আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘মরদে মোমিন’ মাহমুদুর ও তাঁর ‘আমার দেশ’-এর প্রতারণা

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। তিনি মরদ্। তিনি ‘মোমিন’। তিনি ইসলামের জন্য জান কোরবান। তিনি মাহমুদুর।

তিনি রহমান। তিনি মরদে ‘মোমিন’ মাহমুদুর রহমান। তিনি মোহতারেমা খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টা, তিনি একজন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। তিনি একজন ‘বাইচান্স এডিটর’। তিনি ‘বুয়েট’-এর একজন ইঞ্জিনিয়ার।

তিনি বেক্সিমকোর একজন সাবেক কর্মকর্তা। তিনি মোহতারেমা খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় টার্মে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান; তিনি মোহতারেমার এই দ্বিতীয় জামানায় মোহতারেমার জ্বালানি উপদেষ্টাও ছিলেন। তিনি মোহতারেমার ওই জামানায় উত্তরা ষড়যন্ত্রের মূল কারিগর। আমাদের সুপ্রীমকোর্টের রায়ে তিনি একজন ‘ক্রিমিনাল’; ফৌজদারি অপরাধে কারাদ-ভোগী ‘ক্রিমিনাল’। তিনি আমেরিকান ভিসা-প্রত্যাখ্যাত কালো তালিকাভুক্ত এক আদমি।

তিনি একজন ষড়যন্ত্রকারী, ‘রাজাকার’ এবং প্রতারক। তিনি মরদে মোমিন মাহমুদুর রহমান। তিনি একজন প্রতারক; তার এই প্রতারণাটা দেখা যাবে গত ১১ মার্চ সোমবার তার ‘আমার দেশ’ নামক বাংলাদেশের সম্পাদক-সাংবাদিকদের বৃহত্তর অংশের কাছে ধিক্কৃত পত্রিকা নামের টয়লেট পেপারটিতে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপনে। বিজ্ঞাপনটির প্রথম চার লাইন নিচে উদ্ধৃত করছি : ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। দেশের শীর্ষস্থানীয় বৃহৎ একটি হাউজিং কোম্পানির ঢাকা-মাওয়া চার-লেন হাইওয়ে রোডের সাথেই অবস্থিত এখনই রেজিস্ট্রেশন প্রদানযোগ্য পরিকল্পিত আবাসন প্রকল্পে প্রকৃত মূল্যের প্রায় অর্ধেক মূল্যে লটারির মাধ্যমে’... দুই. দয়া করে বিশেষ মনযোগ দিয়ে বিজ্ঞাপনটি পড়ে দেখুন।

প্রথমেই লক্ষ্য করুন, শুরুই হয়েছে ‘বিসমিল্লাহ’ দিয়ে। এই প্রসঙ্গে সাম্প্রতিককালে ‘বিসমিল্লাহ গ্রুপ’ নামের একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বার শ’-চৌদ্দ শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে এই গ্রুপের ষড়যন্ত্রকারীদের পালিয়ে যাওয়ার, উধাও হওয়ার আলোড়ন সৃষ্টিকারী খবরটির প্রতি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ধর্ম ব্যবসায়ীরা, জামায়াতী-শিবিররা ‘মরদে মোমিন’ মাহমুদুররা ‘বিসমিল্লাহ’ বলেই প্রতারণা করতে সুযোগ, উছিলা খোঁজে। কখনও কখনও তারা পেয়েও যায়। ‘আমার দেশ’-এর এই বিজ্ঞাপনেও তা দেখা যাচ্ছে।

