দুনিয়াতে শুধু দুই প্রকার মানুষ আছে। একদল ভাল, একদল খারাপ। এর বাইরে আর কোন বিভেদ নাই। মা বলেন, "তোকে দিয়ে কিছু হবেনা। "
আমি বিজয়ীর হাসি মুখে আনি।
এই হাসিটা মায়ের কাছে শয়তানি হাসি । বলেন, "শয়তানি হাসি দিবি না । থাপ্পর খাবি । "
আমি দুটো গাল এগিয়ে দিই। মা আমাকে মারেন না ।
মুখে হাসি নিয়ে মৃদু টোকা দেন । টোকাতে আমি পরিতৃপ্ত হয়ে ঢেকুর তুলি ।
"তোর সব কিছুতেই খালি শয়তানি। "
"আমি ঈবলিসের বংশধর তো তাই !"
"খবরদার, বাজে কথা বলবি না। "
"খারাপ কি বললাম ।
বাবা যেই মানুষ !" আমি ফোড়ন কাটি।
মা কিছু বলেন না । আমি মায়ের কোলে শুয়ে থাকি । আমার চুলে বিলি কাটেন তিনি।
"মা, আমাকে তুমি মারো না কেন ?"
"তুই যে আমার কাতলা বাবা, তাই।
" মা হাসেন ।
মায়ের প্রিয় কাতলা বাবাও দাঁত মেলে হাসে ।
আমি কোন পীর নই, দরবেশও নই। ছাগল জবাই করে আমি কাতলাবাবা হইনি। আমার কোন দরবারও নেই, ভক্তও নেই।
একজন নিত্তান্তই সাধারন মানুষ।
২০০০ সাল। দশ পেরুনো বালক আমি। সংসারের অবস্থা খুব একটা স্বচ্ছল না । বাবা সবেমাত্র চট্রগ্রাম ব্ন্দরের চাকুরি ছেড়ে এসেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের মৌসুম। নিজেই আমের আড়ত দিলেন। ব্যবসা নিয়েই সবসময় ব্যস্ত থাকতেন তিনি । বাড়ির বাজার করার সময় পেতেন না ঠিকমত । আমি টুকটাক বাজার করি।
আলু, পেয়াজ, লঙ্কা, শাকসবজি এসব আমিই কিনতাম। মাছ-মাংস কিনতেন বাবা। আমি চিনতাম না ওসব। একবার হলো কি, বাসায় মেহমান এসেছে। মেহমান মানে বড় মামা ।
চট্রগ্রামে থাকেন। বাবা গেছেন চককির্তী ই্উনিয়নের বাগানে আম আনতে। বাসায় বাজার যাওয়ার মত কেউ নেই। মা আমাকে বাজার পাঠালেন মাছ আনতে। আমি মাছ চিনি না।
আমাকে মাছের চেহারার বর্ননা দিলেন তিনি। আমি বর্ননা মুখস্ত করতে করতে বাজার পৌছালাম। এই মাছ, সেই মাছ দেখতে দেখতে আমি ভুলে যায় মাছের নাম । মাছ বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসা করতে সাহস হ্য় না। শেষে বাজারের কোনের দোকানটাই একটা মাছ পছন্দ হ্য় আমার ।
মাছের নাম জিজ্ঞাসা করতেই বলে এটার নাম কাতলা, বাবা। মাছবিক্রেতা আমাকে ছেলে হিসেবে কাতলা, বাবা বলেছিলেন। আমি ভাবি এটার নামই কাতলাবাবা !!
আমি আশি টাকা দিয়ে বড়সড় "কাতলা বাবা"কে কিনে ফেলি ! বাসায় গিয়ে মায়ের হাতে মাছের ব্যাগ দেই। মাও খুশি হন প্রথমবারের মত ছেলে মাছ কিনতে পেরেছে বলে।
দুপুরে খেতে বসেছি সবাই মিলে।
মামা মাছের প্রশংসা করে বলেন, "কাতলা মাছটা তো খুব তাজা মনে হচ্ছে। স্বাদটাও চমৎকার । "
"এটার নাম কাতলাবাবা। " মাজপথে বলি আমি।
"কাতলা বাবা মানে ?" মামা অবাক হন।
"মাছআলাকে আমি জিগেস করলাম, এই মাছটার নাম কি ? তো মাছআলা বলল এটার নাম কাতলা, বাবা। "
মামা ভাত খাও্য়া বন্ধ করে হাসেন। মা হাসেন । আমার বড় বোনও হাসে। শুধু আমি হাসি না।
এখানে হাসির কি আছে আমি বুঝিনা।
মামা আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন মাছটার নাম কাতলা , কাতলা বাবা না। আমি জোর করে কান্নার চেষ্টা করি। ওরা হাসেন। বাচ্চাদের কান্না দ্রুত আসে।
আমি সফল হয়।
মামা অবশেষে স্বীকার করেন মাছটার নাম কাতলাবাবা। আমি চোখ মুছে বিজয়ীর বেশে হাসি। কিন্তু আমি জানতাম না ঐ ঘটনার ফলে আমার নামেও পরিবর্তন ঘটবে । আমিও কাতলাবাবা হয়ে যায়।
ঘটনার প্রায় এক দশক পেরিয়ে গেছে । তখনকার ক্লাস ফোরে পড়ুয়া ছাত্রটি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে । বছরে হয়তোবা দুবার-তিনবার যায়। মা আমাকে এখনও কাতলাবাবা বলেই ডাকেন। মায়ের কাছে কাতলাবাবারা কখনও নতুন হয়না, ওরা সবসময় পুরোনোই থাকে।
(সিয়াম সারোয়ার জামিল-এর কাতলা বাবার দিনলিপি-১)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।