আকাশ ভরা গাঙচিল যাত্রা বিরতির ২০ মিনিট
সিরাজগঞ্জ হাইওয়ে নাইটিংগেল রেস্টুরেন্টে যাত্রা বিরতির ২০ মিনিট অতিবাহিত করার জন্য শ্যামলী পরিবহনের সিলেটগামী বাস এসে স্টপেজ দেয় রেস্টুরেন্টের বিশাল গাড়ি পার্কিং এর গ্রাউন্ডে। গাড়ি থামার পর এক এক করে যাত্রী বের হয়ে আসে বাস থেকে। অনির সিট ডি ১ এ। সে বাস থেকে নামতে সাধারণত দেরি করে। হুড়োহুড়ি করে অন্য যাত্রীরা নেমে গেলে সে ধীরে সুস্থে নামে।
আজ বাস থেকে নেমেই অনি আকাশের দিকে তাকাল। আকাশ জুড়ে খণ্ড খণ্ড মেঘ। ভাদ্র মাসের আকাশে মেঘ দেখলে তাঁর গ্রীষ্ম কালে শীতের আবেশ অনুভুত হয়। ভাদ্র মাসের এই অসহ্য গরমে শীতের আবেশ গায়ে লাগিয়ে অনি একটা সিগারেট ধরাল। রেস্টুরেন্টের বা পাশে একটা ছোটো চায়ের দোকান ছিল।
অনি দেখল দোকানটা এখনো আছে। মনেই হয় না অনেক পুরনো। চায়ের দোকানী শমশের আলী অনিকে দেখে একটা পরিচিতের মতো হাসি দিল। কতদিন পর দেখা!!! তবুও মনে রেখেছে পঞ্চাশোর্ধ লোকটি।
অনিকে দেখে দোকানী গামছা দিয়ে ব্রেঞ্চ মুছে অনিকে বসতে বলল।
অনি জানতে চাইল, মামা কেমন আছেন?
হাসি হাসি মুখে দোকানী উত্তর দিল, মামা বহুত ভাল। তয় মামা একলা কেন?? আছেন কেমন মামা?
দোকানীর কথা শুনে অনি চুপ হয়ে যায়। কোন উত্তর দিতে পারল না। অনির হঠাৎ নিশ্পচুপ হয়ে যাওয়া দেখে শমশের দোকানী বেশ ভয় পেল। সে জানে অনি আর অনির বন্ধুরা কতো ভাল আর কতো হাসিখুসি মানুষ।
বাড়িতে ছুটি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার সময় এই শমশের আলীরর চায়ের দোকানেই তারা ৬ বন্ধু চা খেত। অনেক আড্ডাবাজ ছিল তারা ছয় জন। প্রতিবারই ছুটি কাটিয়ে তারা ৬ বন্ধু একসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার সময় এই যাত্রা বিরতিতে শমশের আলীর দোকানে চা খেয়েছে এবং প্রতিবারই বাহবা দিয়েছে। শমশের আলীও তাদের খুব পছন্দ করতো। যাত্রা বিরতির ২০ মিনিট তারা হৈ হুল্লোর করে মাতিয়ে রাখত।
তারপর সবই চুপচাপ। পরবর্তী ছুটির জন্য অপেক্ষা করতো শমশের আলী। আজ অনিকে একা দেখে শমশের একটু চিন্তিত। অনির এই হঠাৎ চুপ হয়ে যাওয়া দেখে শমশের একটু ভয় পায়। দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করে, মামা আপনার শরীর ভাল তো?
অনি সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলে, শরীর ভাল।
শমশের আলী একটু আস্বস্থ্য হয়। সে আবারো প্রশ্ন করে, ঐ মামাগুলান কি আহে নাই? আপনে একা যাইতেসেন সিলেট?
