আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! রিতু আমাকে দেখে একটুও অবাক হল না । আমার তো মনে হয় এখন যদি আমি একদিন না আসি তাহলেই বরং রিতু একটু অবাক হবে । রিতু আমার দিকে একটু তাকিয়েই আবার কম্পিউটার স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে মনযোগ দেওয়ার একটা ভাব করলো । যদিও আমি খুব ভাল করেই জানি ওর মনযোগ মোটামুটি আমার দিকেই ।
কেবল রিতুর মনযোগ কেন ওর পাশের মেয়েটার মনযোগ এমন কি বাইরে দাড়িয়ে থাকা দারোয়ানটার মনযোগ আমার দিকে ।
আমি কি করি সেটা দেখার অপেক্ষা ।
রিতুর পাশে বসা মেয়েটাকে দেখলাম মিসমিস হাসছে । মেয়েটার নাম মনে হয় পলিন !
আসলে মনযোগ কেনই বা আসবে না ? আমি গত সতের দিন ধরে এই বাংলালায়নের কাষ্টমার কেয়ারে আসছি নিয়ম করে । প্রতিদিনই কোন না কাজ নিয়ে । চোখে তো পড়বই ।
রিতুর সামনের চেয়ারটা ফাঁকাই ছিল । আমি ওটা তে বসে পড়লাম । অবশ্য ফাকা না থাকলেও কোন সমস্যা ছিল না । যতক্ষন না রিতুর সামনের চেয়ারটা ফাকা না হয় ততক্ষন আমি অপেক্ষা করতাম । আমি আসলে যে কোন একটা কারন খুজি কেবল এখানে থাকার ।
যতক্ষন থাকা যায় !
আমি বসার পর একটু সময় অপেক্ষা করলাম । রিতু তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-বলুন তানভীর সাহেব ? আজ কি করবেন ? পোষ্টপেইড প্লান চেঞ্জ নাকি বিল পে ?
-জি । আজকে বিল দিবো !
-আপনার নাকি আপনার কোন বন্ধুর ?
-জি আমারই ।
রিতুর এই কথা গুলো আমাকে জিজ্ঞেস করার কারন আছে । গত কয়দিনে আমি আমার প্রায় পনেরটার মত বাংলা লায়ন বিল পে করেছি ।
ভাগ্যভাল আমার কলিগ আর বন্ধুবান্ধব অনেকেই বাংলালায়ন ব্যবহার করে তা না হলে একটু বিপদেই পরে যেতাম ।
আমার একটা মডেম দিয়ে আর কবার আসা যায় এখানে ? অফিসের কলিগ আর বন্ধুদের সবার কাছে ফোন করে জানতে চেয়েছি যে তারা কোন নেট লাইন ব্যবহার করে । তারপর নিজ দায়িত্বে সেগুলোর বিল দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছি । বলেছি যে এখন আমি দিয়ে দিচ্ছি । তোমরা সময় মত আমাকে দিয়ে দিও ।
সবাই খুশি মনে রাজি হয়েছে ।
-আপনায় বিল দেওয়া আছে ।
আমি আবার রিতুর তাকালাম ।
-জি ? দেওয়া আছে ?
-জি দেওয়া আছে ।
-ও আচ্ছা ।
তাহলে এক কাজ করুন । আগামী মাসের বিলটা না হয় নিয়ে নিন ।
রিতু আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তানভীর সাহেব আপনার আগামী মাসের বিলই দেওয়া আছে । এখন মার্চ চলতেছে । এপ্রিল পর্যন্ত পে করা আছে ।
-আরে এপ্রিল দেওয়া আছে তো কি হয়েছে ? মে মাসেরটাও নিয়ে নিন । একাউন্টে জমা থাকুক কি বলেন ? হা হা হা ।
আমার এই কথা শুনে দেখলাম রিতার পাশের মেয়েটি হেসে ফেলল । রিতু খানিকটা মুখ গম্ভীর করে বলল
-এমন করে তো এতো অগ্রিম টাকা নেওয়া যায় না ।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই পাশের মেয়েটি বলল
-আরে কোন সমস্যা নাই ।
এটা তো মোবাইলের একাউন্টের মত । উনি যত ইচ্ছা জমা রাখতে পারবেন ।
তারপর মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তানভীর সাহেব আমি আপনাকে একটা বুদ্ধি দেই । এবার থেকে আপনি একবারে টাকা ভরবেন না ।
-কি রকম ?
