আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই! বাজার থিকা কলা কিনিয়া আনিলাম। কলার চোকলা ছুলিতেই কলা খানা আমাকে কহিলো,"চাইয়া চাইয়া কি দেখো? আমার কি রূপ জ্বালাইছে? আমারে খাও না কেন?" কলার এই ভচকাইনা ডায়লগে মনোনিবেশ না দিয়া ভাবিতে লাগিলাম কলার মধ্যে খনিজ লবনে ভরপুর। তাই বাংলাদেশে সস্তায় রক্তের খনিজ লবনের ঘাটতি পূরনের জন্য কলার বিকল্প নাই। এই খনিজ লবনের মধ্যে পটাশিয়াম আছে উল্লেখযোগ্য পরিমানে।
এই পয়াশিয়াম প্রাকৃতিক ভাবে তেজস্ক্রিয় যদিও এর পরিমান খুবই কম। আর যেখানেই তেজস্ক্রিয়তার বিকিরন সেখানেই আছে নিউট্রিনো । যাই হোউক, কলার রূপে বেচেইন হইয়া নিউট্রিনো খাইলাম কিয়দ।
নিউট্রিনো কই নাই! আসমানে তাকাইলে বিনা কারনে ব্যাকারনে গরম পড়নের জন্য দায়ী সূর্য্য মামা তো নিউট্রিনোর ভান্ড। আইজ বাদে কাইল রূপপুরে আমাগো হাচিনা নাচিনা কইতে কইতে একখান পারমানবিক রিএক্টর বসাইবো সেইখানেও দিনে রাইতে নিউট্রিনো পয়দা হইবো।
এই রিএক্টরের উছিলায় গরু ঘাস খায় এর বদলে লিখতে হইবে গরু নিউট্রিনো খায়। কুটিকালে মনে করতাম প্রকৃতিতে এত কিছু আছে কিন্তু জায়গায় জায়গায় কেন যে সোনার খনি, হীরার খনি দিলো না বুঝলাম না। তখন অবশ্য এইটা জানতাম না প্রকৃতি তার অনেক আকামের মধ্যে আরেক খান আকাম করছে যেইখানে সেইখানে এই নিউট্রিনো বিলাইয়া। আজায়গায় বেজায়গায় কুজায়গায় সব জায়গায় নিউট্রিনো দিয়া ফাটায়া ফেলছে। একটা হিসাবে জানা যায় প্রত্যেকটা প্রোটনের সাথে ৭০০ মিলিয়ন নিউট্রিনো আছে এই পুরা মহাবিশ্বে।
সমস্যা হইলো এই নিউট্রিনো গায়ে গতরে কি পরিবর্তন হইবো? কঠিন প্রশ্ন যদিও উত্তর শুনলে পাবলিক আমারে বাঘডাসা দিয়া দাবড়ি দিবে এই বিষয়ে সন্দেহ নাই।
আসলে নিউট্রিনো কারো লগে কোনো কাইজ্জায় যায় না, কোনো কিছুর সাথে এর কোনো মিথস্ক্রিয়া নাই। যখনই কোনো জায়গায় নিউক্লিয়ের মধ্যে ফিশন বা ফিউশন ঘটে তখন ডায়রিয়ার মতো নিউট্রিনোর পয়দা ঘটে, অনেকটা বাংলাদেশের হুজুর খেজুরগো ঘরে জনসংখ্যা বিস্ফোরনের মতো। মাগার এই নির্বিবাদী নিউট্রিনো এতটাই নিরীহ যে সাত সকালে ঘুম থিকা উইঠা সিনা টান কইরা রোইদে খাড়াইলে আপনের দেহ দিয়া প্রতি সেকেন্ডে ১০ ট্রিলিয়নের মতো নিউট্রিনো আপনেরে ভেদ কইরা যায় মাগার আপনের কুনো হুশ থাকে না। ফ্যাল ফ্যাল কইরা ভাবেন শীতের এই সোনা ভরা রোইদে আরেক খান কুড়কা-ঘুম দেই।
১৯৩০ সালে খাতা কলমে এর খোজ পাইলেও স্বচক্ষে দেখতে আরও ২৬ বছর বিজ্ঞানীগো অপেক্ষা করতে হয়। সমস্যা হইলো আইজ পর্যন্ত এর ভর কেউ বাইর করবার পারি নাই, তয় এইটা জানি এর ভর শূন্য না। এই কনাটা বড়ই রহস্যময় মনে হয়।
অনেকে বলে এই কনিকা না থাকলে দুনিয়াতে হাইড্রোজেনের চেয়ে ভারী কোনো কিছু থাকতো না এমনকি এই যে এতরকমের জিনিস দিয়া যে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হইছে সেইটাও নাকি হইতো না। অনেকে কয় বিগ ব্যাং এর পর এন্টিবাহিনীর হারায়া যাওনের পিছনে এই নিউট্রিনোই নাকি দায়ী।
এই কনিকা কেমনে বানায়?
