ওর সাথে আমার পরিচয়টা এমনই হয় । বৃষ্টির ঝাপটায় দুজনে বারান্দায় এসে দাড়াই । ওর মাথা ছেড়ে কপালে ঝোলা চুলগুলো দিয়ে টুপটাপ পানি ঝরছে । আমি বিমুগ্ধ নয়নে দেখি । ভাষাহীন সৌন্দর্যের , বাধাহীন জগতে হাতরাই , ভেসে চলা কোন কিছু ধরতে চেষ্টা করি ।
নয়ন লেগে থাকে চুল ঝরা ফোটা-পানির শিল্পে । কতটা ক্ষন , কতটা সময় হিসেব হয়না । এভাবেই তাকায়না বলে উঠে ও । আমি লাজুক হাসি ।
এরপর সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে ও-ই আমাকে প্রথম জিঙ্গাসা করে “ আমাদের আগামি ক্লাসগুলো কি শুধু শুক্রবারে হবে ? ” হু বলে ফোনে কথা বলতে বলতে সিড়ি বেয়ে নেমে যাই আমি।
ঘুরে ফিরে তার সাথেই দেখা হয় । হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে ও । এবার আমি এগিয়ে এসে কথা বলি । আপনি কি এখানকার । না না আমি ইডেনে পড়ি ।
আপনি ? আমি জবিতে সাংবাদিকতায় । শুধু এক চিলতে হাসি , আর কোন কথা হয়না সেদিন।
তারপর নিয়মিত ক্লাসে দেখা হয় , কথা হয় । আজিমপুরে থাক্ওে । চার হাজার টাকায় এক রুম নিয়ে তিন জন থাকে ওরা ।
মেয়ে বলে এ সমাজে সহানুভ’তি সূত্রে পাওয়া বাসাটা । আমার কয়েকজন আজিমপুর এলাকায় একটি বাসা খুজে বেড়াচ্ছি । প্রকৃতি নাকি মানুষকে প্রতিভু করে তুলে । শাহবাগ এলাকা ছাড়া প্রকৃতির ছোয়া কোথায় বা প্ওায়া যাবে কাট-খোট্টার এ নষ্ট শহরে । একেতো ছেলে তার উপর ব্যাচেলর ।
এ এলাকয় তাই মন্দ কপালে বাসা জোটেনি । তবু খুজে যাই । যদি পাই ...
ক্লাস শেষে ওকে নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের চত্ত্বরে বসি । দুপুরের বাইবেল সময় ১টার কাটা ঠন ঠন করে এগিয়ে চলছে তখন। রোদহীন আকাশ থেকে থেকে গর গর করে উঠে ।
এ দিনে কোন বিশ্বাস নেই নীল নীলিমার । যে কোন সময় কাঁন্না উগরে দিতে পারে । চোখের পানিতে ভিজিয়ে দিতে পারে সব । মায়াবীনির মায়ার জালে বন্ধী তবু মানুষ । আঁচল ছেড়ে কখনো বেরিয়ে আসতে পারে না ।
সুক্ষ সুতার গিটে আটকে থাকে সারাটা জীবন ।
আমাদের প্রায়ই ফোনে কথা হয় । আমি ভয়ে থাকি কি থেকে কি হয় । কিছুই হয়না । শুধু ভালবাসা কথা কয় ।
সাহস করে বলেই ফেলি ভালবাসি । ও পুরোটা বলতে দেয়না , থামিয়ে দিয়ে নিজে বলে উঠে ...
ওর ভোতা দুটি গাল । চিকন হাসি । মোটানো শরীর । শ্যামা মুখ ।
রঙ্গের তুলিতে নিবির পরিচর্যায় ভালবাসার তৈলচিত্র আঁকি । ওকে নিয়ে কেন যেন রুক্ষতায় , শুষ্কতায় ভোগি । আমার চিকন কালো দেহটা হয়তো এর জন্য দায়ি । না কোন কিছুই দেয়াল হয়ে বাধ সাদতে পারে না আমাদের। দুটি মন ছুটে চলি অনন্তের পথে , চির আপন সত্ত্বায় একিভ’ত হয়ে ।
হঠাৎ ও ফোন দিয়ে দেখা করতে বলে । আমিতো সে অপেক্ষায়ই ছিলাম । পাছে না করে সংকোচে বলিনি । ক্লাস শেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে চড়ে দেখা করতে যাব বলে স্হির করি । পেট বলে কথা , চুচু করে উঠে ।
ডেটে শান্তির নিমিত্তে তাকে শান্ত করতে বাসায় আসি ।
বিকেলে একাটানা বর্ষন শুরু হয় । খেয়ে দেয়ে কাথা মোরা দিয়ে শুই । বাইরে ছম ছম -ঝম ঝম বৃষ্টি। এ দিকে ও বারাবর কল দিয়ে যাচ্ছে ।
আড়ামোরা ভেঙ্গে বাসা ছেড়ে বেরুই । কোন রকম আট নাম্বার বাসে চড়ে বসি । এরা আবার এখন লোকাল সিটিং । যত্র-তত্র যাত্রী উঠাবে , কিন্তু ভাড়া দিতে হবে সিটিংয়ের । আজব দেশে দায়ে পরে মেনে নেয়া আরকি ।
কোন রকমে পাঁচ টাকা দিয়ে বাঁচি । বাস থেকে নেমে দ্রুত হাটি । সন্ধ্যা তখন বিকেলকে তাড়াতে দৌড়-ঝাপ শুরু করেছে । দুষ্ট গোধূলি বসে বসে রং দেখে । লগন লাগিয়েছে তার চার পাশে ,এখন সময়তো তারই ।
চারপাশের নিয়ন আলো জ্বলে উঠেছে ।
পাগলিটার কান্ড দেখ কাটা বৃষ্টিতে চুপ মেরে কোকরে বসে আছে । সারা গা বৃষ্টিতে ভিজে চুব । ও কাঁপছে । আমি ধীর পায়ে পাশে গিয়ে বসি ।
দুটি ভেজা গা এক সাথে মিশে যায় । চিরন্তন শিখাটা যেন ধাও ধাও করে জ্বলে উঠে । সেই সাথে সতত প্রেমও । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।