আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মজাকাল- ৩ (এক টিকিটে দুই ছবি!!!!!)

হেঁটে হেঁটে যতদূর চোখ যায় আমি আগেই স্বীকার করেছি যে খুব ছোটকাল থেকেই নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আমার আকর্ষণ দুর্নিবার! আর এই অযাচিত মানসিকতার জন্য কৈশোরে আমাকে টুকটাক পাপ (!) করতে হয়েছে! কিন্তু এমন কাজ করা মোটেই ঠিক না। আমি আমার সন্তানকে এমন কখনোই করতে দেব না! যাই হোক এবার আসল ঘটনায় আসি। যত দূর মনে পরে তখন আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। থাকি বরিশালে। একদিন বিকেলবেলা।

বটতলা পুরান পাসপোর্ট অফিসের সামনে আমি, রাকিব আর বাপ্পি দাঁড়িয়ে! হাতে তেমন কোন কাজ নেই। রিকশায় মেয়ে দেখা ছাড়া কোন কাজ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ বাপ্পি বলল, চল একটা এক টিকিটে দুই ছবি মেরে আসি! রাকিব বলল, তুই এসব কি বলছিস? আমি তো ভয়ই পেয়ে গেলাম! বললাম, নারে! আমার এত সাহস নাই! বরিশালে সবাই সবাইকে চেনে। কোনভাবে যদি আম্মার কানে যায়! খবর আছে আমার! আমি যাব না। আমাদের কথা শুনে বাপ্পি কেমন যেন দমে গেল! ঘণ্টাখানেক পর।

হাঁটতে হাঁটতে আমরা সদর রোডে চলে এলাম। তখন বরিশালে কাকলি নামক একটা সিনেমা হল ছিল। সেখানে সব হট হট (!) বাংলা ছবি দেখানো হত। ওই হলের সামনে এসেই বাপ্পি আমাদের খোঁচাতে শুরু করল! চল। ঢুকে পড়ি।

পোস্টার দেখে মনে হচ্ছে পয়সা উঠে যাবে! সেদিন জীবনে দুইটা প্রবাদ বাক্যের সত্যতা হাতে নাতে পেলাম- ১/ অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা! ২/ সংগদোষে লোহা ভাসে! সিনেমা হলের আলো আধারি পরিবেশ আমাদের খুব একটা খারাপ লাগছিল না। তদুপরি নায়িকার বার বার পানিতে ভেজার অপচেষ্টা দেখে দেখে চারপাশ বেশ গরমই (!) লাগছিল। যতদূর মনে পড়ে ছবিটার নাম ছিল ০০৭ টাইপ একটা কিছু! তো আমরা ছবি দেখছি! এক দৃশ্যে দেখা গেল, নায়িকা পানিতে ডুবে গেল আর নায়ক তাকে তুলে এনে মাটিতে শোয়াল। সাধারণত কেউ পানিতে ডুবে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে তার পেটে চাপ দিয়ে পানি বের করা হয় বা তাকে শ্বাস দেবার চেষ্টা করা হয়। অথচ এখানে দেখলাম, নায়ক প্রাথমিক চিকিৎসার নাম করে নায়িকার গায়ের জামা কাপড় সব খুলে ফেলল...তারপর...হিশ হিশ... একটু পরে রাকিবের হালকা আওয়াজ শোনা গেল, পয়সা উঠে গেল রে...! তৃপ্তিকর (!) অনুভূতির বিনাশ হবার আগেই আমাদেরকে এক ভয়ানক আতঙ্ক চেপে ধরল যখন হঠাৎ দেখলাম আমাদের পাশে বসা লোকটি নেই কিন্তু তার জায়গাতে একটা ব্যাগ পরে আছে! ওরে আল্লাহ! বোমা নাতো! উল্লেখ্য ওই সময় দেশের অনেক সিনেমা হলে বোমা হামলা হয়েছিল! আমাদের তো কলিজায় তখন পানি নেই! মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ফেললাম, হে খোদা এবারের মত বাঁচিয়ে দাও! আর জীবনেও এ পথে আসব না! আল্লাহর অশেষ রহমত! দেখলাম একটু পর ব্যাগওয়ালা লোকটা চলে আসল।

হয়ত হট সিন দেখে তার বাথরুম পেয়েছিল!! এরপর সিনেমা শেষ না করেই আমরা হল থেকে বের হয়ে গেলাম! বলাবাহুল্য, সেই ঘটনার পর আজ এত বছর হল আমার আর হলে গিয়ে সিনেমা দেখা হইনি!!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।