মাম্মা! এইবার কিন্তু তোমার পার্টি দেওয়াই লাগব। চুপে চাপে প্রেম করবা আর পার্টি দিবা না তা তো হবে না ,প্রিন্স বলে উঠল,বাকি সবাই পার্টি পার্টি বলে চিৎকার করে হা ভোট দেয়ায় মত্ত। গ্রুপের কেও প্রেম এ পড়লে তাকে পার্টি দিয়ে হবে আইন টা হুমায়ুন এর করা। ভেবেছিল ওর জীবনে যেহেতু প্রেম আসবেই না তো সে নিরাপদ। ওই আইনটাই যে বুমেরাং হয়ে ওর দিকে ফায়ার করবে তা যদি জানত।
আরে প্রেম করি কই? ও তো আমার ফ্রেন্ড। মাঝে মাঝে একটু একটু কথা হয় আর কি। তাড়াহুড়া করে ফোনটা কাটা হয় না হুমায়ুনের। বন্ধুদের বুঝাতে চেষ্টা প্রেম টেম কিছুই না জাস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু পার্টি আদায়ে ব্যাস্ত ফ্রেন্ডরা বুঝলে তো।
আখির সাথে পরিচয় সেই কলেজে পড়ার। ম্যাথ প্রাইভেট পরতে গিয়ে প্রায়ই দরজার ফাক গলে স্যারের সুন্দরী মেয়ে চোখ পরত। ব্রেইনের বদলে ফাজলামি তে যার মাথা ভরতি সে কি আর ফাজলামি করা বাদ দেয়। স্যারের মেয়ে তো কি হয়েছে। সব সময় ই দরজার সোজাসোজি বসত সে মেয়েটার সাথে ফাজলামি করার জন্য।
অথচ দু বছরে কথা হয়নি একদিন ও। যা হত সব চোখে চোখে।
এক সময় পড়ালেখায় সিরিয়াস হয়ে যায় হুমায়ুন। ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন দেখে। এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় চলে আসে কোচিং এর জন্য।
সময় বয়ে যায় ব্যাস্ততায় আঁখির অস্তিত্ত ভুলেই যায় সে।
একটা মানুস কি পরিমান মানসিক সাপোর্ট দিতে পারে আঁখির সাথে কথা না হলে অজানাই থেকে যেত হুমায়ুনের। বুয়েটে চান্স না পেয়ে কি পরিমান মানসিক কষ্টে ছিল সে,যার স্বপ্ন ভাঙ্গে নি সে কখনো বুঝতে পারবেনা।
সেই দিনের কথা ভালই মনে আছে হুমায়ুনের। বাসায় বসে সাত পাচ ভাবছিল,এমন সময় মোবাইলে কল,আননোন নাম্বার থেকে কল।
রিসিভ করতে ইচ্ছে করছিল না তারপর ও মোবাইলের চিল্লা ফাল্লায় রিসিভ করতে বাধ্য হল। হ্যালো হুমায়ুন ভাইয়া বলছেন? ওপাশ থেকে একটা কিন্নরী কন্ঠ বলে উঠল। জি বলছি,কে বলছেন প্লীজ?বিরক্তি চেপে জবাব দিল হুমায়ুন। প্রথমে মনে না পরলেও পরে চিনতে পেরে বেশ অবাক হয়েছিল সে। আহ কতদিন পর!
