আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার দৃষ্টিতে সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ

কাপুরুষের শেষ আশ্রয় হল দেশপ্রেম পত্রিকার পাতা খুললেই প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। প্রতিটি দুর্ঘটনাই মর্মান্তিক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। যে বাবা-মা তাঁর সন্তান হারায়, যে স্ত্রী তাঁর স্বামীকে হারায়, যে ভাই-বোন তাঁর সহোদরকে হারায়- তাদের কষ্ট বোঝা অন্যের পক্ষে কঠিন! গত শনিবার সড়ক দুর্ঘটনায় প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের সিইও মিশুক মুনীরসহ আরও তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যুতে আবারও সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকারের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। সড়ক দুর্ঘটনার পিছনে বিভিন্ন কারণ নিয়ে আলোচনা চলছে। যেমন- চালকের অদক্ষতা, বেপরোয়া গতি, লাইসেন্স প্রদানে অনিয়ম, গাড়ির ফিটনেস না থাকা, সড়কের বেহাল দশা, সড়কে প্রয়োজনীয় সংকেতের অভাব ইত্যাদি।

আমাদের দেশের প্রতিটি সমস্যার পিছনে একটা মূল কারণ রয়েছে। অন্যসব বিষয় বাদ দিয়ে শুধু সড়ক দুর্ঘটনার পিছনে মূল কারণটি সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত মতামতটি তুলে ধরছি। কিছুদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মীরসরাইয়ে অর্ধশত ছাত্রের মৃত্যুর সংবাদটি গাড়িতে বসে রেডিওতে শুনি। সহকর্মীর সাথে ঘটনাটি নিয়ে আলাপকালে আমি মন্তব্য করি, চালকের অসাবধানতার ফলেই এই দুর্ঘটনা। আমার গাড়িচালক সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য করে, স্যার, কপালে মৃত্যু থাকলে হাজার সাবধান থাকলেও লাভ হবে না! গাড়িচালকের ঐ মন্তব্যটি শুনে আমার মনে হল,সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণটি আসলে এখানেই লুকিয়ে আছে।

আমাদের দেশের গাড়িচালকদের সুশিক্ষার অভাবই সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ। প্রায় প্রতিটি গাড়িচালকের মনে উপরের যুক্তিটি কাজ করে যে, দুর্ঘটনার পিছনে ভবিতব্য বা ভাগ্যই দায়ী। তাই হাজার সাবধান থাকলেও সেটা এড়ানো যাবে না। এই কথাটি যে নতুন শুনলাম তা নয়। কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্র হামীম শেখের মৃত্যুর জন্য দায়ী ঘাতক বাসের চালকও বলেছিল- এরকম 'অ্যাকসিডেন্ট' হতেই পারে।

অর্থাৎ দুর্ঘটনার জন্য সে দায়ী নয়- দায়ী ঐ নিষ্পাপ ছেলেটির 'ভাগ্য'। এমনকি, গতকাল আমাদের পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানও প্রায় একই সুরে বলেছেন, দুর্ঘটনা কার হাতে ঘটবে, এটা বলা যায় না। (আজকের প্রথম আলোর রিপোর্ট) আমাদের দেশের বেশিরভাগ গাড়িচালক অশিক্ষিত, গন্ডমূর্খ। অশিক্ষার কারণে এদের ভিতর অসংখ্য গোঁড়ামি কাজ করে। তাই সঠিকভাবে লাইসেন্স প্রাপ্ত দক্ষ চালকও যদি ধরে নেয় দুর্ঘটনা ভাগ্যের ব্যাপার বা কপাল লিখন, তাহলে তাঁর গাড়িতে ওঠা অবশ্যই বিপদজনক।

কেননা, তার যদি এই জ্ঞানটুকু না থাকে যে, সাবধানে গাড়ি চালালে এবং ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে মেনে চললে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব, তাহলে গাড়িচালক হিসেবে তাঁর সঠিক শিক্ষার অভাব আছে ধরে নিতে হবে। চালকদের বেপরোয়া গতির পিছনেও কিন্তু এই কুযুক্তিটিই কাজ করে। সে ধরেই নেয়, যত জোরেই চালাই না কেন- কপালে মরণ না থাকলে আমারে ঠেকায় কে! এটা এক ধরণের আত্মঘাতী জুয়ার মত! এরকম চালকদের গাড়িতে আমরা প্রতিনিয়ত জীবনবাজী রেখে চলাফেরা করছি! ঢাকা শহরের ভিতর প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, অপ্রশস্ত রাস্তায় একাধিক বাসের রেষারেষি বা প্রতিযোগিতা করে চালানোর ফলে পথচারী, রিকশা বা মোটর সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা দিয়ে বাসচালক প্রাণহানির ঘটনা ঘটাচ্ছে। যারা নিয়মিত বাসে চড়েন তারা খেয়াল করে দেখবেন, রাস্তায় থাকা পথচারী বা অন্য যানবাহনগুলোকে বাসচালকরা কোন পাত্তাই দিতে চায় না, এমনকি নিছক বাধ্য না হলে ব্রেক করতেও তাদের চরম অনিহা! এত দুর্ঘটনার পরও বাসচালকদের মধ্যে কোন বিকার নেই, কোন পরিবর্তন নেই! কারণ ঐ একটাই- তাদের ধারণা দুর্ঘটনা শুধুমাত্র 'কপাল লিখন'! আমাদের দেশে তাই চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের সময় এই মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষা দেয়াটাও জরুরী যে, সড়ক দুর্ঘটনা শুধু ভাগ্যের বিষয় নয়- এটা কর্মফল।

অর্থাৎ সাবধানে গাড়ি চালালে দুর্ঘটনা রোধ করা যায়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.