আমার এই ব্লগের কোনো লেখা বা লেখার কোনো অংশ আমার লিখিত অনুমতি ছাড়া যে কোনো প্রকার মিডিয়াতেই প্রকাশ করা যাবেনা। যদি তা করা হয়, তাহলে আমি আইনগত এবং অবস্থাভেদে ব্লগের আইন/প্রসিজিওর অনুযায়ী ব্যাবস্থা নিতে বাধ্য হব
রাজাকার সাঈদীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছিলো সেটির মধ্যে ৬,৭,৮,১০,১১,১৪,১৬ এবং ১৯ নাম্বার অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে। বিচারকেরা ৮ এবং ১০ -এ বর্ণিত অভিযোগের ব্যাপকতা অন্য প্রমাণিত অভিযোগের তুলনায় অনেক বেশী মনে করেছেন এবং এই দুটি ক্ষেত্রেই সাঈদীর মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন। অন্য অপরাধগুলো সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হলেও যেহেতু ৮ আর ১০ নাম্বার এর ক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন তাই বাকী গুলোতে আর আলাদা করে কোনো শাস্তি দেননি।
সাঈদীর মামলার পুরো রায় এখান থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন চাইলে।
যেই দুইটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজাকার দেইল্লা সাঈদীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে সেই অভিযোগ দুইটির একটি হচ্ছে ইব্রাহিম কুট্টির হত্যাকান্ড এবং সেইসাথে এই অভিযোগের সাথে সংশ্লিষ্ঠ অন্যান্য অপরাধের সত্যতাও বের হয়ে এসেছে।
(অভিযোগ-৮ দ্রষ্টব্য)
সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে গেলে এই অভিযোগটি নিয়ে ডিফেন্স বরাবরি যুক্তি দেখিয়ে আসছে যে ১৯৭২ সালে যখন ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার প্রেক্ষিতে যে মামলা হোলো সেখানে সে মামলার বাদী ইব্রাহিমের স্ত্রী মমতাজ বেগম যে কয়জনকে আসামী করেছিলেন তার মধ্যে সাঈদীর নাম নেই। খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগায় যে তাহলে কি সাঈদী নির্দোষ? যেখানে ভিকটিমের স্ত্রী-ই প্রথম মামলায় সাঈদীকে আসামীর লিস্টে রাখেন নি, সেখানে এখন কেন রাখা হচ্ছে এবং কেনই বা তাকে শাস্তি দেয়া হোলো?
এখানে আসলে অনেকগুলো ব্যাপার বিবেচ্য।
প্রথমতঃ লক্ষ্য করুন, ডিফেন্স মমতাজ বেগমের করা মামলার কথা বলছেন অথচ এই কথার প্রেক্ষিতে কখনই মমতাজ বেগমকে আদালতে হাজির করাতে পারে নি? এই মমতাজ বেগমকে আদালতেই এনেই তো ডিফেন্স তাদের আর্গুমেন্টের প্রেক্ষিতে তাদের অবস্থান সত্যায়িত বলে প্রমাণ করতে পারত, কিন্তু সেটি না করেই তারা কেন শুধু ডকুমেন্টের উপর আর্গুমেন্ট করছে?
