(সবাই ঈদ সংখ্যা বের করে,তাই আমারও এবারের ঈদ সংখ্যা ব্লগ। তাড়াহুড়ায় লেখা,তাই পুরোপুরি জাতে উঠতে পারেনি। সেকারনে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি পড়ার কষ্ট দেয়ার জন্য!)
নীলাকে আমি ভুলতে পারিনি আজও। মাঝে মাঝে অলস দুপুরে,চারিদিক যখন সুনসান হয়,-একাকীত্বের বেড়াজালে নিজেকে জড়িয়ে নিয়ে ভাবতে বসি তাকে। ধুলোপড়া বাক্সে ফুঁ দিয়ে আস্তে করে ডালা মেলি।
ভেতর থেকে বের করে আনি অনেকদিনের পুরোনো,বিবর্নপ্রায় নীলাকে। হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দেখি । বুকে কান পেতে শুনি তার হাসির জলপ্রপাত!আহ!কতদিন!ক-ত-দি-ন!!
অসহ্য রকমের একটা হাসি ছিল নীলার। একবার শুরু হলে আর থামতেই চাইত না । মুন্নি প্রায়ই বলত,"নীলা'পু,তোমার কপালে দুঃখ আছে।
এত হাসি ভাল না!"কিন্তু দুঃখের কথা ভাবার সময় কই নীলার!সে তখন স্বপ্নের ডানায় মেলে উড়ে চলেছে মুক্তোঝরা হাসি ছড়াতে ছড়াতে।
নীলা বোঝে না। নীলা বোকা। তাই এলোমেলো চলতে চলতে সে ভালোবেসে ফেলে এক কবিকে। (কবিকে কি ভালোবাসতে আছে?)এক ছন্নছাড়া!খামার বাড়িতে কি এক চাকুরী যেন ছেলেটির,তাও না করলেই নয় বলে করা।
কিন্তু তার আসল কাজ হল কাব্য লেখা। আকাশে উড়ে যাওয়া গোলাপী মেঘ নিয়ে,শান্ত পুকুরের জলে পড়া শিশির বিন্দু নিয়ে,কিংবা বৃষ্টি ভেজা নীলার শরীর থেকে ঝরে পড়া এক একেকটা ফোঁটা নিয়ে তার কাব্য!প্রথম কবিতার বই সে উৎসর্গ করল নীলাকে। প্রথম কবিতার শেষ লাইন-"নীলা-তোমার বুকে। "তারপরই হারানোর শুরু দু'জনের।
নীলা হারিয়ে যায় শামসের চোখে।
কিন্তু মুখে প্রকাশ করে না। একদিন কি এক ছুঁতোয় আলত হাত ছুঁয়ে যায় শামস। হয়ত ভালোবাসার স্পর্শ ছিল তাতে। কিন্তু পাগলী নীলা না বুঝেই রাগ করে উঠে পড়ে ঝটকা!তারপর সোজা হেঁটে রিক্সা নিয়ে বলে,"যাচ্ছি!"এরপর কত ফোন,কত অনুনয়!রাগের ফানুস এক ফুঁতেই ঠুস!!
শামস চিঠি লিখে আকাশের ঠিকানায়!চিঠি নয়,যেন এক একটি গল্প। কোথায় কোন গ্রামে নীলাকে ভাবতে বসে বিমুঢ় হয়ে যাওয়া।
মেঠো রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিশাল কমলা চাঁদকে সূর্য ভেবে ভুল করে পূর্ব পশ্চিম গুলিয়ে ফেলা!মনে মনে নীলার বাসার সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া,জূতোর ফিতে বাঁধার ছূতোয় একপলক ব্যাল্কনিতে উঁকি দেয়া!আর কত কি!!
একদিন হঠাৎ শামস জিজ্ঞেস করে,"আমার বাড়ী যাবে?"
শামসের বাড়ী শেরপুর। গাড়ো পাহাড়ের কাছে। শালবনের রাস্তাটা বড় প্রিয় নীলার। ওই রাস্তা ধরে সে যে কোন জায়গায় যেতে রাজী।
"আমাকে নেবে?"কি ভেবে আবার জিজ্ঞেস করে,"কিন্তু আমাকে নিয়ে গিয়ে তোমার বাবা-মা কে কি বলবে?"
শামস দুষ্টু হেসে বল,"বলব আমার হতে পারত বউ!"
জন্মদিনে নীলা শামসের পছন্দের শাড়ি পড়ে।
শামসের ফরমায়েশ মত কপালের দুই ভ্রুর মাঝে আঁকে গোল বড় টিপ। সুগন্ধি বেলফুলের মালা খোঁপায় জড়িয়ে নিয়ে অপেক্ষা করে শামসের। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের নিচতলায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যাথা,চোখ ছলছল। ঠিক সন্ধ্যার মুখে শামস কে গেট দিয়ে ঢুকতে দেখে অভিমানে গাল ফোলায় নীলা।
"এই তোমার আসা হল?এখুনি তো সন্ধ্যা নামবে!আমি যে তোমার জন্য সেজেগুজে এলাম,তুমি দেখবে কি করে বলো?"
