© এই ব্লগের কোন লেখা আংশিক বা সম্পূর্ণ আকারে লেখকের অনুমতি ব্যতীত অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবে না।
আলফ্রেড হিচকক---আমার সবচেয়ে পছন্দের মুভি পরিচালক। অথচ ওনার যেই একমাত্র মুভিটি শ্রেষ্ঠ মুভি হিসেবে অস্কার জিতেছে সেটাই দেখা হয়নি। তাই নিজেকে অনেকদিন যাবত গালমন্দ করিয়া অবশেষে সেই মুভিটি দেখতে বসিলাম। মুভিটির নামতো শিরোনামেই বললাম,মাত্র মুভিটি দেখে শেষ করে এখানে রিভিউ লিখছি।
মনটা ভীষন রকমের উৎফুল্ল। কারন রেবেকা মুভিটা আমার কাছে টোটালি অসাধারন মানের লেগেছে। প্রায় ১৩০ মিনিটের এই মুভিটা কিন্তু একটা ভীষন বিখ্যাত নভেল থেকে বানানো, ব্রিটিশ লেখিকা Daphne Du Maurier এর সেই উপন্যাসের নামটাও কিন্তু রেবেকা, যেটা পাবলিশ হয়েছিলো ১৯৩৮ সালে। যদিও সেই উপন্যাসটি তদকালীন সমালোচকদের তেমন মুগ্ধ করতে পারেনি,তবে পাঠকমহলে বেশ বড়ো রকমের হইচই ফেলে দিয়েছিলো এবং পাবলিশের পরপর এটির প্রায় ২০০০০ কপি বিক্রি হয়েছিলো। এবং এটিকে তিনি স্টেজ প্লেতে রূপ দেন যা লন্ডনে সাফল্যের সাথে প্রায় ৩৫০ টিরও মতো শো সম্পন্ন করে।
পরবর্তীতে আলফ্রেড হিচকক ১৯৪০ সালে এটিকে নিয়ে ফিল্ম বানান। আর সেই ফিল্মটিও ব্যাপক সাড়া ফেলে অস্কারের দৌড়ে সর্বমোট ১১ টি বিভাগে নমিনেশন পায়, এবং জিতে নেয় শ্রেষ্ঠ মুভি আর সেরা সিনেমাটোগ্রাফির পুরষ্কার। তখনকার সময়ে শ্রেষ্ঠ মুভির জন্য প্রযোজকরা পুরষ্কার পেতেন না, নাহলে এটিই হতে পারতো হিচককের একমাত্র অস্কার পদক। সেই বছর রেবেকা মুভিটি The Grapes of Wrath , The Great Dictator আর The Philadelphia Story এর মতো বাঘা বাঘা ছবিকে টেক্কা দিলেও শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরষ্কারটি পেয়েছিলেন অবশ্য জন ফোর্ড তার The Grapes of Wrath মুভিটির জন্য।
যাই হোক, এবার মুভিটির ব্যাপারে আসি।
মুভিটির রানিংটাইম প্রায়য় ২ ঘন্টার একটু বেশি। কিন্তু হিচকক বলে কথা, তার মুভি একটানে ৫ ঘন্টাব্যাপী হলেও আমার কোনো প্রব্লেম নাই, কারন উনি হইলেন মাস্টার অফ সাসপেন্স। তার মুভি দেখলে সময় যে কোন ফাঁকে কেটে যায় তার কোনো হদিস পাওয়া যায় না। আর রেবেকা মুভিটিও তাই। অসাধারন একটা গল্প, বিশেষ করে মুভিটির সেকেন্ড হাফ খুবই উপভোগ্য।
বোরিং লাগার কোনো চান্সই নাই। মুভিটির জেনার ড্রামা কিংবা মিস্ট্রি হলেও এর পরতে পরতে কিন্তু রোমান্স রয়েছে। মিস্ট্রির সাথে রোমান্সের এমন অনবদ্য সংমিশ্রণ শুধুমাত্র হিচককই পারেন !!! মুভিটির আইএমডিবি রেটিং বেশ ভালো, ৮.৪, আর টপ ২৫০ তালিকায় এর অবস্থান ১০৭।
এবারে কাহিনীর ব্যাপারে আসা যাক, মুভিটির শুরুর দৃশ্যটা ভীষন সুন্দর। দেখেই মনে হবে আগামী দুই ঘন্টার জার্নিটা কেমন হবে সে সম্পর্কে পরিচালক বেশ আভাস দিয়ে রেখেছেন।
মন্টি কার্লোতে অবকাশযাপনকালে ইংল্যান্ডের Cornish coast এর কাছে Manderley এর বর্ণাঢ্য ধনী Maxim' de Winter এর সাথে একটি মেয়ের পরিচয় হয় । পরিচয় থেকে প্রেম। Maxim' de Winter এর স্ত্রী সদ্যই মারা গিয়েছেন। উল্লেখ্য তার নাম ছিলো রেবেকা, এবং তিনি একটি নৌকা দূর্ঘটনায় মারা যান। আর ঐদিকে ঐ মেয়েরও আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই।
এসময় তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় এবং বিয়ে করে Manderley তে ফিরে আসে। কিন্তু সাধারন পরিবার থেকে উঠে আসা সেই সাধারন মেয়েটির যাকে এখন থেকে Mrs. de Winter নামে চিনব, এইরকম আলিশান বাড়িতে বসবাস এবং অসংখ্য হাউসপকিপার আর কেয়ারটেকারের সাথে খাপ খাওয়াতে বেশ বেগ পেতে হয়। একে তো সেই বাড়ির জমিদারী স্টাইল,তার উপর আবার Maxim' de Winter এর আগের স্ত্রী রেবেকার বেশ প্রভাব রয়েছে সেই বাড়িতে, বিশেষ করে হাউসকিপার Mrs. Danvers এর উপর। তাদের নানান কথাবার্তায় প্রায়শই নতুন Mrs. de Winter এর সাথে চলতো রেবেকার নানান তুলনা। এমনকি মাঝে মাঝে Maxim' de Winter ও মোহচ্ছন্ন হয়ে পড়তেন রেবেকাকে নিয়ে।