দ্বিতীয়তঃ মনে রাখতে হবে ইব্রাহিম কুট্টি মানিক পসারীর বাড়ীতে একজন কাজের মানুষ ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর যুদ্ধপরবর্তী মানসিক অবস্থাও আমাদের বুঝতে হবে।
স্বামীকে হত্যা করেছে পাক হানাদার আর রাজাকাররা মিলে। সে সময় তিনি মামলা করেছেন, কে তাকে সাহায্য করেছিলো, ওই সময়ে কে তাকে তথ্য দিয়েছিলো, তিনি আদৌ কাউকে দেখেছেন কিনা, অপরাধীদের ব্যাপারে এসব সকল কিছুই কিন্তু এখানে খতিয়ে দেখতে হবে। সবচাইতে স্ট্রাইকিং পয়েন্ট হচ্ছে ডিফেন্সের এই এই বক্তব্যের ও প্রদর্শিত সাক্ষ্যের প্রেক্ষিতে ডিফেন্স মমতাজ বেগমকে সাক্ষী হিসেবে হাজির করতে পারেনি। প্রশ্নটা আসতেই পারে, "কেন পারেনি?", আবার নীচে উদাহরণ দিয়ে বলেছিই, এমন ভুরি ভুরি মামলার উদাহরন যেখানে মূল অপরাধীর বিরুদ্ধে শুরুতে কোনো মামলাই হয়নি, অন্য ব্যাক্তিকে ধরা হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যাচ্ছে যে মূল অপরাধী ধরা পড়েছে।
আবার অন দা কন্ট্রারি আইন যদি বিবেচনা করি তাহলে বলতে হয় এটা একটা যুক্তি হলেও এর মানে এই দাঁড়ায় না যে, কোনো হত্যা মামলায় প্রথমবারে কারো নাম অন্তর্ভূক্ত না করাটাই শেষ কথা এবং সেখানে পরবর্তীতে আর কারো নাম আসবে না কিংবা আসলেও প্রথমবার কেন এসেছে এই যুক্তিতে একজন সাসপেক্ট পার পেয়ে যাবে। এরকম অসংখ্য মামলা পৃথিবীতে রয়েছে যেখানে শেষ পর্যন্ত যাকে অপরাধী হিসেবে পাওয়া গিয়েছে প্রথম দফায় তার নাম কেউ জানতও না। বাংলাদেশেই এমন নিদর্শন ভুরি ভুরি।
এই জাতীয় মামলার কয়েকটা উদাহরণ
1) Timothy Evans's wife and young daughter were killed in 1949. Evans was convicted of the murder of his daughter and was hanged in 1950. An official inquiry conducted 15 years later determined that the real killer of Evans's daughter had been Evans's co-tenant, serial killer John Reginald Halliday Christie. [England]
2) Andrew Mallard was convicted for the murder of jeweler Pamela Lawrence in 1994 after eight unrecorded hours of police interrogation and a brief recorded "confession" that followed. In 2005, the High Court of Australia was advised that the prosecution and/or police had withheld evidence which showed his innocence, and overturned his conviction. As such, Mallard was released from prison. A "cold case" review of the murder conducted after Mallard's release implicated one Simon Rochford as the actual offender and Mallard was exonerated. [Australia]
আবার ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টারের এমন আরেকটি কাহিনী যেখানে মূল অপরাধীকে না ধরে অন্য একজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিলো এখানে দেখা যেতে পারে
ডিফেন্সের প্রদর্শিত এই তথাকথিত মামলার কাগজপত্র কি সত্য?
ডিফেন্স ১৯৭২ সালে দায়ের করা যেই মামলাটি আদালতে প্রদর্শিত করেছে আদালতে সেটি কতটুকু গ্রহণযোগ্য সেটি আমাকে আসলে বলতে হয়না। মাননীয় আদালত এই সাক্ষ্যের ব্যাপারে কিছু বলেন নি বলেই আমরা রায়ে দেখতে পাই এবং সাঈদীর বিরুদ্ধেই রায় আসে।
