মানুষের কিডনি পাচার করেই ক্ষান্ত হয়নি সাইফুল ইসলাম। ফুসলিয়ে-ফাসলিয়ে বা যে কোন অজুহাতে লিভার বা কলিজা বিক্রি করতেও বাধ্য করতো হতদরিদ্রদের। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ রকম একটি ঘটনার কথা স্বীকারও করেছে সে। দুর্গাপুর গ্রামের দরিদ্র মাহতাব উদ্দীনের ছেলে মেহেদী হাসানের কাছ থেকে সে লিভার নেয়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফজলুল করীম তার এই স্বীকারোক্তির কথা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে কিডনির পর কলিজা বিক্রির এ ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর কালাই উপজেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, সাইফুল মানুষের কিডনি এবং লিভার নিয়ে যা করেছে সেটি একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা। দেশের প্রখ্যাত লিভার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, কিডনি বা লিভার যে কেউ অন্যজনকে দিতে পারে। এতে ক্ষতির কিছু নাই। বিশেষ করে লিভারের ক্ষেত্রে।
কারণ এটা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। লিভার ৬ সপ্তাহের মধ্যে উভয়ের শরীরেই পূর্ণাঙ্গ আকারে ফিরে আসে। তবে মানবদেহের কোন অঙ্গ বিক্রি করা আইনসম্মত নয়। গতকাল কালাই উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে মেহেদী হাসানের বাড়িতে গেলে তিনি তার লিভার বিক্রির কথা স্বীকার করেন। বলেন, অভাবের তাড়নায় পড়ে গ্রামের অন্যদের মতোই তিনি এ কাজটি করেছেন।
তবে প্রথমে তিনি কিডনি বিক্রি করতে গিয়েছিল। স্থানীয় এক দালালই তাকে ক্রেতার সন্ধান দেয়। কিন্তু পরীক্ষার পরও কোন এক কারণে তার কিডনি বিক্রি হয়নি। এ সময় দালালরা তাকে প্ররোচনা দেয় লিভার বিক্রি করতে। মোটা অংকের টাকার লোভ দেখালে তিনি তাতে রাজি হন।
এ নিয়ে ৩ লাখ টাকার একটি চুক্তিও হয় তাদের মাঝে। এর মূল্য হিবেবে দালালরা প্রথমে চুক্তির অর্ধেক ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দেয়। কিন্তু লিভার নেয়ার পর আর তাদের পাওয়া যায়নি। তারা পালিয়ে যায়। মেহেদী হাসান এ প্রতিবেদককে লিভার বিক্রির চুক্তিপত্র দেখিয়ে বলেন, বাবা-মা হারা দু’-ভাইবোনের লেখাপড়ার খরচ ও লালন-পালনের জন্যই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি বলেন, স্থানীয় দালাল সাত্তারের মাধ্যমে প্রথমে ঢাকায় যান। পরবর্তীতে সাইফুলের কাছে হাত বদল হয়ে চলতি বছরের ৬ই মে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে ভারতের চিকিৎসকরা তার অস্ত্রোপচার করেন। এ সময় ল্যাবএইড হাসপাতালের ডা. সাইফ, রবিন, জুলফিকার আলী উপস্থিত ছিলেন বলে মেহেদী জানায়। মীর গিয়াস উদ্দীন নামের এক লোককে মামা পরিচয় দিয়ে বন্ডসই নেয়া হয় তার।
যে আশায় লিভার বিক্রি করেন এখন তা নিয়েও হতাশ মেহেদী হাসান। বলেন, যে টাকা পেয়েছি তা দিয়ে বাড়ির জমি কিনবো না বোনের বিয়ে দেবো নাকি ভাইয়ের পড়ার খরচ দিবো- তা ভেবে পাচ্ছি না। নিজের চিকিৎসা করানোও এখন দরকার। কলিজা বিক্রির পর থেকে অসুস্থ। ভারী কোন কাজ-কর্ম করা যাচ্ছে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।