ভনিতা পর্ব
এই টেক্সট লিখতেসি যখন গুলশানের আবাসিক এলাকা থেকে বেরিয়ে যাইতেসে একটা অ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে-বারের শেষ মাতাল লোকটাকে বেরিয়ে যেতে বলা হইতেসে-হয়তো অনেক দূরে অন্য শহরে পুলিশী জেরায় বিপ্লবী বন্ধুর আস্তানার কথা বলে দিচ্ছে কেউ-মোহতারেমা,আপনি এই লিখাটা পড়তে পড়তে ভাবতেসেন আপনার প্রেমিক ধরা পড়ে যাবে আজ রাতে বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতায়-আর আপনার মাথায় চক্কর দিতে থাকবে ম্যালাদিন আগে পড়া সাঈদ জুবেরীর কবিতা-‘পৃথিবীতে একমাত্র কবিরাই
যীশুর মত নিস্পাপ আর জুডাসের মত বিশ্বাসঘাতক ’-আর আপনার স্বামীকে বলা হইতেসে বার থেকে বেরিয়ে যেতে-
কে বিশ্বাসঘাতক?বিপ্লবী?বিপ্লবীর বন্ধু?পুলিশ?এইসব প্রশ্ন আপ্নারে হন্ট করুক। আপাতত আচমকা মনে পড়া সাঈদ জুবেরীর কাছে যাই- ‘আত্মরতির খুন’ তেলোয়াত করি।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃএইটা ট্র্যাডিশনাল কবিতা সমালোচনা-টমালোচনা না। এইটা সাঈদ জুবেরীর কবিতার লগে নিজের যাপন-পদ্ধতির আত্মীয়তা খোঁজে পেয়ে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ।
অনেক আঁতলামী করসি-এবার ঘটনার ডীপে ডুব দিমু-সবাই একসাথে বলেন উবু/উবু/উবু...
পুং-কান্নার ক্যাফেতে নার্সিসাস ও সিসিফাসের ডায়লগ
‘আমি দাঁড়িয়ে দেখে শিখে নিচ্ছি-
নিহত হবার ও হত্যা করার কৌশল
নিজের হত্যাকারী হয়ে খূঁজে নিচ্ছি নিহত আমাকে’
অথবা
‘প্রতিবার নিহত হবার পূর্বে
হাত্যাকারীর প্রতি আসক্তি চলে আসে
আত্মহত্যার চেয়ে অধিক নেশা করিনি কখনো’
নিজের লাশের ভিত্রে ছুরি চালাইতে চালাইতে ডোমের হাত এই কবিতা লিখতেসেন-ফলত,আমাদের স্মরণ হয় বিস্মৃত ম্যাক্স স্টার্নারের ‘অহং ও তার নিজস্ব’ নামধারী বহি’র কয়েকটা লাইন-
‘রাষ্ট্রে স্বাধীন নাগরিক মৃত,নিঃস্ব সমাজে বিত্ত ও শ্রমের মালিকানা মৃত,বিশ্বসমাজে ‘ব্যক্তি’ মৃত।
খায়েশ সমর্পিত হয় রাষ্ট্রে, সমর্পিত হয় সমাজে, সমর্পিত হয় সাধারণ মানুষে। ব্যক্তিমত ডুবিয়া যায় সর্বগ্রাসী জনমতে। ’এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে যেতে যেতে ক্ষমতা ও ক্ষমতা নির্দেশিত এলেম আমাদের শেখায় ইহা মুক্তি,উহা মুক্তি। কবির একমাত্র কাজ কী?‘মুক্তি/স্বাধীনতা’দাবি করা ? ‘মুক্তি/স্বাধীনতা’র অর্থ কী? কে না জানে ‘অর্থ’ একটি রাজনৈতিক নির্মাণ। কবি নয়া বাস্তবতা চান-কবির এই খায়েশ কবিরে নিয়া যায় ক্ষমতা নির্দেশিত অর্থ,ইতিহাস,সাহিত্য,ইথিক্যাল কন্টেন্টের বিরোধীতায়?