সুতরাং এই ব্যাপার থেকেই আমরা ধরে নিতে পারি যে ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী’র নাম ব্যাবহার করে এই মামলার কাগজটি আদালত যথাযথ মনে করেন নি। যেখানে সাঈদী নিজেই তার নাম ও বয়স নিয়ে জালিয়াতী করেছে সেখানে মমতাজ বেগমের এই মামলা নিয়ে জালিয়াতী যে করেনি তার গ্যারান্টি নেই। সাঈদী তার নাম ও বয়স নিয়ে যেই জালিয়াতী করেছে এবং অন্যান্য যে সকল অপরাধ করেছে তার বিবরন এই লিঙ্কে গেলে পাবেন , এছাড়াও এই লেখার শেষে আপনারা সাঈদীর পক্ষে এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাক্ষ্য দিতে আসা এক সাক্ষীর সাক্ষ্য কিভাবে মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে তা জানতে পারবেন।
আবার লক্ষ্য করলে দেখতে পাই আলোচ্য অভিযোগ ৮ এর ক্ষেত্রে কিন্তু শুধুমাত্র ইব্রাহিম কুট্টিকেই যে হত্যা করা হয়েছে সেটি বলা নেই। এখানে আরো অন্যান্য অপরাধ রয়েছে।
আসুন অভিযোগগুলো পড়ি-
That on 8th May, 1971 at about 3.00 p.m. under your leadership you and your accomplices accompanied with Pakistani Army raided the house of Manik Posari of village-Chitholia under Pirozpur Sadar Police Station and caught his brother Mofizuddin and one Ibrahim @ Kutti therefrom. At your instance other accomplices after pouring kerosene oil on five houses, those were burnt to ashes causing a great havoc. On the way to Army Camp, you instigated Pakistani Army who killed Ibrahim @ Kutti by gun-shot and the dead body was dumped near a bridge, then Mofiz was taken to army Camp and was tortured. Thereafter, you and others set fire on the houses of Hindu community at Parerhat Bandar causing huge devastations. The acts of looting goods and setting fire on dwelling houses are considered as persecution as crimes against humanity on religious ground. You directly participated in the occurrences of abduction, murder and persecution which are identified as crimes against humanity.
এখানে দেখা যাচ্ছে যে শুধু ইব্রাহিম কুট্টিকেই শুধু হত্যায় সহযোগীতাই কিংবা হত্যাকান্ডের পুরো প্রক্রিয়ার একজন ব্যাক্তি হিসেবে উপস্থিতই নয় বরং এটি ছাড়াও লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতনের অভিযোগও সাঈদীর বিরদ্ধে রয়েছে
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রসিকিউশনের সাক্ষী ছিলেন মোট নয়জন। সাক্ষীরা হলেন-
২য় সাক্ষীঃ রুহুল আলম নবীন
৪র্থ সাক্ষীঃ সুলতান আহমেদ হাওলাদার
৬ষ্ঠ সাক্ষীঃ মানিক পসারী
৭ম সাক্ষীঃ মফিজুদ্দিন পসারী
৮ম সাক্ষীঃ মোহাম্মদ মোস্তফা হাওলাদার
৯ম সাক্ষীঃ মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন
১০ম সাক্ষীঃ বাসুদেব মিস্ত্রী
১১তম সাক্ষীঃ আবদুল জলিল শেখ
১২ তম সাক্ষীঃ আলহাজ্ব এ কে এম এ আওয়াল ওরফে সাইদুর রহমান(এম পি)
আপনারা যদি পুরো রায়টি পড়েন তবে মোটামুটি সব সাক্ষীর সাক্ষ্যের সামঞ্জস্যতা এবং বক্তব্য একই ধরনের দেখা যায়। যেখানে আমরা দেখতে পাই যে, সাক্ষীরা সকলেই কাঠগড়ায় দাঁড়ানো সাঈদীকে শনাক্ত করেছে এবং বলেছে যে, ১৯৭১ সালের ৮ই মে তে পাকিস্তানীরা বেশ কিছু রাজাকারকে সঙ্গে করে চিথুলিয়া গ্রামে আসে (পিরোজপুর থানার অধীনে) এবং সেখানে তারা মানিক পসারীর ( ৬ষ্ঠ সাক্ষী) বাড়ী যায়। রাজাকার আর হানাদার বাহিনী দেখেই ইব্রাহিম কুট্টি এবং মফিজুদ্দিন পসারী (৭ম সাক্ষী) পালাবার চেষ্টা করে এবং তখন দূর্বৃত্তরা উক্ত দু’জনকে বেঁধে ফেলে। ওইদিনই তারা মানিক পসারি সহ ওই এলাকার অনেকের বাসায় লুটপাট চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে।