সমস্যা হইলো এই কনিকা তড়িৎ চার্জ নাই, চৌম্বকীয় শক্তির সাথে এর কোনো কাহিনী নাই। এর ভর জানা নাই, তাই কোনো এক্সপেরিমেন্টের জন্য নিউট্রিনো তৈরী করনটা আসলে অতটা সোজা না।
তাও একটা প্রসেস আছে যেইটা নিয়া বাতচিত করবার চাই। দুনিয়া খুব অল্প কয়েকটা ল্যাব এই নিউট্রিনো বীম তৈরী করবার পারে। এর মধ্যে ফার্মল্যাবের ল্যাবে প্রতি ২ সেকেন্ডে এক ট্রিলিয়ন নিউট্রিনো বীম পয়দা কইরা ফিক্কা মারে ৪৫০ মাইল দূরে মিনোসোটা ল্যাবে।
যাই হোউক প্রথমে হাইড্রোজেন গ্যাস ভর্তি একটা বোতল নেই। এই ব্যাচের পর ব্যাচ হাইড্রোজেনের ডিব্বা থিকা প্রোটন এক্সিলারেটরে চালায় দেয়া হয়। এক্সিলারেটরের কাজ হইলে এর গতিরে বাড়াইতে বাড়াইতে আলোর গতির (১৮৬০০০ মাইল/সে) কাছাকাছি নিয়া যাওয়া। যখন এই প্রোটনের বীমের গতি আলোর গতির কাছাকাছি চইলা যায় তখন এই বীমটারে সোজা গ্রাফাইট বা বেরিলিয়ামের পাতের উপর ফেলানো হয়। গ্রাফাইটের নিউক্লিয়াসের সাথে প্রোটনের গুতা লাইগা চূর্ন বিচূর্ন ছাড়খাড় হইয়া (+) পাইওন, (-) পাইওন আর নিউট্রন নির্গত হয়।
তো এই কনিকা গুচ্ছের চলার পথে একটা চৌম্বকায়িত চোঙ্গা রাখা হয় যার থেকে দুইটা মুখ। এই চৌম্বকায়িত চোঙ্গার কয়েল এমুন ভাবে প্যাচাইনা থাকে যে (+) পাইওন গুলারে একটু সরু রাস্তা দিয়া আলাদা কইরা বাইর কইরা. দেয়। (+) পাইওন গুলার জীবন খুবই ক্ষনস্হায়ী। কিছুদূর যাওনের পরই এগো ক্ষয় শুরু হইয়া যায় এবং এরা ক্ষয় হইয়া প্রতি মিউওন আর মিউওন-নিউট্রিনোসে পরিনত হয়।
এখন মিউওন আর মিওন নিউট্রিনোসের বীমটারে সোজা গিয়া ফেলানো হয় এলুমিনিয়াম, স্টিল আর কংক্রিটের মোটা ব্লকের উপর।
এই ব্লক বীমে থাকা সব পার্টিক্যাল গুলারে চুইষা খাইয়া ফেলায় শুধু নিউট্রিনো বাদে যেইটা পরে দেয়াল ভেদ কইরা বাইর হইয়া যায়।
এখন কথা হইলো নিউট্রিনো বীমের কেন দরকার:
তার আগে কিছু কথা কই, এই নিউট্রিনোর গতি নিয়াই বছর খানিক কি চিল্লাচিল্লি লাগছিলো, কইছিলো এর চলন বলন নাকি আলোর গতিরে ছাড়ায়া গেছে । তারপর আবার অনেকে কয় এইটাই ডার্ক ম্যাটার । আরও কত কিছু।
যাই হোউক, এই রহস্যময়ী কনিকার বীম কেন দরকার হয় সেইটা নিয়া কিছু পয়েন্ট লিখি:
১) নিউট্রিনো অন্য যেসব কনিকার সাথে মিথস্ক্রিয়ায় অংশ নেয় সেটার ধরন কিরুপ।
২) কিভাবে নিউট্রিনোর আলোড়নের মাধ্যমে এক ধরনের নিউট্রিনো অন্য ধরনের নিউট্রিনোতে পরিনত হয়
৩) নিউট্রিনো আর এন্টি নিউট্রিনোর মধ্যে চারিত্রিক গুনাবলীর পার্থক্য কি কি
৪) তিন ধরনের নিউট্রিনোর মধ্যে ভরের পার্থক্য কত এবং তারা একে অপরের সাথে কিভাবে সম্পর্ক যুক্ত।
৫) নিউট্রিনোর আলোড়নের মাধ্যমে নতুন ধরনের নিউট্রিনো আছে কিনা সেটা খুজে দেখা।
আমরা কমিউনিকেশনে যেকোনো খবর পাঠানোর জন্য রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির সাহায্য নেই কিন্তু সব জায়গায় রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে কাজ করা যায় না। সেখানে নিউট্রিনো দিয়া কাজ করা যেতে পারে কারন এটা যেই পথ দিয়েই যায় না কেন কোনো শক্তি বা কনিকা একে প্রভাবিত করে না।
২০১২ এর প্রথম দিকে একটা টিম ২৪০ মিটার দীর্ঘ একটা পাথরের মধ্যে দিয়ে এনকোডেড ম্যাসেজ নিউট্রিনো বীমের মাধ্যমে পাঠাতে চেয়েছিলো।
মিনার্ভায় থাকা নিউট্রিনো ডিটেক্টরে সেই বীম ধরা পড়ে এবং সেই এনকোডেড ম্যাসেজ প্রসেস করে যে শব্দটি পায় সেটা ছিলো নিউট্রিনো। এই শব্দটা পাঠাইতে তাদের দরকার হইছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী নিউট্রিনো বীম আর সময় লাগছিলো ৯০ মিনিট।
যাই হোউক, আজকা এ পর্যন্তই, সময় পাইলে দীর্ঘ বেজলাইন নিউট্রিনো এক্সপেরিমেন্ট নিয়া বাতচিত করা যাবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।