কি বলব বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিসিএস এখনও সমাজের সবচেয়ে সম্মানজনক চাকরি। দু-একটি ক্ষেত্র ছাড়া চাকরি নিরাপত্তা এবং সামাজিক মর্যাদা নির্ধারণে বিসিএসের বিকল্প বাংলাদেশে নেই। বেসরকারির বিশাল বাজার বাঙালি যুব মানসে এখনও আস্থা সৃষ্টি করতে পারেনি। এ কারণে চাকরিপ্রার্থীরা এখনও বিসিএসকেই চাকরি তালিকার শীর্ষে রাখেন। দেশের রাজনৈতিক সরকার জনগণের স্বার্থে যেসব সি্দ্ধান্ত গ্রহণ করে সেটা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারি কর্মচারীদের ওপর বর্তায় এবং সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত এই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দেন বিসিএস কর্মকর্তারা।
সুতরাং এ চাকরির মাধ্যমে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে যেভাবে সরাসরি সেবা দেয়া যায়, অন্য কোনো চাকরির মাধ্যমে তা অসম্ভব।
নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ: বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন বা Bangladesh Public Service Commission (BPSC)
বিসিএস : জেনারেল ও প্রফেশনাল ক্যাডার
বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন বা Bangladesh Public Service Commission (BPSC)’। সংবিধানের ১৩৩ থেকে ১৪১ নং অনুচ্ছেদে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কাজ এবং কাজের পরিধি বর্ণিত আছে। এই কমিশনের মাধ্যমে পরিচালিত নিয়োগ পরীক্ষাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিসিএস পরীক্ষা। সরকারের ২৯টি ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তা নিয়োগ হয়ে থাকে প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে।
বিসিএস ক্যাডার নিয়োগ প্রক্রিয়া ও কাজের ধরন অনুযায়ী দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ১. জেনারেল ক্যাডার ২. প্রফেশনাল ক্যাডার।
জেনারেল ক্যাডার
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানকে অগ্রাধিকার না দিয়ে বরং স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সনদকে প্রার্থীর যোগ্যতার মানদণ্ড ধরা হয় সাধারণ ক্যাডারের পদগুলোর জন্য। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সাধারণ জ্ঞান যাচাইপূর্বক একজন প্রার্থীকে এ ক্যাডারের জন্য নির্বাচিত করা হয়। সাধারণ ক্যাডারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র, কর, নিরীক্ষা, হিসাব ইত্যাদি।
শারীরিক যোগ্যতা সব ক্যাডারে সমান। বর্তমানে সব ক্যাডারের জন্য শারীরিক উচ্চতা নির্দিষ্ট যেমন—পুলিশের জন্য ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি পুরুষ এবং ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি মহিলা। রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার প্রতিটি পর্যায়ে সাধারণ ক্যাডারের কর্মকর্তারা নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এ কারণে সামাজিক দিক থেকে এদেশে প্রফেশনাল ক্যাডারের চেয়ে জেনারেল ক্যাডারকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন চাকরিপ্রার্থীরা।
প্রফেশনাল ক্যাডার
মূলত শিক্ষা জীবনে অর্জিত একাডেমিক জ্ঞান কর্মজীবনের কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ-প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রফেশনাল ক্যাডারের মূল পরিচয়।