যেসব বাসায় লুটপাট ও অগ্নসংযোগ করা হয়েছে তাদের মধ্যে ছিলো রইসুদ্দিন পসারী, হেলালুদ্দিন পসারী, সাইজুদ্দিন পসারী ও মানিক পসারীর বাড়ী ঘর।
এসব লুটপাট, অগ্নিসংযোগের পর পলায়নের চেষ্টার জন্য তারা ধরে নিয়ে যায় ইব্রাহিম কুট্টি এবং মফিজুদ্দিন পসারীকে। হাত বাঁধা অবস্থায় রাজাকার ক্যাম্পে ধরে নেবার পথেই পাকিস্তানী হানাদার আর্মি সেখানকার স্থানীয় ব্রীজের কাছে ইব্রাহিম কুট্টিকে গুলি করে মারে এবং মফিজুদ্দিন পসারীকে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে প্রচন্ড টর্চার করে। মফিজুদ্দিন পসারী এক সময় রাতের দিকে কোনোভাবে জান হাতে রেখে সেখান থেকে পালিয়ে আসে।
এই পুরো ঘটনাটির ক্ষেত্রে ৯ জন সাক্ষীর ক্ষেত্রে দেখা যায় কেউ কেউ পুরো অগ্নিসংযোগের সময়, হত্যার সময় কিংবা লুটের সময় প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন এবং কেউ কেউ পরে ঘটনাটি শুনেছেন।
এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলো কি?
ডিফেন্স পক্ষ থেকে বার বার বলা হয়েছে যে সাঈদীর মামলায় কোনো অভিযোগের ক্ষেত্রেই নাকি কোনো প্রতক্ষ্যদর্শী ছিলো না। কতটা ভয়াবহ মিথ্যাচার করেছে ডিফেন্স পক্ষ সেটি এই মামলার রায় পড়েই অনুধাবন করা যায়। বিশেষ করে এই ৮ নাম্বার অভিযোগটির প্রেক্ষিতে যে সাক্ষী এসেছেন সেই সাক্ষ্যের বিস্তারিত পড়লে। আপনারা উপরে নিশ্চই লক্ষ্য করেছেন উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি অনেক সাক্ষীর সাথে সাথে এই মামলার ৭ম সাক্ষী মফিজুদ্দিন পসারীর নাম উল্লেখ করেছি। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই মফিজুদ্দিন পসারী কিন্তু ইব্রাহিম কুট্টি হত্যাকান্ডের একেবারে চাক্ষুস সাক্ষী।
রাজাকার আর পাকিস্তানী হানাদারেরাই সেদিন চিথুলিয়া গ্রামে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে মানিক পসারীর বাড়ী থেকে মফিজুদ্দিন পসারী আর ইব্রাহিম কুট্টিকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো এবং রাজাকার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাবার পথেই হত্যা করে ইব্রাহিম কুট্টিকে আর তখন সেখানে মফিজুদ্দিন পসারীও ছিলেন। সুতরাং এর পরে আর আসলে কিছু বলার থাকে না। এই হত্যাকান্ডের এতবড় চাক্ষুস প্রমাণ থাকার পর বাকী সাক্ষীরা যদি মিথ্যাও প্রমাণিত হয় সেক্ষেত্রে এই একটি সাক্ষীর সাক্ষ্যই আসলে যথেষ্ঠ।
এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা করেছে পাকিস্তানী হানাদার, সাঈদী তো নিজ হাতে হত্যা করেনি, তাহলে সাঈদীকে কেন অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর সাঈদীর রায়ের ৭৬ পাতার শেষ দিকে এবং বাকিটা ৭৭ পাতার শুরুর দিকে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে বলা রয়েছে যে-
He categorically testified that accused Delowar Hossain Sayeedi as a member of razakar Bahini caught them at crime site and ultimately Ibrahim was killed by Pak-Army, under the above circumstances, we find no reason to disbelieve evidence of P.W 7 as to murder of Kutti, destruction of houses of civilians in a large scale by setting fire which constitute crimes against Humanity.
