www.extrajudicialkilling.info বিচার বহির্ভূত হত্মা সামাজিকরণ এর পরিণতি হবে দেশকে গৃহ যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া। হচ্ছে ও তাই! একটি দৈনিকের খবরে প্রকাশ : দেশে এখন একের পর এক নৃশংস ঘটনা ঘটছে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ক্ষমতা নেয়ার পর গত আড়াই বছরে ৩৩৬ জন পিটুনিতে হত্যার শিকার হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ ও র্যাবের হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৪১৯ জন। এ হিসাব দুটি মানবাধিকার সংগঠনের।
ভয়াবহ খবর পাওয়া গেল আর একটি পত্রিকার খবরে:
মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করে পুলিশ :তদন্ত দলকে আল আমীন
৬ ছাত্র পিটিয়ে হত্যার পর মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য পুলিশ আমাকেও মেরে ফেলতে চেয়েছিল। বাঁচার জন্য শর্ত দিয়েছিল তিনটি। সাংবাদিকদের সামনে বলতে বলেছিল, হয় ডাকাতি, নয় ফেন্সিডিল অথবা গাঁজা সেবনের জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। এর বাইরে কোন কথা বললে ওদের মত আমাকেও মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছিল পুলিশ। পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটির সামনে এ বক্তব্য দিয়েছে আমিনবাজারের কেবলার চরে ৬ ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার সময় ঘটনাক্রমে বেঁচে যাওয়া আল আমিন।
গতকাল সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত তদন্ত দল আল আমিনকে তার দারুস সালাম থানাধীন ৪ নং বাসার দোতলায় জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় তদন্ত দলের প্রধান পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (প্রশাসন) আমির উদ্দীনসহ তদন্ত দলের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। আল আমীনের বক্তব্য নেয়া শেষে তদন্ত কমিটির সদস্যরা স্থানীয় ৬৪, দারুস সালামের ডা. আব্দুস সোবাহানের বাসায় বসে নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় নিহত কান্ত’র কাকা আব্দুল কাদের সুরুজ, ইব্রাহিমের বাবা আবু তাহের, পলাশের বাবা মুজিবর রহমান ও সাম্মামের বাবা এস এম আমিনুর রহিম ও তাদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। পরে তদন্ত কমিটির সদস্যরা দুপুরে আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলার চরে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মূল ঘটনাটি উদঘাটন করতে এসেছি। আল আমিনের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেয়া হবে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করেই প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
আল আমিন তদন্ত দলকে বলে, আমরা ডাকাতি করতে যায়নি।
ফেন্সিডিল খেতেও যায়নি। তবে আমাদের সঙ্গে আরও যারা ছিল তারা গাঁজা খাওয়ার উদ্দেশ্যে গিয়েছিল কি না তা তারা আমাকে বলেনি। দারুস সালামের ফুরফুরা সমজিদের শবে বরাতের নামাজ পড়ে আমরা মসজিদ থেকে বের হই। রাস্তায় বের হয়ে দেখি টিপু ভাই, সিতাব ও শামাম ভাইকে। ওরা বলে আমরা আমিনবাজারে যাচ্ছি।
আমি বলি তাহলে আমাদেরকে সঙ্গে নেন না ভাই। টিপু ভাই বলে, আমাদের খাবার কিনতে হবে। টাকা লাগবে। তখন আমি ১শ’ টাকা দেই। পরে আমরা ৭ জন মিলে বিরানির প্যাকেট কেনার জন্য হোটেলে যাই।
কিন্তু আমাদের মধ্যে কেউ একজন বলে অত রাত বিরানি থাকবে না নষ্ট হয়ে যাবে। তখন আমরা বিরানি না কিনে চানাচুর, বিস্কুট ও চিপসের প্যাকেট কিনি। সঙ্গে সিগারেটও কেনা হয়। দুটো ভাগে ভাগ হয়ে কিছুদূর পায়ে হেঁটে আবার কিছুদূর রিক্সায় করে আমরা আমিনবাজারে যাই। ব্রিজের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বৃষ্টি শুরু হয়।
তখন তাড়াতাড়ি নদীর কাছাকাছি একটি টঙ্গ ঘরে আশ্রয় নেই। সেখানে সাম্মাম, টিপু, ইব্রাহিম ও মুনিফ মোবাইলে গান শুনছিল। তখন আমি, পলাশ ও কান্ত নদীর দিকে হেঁটে যাই। নদীর তীরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওদের চিত্কার শুনি। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম ছিনতাইকারী হবে।
