আমার ইন্টার্নির সময়ের কথা। মেডিসিন ওয়ার্ডে তখন আর ৩ দিন বাকী। এক শুক্রবার সকালে ডিউটি ছিল। সেদিন আবার রোগী ভর্তিরও দিন ছিল। ইন্টার্ন হিসেবে আমি একাই ছিলাম সেদিন।
কিছু সিনিয়র আপু আর ভাইয়ারা ছিলেন সাথে।
এর আগে কিছু কথা বলে নিতে হয়। তখন মানসিক রোগীদের জন্য পুরুষদের কোন আলাদা ওয়ার্ড ছিল না, (এখন হয়েছে কিনা জানি না), প্রতিটা মেডিসিন ওয়ার্ডে একটা-দুইটা করে বেড রাখা হত মানসিক রোগীদের জন্য।
ঐ সময় একটা রোগী ভর্তি ছিল ঐ ওয়ার্ডের মানসিক রোগীর বেডে। রোগীটাকে আগে একদিন দেখেছিলাম করিডরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে আজান দিচ্ছিল।
লোকটাকে দেখে কষ্টই লেগেছিল। নিশ্চয়ই বড় কোন মানসিক আঘাত পেয়েছে সে। পরে এক বান্ধবীর কাছে শুনেছিলাম, (সেও ঐ ওয়ার্ডের ইন্টার্ন ছিল), লোকটা একটা মেয়েকে পছন্দ করত, কিন্তু তাকে পায়নি, তারপর থেকেই তার এই সমস্যা। সে নিজে আমার সেই বান্ধবীকে বলেছে, আমি ময়নারে বিয়া করুম।
তো সেইদিনের কথায় আসি।
এক বৃদ্ধ রোগী ভর্তি হয়েছেন, স্ট্রোক হয়েছে তার। আমি রোগী দেখছি, এর মধ্যে হঠাৎ সেই মানসিক রোগী এসে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি পাত্তা না দিয়ে আমার রোগী নিয়েই ব্যস্ত আছি। একটু পর দেখি সে একটা আংটি নিয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। আর "উমম, উমম" শব্দ করে ইশারায় আমাকে আংটিটা নিতে বলছে।
আমি ঠান্ডা গলায় বললাম, আপনি আপনার বেডে যান। সে বলে উঠল, ও বাইরে যাবো? আচ্ছা যাচ্ছি। বলেই বাইরের দিকে রওনা দিল। আমি আবার ডেকে বললাম, বাইরে না, আপনি নিজের বিছানায় যান। তখন সে বাধ্য ছেলের মত নিজের বেডে গিয়ে বসে রইল।
আর কখনও আমাকে ডিসটার্ব করেনি।
এর দুইদিন পর ওয়ার্ডে এসে দেখি সেই মানসিক রোগী খুবই অশান্ত হয়ে গেছে, চিৎকার করে ছটফট করছে। কয়েকজন মিলে তাকে চেপে ধরে রেখেছে বিছানার সাথে। মাঝে মাঝেই নাকি এমনটা হয়। কষ্ট লাগল দেখে।
মনে হল, আল্লাহ না করুন, কিন্তু আমারও যদি কোনদিন এরকম রোগ হয়, আমাকে নিয়েও কত মানুষ হাসাহাসি করবে, আর কাছের মানুষরা কষ্ট পাবে। কে যেন একবার আমার হাত দেখে বলেছিল আমার পাগল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সত্যিই হবেনা তো। আল্লাহ যেন সবাইকে সুস্থ রাখেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।