আস্তে আস্তে তার মনে হতে থাকে, সে Manderley তে থাকবার জন্য উপযুক্ত নয়, সে কখনোই রেবেকার স্থান এখানকার মানুষদের থেকে কেড়ে নিতে পারবে না, আস্তে আস্তে সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়তে থাকে।
কাহিনীর এপর্যায়ে Manderley এর লেক থেকে একটি ডুবন্ত নৌকা উদ্ধার হয়,আর তাতে পাওয়া যায় একটি লাশ। এরপরই দৃশ্যপট দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। শুরু হয় হিচককীয় সাসপেন্স। ঘটতে থাকে অদ্ভুত সব ঘটনা।
কি সেই ঘটনা আর কি তার পরিনতি তা নাহয় মুভিটি দেখেই জেনে নিন। শেষের ৫০ মিনিট ভীষন রকমের উপভোগ্য। বিশেষ করে Manderley এর শুরু থেকেই যেসব ঘটনা ঘটছিলো তা দেখে আপনার মনে তৈরি হওয়া খচখচানিটা আস্তে আস্তে দূর হওয়া শুরু করবে।
মুভিটির স্টোরি টেলিংটি অসাধারন লেভেলের। সিনেমাটোগ্রাফী টোটালি ব্রিলিয়ান্ট লেভেলের,কিছু দৃশ্যের কথা না বললেই নয়।
বিশেষ করে Maxim' de Winter যখন রেবেকার মারা যাওয়ার দিনটির কথা বর্ননা করছিলেন,তখন Maxim' de Winter এর কথার সাথে সা্থে ক্যামেরার রানিং সিকোয়েন্সের মুভমেন্টটা আমার দেখা ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট ওয়ার্ক ফ্রম এনি সিনেমাটোগ্রাফার। আরেকটি জিনিস হচ্ছে মুভিটার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। ড্রামা বা মিস্ট্রির সাথে পুরো ১০০% মানানসই,যেটা মুভিটিকে একটা আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছে। মুভিটির কাহিনী, কাস্টিং, আর ডিরেকশান তিনটিই সিম্পলি অসাধারন। এই তিনটি বিভাগের একটিই যে কোনো মুভিকে ভালোতে রূপ দিতে পারে আর রেবেকাতো সর্বক্ষেত্রেই সেরা।
হিচককের যে জিনিসটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে তা হলো সাইকোলজিক্যাল সাসপেন্সটাকে কতোটুকু ধরে রাখতে হবে তা খুব ভালো করেই জানেন তিনি। সবকিছু একেবারে যেনো মনের মতো। Joan Fontaine আর Laurence Olivier এর পারফরম্যান্স নিয়েতো কিছুই বলার নেই, সিম্পলি আউটস্ট্যান্ডিং, তবে এর সাথে আমি মিসেস ডেনভারের চরিত্রে অভিনয় করা Judith Anderson এর কথাও আলাদা করে উল্লেখ করবো।
এই মুভিটি হচ্ছে হিচককের ইংল্যান্ড থেকে হলিউডে চলে যাওয়ার পর প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত মুভি। অর্থাৎ হিচকেকর হলিউডে আত্মপ্রকাশ আর সেই ছবিতেই একেবারে বাজিমাত।
রেবেকা শুধুমাত্র হিচকক ফ্যানদেরকেই নয় ,বরং যেকাউকেই মুগ্ধ করতে সক্ষম। কারন কেউ যদি কোনো মুভিতে রোমান্স, সাসপেন্স আর ড্রামা খুঁজতে চায়----রেবেকা এজন্য বেশ ভালো একটা উদাহরন।
আমার পার্সোনাল রেটিং ৮.৫/১০। শেষ করবার আগে এই মুভিটি সম্পর্কে দুইটা মজার ইনফো দিই,
১। এই মুভিটা আরো কয়েকবছর আগে বানানোর ইচ্ছা ছিল হিচককের, কিন্তু নভেলের স্বত্ব বহন করবার আর্থিক সামর্থ্য তখন তার ছিলো না।
পরে সে সামর্থ্যের ব্যবস্থা করেই তিনি কয়েক বছর পর এই মুভিটি বানান।
২। তার প্রত্যেকটি দৃশ্যগুলোতে একবারে জন্যও চোখের পলক ফেলেন নি মিসেস ডেনভার। চরিত্রের প্রয়োজনে হিচককের আদেশে তিনি এভাবে অভিনয় করেছিলেন।
মুভিটির ডাউনলোড লিংক:
সিংগেল লিংক:
http://www.megaupload.com/?d=VPA35BTV
অথবা,
http://www.megaupload.com/?d=BE79B6IY
http://www.megaupload.com/?d=STAW8WUB
http://www.megaupload.com/?d=4SR3WXWT
http://www.megaupload.com/?d=GU783OSF
http://www.megaupload.com/?d=A40H5T0B
http://www.megaupload.com/?d=ISURC616
http://www.megaupload.com/?d=QJU1CMTQ
http://www.megaupload.com/?d=958Q2ZIN
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।