বাঙলা কবিতা । । বাঙলায়ন : রহমান হেনরী । ।
___________________
১৮২৭-এর এক বসন্তের দিন, বেঠোভেন ওড়াচ্ছে
মৃত্যুখোচিত পাল, আর চলে যাচ্ছে অনন্তের দিকে।
বিচূর্ণ-পাথরগুলি অনন্ত ঘুমের লোম্পভে ঢুকে যাচ্ছে ইউরোপের বায়ুকলে কলে
বুনোহাঁস ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাচ্ছে উত্তরের দিকে।
এটাই প্রাগুক্ত সেই উত্তরের দিক, এখানেই স্টকহোম
ঝলমল করে ওঠা সগর্বিত অসজ্র প্রাসাদ আর ঘিঞ্জি বাড়িঘর।
রাজপ্রাসাদের উনুন জুড়ে কাঠের খড়িগুলো
খসে পড়ছে প্রশান্ত ভঙ্গিমা থেকে।
শান্তির জয় হচ্ছে, গো-বসন্ত আর গোল আলুরা সুখি,
তবু গভীর নিঃশ্বাস ছাড়ছে নগরীর ইঁদারা সকল।
অন্তিম ভোজনের মত ওই চাকার চেয়ারে বসা মুখঢাকা পিপাগুলি
রাত্রির কাঁধে চেপে চলে যাচ্ছে নর্থ ব্রিজ শহরের দিকে।
কুচি কুচি পাথর ও খোয়া কম্পমান করে দিচ্ছে পিপাদের সহজ চলন
এখানে সেখানে কিছু ভদ্রলোক গেয়ে যাচ্ছে মিষ্টি-করুণ ম্যমসেলেস।
অপ্রশমনীয় বিজ্ঞাপনী-বোর্ডগুলো ড্যাব ড্যাব তাকিয়ে দাঁড়ানো
ধূমপানরত যত কৃষ্ণাঙ্গের ছবি তাতে আঁকা।
অজস্র, অনেক দ্বীপ, বহু বহু নৌকা সারি সারি
অদৃশ্য উড়িয়ে পাল, গুণ টেনে চলে যাচ্ছে স্রোত-বিপরীতে!
সমুদ্র-প্রণালীগুলো চলাচল উপযোগী হলো, এসে গেল এপ্রিল-মে
আর উপাদেয় মধু-ঝরা প্রিয় জুন মাস।
আগেভাগে উষ্ণতা এসে গেল দ্বীপগুলি জুড়ে।
গ্রামের সমস্ত বাড়ি খুলে দিলো বন্ধ দরোজা, শুধু একটাই এখনও অখোলা।
স্নেইক-ক্লকের চূড়াটি চেটে খাচ্ছে এই নিঝুম নীরবতা।
শিলাপাথরের ঢালগুলি ঝকমক করে উঠছে খনিজবিদ্যার স্থিরতায়।
এরকমই ঘটেছিলো, কিংবা ব্যাপারগুলো ছিলো প্রায় এমনই।
বলছি, অজ্ঞাত এক পারিবারিক গল্প
এরিকের কথা, দৈব অভিশাপে ঘটে যাওয়া সর্বনাশ
আত্মায় গুলি গেঁথে অচল হয়ে যাবার সেই কাহিনী।
শহরে গিয়েছিলো, সাক্ষাত পেলো এক শত্রুর
আর ঘরে ফিরলো, অসুস্থ, ফ্যাকাসে-বিবর্ণমুখ।
পুরোটা গরমকাল শুয়ে থাকলো বিছানায়
পাঁচিলময় বাজতে থাকলো রোদন-বংশীধ্বনি।
নির্ঘুম শুয়ে থাকা তার, সারারাত শুনতে পেতো কোমল গুঞ্জন
শিশু-প্রজাপতিদের, জ্যোৎস্নাবন্ধুদের হৈ-হুল্লোর।
শক্তি নিস্তেজ হয়ে উঠছিলো তার, অযথাই ঠেলে পাঠানো হচ্ছিলো
নিস্ফলা আগামীর দিকে।
তার হৃদ-গভীরের ঈশ্বর যেন গহন থেকে ডুকরে উঠছিলো
"চালান করে দাও আমাকে, চালান করো তোমার নিজেকে!"
বহিরাঙ্গের সকল ক্রিয়াদি ডুবে যাচ্ছিলো অন্তরলোকে।
ছিন্নভিন্ন তার অঙ্গগুলো যেন জড়ো করে রেখেছে কেউ।
বইতে লাগলো বাতাস আর বনগোলাপের ঝোপগুলো
দৃশ্যমান হলো, অপসৃয়মান আলোতেও।
ভবিতব্য খুলে দিলো দ্বার, সে ধ্যান রাখলো
স্বয়ং ঘূর্ণমান দূরবীণ যন্ত্রে
দেখতে পেল, অনেক অচেনা মুখ হৈ হৈ করে হাঁটে-ছোটে
পারিবারিক কারও মুখ জন্মেনি তখনও।
বিভ্রমবশত তার গভীর চাহুনি দেখে ফেললো হঠাৎ আমাকে
তখন এখানে আমি, ওয়াশিংটনে, হাঁটাহাঁটি করছি অকামে
আড়ম্বরপূর্ণ সব অট্টালিকা, ওসবের মাঝখান দিয়ে
যেখানে প্রত্যেক দ্বিতীয়-সারির বাড়িগুলো আভিজাত্যে বোনা।
দাহন-চুল্লির ধাঁচে গড়ে-ওঠা শাদা শাদা কত অট্টালিকা
গরীবের স্বপ্নগুলি যেখানে নিঃশেষে হয় ছাই।
অবনত মসৃণ সিঁড়িগুলো অত্যাধিক খাড়া হয়ে নেমে গেছে
আর যেন পৌঁছে গেছে অনির্ণীত অতলের কোনও রসাতলে।
_________________________________
Source: New and Collected Poems (Bloodaxe Books, 1997)
_________________________________
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।