কাগজ ২৩/৯/৯৮ইং।
আজ যদি মুসলিম জাতিকে টিকে থাকতে হয়, তবে মানবিক জ্ঞান ও ইসলামী জ্ঞান দ্বারা জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে সত্যিকার অর্থে ঢেলে সাজাতে হবে। ইসলামী জ্ঞান ও আধুনিক কলা-কৌশলের মাধ্যমে অজ্ঞতা, অশিক্ষা-কুশিক্ষা, অপসংস্কৃতি-কুসংস্কৃতিকে দলিত মথিত করে ইসলামের সোনালী অতীতকে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।