দেশে কোনো সক্রিয় নীতিমালা বা শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে শিক্ষক কর্তৃক যৌন নির্যাতনের ঘটনা। এতে করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিক্ষিকা, ছাত্রী ও অভিভাবক মহল। শুধু গ্রাম কিংবা মফস্বলেই নয়, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে রাজধানীর নাম করা স্কুলের শিক্ষিকা ও ছাত্রীরাও শিক্ষক কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। উচ্চআদালতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যে নীতিমালা রয়েছে সে ব্যাপারে শতকরা ৮০ ভাগ শিক্ষকের কোনো ধারণা নেই। অথচ আদালত ও শিক্ষা অধিদফতরের এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালনের কথা থাকলেও বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাঠ্যপুস্তকে যৌন হয়রানির বিষয়ে কোনো আলোচনা নেই। নিপীড়নকারী শিক্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে। এর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান, ম্যানেজিং কমিটি ও সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন জরুরি। এর পাশাপাশি প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি।
সম্প্রতি ভিকারুনি্নসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার এক ছাত্রীকে শিক্ষক পরিমল জয়ধর কর্তৃক যৌন নির্যাতনের ঘটনাটি আলোচনার সৃষ্টি করে।
কিন্তু ঘটনার প্রায় এক মাস অতিবাহিত হলেও তদন্তে অগ্রগতি বা পরিমলের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ১২ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এমরান হুসেইন কর্তৃক অনার্স ফাইনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হন। এর আগে ২ এপ্রিল ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু মুসা আরিফ প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেন। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক আবদুল্লাহেল কাফী কর্তৃক একই বিভাগের এক শিক্ষিকা যৌন হয়রানির শিকার হন। ২৬ জুলাই মানিকগঞ্জে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করেন গোলাম মাওলা নামের এক কলেজ শিক্ষক।
১০ জুলাই আখাউড়ায় ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী শিক্ষক কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হয়।
জানা গেছে, গত বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আইনের খসড়া তৈরি করেছে আইন কমিশন। খসড়াটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী বলেন, শীঘ্রই এই আইনের বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে।
এছাড়া এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্যাতনকারীর শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, নৈতিক ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। শিক্ষকদের এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধের প্রবণতা সমাজের জন্য অশনিসংকেত। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে ম্যানেজিং কমিটির ভূমিকা ও সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা বাড়ানো প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানউল্লাহ বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার কারণে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে।
এ ধরনের ঘটনার মধ্য দিয়ে মূলত সামাজিক বিশৃক্সখলার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।