আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বান্দরবনে বড় বিলাই (তখন ছোট ছিল) - ৪

বান্দরবনে বড় বিলাই (তখন ছোট ছিল) - ১ বান্দরবনে বড় বিলাই (তখন ছোট ছিল) - ২ বান্দরবনে বড় বিলাই (তখন ছোট ছিল) - ৩ একদিন মামী আমাদের নিয়ে বেড়াতে বের হলেন। খালের পার ধরে মাটির রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে এলাম। আসলে হয়ত অনেক দূর ছিল না, আমার কাছে মনে হয়েছিল। কিন্তু খুব ভালো লাগছিল। আমার চোখ খালেই আটকে ছিল।

খালটা এত লম্বা যে শেষই হয় না। আর দুই পাশে কি সুন্দর গাছ ছায়া দিয়ে রেখেছে খাল আর রাস্তার দুইয়ের উপরেই। মামী আমাদের এক বাড়িতে নিয়ে গেলেন। ওখানকার স্থানীয় উপজাতি, মগ ওরা। বাড়ির মহিলাটা আমাদেরকে কিছু একটা খেতে দিয়েছিলেন গুড় মুড়ি বা ঐ ধরণের কিছু।

এখন মনে নেই। ঐ বাসায় আমাদের বয়সী কিছু ছেলে-মেয়ে ছিল, কয়জন তা-ও মনে নেই। ওরা লুডো খেলছিল। আমাদেরকেও ডাকল খেলতে। আমার তো কিছুতেই ছক্কা পড়ে না।

পরে ওদের মা আমাকে শিখিয়ে দিলেন কিভাবে ছক্কা ফেলতে হয়, আমার হয়ে দুইটা ছক্কা মেরে দিলেন। অবশেষে গুটি চালানো শুরু করতে পারলাম। কিন্তু খেলা শেষ আর হল না। একটু পর ওদের বড় ভাই এল, হাতে মাছ ধরার এক ধরণের বাঁশের কুলার মত জিনিস, ঐটার নাম জানি না। এতদিন শুধু বইয়ে জেলেদের কথা পড়েছি, আজকে চোখের সামনে একজন জেলে দেখতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করতে থাকলাম।

এরপর মনে হয় আরও কোথাও ঘুরতে গিয়েছিলাম, কিন্তু পরিষ্কার মনে পড়ছে না। মামা একদিন বাজারে নিয়ে গেলেন আমাদের। মনে হয় এই প্রথম গ্রামের বাজারে গেলাম। ওখানকার হাউ-কাউ ভালোই লাগছিল। সবচেয়ে ভালো লাগছিল খাবারের দোকানগুলো।

জিলাপী, সিঙ্গারা আরও কি কি জানি বানাচ্ছিল। মামা আমাদের জিলাপী কিনে দিয়েছিলেন কি না ঠিক মনে পড়ছে না। আমার অবশ্য খাওয়ার চেয়ে বানানোটা দেখতেই বেশি মজা লাগছিল। কাপড়ের দোকানে রঙ-বেরঙের ছিটের কাপড় দেখতেও ভালো লাগছিল। ওখানকার উপজাতি মেয়েদের পোষাকটাও মজার।

শার্টের মত একটা বড় ব্লাউজ, আর তার সাথে লুঙ্গির মত করে পেঁচানো একটা কাপড়। থামি বলে মনে হয় এই পোষাককে। সেটা অবশ্য অনেক পরে জেনেছি। তবে ওদের মধ্যে মোটা-সোটা কাউকে দেখলাম না। ছোট-বড় বাচ্চা-বুড়ো-বুড়ি সবারই কি সুন্দর ছিপছিপে শরীর।

মনে হয় নিয়মিত পাহাড়ে ওঠানামা করে বলেই এমন। একদিন খুব বৃষ্টি হল। দুপুরবেলা খাওয়ার পর একটু কলাবাগানে হাঁটাহাঁটি করতাম। বৃষ্টির মধ্যে আর সেটা হল না। ঠান্ডা আবহাওয়া পেয়ে একটা ঘুম দিলাম জম্পেশ।

ঘুম থেকে উঠে বাড়ির সামনে তাকিয়ে মনে হল, কি যেন একটা অন্যরকম লাগছে। বৃষ্টি ততক্ষণে থেমে গেছে। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে অবশেষে ধরতে পারলাম পরিবর্তনটা। খালের পানি অস্বাভাবিক রকম বেড়ে গিয়েছে। আগে খালের পানি দেখার জন্য একটু কাছাকাছি যাওয়া লাগত, এখন বাড়ির সিঁড়িতে দাঁড়িয়েই দেখছি কুল কুল করে বয়ে যাচ্ছে খালের পানি, কাঠের সেতুকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলবে এমন অবস্থা।