বিশেষায়িত জ্ঞানের মাধ্যমে রাষ্ট্র তথা সমাজকে উপকৃত করাই এই ক্যাডারগুলোর মূল লক্ষ্য। বিসিএস প্রফেশনাল ক্যাডারের সদস্য হতে হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক (চার বছর মেয়াদি) বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকা আবশ্যক, যা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়। যেমন সরকারি কলেজের কোনো শিক্ষক হতে হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক (চার বছর মেয়াদি অনার্স কোর্স) অথবা স্নাতকসহ মার্স্টাস কোর্স থাকতে হয়। এছাড়া বাংলাদেশে প্রফেশনাল ক্যাডারের অন্তর্ভুক্ত এমন কিছু ক্যাডার আছে যেখানে পূর্ব অর্জিত নির্দিষ্ট ডিগ্রি থাকার প্রয়োজন নেই। যে কোনো বিষয়ে অথবা নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকলেই চলে।
যেমন—বিসিএস (ইকোনমিক) ও বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারে প্রফেশনাল পদগুলোর জন্য একক কোনো বিষয়ে নয় বরং বিভিন্ন বিষয়ের ডিগ্রিধারীদের এসব ক্যাডারে নিয়োগ দেয়া হয়। যারা প্রকৌশল বিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং সরকারি চাকরি করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য বিভিন্ন ক্যাডারে প্রফেশনাল পদ রয়েছে (বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত তথ্য দেয়া আছে)।
বিসিএস প্রস্তুতি
বিসিএস পরীক্ষার বিস্তৃতি যেমন ব্যাপক, তেমনি এর প্রস্তুতি অনেক ব্যাপক কিন্তু সহজ। কেন এই বিস্তৃতি? আসলে কর্তৃপক্ষ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে মানসিক, শারীরিক ও জ্ঞানগত দিক থেকে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষকে নির্বাচন করতে চায়। মানসিক দিক দিয়ে যে কোনো ধরণের পরিস্থিতিতে নিজেকে মানানসই করতে পারা বিসিএস কর্মকর্তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং জ্ঞান জগতের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার বিচরণ করার ক্ষমতা জরুরি।
এর অর্থ এই নয় যে সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে হবে বরং
সব ক্ষেত্রে প্রাথমিক ধারণা থাকা জরুরি। যে কোনো একটি বিসিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে
আনুপাতিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, কমপক্ষে ৫০-৬০ জনের মধ্যে মাত্র একজন পরীক্ষার্থী বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে কর্মে যোগদান করতে পারে।
বিসিএসে চান্স পাওয়া সহজ কীভাবে?
একটি উদাহরণ দিয়ে শুরু করি। একটি সমস্যা সমাধানের জন্য গ্রামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এলেন। গ্রামের লোকজন আমার বন্ধুকে (তখন একাদশ শ্রেণীর ছাত্র) বললেন,
‘তুমি টঘঙ-র সঙ্গে কথা বলবে।
যেহেতু তুমি শিক্ষিত। ’ সারাদিন টঘঙ-র সঙ্গে থেকে সন্ধ্যাবেলায় টঘঙ-কে প্রশ্ন করল, স্যার আমি কীভাবে টঘঙ হতে পারব?’ তিনি বললেন, ‘তুমি পারবে যদি এখন থেকেই মনে রাখ যে, তুমি ভবিষ্যতে বিসিএস পরীক্ষা দেবে। তারপর যা পাবে তা মনে করবে তোমার পড়ার বিষয়। ’ সত্যি সত্যিই সেদিন থেকে সে মনে মনে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করল এবং বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে বিসিএস ক্যাডারে কর্মরত আছেন। এতে বোঝা গেল, বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতিই প্রথম দরকার।
মানসিক প্রস্তুতি থাকলেই সহজে চান্স পাওয়া যাবে।
কখন প্রস্তুতি নেবেন
এ ব্যাপারে বিভিন্নজন বিভিন্ন মত প্রকাশ করলেও আমার দৃষ্টিতে এইচএসসি পাস করার পরপরই মানসিকভাবে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা দরকার। এতে অনার্স এবং মাস্টার্স পড়ার পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি এগোতে থাকবে। বিসিএসের মানসিক প্রস্তুতি থাকলে মনে করতে হবে, আপনার প্রতিটি ক্লাসে অবস্থান, শিক্ষকের সঙ্গে সাক্ষাত্, নিয়মিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ সবকিছুই বিসিএসের জন্য জরুরি। এতে বরং প্রতিটি কাজের গুরুত্ব বেড়ে যাবে।
