আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল

আজকের ভোরে সূর্যদয় দেখেছি, আগামীকাল আরেকটি সূর্যদয় দেখার আশায়। যারা একে-৪৭ রাইফেল সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে চান তাদের জন্য। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীতে যত হত্যাকান্ড সংঘঠিত হয়ে থাকে তার সিংহভাগই করা হয় এই একে-৪৭ এর সাহায্যে। পৃথিবীর সত্তরটিরও অধিক দেশ এই অত্যাধুনিক অ্যাসল্ট রাইফেল ব্যাবহার করে থাকে,যার মধ্যে বাংলাদেশও আছে। অ্যাসল্ট রাইফেলের কনসেপ্ট প্রথম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানরা প্রবর্তন করে।

তাদের সেই গবেষনার ফলাফল ছিল Sturmgewehr 44 রাইফেল। Sturmgewehr 44 রাইফেল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে জার্মান সৈনিকেরা Sturmgewehr 44 রাইফেল সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যাবহার করে। যা থেকে প্রাপ্ত তিক্ত অভিজ্ঞতা রাশানদের প্রভাবিত করে অনুরূপ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি রাইফেল তৈরির জন্য। মিখাইল কালাশনিকভ ছিলেন একজন উইপন ডিজাইনার।

তিনি 7.62x41mmকার্টিজ বহনক্ষম একটি রাইফেল তৈরির পরিকল্পনা করেন। কিন্তু রাশিয়ার আর্দ্র ,কর্দমাক্ত ও ঠান্ডা পরিবেশের জন্য উপযুক্ত সেই ধরনের একটি রাইফেল তৈরি করা ছিল সত্যিই একটি কঠিন কাজ। মিখাইল কালাশনিকভ অন্যদিকে এই ধরনের একটি অ্যাসল্ট রাইফেল তৈরি করার জন্য রাশান আর্মিও আগ্রহ প্রকাশ করে। "Alexey Sudayev " সেই ধরনের একটি রাইফেল প্রদর্শন করেন ১৯৪৪ সালে। কিন্তু ওজনের দিক দিয়ে সেটা ছিল খুবই ভারী।

এরও দুই বছর পর যখন উইপন ডিজাইনিং এর উপর একটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়,তখন মিখাইল কালাশনিকভ ও তার ডিজাইনিং টিম তাদের রাইফেলের একটি নকশা প্রদর্শন করেন। এটি ছিল একটি গ্যাস অপারেটেড রাইফেল এবং এটাতে ৩০ রাউন্ড বুলেটের একটি ম্যাগাজিন ব্যবহার করা যেত। তখন এই রাইফেলকে একে-১ এবং একে-২ হিসেবে সম্বোধন করা হত। একে-৪৭ এর গ্যাস অপারেটেড মেকানিজম। কালাশনিকভের এই ডিজাইন প্রতিযোগীতার দ্বিতীয় ধাপের জন্য মনোনিত করা হয়।

১৯৪৬ সালে রাইফেলটি পুন:রায় টেস্ট করার আগে কালাশনিকভের এক সহকারী রাইফেলটির ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এর নকশা কিছুটা পরিবর্তনের প্রস্তাব করেন। কিন্তু কালাশনিকভ নকশা পরিবর্তনের জন্য অনিচ্ছুক ছিলেন কারণ তাদের রাইফেল ইতিমধ্যেই ভালো পারফর্ম করেছে অন্য প্রতিযোগীদের তুলনায়। কিন্তু অবশেষে ,যভাবেই হোক, "Aleksandr Zaytsev" কালাশনিকভকে রাজি করান। তাদের রাইফেল দ্বিতীয় রাউন্ডের ফিল্ড টেস্টে অংশগ্রহন করে এবং হালকা, নির্ভরযোগ্য, দীর্ঘ রেঞ্জ ও সহজে ব্যবহারযোগ্যতা ইত্যাদি কারণে অত্যাধুনিক অস্ত্র হিসেবে মনোনিত হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশ একে-৪৭ এর বিভিন্ন সংস্করণ তৈরি করেছে।

এক নজরে একে-৪৭ ডিজাইনার :-মিখাইল কালাশনিকভ প্রস্তুতকারি দেশ :-রাশিয়া ওজন :-৫.২১ কেজি (লোডেড ম্যাগাজিন সহ) দৈর্ঘ্য :-৮৭০ মি.মি. ব্যারেল :-৪১৫ মি.মি. কার্টিজ :-৭.৬২×৩৯ মি.মি. রেট অব ফায়ার :-৬০০ রাউন্ড/মিনিট কার্যকর দূরত্ব :-৪০০ মিটার (সেমি অটোমেটিক) ৩০০ মিটার (ফুল অটোমেটিক) একে-৪৭ বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটিরও অধিক এই অস্ত্র বিক্রি হয়েছে এবং বিশ্বের প্রায় ৫০ টিরও বেশি দেশের সামরিক বাহিনীতে এটি ব্যাবহ্ত্রত হচ্ছে। যা কিনা দুনিয়ার সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় রাইফেল। একে ৪৭ এর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারন এর সহজ ব্যবহার,নির্ভরতা ও রক্ষানাবেক্ষন ইত্যাদি। এটাকে বিশ্বের প্রথম কার্যকর অটোমেটিক রাইফেল বলা হয়।

১৯৫১সাল থেকে এখনও এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সৈন্যদের মধ্যে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তার মূল কারণ এটি জলে ভিজিয়ে, ধুলাতে রেখে বা এর উপর দিয়ে রাস্তা মেরামতের রোলার চালানোর পরও এটিকে আগের মতই ব্যাবহার করা যায়,যা এর সমপর্যায়ের অন্যান্য অস্ত্রের ক্ষেত্রে অসম্ভব। একে ৪৭ এর অন্যতম বৈশিষ্ট হল এর বুলেট এর মারাত্বক ভেদন ক্ষমতা ,এটি ৭.৬২×৩৯ মি.মি বুলেটকে ৭১৫ মিটার/সেকেন্ডে ছুড়ে যা ৮ ইন্চি কাঠ এবং ৫ ইন্চি কনন্ক্রিট ভেদ করতে পারে। এছাড়া এতে কষ্টমাইজ বুলেট ব্যবহার করা যায়। এতে সিঙ্গেল শট, ব্রাস্ট অব ফায়ার এবং গ্রেনেড ছুড়ার সুবিধা আছে ।

নির্ভরতার দিক দিয়ে আজও একে ৪৭ অনন্য। একে ৪৭ এ কখনো ব্যাক ফায়ার হয় না। এটিকে দুনিয়ার যেকোন স্থানে ব্যবহার করা যায়। তীব্র শীত,গরম,ভেজা আবহওয়াতেই এর কিছু হয় না। অন্যান্য রাইফেলের তুলনায় একে-৪৭ জ্যাম হবার রেটও কম।

বর্তমান বিশ্বের সব দেশই একে ৪৭ বা এর বিভিন্ন সংস্করনের রাইফেল ব্যবহার করে থাকে। বাংলাদেশে সেনাবাহিনীতে একে ৪৭ এর চাইনিজ সংস্করন টাইপ ৫৬ ব্যবহৃত হয়। তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া ও অন্য কিছু ইন্টারনেট সূত্র ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।