শান্ত খালটাকে ভয়ংকর হতে দেখে কেন যেন একটু ভয় ভয় করতে থাকল। মামার বাড়িতে গোসলখানা ছিল মূল ঘর থেকে আলাদা। আর খুবই যন্ত্রণার ব্যাপার হল এর কোন আলাদা দরজা ছিল না। একটা বাঁশের বেড়ার মত ছিল যেটাকে দাঁড় করিয়ে দরজা বানানো হত। আমাদের মত পিচ্চিদের পক্ষে সেই বেড়া ধরে দাঁড় করানো অসম্ভব ছিল।

মামী বলতেন, তোমরা তো পিচ্চি, এমনিই গোসল করে নাও। কিন্তু আমার খুবই অস্বস্তি লাগত। গোসলে ঢুকার সময় মামীকে ডাকতাম বেড়াটা জায়গামত দাঁড় করিয়ে দেয়ার জন্য। ছোট বোনও তাই করত। একদিন মামী মনে হয় একটু তাড়ার মধ্যে ছিলেন, ছোট বোন গোসলে যাবার সময় মামী তাড়াহুড়া করে বেড়াটা দাঁড় করিয়ে এসে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

একটু পরেই দেখি ছোট বোন এসে হাজির। সারা শরীর পানিতে ভেজা। কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, মামী, দরজা তো পড়ে গেছে। মামী আবার গিয়ে বেড়া দিয়ে এলেন। পাঁচ মিনিটও মনে হয় যায়নি, ছোট বোন আবারও মামী মামী করতে করতে এসে পড়ল, এবার তার সারা মাথায় শ্যাম্পু লাগানো।

আর তো আমরা হাসি চাপতে পারি না। মামী হাসতে হাসতেই গিয়ে আবার ভালো করে বেড়াটা দাঁড় করিয়ে এলেন। আমি ভাবছিলাম, সে যদি গোসল করতে করতে এভাবে বের হয়েই যেতে পারে, তাহলে তার আর বেড়ার দরজার দরকারটা কী? ওখানকার খাওয়ার পানি একেবারেই ভালো ছিল না, মানে ভালো লাগত না। আয়রন ছিল খুব বেশি, বিকট গন্ধ আসত আয়রনের। পানির গ্লাস মুখের কাছে নিলেই বমি এসে যেত।

একদিন মামী আমাদের আমলকী খেতে দিলেন। এর আগে আমলকী মনে হয় খাইনি। কেমন যেন তিতা তিতা কষ কষ লাগল। মামী বললেন, ভালো লাগছে না? একটু কষ্ট করে খাও, এরপর পানি খেয়ে দেখ, দেখবে পানিটা কেমন মিষ্টি লাগে। একটা আমলকী অনেক কষ্টে শেষ করে পানির গ্লাসে চুমুক দিলাম।

আসলেই তো। মিষ্টি না লাগলেও আয়রনের ঐ বিদঘুটে স্বাদটা একেবারেই লাগছে না। দুই বোনে ঠিক করলাম এরপর থেকে পানি খাওয়ার আগে আমলকী খেয়ে নিব। কয়েকটা আমলকী এজন্য আলাদা করে রেখে দিলাম। কিন্তু আফসোস, পরে আর খুঁজে পাইনি আমলকীগুলো।

আমাদের দুই বোনের সব কাপড় চোপড় আমার স্কুল ব্যাগে করে নিয়ে এসেছিলাম। ব্যাগটা রাখার জন্য জায়গা খুঁজে না পেয়ে মামার আলমারীর হাতলের উপর রাখতাম। মামা দেখলেন তার আলমারীর হাতল ভাঙার পাঁয়তারা করছি আমরা। তখন আমাদের ব্যাগ রাখার একটা সুন্দর জায়গা করে দিলেন। বাগান থেকে পাওয়া একটা সজারুর কাঁটা নিয়ে এলেন, সেই কাঁটা বেড়ার ফাঁকে ঢুকিয়ে তার সাথে ঝুলিয়ে দিলেন আমাদের ব্যাগ।

অনেক মজবুত ছিল ঐ কাঁটা। অনেক হাবিজাবি কথা লিখে ফেলছি। আরও অনেক কথা মনে পড়ছে। আবার তাহলে আরেক দিন লিখব। চলবে............. (ছবি কৃতজ্ঞতা: রেজোওয়ানা আপু) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।