হেঁটে হেঁটে যতদূর চোখ যায় দুপুরবেলা দরজা খুলতেই বৈশাখী এক দৌড়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। মেয়ের এমন আচরণে ভীষণ অবাক হলেন রিপা রহমান। কি হল ওর! সকালে তো ভালভাবেই কলেজে গিয়েছিল! ফিরে এল আজ এত তাড়াতাড়ি! কোন পরীক্ষায় ফেল করল নাতো! কিন্তু তা কি করে হয়! এ বছর তো ওর একটাও পরীক্ষা হয়নি! তাহলে? এক অজানা আতংকে রিপা রহমানের মনটা কেঁপে উঠল। তিনি দরজা ঢাক্কাতে লাগলেন।
-এই বৈশাখী মা আমার! কি হয়েছে তোর! দরজা খোল!
ভেতর থেকে কোন সাড়া নেই।
-বৈশাখী! বৈশাখী! লক্ষ্মী মা আমার! সোনা মা! দরজা খোল!
তিনি এবারও কোন সাড়া পেলেন না! এক অযাচিত ভয়ে তার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতে লাগল। কি করছে ভেতরে বৈশাখ!
দ্রুত বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খুলে তিনি যা স্বপ্নেও ভাবেননি তা-ই দেখলেন-সিলিং ফ্যানের সাথে তার মেয়ে ওড়না বাঁধার চেষ্টা করছে! বৈশাখী! চিৎকার করে একটা চড় লাগিয়ে দিলেন মেয়ের গালে! তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?
ঘণ্টাখানেক পর।
মা-মেয়ে মুখোমুখি বসে আছে। বৈশাখীর চোখ থেকে অঝর ধারায় পানি পড়ছে! রিপা রহমান খুব আদর করে মেয়েকে জিজ্ঞেশ করলেন, মা, তোর কি হয়েছে? কেন এমন করছিস?
বৈশাখী কোন কথা বলে না। সে শুধুই কাঁদে।
রিপা এবার জিজ্ঞেশ করেন, আমি বেশ বুঝতে পারছি তোর অনেক কষ্ট হচ্ছে। তোর মত এমন বয়স তো আমারও ছিল। মা আমাকে সব কিছু বল। কি হয়েছে?
-মা, আমি বলতে পারব না। তুমি রাগ করবে? অনেকক্ষণ পরে বৈশাখী কথা বলে।
- নারে সোনা, আমি রাগ করব না। আমাকে বলবি না তো কাকে বলবি। বরং না বললে আমি কষ্ট পাব!
বৈশাখী আবার চুপ করে থাকে। রিপা মেয়ের হাত ধরেন। বল, কি বলবি না? মেয়ের কষ্টে নিজের অজান্তে তারও চোখে পানি চলে আসে।
মায়ের চোখে পানি দেখে এবার আর বৈশাখ চুপ থাকে না। সে আস্তে আস্তে বলতে শুরু করে, মা, তুমি তো আমার বন্ধু সোহেলকে চিনতে?
-হাঁ চিনতাম।
- ও শুধু আমার বন্ধু ছিল না। ওর সাথে আমার তিন বছরের রিলেশান!
-তারপর?
-মা আমি আর বলতে পারব না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে!
অসম্ভব ওজনের দুশ্চিন্তার ভারটি রিপা রহমানের বহন করতে খুব কষ্ট হচ্ছিল।
মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি নিজেকে সামলে নেবার চেষ্টা করলেন। খুব আস্তে আস্তে বললেন, মা বৈশাখ, তুই এমন করছিস কেন? তোর যত কষ্টই হোক আমাকে বল। বলে হালকা হ!
-মা, সোহেল আমার সাথে চিট করেছে। ও আমাকে শেষ করে দিয়েছে।
-মানে কি? ও তোর সাথে আর রিলেশান রাখতে চাচ্ছে না?
-না।
-বাদ দে। ভুলে যা। কারোর জন্যই কোন কিছু থেমে থাকে না।
-কিন্তু মা, ও একটা অমানুষ! ও আমার সব শেষ করে দিয়েছে! একদিন ওদের বাসায় আমাকে নিয়ে গিয়েছিল ওর মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে বলে...কিন্তু ওদের বাসায় কেউ ছিল না...তারপর...তারপর...আমি আর বলতে পারব না।
মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে রিপা রহমানের।
তবুও তিনি মাথা ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করেন।
-বৈশাখ, বল তারপর কি হয়েছিল? বল।
বৈশাখী কিছু বলে না। খালি কাঁদতে থাকে। রিপা রহমান বলতে থাকেন, বল তারপর কি হয়েছিল? বল? সোহেল কি তোর কাপড় খুলেছিল? বল।
বৈশাখী এবার উচ্চস্বরে কাঁদতে থাকে।
রিপা রহমান মেয়ের হাতটা শক্ত করে ধরেন। বললেন, চল।
সোহেল তার বাসার নিচে চায়ের দোকানে বসে সিগারেট খাচ্ছিল। আজকে সিগারেটটা তার অনেক ভাল লাগছে।
চোখ বন্ধ করে একটা সুখটান দিল। কিন্তু চোখ মেলে সে ধোওয়া ছাড়তে পারছিল না।
সোহেল কিছু বুঝে ওঠার আগেই রিপা রহমান ঠাস করে তার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলেন, জানোয়ারের বাচ্চা! তোকে চড় মারতেও আমার ঘৃণা হয়। বৈশাখ চুপ করে আছিস কেন? মার ওকে! জুতো খুলে মার। মার।
বলছি মার।
বৈশাখ এবার যেন বৈশাখী ঝড় হয়ে গেল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।