তাই আমাদের কাছে থাকা মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা লুকিয়ে ওদের কাছে এগিয়ে আসি। আমরা এগিয়ে এসে দেখি ৪ জনকেই কয়েকজন মিলে লাঠি, রড দিয়ে পেটাচ্ছে। মৃত্যুর আগে ওরা ‘মাগো, বাবাগো’ বলে চিত্কার করে ওঠে। যারা পেটাচ্ছিল তাদের পা জড়িয়ে ধরে প্রাণ ভিক্ষা করেছিল। ওরা সংখ্যায় ১৫-২০ জন ছিল।
সবার হাতে ধারাল অস্ত্র ছিল। কয়েকজন পুলিশ সদস্যও ছিল। সবাই চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও পাথর দিয়ে থেতলিয়ে শামীম, টিপু, ইব্রাহিম ও মুনিফকে ১০-১২ মিনিটের মধ্যেই হত্যা করে। পাথর দিয়ে মাথা থেতলে ও ছুরি দিয়ে রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। আমরা এগিয়ে গেলে আমাদেরও ডাকাত বলে পেটাতে শুরু করে।
আল আমিন আরো বলে, সব মিলিয়ে ১৫/২০ জন মিলে আমাদের পেটাচ্ছিল। তারা মারে আর প্রশ্ন করে- তোরা কারা ? জবাব দেই-আমরা ছাত্র। দারুস সালাম থেকে ঘুরতে এসেছি। ‘তোরা ছাত্র না, বল; তোরা ডাকাত’। এমন নির্দেশ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেছন দিক থেকে একজন আমার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে বসে।
আরও একজন চাপাতি দিয়ে কোপ দেয়। ওই কোপ ঠেকানোর চেষ্টা করেছিল পলাশ । তখন ওরা হুঙ্কার দিয়ে বলে, ওই শালারে আগে শেষ কর। তখন কয়েকজন মিলে পলাশকে পেটাতে থাকে। কেউ রড দিয়ে আঘাত করে।
কেউ চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে। ততক্ষণে কান্তকেও ওরা রক্তাক্ত করেছে। কান্ত ওদের পা জড়িয়ে ধরে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছিল। বলেছিল, ‘আমার বাবা সুরুজ ড্রাইভার। সবাই চিনবেন।
আমরা ডাকাত না। আমরা নামাজ পড়ে ঘুরতে এসেছি। ওর কথা শেষ না হতেই বড় পাথর দিয়ে ওর মাথা থেতলে দেয়। দাঁত ভেঙ্গে দেয়। অচেতন হয়ে পড়ে গেলে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে।
একপর্যায়ে দু’জন দুই পা ধরে দুদিকে টান টান করে ধরে রাখে। অন্যরা ওর নিম্নাঙ্গে পাথর দিয়ে আঘাত করে। হাতের আঙ্গুল ভেঙ্গে দেয়।
আল আমিন তার পিঠসহ সারা শরীরে অর্ধ শতাধিক চাপাতির কোপ ও ছুরিকাঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে বলে, আমি ওদের কোপ খেয়ে মাটিতে পড়ে যাই। তখন একজনের পা ধরে কাঁদতে শুরু করি।
কিন্তু সে আমাকে না বাঁচিয়ে চাপাতির কোপ দিলে আরেকজনের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছি। বার বার বলেছি, আমরা কোন অন্যায় কাজে আসিনি। যারা এসেছে সবাই কলেজের ছাত্র। কিন্তু ওরা কোন কথা শোনেনি। শুধু বার বার বলেছে, ‘মাইরা ফালা’ মাইরা ফালা’ এভাবে প্রায় আধ ঘন্টা ধরে বিভিন্ন জনের পিটুনি খাওয়ার পর শর্টগানধারী এক ব্যক্তি ও একজন মুরুব্বি গোছের মানুষের হস্তক্ষেপে আমি ছাড়া পাই।
তখন আমার মাথাসহ সারা শরীর দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। সে আরও বলে, কান্ত ওদের উপর্যুপরি কোপ খেয়েও দৌড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল। কিস্তু পারেনি। এসময় ধীরে ধীরে লোকজন বাড়তে থাকে। আমাকে চারজন পুলিশ ধরে পিক আপে তোলে।
আমি তখন পুলিশকে আঙ্কেল বলে ডাক দেই। আকুতি করে বলি, আঙ্কেল একটু হেল্প করেন। আমি বাঁচব না মারা যাব বুঝতে পারছি না। শুধু আমার আব্বার মোবাইলে একটু ফোন করেন। তখন ওই পুলিশ বলে ওঠে, ‘কুত্তার বাচ্চা এত কথা বলিস কেন।
৬ জন যেভাবে গেছে, তোকেও কিন্তু সেভাবে পাঠাবো। বাঁচার একটাই পথ আছে। যেভাবে বলবো সেভাবেই বলবি। তোরা ঘুরতে যাসনি। গিয়েছিলি ডাকাতি করতে।
’ আমি তখন মেনে নেই। এরপর অচেতন হয়ে পড়ি। এরপর ভোরে আমাকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে ওসি’র রুমে দরজা বন্ধ করে ওসি এবং কয়েকন পুলিশ (ওসি একজনকে স্যার বলছিল) মিলে আমাকে নানা কথা শিখিয়ে দেয়। একজন পুলিশ বলে, যখন সাংবাদিকরা আসবে তখন আমরা যা শিখিয়ে দিলাম তাই বলবি।
না হলে খবর আছে। তখন আমি সবাইকে একই কথা বলি। সাংবাদিকদের বলি আমরা গাঁজা, ফেন্সিডিল খেতে এসেছিলাম। আমাদের মধ্যে ১ জন ৫ হাজার টাকা নিয়েছে বলেও স্বীকার করি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।