অনি শমশের আলীর দিকে তাকায়। শমশের একটু বিচলিত হয় কিন্তু সে উত্তরের আশায় অনির দিকে চেয়ে থাকে। অনি মৃদু হেসে বলে, হ্যাঁ মামা সবাই ভাল আছে। বিয়ে করে সংসারী হয়েছে।
যে যার মতো করে সিলেট যাচ্ছে। আমি বিয়ে করি নাই তো তাই একা একা সিলেট যাচ্ছি।
ও আচ্ছা। আলহামদুলিল্লাহ্।
কথাটা বলেই শমশের বুঝতে পারে সে একটু বেশিই উৎফুল্ল হয়ে গেছে।
অনি যে বিয়ে করে নি বলে একা একা সিলেট যাচ্ছে, তাঁর নিশ্চয়ই বন্ধুদের কথা মনে পড়ছে বলেই মুখটা কেমন কালো করে রেখেছে! শমশের আলী আবারো জানতে চায় এতো দিন তারা কেন এইদিকে আসে নাই?
অনি হেসে উত্তর দেয়, মামা আমাদের লেখা পড়া শেষ আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আগে। আগামী পরশু ইউনিভার্সিটির কনভোকেশন। মানে আমরা যারা পুরাতন ছাত্র ছাত্রী ছিলাম তারা সবাই একসাথে হবো এবং মাননীয় রাষ্ট্রপতি আমাদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দিবেন। তাই এতো দিন পর সিলেটে যাচ্ছি।
ও আইচ্ছা।
এই কথা বলে শমশের বেশ তৃপ্তির একটা হাসি দেয়। সে অনির কথা কতটা বুঝেছে তা বোঝা গেল না তবে মনে হল শমশেরের মনে যত প্রশ্ন ছিল সে তাঁর সব গুলোর উত্তর পেয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও শমশের আলী একটু সংকিত, তাঁর মনে হয় আরও কিছু প্রশ্ন আছে। সে চায়ের কাপ অনির দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল, মামা আপনার বন্ধুরা সব বিয়া করলো আর আপনি এখনো বিয়া করলেন না কেন?
অনি শমশের আলীর হাত থেকে চা নেয়। আর একটা সিগারেট ধরায়।
খুব আরাম করে সেই পুরনো চায়ে চুমুক দেয়। সেই পুরনো ঘ্রাণ। সেই পুরনো বন্ধুত্বের উচ্ছ্বাস মাখা চা আজ অনিকে একা একাই উপভোগ করতে হচ্ছে। মাথার উপর এক খণ্ড মেঘের দিকে তাকিয়ে অনির মেঘার কথা মনে পড়ে। মেঘার সাথে কতো ভালবাসা বাসির কথা বলেছে অনি ঠিক এই খানটায় দাঁড়িয়ে!!! এই শমশের আলীর চায়ের দোকানে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু অর্ক মেঘা আর অনিকে নিয়ে অনিকে কতো জালাতন করতো।
অনি বন্ধুত্তের খেয়ালিপনা হিসেবে অর্কর এ সব পেইন সহ্য করতো। অথচ আজ মেঘা অর্কর স্ত্রী হয়ে অর্কর সাথে পাশাপাশি সিটে বসে সিলেট যাচ্ছে। আর অনি মেঘাহীন দীর্ঘদিন অবসাদে পার করে এই পুরনো রেস্টুরেন্টে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে। আগামীকাল হয়তো তাদের সাথে অনির দেখা হবে। হয়তো হবে না।
কে জানে আগামীকাল কি ঘটবে! প্রশ্নাতুর শমশের আলীকে বিদায় জানিয়ে যাত্রা বিরতির ২০ মিনিট পার করে সিগারেটে শেষ টান দিয়ে অনি পা বাড়ায় তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে।
নোটঃ ব্লগার চশমখোর দেখতে কিউট একটা মানুষ। ওর নিক দেখে মনেই হয় না সে একটা আস্ত ভালমানুষ। চশমের কোন চশম চশম কাজ আমার চোখে পড়েনি।
তবে কেন সে চশমখোর এটা জানার অধিকার জাতির আছে।
উৎসর্গ চশমকেই
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।