বেশ খানিকটা সময় পার্কের বেন্চিতে শুয়ে বসে কাঁটিয়ে ওরা দুজন পার্কের গেটের সামনের রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। সূর্য্যটা মধ্যাকাশে গড়িয়ে গেছে। ঝুমু ভীষন মন খারাপ করে আছে এখনও । ওর মনটা ভালো করতে দীপ্ত বলে উঠলো,
-চলো উড়ি। আমার হাত ধরো।
ঝুমু গম্ভীরভাবে বললো, না, রিক্সা করে ঘুরতে ইচ্ছে হচ্ছে।
জো হুকুম মহামান্যা। বলেই সাথে সাথে নিজের অজান্তে পকেটে হাত চলে গেলো দীপ্তের। রিকসা ভাড়া আছে তো?একরাশ শূন্যতার মাঝে হাত ডুবিয়ে পরক্ষণেই সব কিছু মনে পড়ে গেলো ওর। হোহো করে হেসে উঠলো সে।
এবার ওর মনটাও খারাপ হতে শুরু করেছে। কিছুদিন আগেও ওর মত বেকার যুবকের রিক্সার পেছনে অতি জরূরী খরচটাকেও অপচয় মনে হত । বাবার কাছে, মায়ের কাছে, এমনকি ছোটবোনটার কাছেও হাত পাততে দ্বিধা করতো না। ম্লানদৃষ্টিতে সামনে তাকায় সে। সামনের হাজারো মানুষের ভীড়ে কি যেনো খোঁজার চেষ্টা করে।
কেমন আছে আদরের বোনটা? নাহ, আজই গিয়ে দেখে আসবে একবার ওকে।
দীপ্ত আর ঝুমু একটা খালি রিক্সায় চেপে বসলো। রিকসা ভাড়া দেবার কোনো ঝক্কি নেই। এমন নির্ভাবনাময় জীবন, ভালোই তো। এসব একগাদা ঝুমুকে বুঝাতে লাগলো সে।
এরপর ঝুমুর মনটা ভালো করতে হেড়ে গলায় আবল তাবল স্বরচীত গান ধরলো দীপ্ত। এই মূহুর্তে দীপ্তকে দেখাচ্ছিলো প্বথিবীর যেকোনো মানুষের চাইতে মহাসুখে সুখী একজন। অবশ্য আগেও বন্ধু মহলে উদ্ভট গানের গীতিকার হিসাবে তার জুড়ি কেউ ছিলোনা। সেসব গান শুনে হঠাৎ ঝুমু হাসতে শুরু করলো। হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে যাচ্ছে মেয়েটার।
দীপ্ত এই প্রথম ভালোভাবে খেয়াল করলো ওকে। মনে মনে বললো, মেয়েটা এত সুন্দর!
দীপ্তকে হা করে ওর দিকে চেয়ে থাকতে দেখে ঝুমু এক ধাক্কায় ফেলে দিলো ওকে রিক্সা থেকে। আচমকা ধাক্কা খেয়ে দীপ্ত পপাৎ ধরণীতল। রাস্তার মাঝখানে সোজা ডিগবাজী খেয়ে পড়লো সে আর সাথে সাথে কার্টুন ছবির মত একখানা দ্রুতগতী ৬নং বাস চাপা দিয়ে দিলো ওকে । পুনরায় কার্টুন ছবি স্টাইলেই আবার বাসের তলা থেকে ডিগবাজী দিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে।
গম্ভীর মুখে এসে বসলো আবার রিক্সায়, ঝুমুর পাশে। কিছুক্ষণ আগে তার হেড়ে গলায় গানের কথা মনে করে আর তার পরবর্তী ঘটনাগুলো নিয়ে ঝুমু তখনও হেসেই যাচ্ছে। হঠাৎ হাসি থামিয়ে হাত দিয়ে দীপ্তর এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিলো সে। দীপ্ত খেয়াল করলো ঝুমুর মন এখন একটুও আর খারাপ নেই। এবার দীপ্ত হাসতে শুরু করলো।
এই মুহুর্তে ঝুমু আর দীপ্তকে দেখাচ্ছিলো পৃথিবীর সবচাইতে সুখী একজোড়া মানবমানবী।
সারাদিন অনেক ঘুরলো ওরা। সবখানে, যখনি যেখানেই খুশী সেখানেই।
বন্ধুদের সাথে কতক্ষন আড্ডাও মেরে এলো,তাদের সাথে ঝালমুড়ি, ফুচকা আর চায়ের আড্ডায়ও কিছুক্ষণ সময় কাটালো অথচ তারা কেউই জানতেও পারলোনা সেসব।
(চলবে)
প্রথম পর্ব
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।