শামস কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিস ফিস করে বলে,"চোখের আলোয় দেখেছিলাম চোখের বাহিরে,অন্তরে আজ দেখব যখন আলোক নাহিরে!!"
মুহুর্তগুলো যেন প্রজাপতির ডানায় মেলে উড়ছিল। দু'জনের চোখেই রঙ্গীন চশমা। কড়া রোদকেও তখন ভীষন ভাল লাগে!আর বৃষ্টি!সে তো ঐশ্বরীয়!!
নীলার একটা পথ আছে। এম.পি. হোস্টেলের পেছনে,সংসদ লাগোয়া ছোট্ট এক টুকরো রাস্তা। কড়া রোদেও আলো আঁধারে ঘেরা থাকে রাস্তাটা।
পথের ওপর সারা বছরই পড়ে থাকে ঝরা পাতা। সেই ঝরা পাতা মাড়িয়ে মাড়িয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে নীলা হারিয়ে যায় কোন স্বপ্নের দেশে!একবার এদিক থেকে ওদিক,আবার ওদিক থেকে এদিক,এভাবে হাঁটতে হাঁটতে ছোট্ট রাস্তাটার পথ যেন আর ফুরোয় না!
"একদিন খুব বৃষ্টি হবে,সেদিন তুমি আর আমি সেই রাস্তায় তুমুল ভিজব!"
শামস অপেক্ষা করে আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামার। নীলাও। কিন্তু সেই অপেক্ষার শেষ আর হয়ে ওঠে না। তার আগেই হারিয়ে যায় শামস!কেন,কে জানে?কি এক অজানা অভিমান বুকে নিয়ে অজান্তেই নিজেকে সরিয়ে নেয় নীলার জীবন থেকে।
একেবারে নিঃশব্দে!অভিমানে নীলাও মুখ ফিরিয়ে রাখে। ফোন করে খুঁজেও দেখে না সে কোথায় আছে!ব্যস্ত সময় নীলাকে সরিয়ে রাখে শামসের কাছ থেকে। নতুন শহর,নতুন মানুষ!একেবারেই হারিয়ে যায় দু'জন।
পুরোপুরি হারিয়ে ফেলার পরই নীলা বুঝতে পারে,ভালোবাসা কারে কয়!কখন নীরবে,নিভৃতে এক স্বর্গীয় প্রেম এসে হৃদয়ে বাসা বেঁধেছিল,নীলা বুঝতেও পারেনি। আর তাই তো তার প্রকাশ ঘটেনি কখনো।
সেই ভালোবাসার কুঁড়ি কখন ফুল হয়ে ফুটে ঝরে গেছে নীলা আজো জানে না। সে শুধু ঝরা পাতাগুলোকে কুড়িয়ে নিয়ে বাক্সবন্দি করে রাখে। শুকিয়ে যাওয়া পাতাগুলো থেকে আজো ভালোবাসার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়,পাওয়া যায় তার সুরভী।
নীলা মনে মনে খুজে ফেরে তাকে। সেই পাবলিক লাইব্রেরী,সেই টি এস সি এর মোড়।
সেই নাম না জানা গাছটির ছায়ায় আজো খুজে ফেরে হারিয়ে যাওয়া মুখ।
বইমেলায় গেলে খুব কাছ থেকে দেখে কবিদের মুখ। কাউকে কি চেনা মনে হয়?খোঁচা খোঁচা দাড়ি,ফরসা ছেলেটাকে দেখে চমকে যায়,কাছে গিয়ে ভুল ভাঙ্গে। না, সে নয়,অন্য কেউ!
প্রতিদিন একবার হলেও নীলা খুঁজে ফেরে সেই চেনা মুখ। একবার যদি তার দেখা পেত!হাত ধরে নিয়ে যেত তার সেই প্রিয় পথটিতে।
বলত,"এই নাও,আজ থেকে তোমায় দিলাম। "
হায়!যে হারায়,সে কি আর ফেরে?হারানো মানুষ ফিরে আসে,কিন্তু যে নিজেই হারায়?তাকে যে বলা হল না,নীলার ভালোবাসার কথা। সে যে ভুল বুঝে চলে গেল!সে কোনোদিনো জানল না,কে এক নারী আজো তার কথা ভেবে আড়ালে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। হায়!এত সহজেই চলে যেতে শিখেছে মানুষ!
পড়ন্ত বিকেলে বন্ধ হয় স্মৃতির জানালা। সব পাখি ঘরে ফিরে!ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন।
বাক্সবন্দী হয় নীলার জীর্নপ্রায় অস্তিত্ব!
আর আমিও ফিরি আমার ঘর গেরস্থালীর কাজে। নীলা থেকে নীলাদ্রি হক!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।