আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাইওয়ানের বিস্ময় বালক

এই দেশ, এই প্রকৃতি ও খুব কাছের মানুষ ছেড়ে কোথাও মিলিয়ে যাবো একদিন, সে সব কথা ভাবতে খুব কষ্ট হয়। মানুষের কাছে, প্রকৃতির কাছে আমি ঋণী। সেসব ঋণ শোধ করা হবে না কোনদিনই। তবু যেতেই হবে। যেতে হয়।

আমার প্রতিদিনের ভাবনা এবং জীবনের কিছু কথা যাবার আগে বলে যেতে চাই. ১৯৯৩ সালে পুয়া কেইন সেঙস নামে এক ছেলে মালয়শিয়া থেকে তাইওয়ান পাড়ি জমায়। একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ইলেক্ট্রিক্যাল কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করা। তাইওয়ানের গিয়ে ভর্তি হয় চিয়ো টুয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে । এই ছেলে পুয়া জীবনে কখনও ভেবে দেখেননি যে তিনি একদিন এমন এক ডিভাইস আবিষ্কার করে ফেলবেন; যে ডিভাইসে রাখা যাবে অসংখ্য তথ্য। পুয়া যখন তাইওয়ানে প্রকৌশল বিভাগে পড়াশোনা করছেন তখনই তিনি নিজস্ব একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর কথা ভাবতে থাকেন।

১৯৯৯ সালে যখন মাস্টার্স শেষ করেন। এরপর ছয় মাসের জন্য একটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে কাজ করা শুরু করেন পুয়া। সেই প্রতিষ্ঠানেই সমবয়স্ক কয়েকজন প্রকৌশলীর সাথে তার পরিচয় হয়। পুয়া নিজের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা যখন প্রতিষ্ঠানটি শুরু করি তখন আমাদের ভেতর আত্মবিশ্বাস ছিল যে আমাদের ব্যবসা অবশ্যই সফল হবে। এবং আমরা শুরু থেকেই ইউএসবি টেকনোলজি নিয়ে কাজ করছিলাম।

আমাদের প্রতিষ্ঠানে আমরা ছিলাম পাঁচ জন। দুইজন আমরা মালয়শিয়ান এবং বাকি তিনজন তাইওয়ানের প্রকৌশলী। ’ পুয়াদের প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল ‘ফিজন’। ফিজন ইলেক্ট্রনিক্স কর্পোরেশন ২০০০ সালে কাজ শুরু করে। একঝাক তরুণের প্রচেষ্টায় মাত্র ছয়-মাসের মধ্যে তাদের প্রথম আবিষ্কার বাজারে চলে আসে।

আর সেই আবিষ্কারটি হলো ইউএসবি স্টোরেজ ডিভাইস। যার নাম ‘পেন ড্রাইভ’। পুয়া আরো বলেন, ‘যখন আমরা প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করাই তখন আমরা ইউএসবি চিপ নিয়ে কাজ শুরু করি। কাজ শুরু করার পরই আমরা বুঝতে পারছিলাম, এটি প্রযুক্তির বাজারে সারাবিশ্বে জনপ্রিয়তা পাবে। কিন্তু সেই সময়টাতে অন্য কেউ বিশ্বাস করতে চায়নি।

তাই আমাদের সমস্ত কিছু নিজেদেরই করতে হয়েছে। কারও সহযোগিতা তেমন পাওয়া যায়নি। এমনকি আমরা তখন মাত্র ২৭ বছরের অনভিজ্ঞ কয়েকজন তরুণ। যদিও আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে। এমনকি আমরা যে জিনিসটি বানাবো সেটার বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়াটা কী হবে তাও জানতাম না।

সে সময় আমরা চিন্তা করলাম একজন ট্রেডার নিয়োগ দেয়া যে কিনা আমাদের প্রডাক্টটি বাজারজাত করতে পারবে। পুয়ার পেন ড্রাইভ বাজারে আসে ২০০১ সালের জুন মাসে। বিস্ময়করভাবে আগষ্টের মধ্যেই সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। একই বছরের সেপ্টেম্বরে তারা নিয়মিত লাভের অর্থও উপার্জন করতে শুরু করে। ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জিজ্ঞেস করলে পুয়া বলেন, আমি আমার জন্মস্থান মালয়শিয়াতে ‘ফিজন ইলেক্ট্রনিক্স’-এর শাখা শুরু করতে চাই।

আমি আমার দেশের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। ভবিষ্যত প্রকৌশলীদের নিয়ে পুয়া কাজ করতে আগ্রহী। তিনি নতুনদের সাথে কাজ করে তাদের ধারণার সাথে পরিচিত হতে চান। পুয়ার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ফিজনে ১০০জন প্রকৌশলী কাজ করছে। যার মধ্যে অধিকাংশই বয়সে তরুণ।

পুয়াকে একবার এক সাংবাদিক কৌতুক করে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘সারাদিনে কতো ঘণ্টা কাজ করেন?’ পুয়াও মজা করে বলেন, ‘বিয়ের আগে দিনে ১৫-১৭ ঘণ্টা কাজ করতাম। কিন্তু এখন সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কারণ আমি বিবাহিত। ’ পুয়ার প্রতি সারাবিশ্ব কৃতজ্ঞ। সেই সাথে তাইওয়ানও।

কারণ, পুয়া মালয়শিয়ার ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে তাইওয়ানে পড়তে এসেছিলেন শুধুমাত্র কম খরচে পড়তে চান বলে। আর সেই সুযোগে তাইওয়ানে বসে তিনি আবিস্কার করে ফেললেন ‘পেন ড্রাইভ’। পুয়ার পেন ড্রাইভ বাজারজাত করে তাইওয়ান ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উপার্জন করেছিল। তাই এই আবিষ্কারক তাইওয়ানে বিস্ময় বালক হিসেবেই পরিচিত। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।