আবার ১১৬ পৃষ্ঠাতেও আমরা দেখতে পাই বিচারকদের ভাষ্য-
The accused is found GUILTY to the offences of murder, abduction, torture and persecution which fall within the purview of crimes against Humanity as specified in section 3 (2) (a) of the I.C.T. Act of 7973 and he be convicted and sentenced under section 20(2) of the said Act.
এই মামলাতে সাইদীর পক্ষে যেসব সাক্ষী এসেছিলো তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলো আব্দুর রাজ্জাক আঁকন।
আরো অনেক সাক্ষী ছিলো। কিন্তু আজকে আমি এই একটা সাক্ষীর সাক্ষ্য দিয়েই প্রমাণ করে দিব যে এই পার্টিকুলার এই অভিযোগে কিভাবে মিথ্যা কথা বলছে সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীরা।
সাঈদীর পক্ষে আসা সাক্ষীর মিথ্যাচার ধরা খেয়ে গেলোঃ
৮ নাম্বার অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাঈদীর পক্ষে আসা একজন সাক্ষী হচ্ছে আবদুর রাজ্জাক আকঁন। জেরা ও জবানবন্দী থেকে জানা গেলো যে আব্দুর রাজ্জাক আঁকনের বয়স বর্তমানে হচ্ছে ৬৫ বছর। অতএব মুক্তিযুদ্ধের সময় আবদুর রাজ্জাক আকঁন সাহেবের বয়স ছিলো ২৩-২৪ বছর।
ইনি মুলত সাক্ষী দিচ্ছে এই বলে যে, তার ভাগ্নে আবদুল হালিম বাবুল সাঈদীর বিরুদ্ধে যে সাক্ষী এর আগে দিয়েছিলো তা মিথ্যা। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবুলের বাসায় কোনো পাক বাহিনী যায়নি, রাজাকার যায়নি এবং আগুন দেয় নাই। জবানবন্দীতে আব্দুর রাজ্জাক বাবুলের বয়স আট কিংবা নয়, এটি বলতে পারলেও জেরার সময় বলতে পারেন নি যে বাবুলের জন্ম কবে। বাবুলের জন্মের আগে তার আরো চার ভাই মারা যায় জন্মের পরপরই। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই বাবুলের বেঁচে থাকাটা ওই পরিবারের জন্য একটা মস্ত বড় স্বরণীয় ব্যাপার হবার কথা ছিলো।
কিন্তু কোনো এক কারনে মামা আবদুর রাজ্জাক আকঁন মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবুলের বয়স কত ছিলো এটি বলতে পারলেও কবে বাবুল জন্ম নিয়েছে এটি তার মনে নেই। ভালো কথা। আসুন তার জবানবন্দী আরেকটু ভালোভাবে পর্যালোচনা করি।
আব্দুর রাজ্জাক আঁকন জবানবন্দীতে বলেছে-
“১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন আমাদের নলবুনিয়ায় একটা ঘটনাই ঘটেছে। আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি হঠাৎ একদিন শেষ রাত্রে একটা আওয়াজ হয়।