লক্ষ্য করুন, এই বিজ্ঞাপনে আবেদনকারীর ব্লাডগ্রুপ, উচ্চতা, ওজন ছাড়া আর সব কিছুই চাওয়া হয়েছে- নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, জন্ম তারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পেশা, বর্তমান ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর, সবকিছুই দিতে বলা হয়েছে আবেদনকারীকে। কিন্তু প্রতারক চক্র আবেনদকারীকে জানতে দিচ্ছে না ‘দেশের শীর্ষস্থানীয় বৃহৎ একটি হাউজিং কোম্পানির’ নামটি! কাঠাপ্রতি বর্তমান ১২ লাখ টাকা মূল্যের জায়গায় লটারি মূল ‘ছয় লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা দাম’; কিন্তু ‘ঢাকা-মাওয়া চার লেন হাইরোডের সঙ্গেই’ কোথায় এই পরিকল্পিত আবাসন প্রকল্পটি অবস্থিত তা জানাটা ‘বিলকুল হারাম’ বলেই বোধ হয় ‘মরদে মোমিন’ মাহমুদুরের প্রতারক চক্র বিজ্ঞাপনে আবেদনকারীদের তা জানতে দেয়নি। প্রতারণার জালটি কত বড়, কত গভীর এবং ব্যাপক লক্ষ করলে দেখা যাবে- বিজ্ঞাপনে কোন কর্মকর্তার নাম, ঠিকানা নেই, নেই কোন টেলিফোন নম্বরও! আবাসন কোম্পানির নাম নেই। আবাসন কোম্পানি; নাকি ভূমিদস্যুর কোম্পানি? আলামত দেখে নিশ্চিত মনে হয়, দেশের অনেক ভূমিদস্যু প্রতারকের সঙ্গে এই ‘মরদে মোমিন’ মাহমুদুরও যোগ দিয়েছে। আবেদনকারীদের ‘আমার দেশ’ অফিসের ঠিকানায় আবেদন পঠাতে বলা হয়েছে।

তার মানে এই প্রতারণা থেকে লব্ধ টাকার একটি শেয়ার থাকবে মরদ মাহমুদুরের। ঢাকার আশপাশের খাল-বিল-নদী-নালায়, গভীর পানিতে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে অনেক ভূমিদস্যু, অনেক প্রতারক প্রতি মাসে নিরীহ সৎ মানুষজনকে নিঃস্ব করে ছাড়ছে। এমন সব প্রতারিত কারও কারও মর্মান্তিক কাহিনী প্রায়ই পত্রপত্রিকায়, টিভি চ্যানেলে দেখতে পাই। মরদ মাহমুদুরের ‘আমার দেশ’-এ প্রকাশিত এই বিজ্ঞাপনের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট তারা যদি সৎই হবে, তাহলে এত গোপনীয়তা, এত ‘সিক্রেসি’ কেন? নিশ্চয়ই এটি দুই নম্বরি-তিন নম্বরি কিছু। লাখ লাখ টাকার বিনিয়োগ; কিন্তু কোথায়, কার কোম্পনিতে, কোন আবাসন কোম্পানিতে- এসব প্রাথমিক তথ্য ছাড়াই বিজ্ঞাপন ছাপে একটি দৈনিক পত্রিকা! আর চোখে পড়ে না আমাদের প্রেস কাউন্সিল নামের জড় প্রতিষ্ঠানটির! এখানেই তো প্রশ্ন।

সাংবাদিকদের এবং গণমাধ্যমগুলোকে দেশ, রাষ্ট্র ও সমাজের ‘ওয়াচডগ’ হিসাবে দেখা হয়। আমাদের মতো দেশে যেখানে জাতীয় সংসদ অকার্যকর, সেখানে সাংবাদিকরা দুর্নীতি, লুণ্ঠন, প্রতারণা, চাঁদাবাজি দখলবাজি- এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার খবর ও সক্রিয় থাকবেন, সেটাই প্রত্যাশিত। বস্তুত সাংবাদিকদের বড় একটি অংশ তা করছেনও এবং সেজন্য তারা নন্দিত। আমাদের দেশের ক্ষুব্ধ মানুষজন প্রতিকার চাইতে একজন নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে যায় না; তারা খোঁজে একজন সাংবাদিককে। কিন্তু প্রতারক যদি কোন ‘মরদে মোমিন’ মাহমুদুর নামের কোন ‘বাইচান্স এডিটর’ হয়ে থাকে, তাকে কি সম্পাদক-সাংবাদিকরা ‘এক্সপোজ’ বা উন্মোচন করবেন না? নাকি, সাংবাদিক বলে তাকে ছেড়ে দেবেন? আর মাহমুদুর রহমান তো কোন ‘প্রফেশনাল’ সাংবাদিক নন! তিনি তো একজন ‘প্রফেশনাল পলিটিক্যাল এক্টিভিস্ট’।