ফলে বিসিএস উত্তীর্ণ হওয়া সহজ হবে।
কী কী পড়তে হবে
প্রথমে সার্কুলারটি একাধিকবার পড়ুন। বিসিএস ক্যাডার, পরীক্ষার বিষয় ও প্রতিটি বিষয়ের নম্বর বণ্টন সম্পর্কে ধারণা অর্জন করুন। আপনার প্রাত্যহিক জীবনে কাজের অবসরে প্রতিটি বিষয়েরই প্রস্তুতি নিতে থাকুন। খুব বেশি সিরিয়াস হওয়া দরকার নেই।
তবে কখনও ভোলা যাবে না যে, আপনি ভবিষ্যতে বিসিএস ক্যাডার হতে চান।
দৈনন্দিন কী কী বিষয় চিন্তায় থাকা উচিত
পত্র-পত্রিকা যতটুকু পড়বেন মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। তথ্য আত্মস্থ করবেন এবং তা অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। রেডিও-টিভির নিউজ শুনবেন, বুঝতে চেষ্টা করবেন এবং শেয়ার করবেন। জাতীয় ও আন্তজার্তিক চলমান ঘটনাবলি বোঝার চেষ্টা করবেন।
বিভিন্ন রেডিও-টিভির চ্যানেলের ইংরেজি নিউজ বোঝার চেষ্টা করবেন, আপনার ইংরেজি বোঝার ক্ষমতা বেড়ে যাবে। ভ্রমণ যখন করবেন, প্রতিটি ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শন মনে রাখার চেষ্টা করবেন।
স্কুল-কলেজের ছোট ভাইবোন অথবা অন্যদের সঙ্গে তাদের পাঠ্যবইয়ের যে কোনো ছোট্ট একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন। দেখবেন তারা খুব আনন্দ পাবে এবং আপনার মূল্যবান বিসিএসের প্রস্তুতি হয়ে যাবে। নিজ গ্রামের বয়স্কদের সম্মান করুন এবং তাদের কাছ থেকে এলাকার গল্প শুনুন, এটা বিসিএসের প্রস্তুতি হবে।
আমার দৃষ্টিতে আপনার ছোট এবং বড় যিনি আপনার কাছে কিছু জানতে চান তিনিই আপনার বিসিএসের শিক্ষক বা অভিভাবক। তার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করুন। না পারলে সময় নিন, ওটা আপনার বিসিএসের প্রস্তুতি হবে। রাস্তার সাইনবোর্ড, রেডিও-টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনও আপনার বিসিএসের তথ্য হতে পারে, যদি আপনি সচেতন হন। মোট কথা, ‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র’ এ ধারণা মনে স্থায়ী করুন।
একজন পরোক্ষ শিক্ষক
বিসিএস পরীক্ষার্থীর জন্য একজন পরোক্ষ শিক্ষক হতে পারে তারই একজন ছাত্র (ছোট ভাইবোন অথবা টিউশনির ছাত্র)। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো, হাই স্কুলের একজন ছাত্রকে পড়ানোর আপনি দায়িত্ব নেন। ৬ষ্ঠ/৭ম শ্রেণী হলে ভালো। আপনার স্নাতক/স্নাতকোত্তর জীবনের ৪-৫ বছরে তাকে যত্ন করে পড়াবেন, তার এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে আপনার বিসিএসের ভালো প্রস্তুতি হবে।
সার্বক্ষণিক উপকরণ
কিছু বই শুরু থেকে আপনার সঙ্গী হওয়া উচিত অথবা আপনার সংগ্রহে থাকা উচিত যেমন—১. বাংলাদেশের সংবিধান ২. ম্যাপের ওপর কিছু বই ৩. নিজের সংগ্রহে বাংলাদেশ ও আন্তজার্তিক ম্যাপ ৪. ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর একসেট বই ৫. বাংলা একাডেমীর বাংলা ও ইংরেজি অভিধান, একটি বাংলা টু বাংলা অভিধান ৬. ঙীভড়ত্ফ অফাধহপবফ খবধত্হবত্থং উরপঃরড়হধত্ু. এছাড়া প্রতি মাসে প্রকাশিত যে কোনো চাকরির তথ্য বিষয়ক একটি ম্যাগাজিন, কারেন্ট নিউজ, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড এবং সাধারণ জ্ঞানের বই যেমন-ক্যারিয়ার এইড বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ।
কীভাবে আত্মস্থ করবেন
ইংরেজি ও বাংলা সংবাদ পড়ুন ও শুনুন। প্রতিটি নিউজ আইটেম বোঝার চেষ্টা করুন। দেশের নাম, রাজধানী, রাষ্ট্র ব্যবস্থা, মুদ্রার নাম ইত্যাদি বিষয় আত্মস্থ করার জন্য আজকের নিউজে উল্লিখিত দেশটিকেই বেছে নিন। খেলা দেখছেন, দেশটিকে বোঝার চেষ্টা করুন। একজন কূটনীতিক যোগদান করল তার দেশটাকে ভালোভাবে চিনে নিন।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরের কোনো স্থান হলে একইভাবে চেনার চেষ্টা করুন। বিষয়ভিত্তিক আলোচনা পরে আসবে।