এরপর প্রায় ই কথা হত।
মেয়েটা এত কথা বলতে পারে। মনে মনে হাসে হুমায়ুন। ওর সাথে কথা বলতে ভালই লাগে ওর। নিসঙ্গ জীবনে বন্ধুর মত আগলে রাখে ওকে। এভাবে প্রায় এক বছর চলে যায়।
ইতমধ্যে হুমায়ুনের অনুপ্রেরনায় বেশ ভাল রেজাল্ট নিয়ে আখি এইচ এস সি পাশ করে। হুমায়ুন এমনিতেই ভাল ছাত্র তার উপর আখির কেয়ারিং এ রেজাল্ট আগের চেয়ে বেস ভাল হতে লাগল,প্রত্যেক সেমিস্টারের রেজাল্ট আগের টার চেয়ে ভাল। তবে ওদের সম্পর্ক টা ভালবাসা বা প্রেম এরকম কিছুই না,অন্তত তাই ভাবে হুমায়ুন। ভাললাগে ব্যাস অতটুকই।
কফিশপ এ পৌছাতে দেরী হয়ে যায় হুমায়ুনের।
পোলাপান গুলা পার্টি নিয়ে এত লাফালাফি না করলে দেরি হত না ওর। অনেক কষ্টে ওদের বুঝাতে সমর্থ হয় যে ওরা জাস্ট ফ্রেন্ড। কত টুকু বিশ্বাস করল ওরা তা নিয়ে হুমায়ুনের মাথা ব্যাথা নেই,পার্টি দিতে হচ্ছেনা বলেই খুশি। ব্যাপার টা টাকা পয়সার না,প্রেম নিয়ে বড় বড় কথা বলা পাবলিক প্রেম করে,আম জনতার কাছে সেটা স্ক্যান্ডালের চেয়ে কম কিসে । ভাগ্যিস জানে না ওরা দেখা করছে আজ।
কফিশপ টার নাম অনেক সুন্দর। কফিতা। নিশ্চয়ই কোন উপন্যাস থেকে নেয়া। অস্থির মেয়েটার ফোনের জালায় প্রায় দৌড়ে কফিশপে পৌছাল হুমায়ুন। তাকিয়ে দেখে এক কোনে বসা।
চোখে অভিমান,যেন বলতে চাইছে এত দেরি করলা কেন,জান আমি কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি। কিন্তু বলে না। সব কথা তো মুখে বলতে হয় না চোখেই বলা হয়ে যায়। প্রায় সাত মাস পরে দেখা। একই শহরে থাকা সত্তেও দেখা হয়না।
বলা ভাল দেখা করতে চায় না হুমায়ুন। আখি প্রায়ই বলে চল দেখা করি। সময় নেই বলে এরিয়ে যায় হুমায়ুন। কেন এমন করে সে নিজেও জানে না। আগের চেয়ে অনেক সুন্দর লাগছে আঁখি কে।
মেয়েটা কি দিন দিন সুন্দর হচ্ছে নাকি আগেই ছিল এমন খেয়াল করা হয় নি,ভাবে হুমায়ুন। ফেয়ার এন্ড লাভলী সস্তা হয়ে গেল নাকি?
কত কথা জমা হয়ে আছে আখির। খুব বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু পারে না। যদি ফিরিয়ে দেয়। যদি ওকে একা রেখে চলে যায়।
খুব ভয় হয় আখির। মনে পরে সেই দিনের কথা,প্রথম যেদিন হুমায়ুন কে দেখে, সহজ সরল একটা ছেলে,চোখে মুখে দুস্টামির ছাপ। সারাক্ষন দুস্টামি করে যাচ্ছে একটু ক্লান্তি নেই। কেন জানি এই ছেলেটাকেই ভাল লেগে যায় আখির। মনে হয় ওর জন্যই পৃথিবী তে আসা।
হুমায়ুন প্রাইভেট এ আসছে না কিছুদিন,অকে না দেখে কেমন জানি অস্থির লাগে আঁখির । অনেক সাহস করে একটা চিঠি লিখেছিল হুমায়ুন কে দেবে বলে,কিন্তু সেদিন ই জানতে পারে হুমায়ুন ফ্যামিলি সহ ঢাকা চলে গেছে কয়েকদিন । একই এলাকা হওয়া সত্তেও হুমায়ুনের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করতে লেগে যায় প্রায় এক বছর। এই এক বছর কতটা কষ্টে কাটল আঁখির তা যদি হুমায়ুন জানত।
অনেক কথাই হল।
বেশির ভাগ ই পড়ালেখা কেন্দ্রিক। হুমায়ুন সাজেশন দেয় মেডিক্যাল এ পড়তে। আখিরও তেমনি ইচ্ছা। মনেক কথা টা আর বলা হয়না আখির,কিসের যেন দ্বিধা। কথা বলতে বলতে বিকেল গড়িয়ে আসে।
উঠে যাবে এমন সময় হঠাত হুমায়ুনের হাত চেপে ধরে আখি,অস্রু ভেজা কণ্ঠে জানতে চায়,আচ্ছা আমরা কি শুধুই ফ্রেন্ড?
অস্রু টলমল চোখের দিকে তাকায় হুমায়ুন। বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে উঠে,ঝড় বয়ে যায় মনের কোন এক গহিনে। অদ্ভুত কিছু ভালো লাগার অনুভুতি চারদিকে। এত ভাল লাগা গুলো কোথায় ছিল এতদিন। তবুও কেন জানি আঁখির হাত টা ছাড়িয়ে কফিশপের বাইরে চলে আসে সে……………
মোবাইল টা পকেট থেকে বের করে সে,মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়া শেষ।
ওপারে রিসিভ হতেই বলে,সাইফ সবাইকে নিয়ে কে এফ সি তে চলে আয়। পার্টি আছে
PS: লেখার উৎসাহ যোগাতে আপনার মুল্যবান কমেন্ট দিতে ভুলবেন না।
গল্প টা এ পেজ এ পোস্ট করা হয়েছে। ভালবাসা ভালবাসাবাসি ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।