‘তোমার সাথে সংঘাতময় একটা উপত্যকায়
শান্তির পতাকার ছায়ায় বসে-আমাদের পরবর্তী সংঘর্ষের নকশাটা
মুখস্ত করলাম একে অপরের ঠোঁট কামড়াতে কামড়াতে।
’
কাউন্টার-কালচার তৈয়ার করার এহেন সন্ত্রাসী কাজ করতে করতে কবি আইডেনটিটি ক্রাইসিসে ভুগেন-বহুৎ পুরানা সমস্যা এবং পুঁজির কল্যাণে খানিকটা ফ্যশনেবল!তরবারির ধারালো পিঠে ঘোষিত যুদ্ধের তর্জমা ও বয়ান লিখতে লিখতে আন্ডারগ্রাউন্ড আন্ডারগ্রাউন্ড অনুভূতি আইডেনটিটি ক্রাইসিসের লগে মিশে লিখিত হয়-
‘গেরিলার পায়ের সাথে নিজেকে বেঁধে ইতিহাস পার হচ্ছি
জুবেরীর পাসপোর্ট সাইজ ছবি হাতে নিয়ে
বিব্রতবোধ করছি,নিজেকে সত্যায়িত করতে না পেরে’
সোনাবন্ধু,এতক্ষণে আপনার ক্ষয়িষ্ণু ফিউডাল ভাতার ফিরসে ফ্ল্যাটে-সে জামা কাপড় না খূইলা শুইয়া পড়ে-আপনি ভাবতে থাকেন-এই জীবন লইয়া কী করিবেন?আপনার সিজোফ্রেনিক ঘুম এর গহনে কমরেড শওকত চৌধুরী ও সুরাইয়া বেগম এর পোলা সাঈদ জুবেরী বলেন-
‘গতজন্মের হাড় কুড়োতে কুড়োতে-
পায়ের নিচে তৈরি হয় এক রাস্তা...
হায়,রাস্তার শুরুতে মা দাঁড়িয়ে থাকে-
মায়ের চোখে জল,রাস্তাটা ঝাপসা হয়ে আসে’।
সকালে উঠে আপনার বিবেক যাত্রার পোশাক পরে লাফালাফি করে আপনের মস্তিষ্কে-ম্যাক্স স্টিরনারকে এই দফায় আরেকটু পাঠ করি-
‘‘বিবেক নামধারী স্পাই মনের যাবতীয় গতিবিধির উপর নজর রাখতেসে-সমস্ত চিন্তন ও তৎপরতা বিবেকের এখতিয়ারে অর্থাৎ পুলিশী হেফাজতে। ’’
ডেভিড বেন্থামের গরাদে মাথা ঠুকে ঠুকে কবি বয়ান করতেসেন-‘আমি একটা জেলখানার নাম’। কবি আপনার শরীরের ভাঁজ দেখেন,আপনার কলোনিয়াল চামড়া দেখেন-
‘মানুষের দিকে তাকালে শুধু হাসপাতাল দেখি-
রোগী,ডাক্তার ও নার্স সমেত একেকটা
গভীর হাসপাতাল জামাপ্যান্ট পরে গোপনে চলাচলরত। ’
আমাদের শরীরের ভিত্রে ঢুকে পড়ে বার্গার,স্কুল,আইন,আদালত ও মিশেল ফুকোর বহি’র অসহনীয় তালিকাভুক্ত সবকিছু।
সকালে উইঠা আত্মরতির খুন নিলেন-চারিদিকের যন্ত্রনায় একটু স্বস্তি পাওয়ার বাসনায়।
পাঠিকা,আপনে স্বস্তি পাইতেসেননা। স্বস্তি দিতে সাঈদ অপারগ-কারণ,তিনি সৎ হইতে চান-কবিতা লিখতে চান-নিজেরে প্রণয়ন করতে চাহেন-নিজেরে প্রনয়ন করার স্ট্রাগল সাঈদরে দিয়া লিইখা নেয় অন্তর্ঘাতি ও অস্বস্তি জাগানিয়া কবিতা। সাঈদ জুবেরী তরল আগুন ও বিস্ফোরকদ্রব্য গুঁইজা দেন শব্দের আত্মায়। ভাষার যোনিতে অগ্নি জ্বালাবার মত শক্তিমান ধুন লইয়া সাঈদ জুবেরী দাঁড়িয়ে আছেন কল্যাণপুরের ওভারব্রীজে-জাদু-গুল্ম বা সত্তর দশকীয় ধোঁয়ার আড়ালে বসে তিনি আমারে বলেন-‘পাপ ও দুঃখের চোরাচালানের চেয়ে কোকেন ও আর্মসের চোরাচালান অনেক কার্যকর।