-আরে বুঝলেন না ? এই যে আপনার বিল প্লান হল ১৪৩৭ টাকা ।
আপনি প্রতিদিন আসবেন একশ টাকা করে জমা দিবেন । রিতুর সাথে গল্প করবেন । ব্যস ।
রিতু মেয়েটির দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করে বলল
-পলিন তুই বেশি বুঝে গেছিস । চুপ থাক ।
আমি পলিনের দিকে তাকিয়ে বললাম
-এটা সম্ভব ?
পলিন বলল
-পারতপক্ষে আমরা এমনটা নেই না । তবে আপনার ক্ষেত্রে নেওয়া হবে ।
রিতু আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-জি না নেওয়া হবে না । বুঝেছেন ? জি বুঝাছি ।
আমি পলিনের দিকে তাকিয়ে বললাম
-আপনাদের অভিযোগ বাক্সটা কোথায় বলতে পারেন ?
-কেন ?
কথাটা বলল রিতু !
-আমার নামে কমপ্লেইন করবেন ?
-আরে না ।
কি যে বলেন না ? আমি কি আপনার নামে কমপ্লেইন করতে পারি ?
-তাহলে অভিযোগ বাক্সের কথা জানতে চাচ্ছেন কেন ?
-আমি আমার অভিযোগ আর সমস্যার কথা লিখতাম । কেউ যদি একবারে বিল দিতে না পারে তাহলে কি করনীয় । ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিল দেওয়া যাবে কি না । এই সব আর কি ?
রিতু আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো ! তারপর মে মাসের বিলের কাগজটা আমা দিকে ধরিয়ে দিয়ে বলল
-আপনার অগ্রিম বিলপে রশিদ ! ১৪৩৭ টাকা দিন !
আমি টাকা বের করে দিলাম !
হায়রে ভালবাসতে গিয়ে কত গুলো টাকা বের হয়ে গেল ! যাদের টাকা দিয়েছি তারা আবার আমার টাকা না দিলে আমি আবার বড় রকমের বিপদে পড়ে যাবো । কে জানে কি হবে !
-আপনার কাছে ভাংতি নাই ?
-না আর নাই তো !
-এখন ? আমি তো ঠিক এমাউন্ট লিখে ফেলেছি ! আর আমার কাছেতো ভাংতিও নাই !
-আচ্ছা ঠিক আছে ! কোন সমস্যা নাই ! অন্য কোন দিন নিতে আসবো !
পলিন বলল
-হুম তাই তো ! এটা তো ওনার এখন সেকেন্ড হোমবলা যায় ! অন্য কোন সময় এসে নিয়ে যাবে !
পরদিন আবার গিয়ে হাজির হলাম ।
-বলুন আজকে কি করবেন ?
-আজকে কিছু করবো না ! কালকের পাওনা টাকা নিতে এসেছি !
রিতুর মুখে এবার একটু বিশ্ময় দেখতে পেলাম !
-আপনি পনের টাকা নেওয়ার জন্য মিরপুর থেকে এখানে এসেছেন ?
আমি রিতুর এই জবাব দিতে একটু সময় নিলাম ! ওর দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলল
-আপনার কি মনে হয় আমি পনের টাকা নেওয়ার জন্য এতো দুর এসেছি ?
একেবারে ওর চোখের সাথে চোখ রেখে কথা বলছিলাম তাই বলে ব্যাপারটা আমি ধরতে পারলাম ! রিতুর চোখটা যেন একটু কেঁপে উঠলো !
রিতু কিছু না বলে কেবল আমার পনের টাকা বের করে দিল !
-আপনি এখনও বাসায় যান নি ?
আমি একটু হাসি । রিতু আমার দিকে তাকিয়েই থাকে কিছুক্ষন । তারপর বলল
-তানভীর সাহেব । আপনি কি করছেন এসব ? এমন পাগলামো করার বয়স কি আছে আপনার ?
-চা খাবেন ?
-আমি আপনাকে কি বলছি আর আপনি জবাব দিচ্ছেন ?
-চা খাবেন ? চা খেতে খেতে বলি !
