সিরিয়াস হওয়ার চেষ্টা করছি... ক্লীন শেভ
রচনায়ঃ রেজোয়ান রকি
গ্রামাঞ্চলের ছেলে মেয়েরাই শহরের ছেলে মেয়েদের চেয়ে তুলনামুলক বেশী এগিয়ে। এই এগিয়ে থাকা সেই এগিয়ে থাকা নয়, এটি শ্রেণী ভিত্তক যে এগিয়ে থাকা সেটি । যেমন ধরেন একটি শহরের ছেলে বা মেয়েকে প্রথমে পড়তে হয় নার্সারি, কেজি তারপর ক্লাস ওয়ান । অথচ আমাদের গ্রামের স্কুলটিতে পড়াশুনায় অভিষেক হয় ক্লাস ওয়ান দিয়ে । তবে হ্যাঁ এইদিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও, আধুনিকতার দিক দিয়ে কিন্ত গ্রামাঞ্চলের ছেলে মেয়েরা অনেকটাই পিছিয়ে ।
যদিও বাংলাদেশ এর ডিজিটালিকরনের পাল্লায় পরে এখন এর পরিবর্তন হতে শুরু করেছে ।
২০০৩ সাল , এ্যনালগ বাংলাদেশ , পড়তাম ক্লাস নাইনে । ঘটনাটি ঘটেছিল ঠিক সেই সময়ে । অন্য সব বুন্ধুদের চেয়ে নিজেকে ছোটো মনে হতে লাগলো । কারণটা হল আমি ছাড়া আমার সকল বন্ধু বান্ধব শেভ করতো ।
তাই আমি নিজেও মনে করলাম আমারও শেভ করা উচিৎ । এরপর থেকে সেলুনে যখনি চুল কাটাতে যেতাম , তখন শেভ করানোটা অনেক মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করতাম । আবার দেখতাম অনেকে দাঁড়ি – গোঁফ কাঁচি দিয়ে ছেঁটেও নিত । আমি মনে করলাম যদি শুরুতেই শেভ করে ফেলি ব্যাপারটা সবার নজরে পরবে। তাই বাজার থেকে দুই টাকা দিয়ে একটা কাঁচি কিনে ফেললাম ।
এরপর থেকে শুরু হল আমার দাঁড়ি গোঁফ ছাঁটা-ছাঁটি ।
আপনারা হয়তো ভাবছেন এই দাঁড়ি-গোঁফ নিয়ে এত গোল্লা-ছুট খেলার দরকার কি? সোজা গিয়ে শেভ করে ফেললেই তো হয়ে যায়। সেইটাতো আমিও জানি। কিন্তু শহরের একটি ছেলে এই ব্যাপারটি তার বাড়িতে সে যত সহজে মানিয়ে নিতে পারবে, তা কিন্তু আমাদের গ্রামাঞ্চলের ছেলে মেয়েদের ক্ষেত্রে ততটাই কঠিন। এইসব ব্যাপারে শহরের ছেলেমেয়েরা তাদের পড়িবারের সদস্যদের সাথে খুব সহজেই খোলাখুলি হতে পারে যা আমাদের গ্রামাঞ্চলে বড়ই কঠিন।
যদিও আজকাল সাটেলাইট এর যুগে সেইটাও সম্ভব হতে শুরু করেছে।
যাইহোক একদিন কাঁচি দিয়ে দাঁড়ি গোঁফ ছাঁটতে ছাঁটতে মনে হলো আজ একটু ব্লেড দিয়ে গোঁফটা সাইজ করা দরকার। কিন্তু বিধিবাম, ব্লেড দিয়ে গোঁফের দুই পাশ সমান করতে যেয়ে একপাশ ছোট আর আরেকপাশ বড় হয়ে গেলো। এরপর যতই সমান করার চেষ্টা করলাম, ততই বড়পাশটি ছোট আর ছোটপাশটি বড় হতে লাগল। মানে বানরের, ইঁদুরকে রুটি ভাগ করে দেওয়ার মতই কিছুটা।
এক সময় দেখলাম নাকের নিচে চার্লি চ্যাপলিন এর মত কিছুটা বাকি রইল।
অতঃপর সেই সেভাকাংখিত মুহূর্ত............
এখন শেভ করা ছাড়া আর কোন উপায় খুঁজে পেলাম না। সেই মুহূর্তে আমার কাছে কোন শেভ করার যন্ত্রপাতিও ছিল না। কী আর করার ব্লেডের মধ্যে একটা কলম ঢুকিয়ে রেডিমেট একটা রেজার তৈরি করে ফেললাম। আর একটা টুথব্রাশ এ পেস্ট লাগিয়ে সম্পূর্ণ মুখমণ্ডলে ব্রাশ করে, রেডিমেট রেজার দিয়ে শেভ করে ফেললাম।
পরদিন ক্লাসে যেয়ে মুখে হাত দিয়ে ব্যাপারটি গোপন করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু বেশীক্ষণ ব্যাপারটি গোপন রাখতে পারলাম না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।