আমি অনুমান করলাম এটা গুলির আওয়াজ। তারপর দেখি যে, ফজরের টাইম হয়ে গেছে। আমি আযান দিয়া নামাজ পড়ি। নামাজ পড়ার পর উত্তরদিকে রাস্তার পাশে যাই কোথায় কি হয়েছে জানার জন্য। তখন গিয়ে দেখি উত্তর দিক থেকে সামনের খাল দিয়ে নৌকায় করে ইব্রাহিম কুট্টির লাশ নিয়ে পাড়ের হাটের দিকে আসতেছে।
নৌকায় কালাম চৌকিদার, আইয়ুব আলী চৌকিদার এবং হাকিম মুন্সিকে দেখি। এরপর দেখি আরও কয়েকজন লোক খালের পাড় দিয়ে উত্তর দিক থেকে আসতেছে। যে সব লোক আসতেছে তাদের মধ্যে দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা, রুহুল আমিন, মোমিন রাজাকার ছিল। আরও দেখি উক্ত লোকেরা আজু হাওলাদারের বৌ এবং তার ছেলে সাহেব আলীকে বেঁধে নিয়ে আসতেছে এবং পাড়েরহাটের দিকে নিয়া যাচ্ছে। তারপর দিন শুনি আজু হাওলাদারের বৌ বাড়িতে আসে এবং সাহেব আলীকে পিরোজপুরে নিয়ে পাক সেনারা গুলি করে হত্যা করেছে।
এটাই আমার বক্তব্য। স্বাধীনতার কিছুদিন পরে শুনেছি যে, ইব্রাহিম কুট্টির বৌ একটা মামলা করেছে”
(এইখানে পুরো জেরা পাবেন )
আবদুর রাজ্জাক আকঁন জেরাতে বলছে যে সে তার ভগ্নীপতিকে নিয়ে পালিয়ে থাকত গ্রামের বিভিন্ন বাসায় বা তাদের বাড়ীতে। কিন্তু নামাজ পড়ত আজান দিয়ে। পালানোর নমুনা শুনে আমি খানিকটা হতবাক। তার থেকেও ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে ফজরের নামাজের সময় সূর্য পুরোপুরি উঠে না।
তখনও আবছা অন্ধকার থাকে সব জায়গায়। কিন্তু সাক্ষী উত্তর দিকের রাস্তায় দাঁড়িয়ে সেই অন্ধকারেই দেখে ফেললেন যে খালে করে নৌকা দিয়ে ইব্রাহিম কুট্টির লাশ নিয়ে আসছে। সাক্ষীর চোখ যেনো এক অটোমেটিক বাইনোকুলার। অন্ধকারের মধ্যে রাস্তা থেকে খালের মধ্যে থাকা লাশ দেখে ফেললেন। এবং সেই লাশের সাথে তিনজন মানুষ বসে ছিলেন।
একটা নৌকায় যখন তিনজন মানুষ বসে থাকেন তখন স্বাভাবিক ভাবেই তিনজন এক সাইডেই বসে থাকবেন না। এটা কমন সেন্স। আমরা যদি ধরে নেই যে নৌকার দুই দিক থেকে মানুষ বসা ছিলো তাহলে সেটি ডিঙ্গিয়েও নৌকাতে কার লাশ ছিলো এটা বোঝা দুষ্কর হবার কথা। কিন্তু এক আশ্চর্য কারনে সাক্ষী আবদুর রাজ্জাক আকঁনের তা হয়নি।
আর যেহেতু সাক্ষী গুলির শব্দ শুনেই সেখানে গিয়েছেন ও রাজাকারদের দেখেছেন, স্বাভাবিক ভাবেই তিনি ভয়ে খুব সামনে যাবেন না ঘটনা দেখতে।
দূর থেকে লুকিয়েই দেখবেন। তার ঝুঁকি আরো বেশী। কেননা তার দুলাভাই আওয়ামীলীগ করতেন বলে তিনি জেরাতে বলেছেন। এসব দিক বিবেচনা করে যা বোঝা যাচ্ছে তা হোলো সাক্ষী দূর থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে খালে থাকা নৌকা এই অন্ধকারে দেখে এবং নৌকার তিনজন মানুষকে ডিঙিয়ে লাশ যে ইব্রাহিম কুট্টির তা দেখে ফেলেছেন। চমৎকার!!!
