আজকাইলকার পোলাপাইন যে কতটা এডভাঞ্চ তা স্কুলে চাকরী নেওয়ার পর হইতেই হাড়ে হাড়ে টের পাইতে লাগিলাম । এরা ক বলিবার আগেই"কুচ কুচ হোতা হায়" আর আর ম বলিবার আগেই "মেরে পিয়ার কি জান" বুঝিয়া থাকে বা বুঝাইয়া থাকে। এইসব পোলাপাইনের ক্লাশ নিতে যাইয়া আমার মত ব্যাকডেটেড মানুষের যে নাভিশ্বাস উঠিবে,সেটাই চিরন্তন সত্য।
শিক্ষা নীতির বদৌলতে তাহারা জানে তাহাদের গায়ে পাখির পালকের ছোয়াও আর লাগানো যাইবেনা। সেই সাথে নতুন আরও একটা উপসর্গ হইল মানসিক শাস্তিও দেওয়া যাবেনা।
এই মানসিক শাস্তির সংগাটা আবার ধরা বাধা কোনো নিয়ম মানিয়া চলে কিনা তাহাও আজ পর্যন্ত জানিতে পারিনাই।
আমার এক কলিগ এক ছাত্রকে পরীক্ষার হলে বলিয়াছিলেন,"এই রকম সহজ প্রশ্নও যদি না পার তাহলে পরীক্ষা দিতে আসিয়াছ কেন?"এটাও যে মানসিক শাস্তির মধ্যে পড়িয়া যায় তিনি তাহা বুঝিতে পারেননাই। যথারীতি অভিভাবক রিপোর্ট করিলে আমাদের সকলকে দুই ঘণ্টার মিটিং এ শিক্ষানীতির গুণাগুণ হজম করিতে হয়। ঐ কথাটির দ্বারা আমার উক্ত ছাত্র নাকি অন্যদের মাঝে অপমানিত বোধ করিয়াছিল। হায়রে "বোধ"এর ছিটে ফোটাও যদি আমাদের রাজনীতিকদের মধ্থাযে থাকিত!!!!!!
সেদিন ক্লাশে পোলাপাইনগুলার লাগামছাড়া চ্যাচাম্যাচি বন্ধ করিবার জন্যে নিজের জান কুরবান করিয়া দিতেছিলাম,য়ার তাহাদের গায়ে স্পর্শ না করিয়া নিজের চোখজোড়াকে আগুনের স্ফুলিংগ বানাইয়া সেই গোলা ছুড়িয়া তাহাদের ভস্ম করিতে ব্যস্ত আর সেই সাথে ষাড়ের মত চিল্লাইতে লাগিলাম,যাহাতে তাহারা শান্ত হইয়া আমাকে একটু পড়া বুঝাইবার অবকাশ দেন।
সেই সময় একজন আমাকে উপদেশ দিল,"ম্যাম এত চিল্লাইয়েন না আপনার গলা ফাইটা যাইব"।
আমার সব সময় মনে হয় উফ!!কি যন্ত্রণাময় জগতেইনা ঢুকিয়াছি। আগে ভাবিতাম শিক্ষক হইয়া দেশের মুখ উজ্জ্বল করিব। রাস্তাঘাটে চলিতে ফিরিতে সালাম নিতে নিতে নিজেকে ধন্য করিব। এ যে সুদুর পরাহত ,এ স্বপ্ন যে কেবল স্বপ্নবিলাসীকেই মানায়।
উহা বুঝিতে আমার বেশ কিছুদিন ধৈর্য ধরিতে হইয়াছিল। সেদিন যখন এক বালক তাহার প্রাকৃতিক কার্য সারিবার জন্যে আমার অনুমতিপ্রার্থী হইল,আমি তাহাকে এই শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিলাম যে পাচ মিনিটের মধ্যে আবশ্যক প্রত্যাবর্তন করিতে হইবে। সে প্রত্যুত্তরে শুধাইল,ম্যাম আপনি কি এই সময়ের মধ্যে ফিরিয়া আসিতে পারেন?সেদিন এই নিরুপায় আমি কেবল আমার হরিণির মত মায়াবী চোখগুলি দ্বারা তাহার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকাইয়া ছিলাম।
এই বিচ্ছুদের আরেকটা ছোট গল্প শুনাইয়া আমি আমার ক্যাচালের পরিসমাপ্তি টনিতে চাই। েকদিন যথারীতি ক্লাশের কর্ম শেষ করিয়া তাহাদেরকে আমি আমার ছোটবেলার সবচেয়ে প্রিয় একটি কবিতা "কাজলাদিদি"শুনাইতে উদ্যত হইলামঃ
বাশবাগানের মাথার উপর চাদ উঠেছে অই
মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই?
ক্লাশভর্তি ভর্তি বিচ্ছুদের মধ্য হইতে এক বিচ্ছু বলিয়া উঠিল"ম্যাম বাশতো শুনিয়াছি মানুষকে দেয় সেই বাশেরও বাগান আছে নাকি?
আমি আমার শিক্ষকতার এই জীবনে বহুবার বহু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনাই।
তাই এবারের মতও নিরুত্তরই রহিলাম। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।