বাংলাদেশি মূকাভিনয় শিল্পী পার্থপ্রতিম মজুমদার। মুকাভিনয় শিল্পের প্রচার ও প্রসারের জন্য এখন থেকে তিনি দেশের জন্য কাজ করবেন। তার ইচ্ছে যথা শিগগিরই এদেশে একটি মাইম ইনস্টিটিউট অর্থাৎ মূকাভিনয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। প্যারিস প্রবাসী বিশ্বখ্যাত মূকাভিনেতার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হলো................।
প্রশ্ন : কেমন আছেন?
পার্থ প্রতিম মজুমদার : অনেক ভালো আছি।
প্রতিটি দিনই ভালো থাকতে হয়। ভালো থাকার জন্যইতো এই বেচেঁ থাকা।
প্রশ্ন : ফ্রান্স সরকারের দেওয়া সর্বোচ্চ পদক ‘নাইট ইন দ্য অর্ডার অব ফাইন আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ" এ ভূষিত হয়েছেন। এত বড় একটি সম্মান দেশের মানুষের জন্য আপনি বয়ে আনলেন আপনার অনুভূতি কি?
পার্থ প্রতিম মজুমদার : চারুকলা এবং মানবতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ আমি এই পুরস্কারটি পাই। এজন্য আমি আমার বাবা ওস্তাদ বারিন মজুমদার, মা ইলা মজুমদারের প্রতি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ।
যারা আমাকে দত্তক হিসেবে নিয়ে তাদের পুত্রস্নেহে মানুষ করেছিলেন। আমার আসল বাবা মা ও আর বেচেঁ নেই। তাদের প্রতি আমার চির কৃতজ্ঞতা। আর একজন হচ্ছে আমার স্ত্রী জয়শ্রী মজুমদার। তার সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া আমার পক্ষে এত বড় জয় পাওয়া সম্ভব হতো না।
এরপর আমার জন্মস্থান বাংলাদেশের প্রতি দেশের প্রতিটি মানুষের প্রতি আমার শ্রদ্ধা। এ পুরস্কারতো আমার নয় আমার দেশের। আমার জন্মভূমির। কারন তারা সবাই জানে আমি বাংলাদেশের ছেলে।
প্রশ্ন : মূকাভিনয়ের প্রতি এত ভালোবাসা এত শ্রদ্ধা কিভাবে নিজের মধ্যে লালন করছেন?
পার্থ প্রতিম মজুমদার : শুধু লালন নয়।
গত ৪৫ বছর ধরে নিজের মধ্যে পালনও করছি। এজন্য আমি মার্শেল মার্কোর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। যিনি আমাকে হাতে ধরে মাইম অর্থাৎ মুকাভিনয় শিখিয়েছেন। পুত্র স্নেহে তিনি আমাকে মুকাভিনয়ের প্রতিটি মাধ্যম দেখিয়ে দিয়েছেন। তার কাছে আমার মূকাভিনয়ের দীক্ষা।
ওনার ছায়াই থেকেই আজ আমি পার্থ প্রতিম মজুমদার। মার্শেল মার্কো কিন্তু মাইকেল জ্যাকসেনেরও গুরু ছিলেন। মার্শেল মার্কোই পুরো পৃথিবীতে মূকাভিনয়কে সেরা এক শিল্পমাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
প্রশ্ন : মূকাভিনয় শিখতে হলে একজন মানুষের মধ্যে কি ধরনের গুনাবলী থাকা উচিত?
পার্থ প্রতিম মজুমদার : মাইমে অর্থাৎ মূকাভিনয়ে একটেই ভাষা হ্যা আর না। তবে মূকাভিনয় শুধুমাত্র কিন্তু একক শিল্প নয়।
এই শিল্পটা হচ্ছে আমাদের সবগুলো মাধ্যম অর্থাৎ সবগুলো শিল্পের খুটিঁ। এই শিল্পের উপর দাড়িয়ে রয়েছে আমাদের দেশের নাটক, নাচ, গান, মডেলিং ইত্যাদি। আর তার প্লাটফর্ম হচ্ছে মুকাভিনয়। যেখানে এক্সপ্রেশন জড়িত, দেহভঙ্গিমা জড়িত। সৎ থাকতে হবে।
নিজেকে অবশ্যই দক্ষ করে তুলতে হলে আত্মবিশ্বাসের কোন বিকল্প নেই। তবে এজন্য প্রয়োজন প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ কবে আপনার মাধ্যমে একটি আর্ন্তজাতিক মানের মাইম ইন্সটিটিউট অর্থাৎ মূকাভিনয় প্রতিষ্ঠান পাবে?