আবার লক্ষ্য করুন- সাক্ষীর গ্রাম নলবুনিয়াতে কোনো রাজাকার আসেনি বলে জেরাতে বলছেন সাক্ষী।
অথচ উপরের জবানবন্দী লক্ষ্য করুন, সেখানে বলা হচ্ছে যে তিনি তিনজন রাজাকারকে দেখেছেন যে আজু হাওলাদারের বউ ও ছেলেকে বেঁধে নিয়ে যেতে পাড়ের হাটের দিকে।
আবার জেরাতে গিয়ে লক্ষ্য করুন পাঠক। সাক্ষী বাবুল বলছে যে, যুদ্ধের সময় তার ভাগ্নে মানে বাবুলের আরো দুই ভাই বাহাদুর ও মধু বাড়িতেই থাকতেন। কিন্তু এর পরেই মধুর বয়স জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন মধুর বয়স ৩৫ বছর। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে ৪১ বছর আগে।
মধুর বয়স বর্তমানে ৩৫ বছর। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের সময় মধু আর বাহাদুর কিভাবে একসাথে ছিলো? মধুতো হিসাব মতে মুক্তিযুদ্ধের ৬ বছর পরে জন্মেছে।
তবে প্রসিকিউশনের আইনজীবিরা নিশ্চই ক্ষতিয়ে দেখে থাকবেন কিংবা হয়ত দেখেছেনও যে রাস্তা থেকে খালের দুরুত্ব, ফজরের সময়ে একজন মানুষ ঠিক কতটুকু দেখতে পারেন সেটার একটি চক্ষু বিশেষজ্ঞ এর মতামত, খাল দিয়ে যদি নৌকা পাড়ের হাটে যায়, তাহলে সে সময় রাস্তা কতটা স্পষ্ট দেখায় ফজরের ওয়াক্তে ইত্যাদি।
সাক্ষী জেরাতে আরো বলেছেন যে তিনি তার ভগ্নীপতিকে নিয়ে পালিয়ে থাকতেন বিভিন্ন জায়গায়। এবং পাড়ের হাটের বিভিন্ন রাজাকারের নামও বলতেন।
অথচ বাজার করতে তিনি পাড়ের হাটেই যেতেন। বড়ই আজব ঘটনা। পাঠক একটা পয়েন্ট নোট করে রাখবেন যে সাক্ষীকে ঢাকায় খরচ পাতি ইত্যাদি করে নিয়ে এসেছে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর শালা। সুতরাং ঘটনা কি হচ্ছে, টাকা কোত্থেকে আসছে, সাক্ষীর কথা বার্তা আপনারা দয়া করে একটু ভাবুন। আশা করি বুদ্ধিমান মানুষ আপনারা।
বুঝতে পারবেন
একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী আব্দুর রাজ্জাক আঁকনের জবানবন্দী ও জেরার এই অসামঞ্জস্যগুলো আমার চোখ ধরা পড়লো। সাঈদীর উকিল, ছেলে, শালারা মিথ্যে সাক্ষী নিয়ে এসে জবানবন্দী দিচ্ছে এটা খন পানির মত পরিষ্কার। মিথ্যে সাক্ষী দেবার জন্য আমাদের প্রচলিত আইনেই ব্যাবস্থা নেবার কথা বলা হয়েছে। এরা এতই ভয়ংকর যে মামাকে টাকা দিয়ে কিনে সাক্ষী দেয়াচ্ছে ভাগ্নের বিরুদ্ধে।
শেষ কথাঃ
পুরো লেখাটি পড়বার পর একজন পাঠকের অবশ্যই একটা নিজস্ব মন্তব্য ও বক্তব্য থাকতে পারে।
মতামত, পালটা মতামত থাকবেই। তবে আমার নিজস্ব বিশ্লেষন ও নানাবিধ কাগজপত্র, সাক্ষী ইত্যাদি বিবেচনা করে এটি নিঃসন্দেহে বলা যায় যে দেলু রাজাকার একজন রাজাকার, ধর্ষক, গণহত্যাকারী, লুটপাট, অগ্নিসংযোগে একজন এক্সপার্ট অপরাধী। মামলায় উপস্থাপিত সাক্ষ্য, আসা সাক্ষী সব কিছু ভালো করে পর্যবেক্ষন করে এই কথাটি খুব সহজেই বলা যায় যে উক্ত অভিযোগের ক্ষেত্রে সাঈদী সম্পূর্ণ ভাবে একজন দোষী ব্যাক্তি এবং ইব্রাহিম কুট্টিকে তার নির্দেশে ও পরিকল্পনাতেই হত্যা করা হয়েছে। সেই সাথে আরো বলা যায় যে পার্টিকুলারলি এই অভিযোগের ক্ষেত্রে বর্ণিত যে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটিও সম্পূর্ণরূপে সত্য।
বিচারপতিরা তাঁদের রায়েই বলেন-
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।