তারপর তিনি আমাদের সর্বোচ্চ আদালত, আমাদের সুপ্রীমকোর্ট কর্তৃক ঘোষিত একজন ‘ক্রিমিনাল’। অন্য যে কোন দেশের যে কোন আদালতে ‘ক্রিমিনাল’ ঘোষিত হলে, সে কি ওই দেশের কোন গণমাধ্যমে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতে পারে? সম্পাদক হওয়া তো অনেক পরের, অনেক দূরের কথা। দুই বছরের অধিক জেলা খাটার অপরাধে জেনারেল এরশাদ ২০০১-এর সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য ছিলেন। তাহলে মাহমুদুর রহমান ১০ মাস জেল খেটেও কেন এখনও একটি পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক থাকবেন? বাংলাদেশের অনেক জায়গায় সাধারণ মানুষজনের দক্ষ দক্ষ প্রতারকদের হাতে প্রায় প্রতিদিন প্রতারিত হওয়ার খবর আমরা পড়ছি, দেখছি। ভূমিদস্যুদের হাতে প্রতারিত হওয়ার খবর বেশুমার।

চুক্তিমতো ফ্ল্যাট বা প্লট কিনে কয়জন গ্রাহক স্বস্তি বা সন্তুষ্টি পেয়েছেন, ডেভেলপার কোম্পানিগুলোর সংগঠন ‘রিহ্যাব’ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বা প্রেস কনফারেন্স করে তা দেশের মানুষজকে জানাতে পারে। তাতে তাদের ওপর মানুষজনের আস্থা- বিশ্বাস বাড়বে, আর লাভও বেশি হবে। কিন্তু এই যে, আমার দেশ-এর ‘মরদে মোমিন’ মাহমুদুর এমন নাম-ঠিকানাবিহীন ব্যবসায়ে নেমেছেন, তার প্রতিরোধেও ‘রিহ্যাব’-এর অবশ্যই দায়িত্ব আছে। আমাদের গৃহসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং রাজউকও আমার ধারণা এমন জাতের বিজ্ঞাপন প্রকাশে নিয়ন্ত্রণমূলক কিছু বিধিবিধান জারি করেছে; ফ্ল্যাট ও প্লট ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষায় আমাদের হাইকোর্টেরও কিছু নির্দেশনা আছে। ‘আমার দেশ’-এ প্রকাশিত এই বিজ্ঞাপনে ওইসব শর্ত গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে বলে বিশ্বাস করি।

পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশনে যারা অভিজ্ঞ, এই বিষয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আবাসন প্রকল্পটির নাম-ঠিকানা, মালিক-মোখতারদের পরিচয় না দিয়ে এই বিজ্ঞাপনটি প্রকাশের মতলবটি কি তা জানতে চেয়ে আমাদের হাইকোর্ট সুয়োমটো রুলও জারি করতে পারে। তিন. ‘মরদে মোমিন’ মাহমুদুরের দিনকাল খুব খারাপই যাচ্ছে। ‘আমার দেশ’-এর গুহায় বাস করছেন তিনি কয়েক মাস। ‘আমার দেশ’ও তিনি চালাতে পারছেন না; আর্থিক সঙ্কটে পড়ে এই ‘মরদ’ গুহার আরও গভীর অন্ধকারে, আরও গভীর অতলে হারিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি ড্রেন-নর্দমার আবর্জনা গিলছেন, আর তা ‘আমার দেশ’ নামের পত্রিকায় উগড়াচ্ছেন প্রতিদিন। গত বছর ‘ডেইলি স্টার’ পত্রিকা অফিসে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ব্লেকের সম্মানে আয়োজিত সিভিল সোসাইটির এক ঠৈবকে এই ষড়যন্ত্রকারী, ‘বাইচান্স এডিটর’ যাননি। কারণ, ‘ডেইলি স্টার’ এবং ‘প্রথম আলো’ পত্রিকা দুটি এবং তাদের দুই সম্পাদককে মরদে মোমিনের পছন্দ নয়। তো আমেরিকানদেরও পছন্দ নয় এই মরদ মাহমুদুরকে; তাই তারা গত অক্টোবরে তাকে আমেরিকার বোস্টন যাওয়ার ভিসা দেয়নি। ‘মরদ’ এতদিন এত কষ্টে আছে; কিন্তু এখন ‘কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নানিস্ট’ বা ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স ও তার পক্ষে আর কোন বক্তৃতা-বিবৃতি দেয় না।

