কিছু বলার নাই::
বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার দেশের বিচার ব্যবস্থা এবং
রাজনৈতিক সিস্টেমকে ক্রোধাচ্ছন্ন করে তুলছে বলে উল্লেখ করেছে বৃটেনের প্রভাবশালী ইকনোমিস্ট। গতকাল প্রকাশিত ‘জাস্টিস ইন বাংলাদেশ অ্যানাদার কাইন্ড অব ক্রাইম’ বা ‘বাংলাদেশের ন্যায় বিচার আরেক ধরনের অপরাধ’ শীর্ষক রিপোর্টে ইকনোমিস্ট বলেছে, ১৯৬১ সালে ইসরাইল আর্জেন্টিনা থেকে এডলফ ইচম্যানকে অপহরণ করে ২০ বছর আগে করা অপরাধের জন্য বিচারের সম্মুখীন করেছিল। ইচম্যান ছিলেন হলোকাস্টের প্রেক্ষাপট হিসেবে আয়োজিত নাৎসিদের ওয়ানসি কনফারেন্সের সচিব। জেরুজালেমে তার বিচার প্রক্রিয়াটি ছিল যথাযথ ভাবে বিচার সম্পন্ন করার একটি মডেল। ওই বিচারের প্রসিকিউটর ছিলেন ইসরাইলের এটর্নি জেনারেল, বিবাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন জার্মানির শীর্ষ এক এটর্নি।
এ বিচার প্রক্রিয়াটি সমপ্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ইকনোমিস্ট বলছে এবার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার প্রক্রিয়াটির কথা ধরা যাক। সেখানেও বহু আগে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের সময় সংঘটিত ভয়াবহ অপরাধের জন্য মানুষের বিচার করা হচ্ছে। বিবাদীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, গণধর্ষণ এবং একদল মানুষকে একেবারে ধ্বংস করার চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে ইসরাইলের মামলায় যে মডেল সৃষ্টি করেছিল সেটা থেকে এ মামলার অবস্থান অনেক দূরে।
সরকার আদালতের রায়ের হস্তক্ষেপ করেছে। এ বিচারের ব্যাপারে জনসম্মুখে আলোচনা নিষেধ করা হয়েছে। বিবাদী পক্ষের সাক্ষীদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। এক সাক্ষীকে আদালতের সামনে থেকেই অপহরণ করা হয়েছে। একটি মামলায় প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্য শোনেননি এমন তিন বিচারক মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন।
আরেকটি মামলায় বিবাদীকে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব করা হয়েছে। অথচ মামলার প্রস্তুতির জন্য তাকে পর্যাপ্ত সময়ও দেয়া হয়নি। এ মামলার রায়ও দেয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। এখানে বিচার ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য ব্যর্থতা রয়েছে। এতে কেবল ইচম্যান বিচারের মতো মানের ঘাটতিই নয়, বাংলাদেশের আইনের প্রেক্ষিতেও মানের ঘাটতি রয়েছে।
এ বিচার, বিচার ব্যবস্থার মডেল হয়ে থাকবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া বার বার আশ্বাস বিষয়টিকে আরও বিতর্কিত করে তুলছে। আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশের এ বিচারের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের অভ্যুদয়ের সময় অপরাধীদেরকে বিচারের সম্মুখীন করা। এ উদ্যোগের মাধ্যমে এ বিচার প্রক্রিয়া পুরোপুরি ব্যর্থতায় পর্যবষিত হয়েছে। কারণ এ বিচারে অভিযুক্তদের মধ্যে প্রধান বিরোধী দলের সহযোগী একটি ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নেতারা রয়েছেন। দেশের অন্তর্ঘাতমূলক রাজনীতির সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়া জড়িয়ে পড়েছে।
জামায়াতের সমর্থকরা হাতে তৈরি বোমা দিয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে, পুলিশের সঙ্গে মানুষের সংঘর্ষ হচ্ছে। এতে অনেকে নিহতও হয়েছেন। বাংলাদেশ এখন অসহিষ্ণুতার বেড়াজালের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার কথা বলছে। বিরোধী দলও আরও বেশি মাত্রায় ইসলামপন্থিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠছে।
গুজব শোনা যাচ্ছে, এ বছরের নির্ধারিত নির্বাচন স্থগিত হয়ে যেতে পারে। তবে দুঃখজনক হলো দেশের বেশির ভাগ জনতা এ বিচারের ত্রুটিপূর্ণ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করছে। আদালত যখন মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে একটি মামলার রায়ে যাবজ্জীবন শাস্তি ঘোষণা করেছে তখন ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনতা প্রতিবাদে ঢাকায় সমাবেশ করেছে। এখন সরকার আইন সংশোধন করতে চাইছেন। জামায়াত বা এর সমর্থকদের প্রতি ইকনোমিস্টের কোন ধরনের সমবেদনা নেই।
তবে তারা ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না। ইচম্যানের বিচারের যেমনটা দেখা গেছে ঠিক তেমনি গণহত্যার শিকার জনগণের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি। অবশেষে বাংলাদেশও এ বিষয়টির স্বীকৃতি দেবে এবং প্রয়োজনীয় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। তবে ততদিনে বেশ দেরি হয়ে যাবে। বাংলাদেশ যে কুয়ো থেকে একদিন পানি পান করবে, যুদ্ধাপরাধ বিচার সেই কুয়োর পানিকেই বিষাক্ত করে তুলছে।
বাংলাদেশে ন্যায় বিচার আরেক ধরনের অপরাধ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।