’
প্রিয়,খেয়াল করসেন?কবিতার কথা কইতে কইতে আমাগো যাপনের কিছু কথা উইঠা আসছে?এইটা হইতেসে জুবেরীর কবিতার কেরামতি-আপনার আমার যাপনের লগে জুবেরী বিট্রে করেনা-যাপন/শিল্প/রাজনীতির ভিত্রে কোন দূরত্ব মানিনা আমি। জুবেরীর কবিতা আপনারে স্বস্তি দিবেনা। কারন,অফিসিয়াল রিয়েলিটির ভিতরকার নেটওয়ার্কিং সে ভাইঙ্গা দেয়-আপনার বুকের ভিত্রে শূন্য শূন্য একটা ফিলিংস হয়-আপনার ঈশ্বর বিলুপ্ত হয়- এর কথা ভাবতে থাকেন-অন্য দুনিয়া না অন্য বাস্তবতার দিকে যাচ্ছেন-এই বিভ্রম-ঘোরে আর একটু ঘোলা করে অন্য পৃথিবীর ঈশ্বর
‘মৃত মানুষের চোখ কেন এত চেয়ে থাকে পৃথিবীর দিকে?
গণিতে তুমি শুন্য,দর্শনে তুমি নিখোঁজ
ধর্ম তোমাকে নিষিদ্ধ করেছে
এবং তোমার কোন ইতিহাস লেখা নেই। ’এই দুনিয়ার ছেলেবেলা হইতে রেলের বাঁশি ভেসে আসে-আপনে স্মৃতিকাতর হন-স্মৃতি হাতড়িয়ে আপনে কোন রেললাইন দেখতে পাননা,শুধু বাঁশি শুনতে পান-
‘এ গাঁয়ে কখনো রেললাইন আসেনা
কিন্তু বালকেরা রেললাইন চিনে
বৃদ্ধরা কোনদিন না দেখেও শিশুদের রেলস্টেশনের গল্প শোনায়
আর মৃতদের দেশে কোন রেল যোগাযোগই নাই। ’
পাঠিকা,আপনে ও আমি কথাটার মানে বুঝতে না পেরে পরস্পরের দিকে তাকাই।
শধু,উপকথার বাস্তবতা ও বাস্তবতার উপকথা নিয়া আকাইম্মা আঁতলামি করার লোভ সামলিয়ে ছুরি বাগিয়ে ধরতেসি পরস্পরের দিকে। আমরা বুইঝা গেসি,আমাদের মেরুদন্ডে লাগানো আছে আমাদের দাম-
‘প্রত্যেকেই অদৃশ্য ছুরি হাতে নিয়ে
সকলের দিকে নজর রাখছে ঝাঁপিয়ে পড়বে বলে। ’
সোনাপাখি আমার,
‘আমি প্রতিদিন একটা পথ
হারিয়ে যাওয়া ছেলেটির পায়ের কাছ। ’
এই কথা বলা ছাড়া আমি কি আর করতে পারি!কি করতে পারে কবি বিপদ সংকেত দেয়া বা বিপদ ঘটানো ছাড়া !আপনি শো-পিস হিসেবে রাখা পাথরগুলায় বারি মারেন!আপনারে কবি বোঝাতে চেষ্টা করে সব পাথর হৃদয়ে ধরেনা নদী। আপনি কি বোঝলেন বোঝা গেলোনা।
