আমি পথ মঞ্জরী ফুটেছি আঁধার রাতে সার্জারী ওয়ার্ডে ডিউটি পড়েছে। এওর্টিক এনিউরিজমের পেশেন্ট ১৪ বছর বয়সী কিশোর। যে কোন সময় রাপচার হয়ে যেতে পারে। ভাস্কুলার সার্জন প্রয়োজন। কিন্তু হসপিটালে ভাস্কুলার সার্জন নেই।
এ অবস্থায় সার্জারী ডিপার্টমেন্টের হেড (এফ,আর,সি,এস) জেনারেল সার্জন ঝুকি নিলেন, তিনি চেষ্টা করবেন। পেশেন্টকে রেডি করা হল। দীর্ঘ সময়ের অপারেশন শেষ হল। ছেলেটার বাবা নেই। দরিদ্র মা একাই সব করছেন।
নাইট ডিউটি তখন। পোস্ট অপারেটিভ রুম থেকে পেশেন্ট কে ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হয়েছে। কিছুক্ষণ পার হয়ে যাওয়ার পর রোগী পূর্ণ জ্ঞান ফিরে পেয়েছে। রোগী অবজার্ভ করতে গিয়ে দেখলাম সে বাম পা টা অনবরত নাড়াচ্ছে। অন্যান্য পেশেন্টের ফলোআপ দিলাম।
সকালের আলো ফুটে উঠছে। ছেলেটার কাছে গিয়ে দেখলাম মার কাছে কিছু খেতে চাইছে। মা চামচে করে স্যুপ খাওয়ালো। তার বা পাটা সে নাড়িয়েই চলেছে। এবার চাদর সরিয়ে তাকে পা স্থির করে রাখতে বললাম।
১০ সেকেন্ডের মধ্যেই আবার সে পা নাড়াতে লাগলো। এবার বললাম ঠিক আছে তুমি ডান পা টাও নাড়াও। সে পারছেনা। আমার হাতটা এগিয়ে দিয়ে বললাম ডান হাত দিয়ে আমার হাতটা ধর। সে হাত নাড়াতেও পারলোনা।
এবার তার ডান পাশ পরীক্ষা করে বুঝলাম ডান দিক প্যারালাইজড হয়ে গেছে। ব্যাকুল মা একটু পর পর জিজ্ঞেস করছে বাবা একটু ভাল লাগে এখন? আরেকটু স্যুপ দেই? স্যার অপারেশন করেছেন ঠিকই, কিন্তু এনিউরিজম অপারেশন করে ক্লোজ করার সময় কোনভাবে টিস্যু ফ্র্যাগমেন্ট রক্তের সাথে ব্রেইনে গিয়ে এই বিপত্তি ঘটিয়েছে। আই,ভি চ্যানেল রাখা হয়েছে। স্যালাইন চলছে। তৃতীয় রাত।
২ টার দিকে মার অস্থির প্রশ্ন বাবা তোর খারাপ লাগে? মা এসে বলল ডাক্তার সাহেব ছেলেটা জানি কেমন করে। তাড়াতাড়ি তার বেডে চলে গেলাম। ছেলেটা বাম হাত পা নাড়াচ্ছে আর মুখ ফেরাচ্ছে একবার এদিক একবার ওদিক। অস্থির। সি,একে ফোনে বললাম তাড়াতাড়ি ওয়ার্ডে আসেন আর স্যারকে কল দেন।
সি,এ বললেন এত রাতে স্যারকে কল দেওয়া যাবেনা। তুমি ম্যানেজ কর, আমি আসছি। রোগীর হাতে বিপি মেশিন লাগানো শেষ করার আগেই তার নাক মুখ দিয়ে রক্ত ছুটল। এবং কিছুক্ষনের মধ্যেই রোগী স্থির হয়ে গেল। হার্ট বিট নেই, রেস্পিরেশন নেই, বিপি নট রেকর্ডেবল, পিউপিল ডাইলেটেড এন্ড আনরেসপন্সিভ টু লাইট।
যদি সেদিন হাস্পাতালে আই,সি,ইউ থাকতো হয়ত পেশেন্টকে এভাবে মরতে হতো না। আজ সেই হাস্পাতালে আই,সি,ইউ হয়েছে। আশা করি আজকের জুনিয়র কলিগদের আমার মত এরকম অসহায় মৃত্যু চেয়ে চেয়ে দেখতে হবে না। এটা ছিল আমার ইন্টার্নশিপ করার সময় আমার অধীনস্থ কোন বেডের কোন পেশেন্টের মারা যাওয়ার প্রথম অভিজ্ঞতা। পরে অবশ্য স্যার বলেছিলেন আমি বলতে ভুলে গেলেও সি,এর উচিত ছিল ফ্লুইড ওভারলোড হয়ে যাচ্ছে এটা খেয়াল করা।
আমাদের সরকারী হাস্পাতালে বিশেষ করে ক্রিটিকাল কেস গুলার ক্ষেত্রে স্পেসিয়লিস্টদের যে কোন সময় ডাকার বিধান থাকলেও, উনাদের আমরা ঘুম থেকে ডাকতে পারি না। আফসোস!! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।