কারণ, ইতোমধ্যে এই মরদ মাহমুদুরের উস্কানিতে বাংলাদেশে যতসব জানমালের ক্ষতি হয়েছে, তা তারা জেনে গেছে। তারা জেনে গেছে তার ব্যাকগ্রাউন্ড, তার চরিত্র, তার অতীত ইতিহাস। এই লোক যখন মোহতারেমার জ্বালানি উপদেষ্টা, তখন ওই পাঁচ বছরে দেশে এক কিলোয়াট বিদ্যুত উৎপাদনও বাড়েনি। বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসাবে তার সাফল্য কি জানতে চেয়েছিলাম ২০০৬-এর ১৭ আগস্ট দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত আমার ‘লাল সবুজের কান্নাহাসি’ কলামে। তখন তাকে যে প্রশ্নগুলো করেছিলাম সেগুলো আজ প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করে নিচে তুলে দিলাম: ১. গত ৫ বছরে বছরওয়ারি সারা দুনিয়াতে এক দেশ থেকে আর এক দেশে ‘ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট’ কত ট্রিলিয়ন ডলার ছিল? (এক হাজার মিলিয়ন এক বিলিয়ন, এক হাজার বিলিয়নে এক ট্রিলিয়ন, এক বিলিয়ন, এক হাজার বিলিয়নে এক ট্রিলিয়ন, প্রতি ডলার ৭০ টাকা হারে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাত হাজার কোটি টাকা)।

২. এত ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্টের মধ্যে বাংলাদেশে গত ৫ বছরে বছরওয়ারি কত মিলিয়ন ডলার এসেছে। ৩. প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং ভিয়েতনামে এ পাঁচ বছরের প্রতি বছর কত মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ‘ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট’ হিসেবে গেছে এবং ৪. সারা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে এ ইনভেস্টমেন্টের মোট পরিমাণের মধ্যে বাংলাদেশের পরিমাণ কত পার্সেন্ট? প্রায় ২০০টি দেশের মধ্যে গত পাঁচ বছরে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বছরওয়ারি বাংলাদেশ কত নম্বরে? মাহমুদুর রহমান, দেশের নাগরিকদের যদি আপনি এ তথ্যগুলো দিতে পারেন, আপনার সাফল্য-ব্যর্থতা আমরা অতি সহজেই বুঝতে পাবর। এই তথ্যগুলো আমার কাছে আছে। তবে আপনার কাছে থেকেই জানতে চাই বলে এখানে দিলাম না। সূত্র উল্লেখ করে আপনিই বলুন গত পাঁচ বছরে কোন বছর বাংলাদেশে কত বিদেশী বিনিয়োগ বাংলাদেশে এসেছে? মাহমুদুর রহমান জ্বালানি উপদেষ্টা হিসেবে ব্যর্থ, বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যর্থ, ষড়যন্ত্রকারী হিসেবেও ব্যর্থ; কারণ, ২০০৮-এর সাধারণ নির্বাচনে মোহতারেমার চরম বিপর্যয় ঠেকাতে পারেননি; ‘আমার দেশ’-এর ‘বাইচান্স এডিটর’ হিসেবেও ব্যর্থ।

