আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চারদিকে আশ্চর্য বৈপরীত্য

http://profiles.google.com/mshahriar ( আমার একটা পোষ্টে একজনের বৈপরীত্যের কমেন্ট দেখে কথাগুলো মনে হলো৷ ) বহু বছর আগের কথা৷ অভিনেত্রী ঈশিতা তখন ছোট (আমিও)৷ সে বছর ঈশিতা নতুন কুড়িতে পারফর্ম করছে৷ তখন এরশাদ সরকার ক্ষমতায়৷ নতুন কুড়ির পুরষ্কার বিতরণের দিন ঈশিতা ফালানী নামে বস্তিবাসী হতদরিদ্র এক দুঃখী মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করলো৷ যে মেয়েটা জীবিকার প্রয়োজনে শিশু বয়সেই অন্যের বাসায় কাজ করে; যাকে সেই ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে বাসার কাজে লেগে পড়তে হয়, তারপর নানা গঞ্জনা সয়ে যাকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে যেতে হয়৷ অভিনয় দেখতে দেখতে ফালানীর দুঃখে এরশাদ নাকের পানি চোখের পানি এক করে ফেললো৷ তারপর কি প্রশংসার পালা চারিদিকে৷ পত্রিকায় ঝড়৷ ফালানীর কষ্ট দেখে এরশাদের পানি নির্গমনের দৃশ্য পত্রিকাগুলোর পাতায় পাতায়৷ ঈশিতার প্রশংসায় লিখতে লিখতে পত্রিকাগুলোর কাগজ ফুরিয়ে গেলো৷ কেনো এতো প্রশংসা? না, তার অভিনয় দেখে প্রেসিডেণ্টের চোখে পানি এসে গেছে৷ কে সেই প্রেসিডেন্ট? না, এরশাদ৷ যে একজন ভণ্ড, একজন দুর্নীতিবাজ, মিথ্যাবাদি, খুনি আরো ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি৷ যার সম্পর্কে বলা হয় যে নাকি বাংলাদেশে দুর্নীতির সুদিন নিয়ে এসেছে৷ না, এসব কথা আমি বলি না৷ বলে ঐসব পত্রিকাগুলোই, যারা ঈশিতার অভিনয়ের প্রশংসা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্টের চোখের পানিটাই প্রথম দেখে৷ ঈশিতা যে ফালানী চরিত্রে অভিনয় করেছে, সে ফালানীর কষ্ট সে নিজে সত্যিকারভাবে কখনো অনুভব করেছে কি না সেটা না হয় নাই বললাম৷ সেটা আমাদের আলোচনার বিষয় না৷ আমি মাঝে মাঝে ভাবি, আসলে কে ভণ্ড? যদি এরশাদই ভণ্ড হয় তবে তার চোখের পানি দেখে আমরা এতো ধন্য ধন্য করি কেনো? একজন ভণ্ডের চোখের পানির কি মূল্য আছে? নাকি আমরাই ভণ্ড? আজো আমি দেখি, যে সাংবাদিকটা এরশাদের নাম শুনলেই হেসে ওঠে, সেই আবার যখন ঈশিতার প্রশংসা করতে যায় তখন এরশাদের চোখের পানি ফেলাটা কিছুতেই মিস করে না৷ চূড়ান্ত এরশাদ বিরোধী লোকটাও ঈশিতার প্রসঙ্গে প্রথমেই এরশাদকে নিয়ে আসে৷ একজন ভণ্ড প্রেসিডেন্টের চোখের পানিটা তখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে৷ চারদিকে আশ্চর্য বৈপরীত্য৷ না কি ক্ষমতাবান মানুষদের ধামা ধরাটা আমাদের স্বভাব? আমাদের মন নিজের অজান্তেই তাদের তাবেদার হয়ে ওঠে? না হলে যে সজীব ওয়াজেদ জয় সারাজীবন আমেরিকায় কাটিয়েছে, দেশের জন্য যার কোনো অবদান নেই (বিপরীতটা আছে বটে), শেখ হাসিনার পুত্র হওয়া ব্যতিরেকে যার আর কোনো যোগ্যতা নেই, তার আগমনে কেনো এয়ারপোর্টে মানুষের ঢল নামে? কেনো পত্রিকাগুলো অমন ঢাউস করে তার আগমনের সংবাদ প্রচার করে? চারদিকে আশ্চর্য বৈপরীত্য৷

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।