পার্থ প্রতিম মজুমদার : বাংলাদেশ একটি মাইম অর্থাৎ মূকাভিনয় প্রতিষ্ঠান গড়তে গত ৩০ বছর ধরে নিজের ভেতরে লালন করছি। এটি আমারও প্রশ্ন কবে আমার দেশে আমি একটি আর্ন্তজাতিক মানের ইন্সটিটিউট গড়ে তুলবো। কারন আর্ন্তজাতিক মানের একটি ইন্সটিটিউট যত দিননা পর্যন্ত আমরা করতে পারবো ততদিন পর্যন্ত আমরা সেই মানের শিল্পী তৈরি করতে পারবো না।
এজন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই। আমি প্রায় ৪৫ বছর যাবৎ এই শিল্পের চর্চা করছি। যে শিক্ষাটা গত ৩০ বছর ধরে প্যারিসের মতো জায়গায় আমি কষ্ট করে শিখেছি। তা আমি আমার দেশের মানুষের কাছে পৌছে দেব। যেখানে রয়েছে বিভিন্ন ফর্মের মাইম, প্যান্টো মাইম, কর্পোরাল মাইম, মাইমো ড্রামা, মর্ডান ড্যান্স, আমাদের দেশীয় নাচ, আমাদের দেশের নাটক, ইউরোপের নাটক।
এজন্য বাংলাদেশে মূকাভিনয় শিক্ষার জন্য শিগগিরই একটি প্রতিষ্ঠান করা জরুরী। আমাদের সন্তানদেরকে কিন্ডার গার্ডেনগুলোতেও এ ব্যবস্থা করা যায়। এতে বাচ্চারা যেমন আনন্দ পাবে তেমনি তারা নিজেরাও অনেক কিছু শিখবে। কারন এক্ষেত্রে শরীরও ভালো থাকে মনটাও ভালো থাকে। তাই বাংলাদেশের সবার কাছে আমার প্রার্থনা : যে কারনে আজ আমার দেশের নাম বিদেশের মাটিতে শোভা পাচ্ছে।
এটি আমার নয় আমার দেশের সম্মান। সেই বাংলাদেশের ছেলে হয়ে আমি আমার দেশের মাটিতে একটি আর্ন্তজাতিক মানের মূকাভিনয় প্রতিষ্ঠান গড়তে চাই। এজন্য বাংলার প্রতিটি মানুষের সহযোগিতা ছাড়া তা কখনোই সম্ভব নয়। তাই আমি আন্তরিকভাবে সবার কাছে অনুরোধ জানাই। আমার নয় আমার দেশের নাম আরো ছড়িয়ে পড়ুক দিগন্ত থেকে দিগন্তে।
প্রশ্ন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার হাত ধরে মূকাভিনয় শিল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাম সবার মাঝে চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে এটিই কামনা করছি।
পার্থ প্রতিম মজুমদার : আপনাদেরকেও অনেক ধন্যবাদ। কারন আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া এটি সম্ভব হতো না।
পার্থ প্রতিম মজুদদারই প্রথম বাংলাদেশি যিনি ফ্রান্স সরকারের এই সর্বোচ্চ খেতাবে ভূষিত হলেন।
এছাড়া তিনি ‘মাস্টার অব মাইম’ (ভারত); ‘মাস্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ (মালয়েশিয়া) পুরস্কার, ফ্রান্সের মলিয়ের পুরস্কারসহ বহু পুরস্কারে ভ’ষিত হয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশে তিনি ‘‘একুশে পদক ২০১০’’ পেয়েছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।