এখন মরদে মোমিন হিসাবে সফল হওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন! ‘আমার দেশ’ নামের তার এই আবর্জনানামার সার্কুলেশন কিছুটা বেড়েছে, তা ঠিক। তবে আমাদের উত্তরার এক সংবাদপত্রসেবী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম আমাকে গতকাল বলেছে, স্যার, পত্রিকারটির সার্কুলেশন কিছুটা বেড়েছে। তবে স্থায়ী গ্রাহকের সংখ্যা বাড়েনি। তারা নয়া দিগন্ত, ইনকিলাব এবং আমার দেশ হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখে তারপর একটি কিনে। মানে ‘আমার দেশ’ এর প্রচারসংখ্যা বৃদ্ধিটা সাময়িক।

মানে ‘মোমিন’দের কে কত বেশি উস্কানি দিতে পারে তার প্রতিযোগিতা এই তিন পত্রিকার মধ্যেই। কথা আরও আছে। লন্ডনের কতগুলো ট্যাবলয়েড পত্রিকা ৩ নম্বর পৃষ্ঠায় উন্মুক্তবক্ষ ছবি ছাপায় তরুণীদের। এদের বলা হয়, ‘পিটিজি-পেজ থ্রি গার্ল। দারুণ সার্কুলেশন- চল্লিশ-পাঁয়তাল্লিশ লাখ।

অথচ তার বিপরীতে ৪০ বছর আগে দেখেছি, ‘লন্ডন টাইমস’ নামের ইংরেজী দৈনিক পত্রিকাটির সার্কুলেশন মাত্র তিন লাখ! অথচ টাইমসকে বলা হতো ‘দি থান্ডারড’- বজ্রকণ্ঠ। আর তার খ্যাতি ছিল এমন- হোয়েন দি টাইমস স্পিকস দি ওয়ার্ল্ড লিসেন্স। (টাইমস যখন কিছু বলে, দুনিয়া তখন তা শোনে)। মাহমুদুর রহমানকে এই প্রসঙ্গে একটি উপদেশ দিতে চাই। তার চলমান আর্থিক সঙ্কট কাটাতে এমন সব প্রতারণার আশ্রয় না নিয়ে, আবেদন-নিবেদন না করে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে নগ্নবক্ষ মেয়েদের ছবি ছাপানো শুরু করতে পারে।

তাতে তার প্রচার সংখ্যা আরও বাড়বে, কেউ তাকে বাধা দিতে পারবে না। কারণ তখন এই মরদ বলতে পারবে, মত প্রকাশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রয়োগ করছেন তিনি। মরদ মাহমুদুর যে এদিকে ঝুঁকছে, তার আলামত দেখা যায় একই দিন গত ১১ মার্চ তার ‘আমার দেশ’ নামক যৌন দৈনিকে প্রকাশিত নিচে উদ্ধৃত বিকল্প দুটিতে- যৌন শক্তিবর্ধক ওষুধ! মরদ মাহমুদুর বা তার গুহার কেউ এই ওষুধের কার্যকারিতা কি পরীক্ষা করে দেখেছে? আবারও মাহমুদুর রহমানের প্রতারণা। অপরাধ জগত নিয়ে যেসব সাপ্তাহিক, মাসিক পত্রিকার বের হয়, সেসব পত্রিকায় এমন নোংরা-বিজ্ঞাপন দেখা যায়। আর দেখা যেত মরদে মোমিনদের তখনকার গুহা, আশ্রয়স্থল, ভরসাস্থল- ‘ইনকিলাব’-এ।