-আচ্ছা ।
রিতু বসলো আমার পাশেই ।
সূর্য ডুবেছে বেশ কিছুক্ষন আগেই । কিন্তু আকাশের লালিমা এখনও রয়ে গিয়েছে । আমি লাল আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম
-জানেন রিতু প্রথম যেদিন আপনাকে দেখি ! ঐ দিন বেশ ভিড় ছিল । আমি লাইন ধরে অপেক্ষা করছিলাম । ঠিক তখনই আপনার দিকে আমার চোখ গেল ।
আপনি আপনার চশমাটা মাথার উপর তুলে রেখেছিলেন । আপনার দুটো পরিস্কার দেখতে পাচ্ছিলাম । আমি তখন বুঝতে পারি নি কি হল কিন্তু কিছু একটা যে এটা পরিস্কার বুঝতে পারছিলাম । রাতের বেলা যখন ঘুমাতে তখন আশ্চার্য ভাবে টের পেলাম যে আমার ঘুম আসছে না । যতবারই চোখ বন্ধ করতে যাই তখনই কেবল আপনার চোখটা আমার সামনে ভাসছিল ।
আমি ……
আমি চুপ করলাম ।
-আপনি ?
কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম । কোথায় যেন পড়েছিলাম মেয়েরা এসব খুব চট করেই বুঝে ফেলে ।
এই মেয়েটা কি বুঝতে পারছে ?
এই ফাজিল মেয়েটা কি বুঝতে পারছে না যে আমি তার প্রেমে পড়েছি !
আমি বললাম
-রিতু রাত হয়ে যাচ্ছে । চলুন বাসার দিকে যাওয়া যাক ।
-আপনি যাবেন আমার সাথে ? আমিও মিরপুরের দিকেই থাকি ! এটা আমার কাছে কেমন যেন লাগলো ।
-আমার সাথে যাবেন ?
রিতু একটু হাসলো !
-আমার জন্য এতো অগিম মাসের বিল দিলেন একটু খানি রিক্সায় চড়াই যায় !
কিন্তু একসাথে যাওয়া সহজ হল না । এখন অফিস ছুটির সময় । বাসে তো ওঠার উপায় নাই । আর সি এন জি ও পাওয়া গেল না ।
শেষ ভরসা রিক্সা । একবারে হয়তো যাবে যাবে না । ভেঙ্গে ভেঙ্গে যেতে হবে । রিতুর সাথে রিক্সা চড়তেই মনটা ভাল হয়ে গেল । ওর চুল গুলো বাতাসে উড়ছিল ।
মাঝে মাঝে এসে লাগছিল আমার মুখে । মনে হল দিন টা এমন হয় না কেন প্রতিদিন !!
এভাবে ভালই দিন কাটতে লাগলো ! কয়েকদিন পরে গিয়েছি । গিয়ে দেখি কাষ্টমার কেয়ারের সবাই মিষ্টি খাচ্ছে ! আমাকে দেখতেই পলিন নিজেও আমাকে একটা মিষ্টি এগিয়ে দিল ! আমি মিষ্টি মুখে নিতে নিতে বললাম
কিসের মিষ্টি ?
আরে আপনি জানেন না ?
-না !
-রিতুর জব হয়ে গেছে ডাচ বাংলা ব্যাংকে !সামনের মাস থেকে জয়েনিং !
আমি রিতুর দিকে তাকিয়ে বললাম
-ডাচ বাংলা ব্যাংক ?
-হুম ! জুনিয়র অফিসার হিসাবে !
আমি বললাম
-ব্রাক ব্যাংকে করা যায় না ?
রিতু আমার কথা ঠিক বুঝতে পারলো না মনে হয় !বলল
-মানে ? কি বলছেন আপনি ?
-না মানে আমার ব্রাক ব্যাংকে একাউন্ট আছে ! ডাচ বাংলা ব্যাংকে নাই ! এখন আবার আমাকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে হবে !
-আপনি এসব কি বলছেন ?
আমার কিছু বলা আগেই পলিন বলল
-আরে গাধা বুঝলি না ? যদি ডিবিবিএলে একাউন্ট না খোলে তাহলে তোর সাথে টাংকি মারবে কিভাবে ?
-টাংকি ?
রিতু কেবল আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন ! মুখে কেমন একটা দুষ্টমীর হাসি ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি একাউন্ট খুলে ফেলুন ! ঠিক আছে ? আর আপনার যত পরিচিত জন আছে সবাইকে বলেন ওখানেই একাউন্ট খুলতে !
আমি বললাম
-আমি বরং একটা কাজ করি ! আমার বাবা আর মাকে আগে একাঊন্ট খুলতে বলি ? ওনারা আপনার সাথে দেখা করুক ওখানে ! কথা বার্তা বলুক ! কি বলেন ?
-আপনি একটা পাগল বুঝছেন !
আমি আসলেই পাগল ! আমি তোমার জন্য পাগল !
ফেবু লিংক ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।