মোহতারেমা,আসেন মাও সেতুঙের দেশে। চাউ সাম্রাজ্যের ইন্তেকালের আমলে হযরত চুয়াৎসে নাজেল হন-যার কাছে আবাল টাইপের পোলাপান ঘেঁষতনা। কারন তার বহি পড়ে আমলাতন্ত্রের পরীক্ষাগুলা উৎরানো যেতোনা। তিনি ঘোড়ার খুর এ ইরশাদ করতেসেন-‘‘পাঁচটা রঙ যদি দুনিয়াময় টিকে থাকে থাকে তবে আবার রঙের সাজ কেন?পাঁচটা সুর যদি কানে বাজে তখন ছয় গর্তের বাঁশি কি কেউ বাজায়?...সেই থেকে এলো লোভ,লোভের জন্য শরীরপাত,ঝগড়া আর জ্ঞানের আকাঙ্ক্ষা। ’’
চুয়াৎসের কথা কওয়ার ধান্ধাটা কী বুঝবার পারতেসেন?বুঝবার না পারলে আবার সাঈদের নিকটে চলেন-
‘কোন শব্দ কোন অর্থ তৈরি করেনা
কোন রঙ তৈরি করেনা বৈচিত্র্য।
উহারা স্বাধীন
যতক্ষণ না তোমাদের জ্ঞান আরোপিত হয়। ’
সাঈদ জুবেরীকে চুয়াৎসে/স্টিরনারের গোত্রভুক্ত করা বা কোন কৌমের নাগরিকতা দান বা মূল্যায়ন করা-জুবেরী আত্মরতির খুন লিখে কয়টা বাল ছিঁড়সেন
ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা- ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা- ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা- ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা- ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা- ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা- এইটা নির্ধারণ করা আমার কার্য নহে।
সোনাপাখি,আসলে ইহা একপ্রকার আপনেরে পটানোর প্রক্রিয়া-এইভাবে আমি আপ্নের লগে সম্পর্কিত হইতে চাই-ইহা কি আর এত সহজ-যখন হইতেসে ‘চূড়ান্ত দৃশ্যের আগে নিহত ও হত্যাকারীর গভীর প্রনয় ’-মোহতারেমা,আপনার শহরের কোন প্রান্ত থেকে ধরা পড়ে গেসে আপনার প্রেমিক ধরা পড়ে গেসে-ক্রসফায়ার-প্রেসনোট-ভাবদাস্যতা-ফলত নির্বিকার-শধু আপনে আর কিছুই মেনে নিতে পারতেসেননা আজ-হয়তো আপনে পইড়া ফেলসেন আত্মরতির খুন-আপনে স্বাভাবিক হইতে চেষ্টা করতেসেন-স্বাভাবিক হবার অভিনয়-আপনি কাঁদতেসেন-আপনার প্রেমিকের কথা ভেবে না নিজেকে ভেবে-সেইটা আমরা আর জানবোনা কোনদিন-‘এই দৃশ্যে বিদায়- সে তুমি যে দৃশ্যে থাকোনা কেন
এ যাত্রা পলায়নপর-দেখা হবে বারবার। ’
আমিন।
(লেখাটা আমার প্রথম বহি নিয়া।
নিজের প্রচার চালাতে আমার বিন্দুমাত্র লজ্ঝ্বা নাই, তাই... লেখাটায় তানভীর নিজের যাপনের ভিত্রে বহিখানারে আবিষ্কার পূর্বক হাজির হইছেন। তার এই লেখার যে জীবন্ত সিলসিলা, তা আমার ভাল লাগে। লেখাটা আমার বহি নিয়া লিখিত হইতেছে না শুধু। এমনই মনে হয়) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।