কিন্তু বাংলাদেশের যে তিরিশ-চল্লিশটির মতো মূলধারার দৈনিক পত্রিকা ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য বড় বড় শহর থেকে প্রকাশিত হয়, তার কোন একটিতেও কি এমন একটি বিজ্ঞাপন দেখা যায়! সাংবাদিকতার ন্যূনতম নীতিমালা মানলেও কি এমন অশ্লীল, রুচিহীন বিজ্ঞাপন ছাপা যায়? যে বাসায়, যে বাড়িতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ে আছে, সেই বাসাবাড়িতে এই আবর্জনানামাটি কি রাখা যায়? উত্তরার সংবাদপত্রসেবী মনিরের কথাই ঠিক, বাসাবাড়িতে স্থায়ী ভিত্তিতে রাখার মতো কোন পত্রিকা এটি নয়। চার. এখন একটি জবর খবর দিই। মাহমুদুর রহমানকে নিয়েই খবর। তার বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে মামলা হয়েছে, সেই মামলাতে তার সাজা হয়েছে, তিনি দশ মাস জেল খেটেছেন, তার কত গোস্বা আমাদের সরকার এবং সুপ্রীমকোর্টের ওপর! প্রায় প্রতি সপ্তাহেই তার লেখায়, তার মরদদের আবর্জনায় এই আক্রোস জাহির চলছে। তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি আরও কয়েকটি মামলা হয়েছে; তাতে তার আক্রোস-উস্কানি আরও বেড়েছে।

এখন তিনি বাঁচার জন্য ‘মোমিন’দের মরদের ভূমিকায় নেমে মানুষজনকে উস্কিয়েই চলেছেন। হিন্দুদের বিরুদ্ধে তার আক্রোস, নাসারাদের বিরুদ্ধে তার হুঙ্কর, সকল রকমের সংখ্যালঘুরাই তার টার্গেট। কিন্তু এই বান্দাই যে ২০০৬ সালের জুলাই মাসে মানহানির বড্ড একখান মামলা দায়ের করেছিলেন! কাদের বিরুদ্ধে তার এই মামলা-তাদের নামগুলো একটু দেখুনÑপ্রফেসর রেহমান সোবহান, জনাব সাইদুজ্জমান, জনাব মঞ্জুর এলাহী, মিমেস লায়লা কবীর-সকলেই সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডির ট্রাস্টি। মামলার আর এক আসামি ছিলেন সিপিডির তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক-ডক্টর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বাংলাদেশে এই মানুষগুলোর স্ট্যাটার্স, মানইজ্জত, গুরুত্ব সম্পর্কে কোনই ধারণা নেই মরদ মাহমুদুরের।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ? সিপিডি নাকি বাংলাদেশে ‘ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট’-এর ওপর এক রিপোর্টে তথ্য বিকৃতি ঘটিয়েছে। আর? আর! আর, সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী তাকে ‘রাজাকার’ বলে গালি দিয়েছেন! তখন ‘প্রফেসর রেহমান সোবহানদের বিরুদ্ধে এবং বিদ্বেষে সুপার প্যাট্রিয়ট মাহমুদুর রহমান’ শিরোনামে দৈনিক সংবাদে ২০০৬-এর ১৭ আগস্ট প্রকাশিত আমার দীর্ঘ কলামটির শেষ দুটি প্যারা এমন ছিল: মাহমুদুর রহমানকে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ‘রাজাকার’ বলে গালি গিয়েছেন, তাই তিনি সিপিডির এ ট্রাস্টির বিরুদ্ধে মামলা করে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করিয়েছিলেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করিয়েছেন আর ৪ জনের বিরুদ্ধেও। ‘রাজাকার’ শব্দটি যে কত শক্ত একটি গালি ভুলেই গিয়েছিল এই দেশের মানুষ। মাহমুদুর রহমান আমাদের মনে করিয়ে দিলেন, সেজন্য তাকে ধন্যবাদ।

কিন্তু রাজাকার নিজামী আর রাজাকার মুজাহিদ এই দু’জনের সঙ্গে সংসার করছেন কি করে ‘দেশপ্রেমিক’ মাহমুদুর রহমান? তার নেত্রীই বা কি করে সংসার করছেন এমন ঘৃণ্য রাজাকারদের সঙ্গে? সুত্র  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।