আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঝাউবনে বৃষ্টি

...আমায় ডেকোনা...ফেরানো যাবেনা!!! প্রথমদিককার বিলাসিতার অথবা আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে নেয়া এবং ক্রমেই প্রাতঃরাশের চেয়েও গুরুত্তপূরণ হয়ে ওঠা সিগারেট-টা হাতে নিয়ে, লাইটার হাতে পাবার অপেক্ষার অবসরে, তুহিন ঠাওর করার চেষ্টা করছিল- বৃষ্টির আজ এত অভিমান কিসের? সিগেরেটের মতই এইতো সেদিন ও বৃষ্টির প্রতিও তার শুধুমাত্র কিছুটা ভালোলাগা কাজ করতো, যা ক্রমেই গুরুত্তপুরন হয়ে উঠছে তুহিনের অজান্তেই। সিগারেটের দামটা মিটিয়ে এসব ভাবতে ভাবতেই, রাস্তার এখানে-ওখানে জমে থাকা কাঁদা-পানি এড়িয়ে হাটতে লাগলো। বাঁশবাড়িয়া বাজার থেকে মাইল দুয়েক পরেই সৈকত। কিছুটা দ্রুত পায়ে হাটছে আর শুনছে-সকাল থেকে চেস্টা করেও বৃষ্টিতে পরিণত হতে না পেরে অভিমানী মেঘের গরজন; অথবা কিছুক্ষন পরেই পৃথিবীতে ফিরে যাবে এটা ভেবে আহ্লাদে আটখানা মেঘের উল্লাস। আচ্ছা, এটা কি মেঘের গরজন? নাকি উল্লাসধবনি? মাত্র বার বছর বয়সেই বাবা নাকি মা?-এই প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া এবং শেষ পর্যন্ত মায়ের আদর বঞ্চিত হওয়া তুহিনের মন, সবকিছুরই উল্ট-দৈত্ব অরথ দাড় করায় তার সামনে।

মেঘের বিরক্তি অথবা অভিমানের প্রকটতা এবং প্রচ্ছন্নতা মাপতে-মাপতে সে পৌছে যায় ঝাউবনে। ঝাউগুলো যেন তার অপেক্ষাতেই ছিল- দেখেই কুরনিশ করল। আর মিনিট পাচেঁক পরেই, তুহিন যখন- সমুদ্রের ঢেউ যেখানে শেষ হয় ঠিক সেখানটায় গিয়ে বসবে,আর নামবে ঝুম বৃষ্টি, প্রথম সারির এক বৃদ্ধ ঝাউ গাছের মনে পড়ে যাবে- ঠিক পাঁচ বছর আগের এমনি এক বিকেলের কথা। সেদিন তুহিন নামের এই ছেলেটি ঠিক এই জায়গাটিতে বসেই ভাবছিল আর এক বছর আগের এক বৃষ্টিঝড়া রাতের কথা। সে রাতেও প্রচন্ড বৃষ্টি ছিল-মূলত বৃষ্টির জন্যই ছিল সব আয়োজন।

ওরা যখন নিথর দেহটাকে কবরে শুইয়ে দেয়ার আয়োজন করছিল, আজ বিকেলের মত সেই রাতেও বৃষ্টির জলের কল্যানে সবার অলক্ষেই থেকে গেছে তুহিনের কান্না। আজ বিকেলে, সৈকতে বসে, তুহিনের আরো মনে পড়ল- সেই রাতের কথা, যে রাতে সে ভাবছিল বছর কয়েক আগের বৃষ্টিস্নাত এক সন্ধ্যার কথা। সেই সন্ধ্যায়, সেই বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায়, বিশ্ব্ববিদ্যালয় থেকে রিকশা করে যখন ফিরছিল, হঠাৎ করেই আবিস্কার করে তার বাসার নিচতলার মেয়েটা খুব একটা সাদামাটা নয়। মুহুরতের জন্য তার মনে হল- সেই মেয়েরও আছে ‘কবেকার অন্ধকার’ মাখা চুল, চোখে আছে দু’দন্ড শান্তি দেবার মত গভীরতা, ’আজন্ম তৃঞ্চারত চঞ্চুর’ তৃঞ্চা মেটাবার মতন চঞ্চু। চলন্ত রিকশার বেগ যখন আলোর বেগের কাছে হেরে যায়-আর মিশে যায় দু’জোড়া চোখ-নিজের অজান্তেই তুহিন বলে উঠে “থামো”।

তাৎক্ষনিক প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে এবং তথাকথিত ভদ্রতাকে জলাঞ্জলী দিয়ে মেয়েটি উঠে পড়ে রিকশায়। এরপর অনেক বৃষ্টি হয়েছে, রোদ উঠবে, আমের মুকুল ঝড়েছে, আবার বৃষ্টি, আবার রোদ, আবার ঝড়। বৃষ্টির মাঝেই তুহিন আবিস্কার করেছিল নিজেকে,নিজের দিত্বতা, অস্থিরতা, ব্যকুলতা, আদিমতম অনুভুতির স্বাদ, হারানোর ভয় এবং অবশেষে ভয়টা সত্য হওয়ার কষ্ট। রিকশা থেকে নামার সময় বিদায়ের কয়েক মুহুরত আগে তুহিন জানতে চেয়েছিল মেয়েটির নাম। ঠোটের কোণে মিলিয়ে যাওয়া হাসির সাথে মেয়েটি বলেছিল-“বৃষ্টি”।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.