বিষয়গুলোর পর্যালোচনা
সাধারণ বাংলার অধিকাংশ পড়াশোনা হাই স্কুল বা মাধ্যমিক পর্যায়ের। শুধু রচনাটি অনেক বড় মানের। এখানে কবি-সাহিত্যিক ও তাদের রচনা এবং ব্যাকরণগত যেসব প্রশ্ন আসে তার শতকরা ৭০-৮০ ভাগ মাধ্যমিক পর্যায়ের।
সুতরাং আপনার ছাত্রই আপনাকে এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করবে। অনুরূপভাবে ইংরেজি বিষয়ে কল্পনা করলে প্রস্তুতির একই চিত্র বের হয়ে আসবে। গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা সম্পূর্ণ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রস্তুতি এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় যেসব গাণিতিক যুক্তি থাকে সেগুলো চর্চা করলেই এ বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের জন্য পত্র-পত্রিকার খবর, ভৌগোলিক জ্ঞান এবং চলমান ঘটনাবলি কৌশলের মাধ্যমে আত্মস্থ করার চেষ্টা করুন। মাধ্যমিক পর্যায়ের ভূগোলের পাশাপাশি সমাজবিজ্ঞান বিষয়কে মনোযোগ সহকারে পড়ান বা পড়ুন।
আপনার প্রস্তুতি যথেষ্ট। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য এখন থেকে নিয়মিত পত্রিকায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাতা পড়তে অভ্যস্ত হোন, বিজ্ঞাপনগুলো মনোযোগ সহকারে শুনুন, আপনার প্রস্তুতি হয়ে যাবে। তাহলে বিসিএস আর কঠিন থাকল না।
আপনার পক্ষে বিসিএসে চান্স পাওয়া সম্ভব?
সংক্ষেপে উত্তর হ্যাঁ। আপনি যদি এইচএসসির পর এভাবে শুরু করেন তাহলে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর যে বিসিএস পাবেন সেটাতেই অংশগ্রহণ করুন, আপনার চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ।
আর আপনি যদি এখন অনার্সে পড়েন—১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ যে বর্ষেই হোক না কেন আজই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন। আপনার পক্ষে সব ম্যানেজ করা সম্ভব। সর্বশেষ বক্তব্য হলো, এগুলো খুব সুন্দর শুরু, শেষ নয়।
কেন আপনার দ্বারা সম্ভব?
বিসিএস পড়াশোনা দীর্ঘমেয়াদি, স্বল্পমেয়াদি নয়। হঠাত্ কয়েকদিন বা কয়েক মাসে বিসিএসের ব্যাপক পড়াশোনা সম্ভব নয়।
সম্ভব কেবল ধৈর্য নিয়ে দীর্ঘদিন মানসিক দৃঢ়তার সঙ্গে অব্যাহত চর্চার মাধ্যমে। কোনো চাপ অনুভব করবেন না। বিসিএস পরীক্ষার আগে আপনি বুঝতে পারবেন, আপনি প্রস্তুতিতে এগিয়ে আছেন। মানসিক শক্তি আপনাকে সাফল্যের চাবি দিয়ে দেবে ইনশাআল্লাহ।
কী কী পরীক্ষা দিতে হয়?
বিসিএস পরীক্ষা তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথমে প্রিলিমিনারি, দ্বিতীয় লিখিত এবং ভাইভা। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া মানে আপনি লিখিত পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। লিখিত উত্তীর্ণ হলেই মৌখিক পরীক্ষা দিতে পারবেন। চূড়ান্ত মেধা স্কোর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার আলোকে তৈরি হয়। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার নম্বর পরে তেমন ব্যবহার নেই।
কত নম্বর পেলে প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ হবেন তার সঠিক হিসাব নেই। উপর থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যককে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়। এতে সর্বনিম্ন ৪৬-এ উত্তীর্ণ হওয়ার যেমন রেকর্ড আছে, তেমনি সর্বনিম্ন ৬৮-র রেকর্ডও আছে।
আপনিও চান্স পাবেন
একটি পরিসংখ্যান দিলাম। ধরুন একটি বিসিএস পরীক্ষায় ১,২০,০০০ আবেদনপত্র জমা পড়ল।
বাস্তবে পরীক্ষার্থী কত। সবোর্চ্চ ১,০০,০০০। বাকি ২০,০০০ ডাবল/ট্রিপল আবেদনপত্র জমা দেয়ার ফল। এরপর আসুন ১,০০,০০০ এর মধ্যে বিসিএস পরীক্ষা দেবে এই মানসিকতা নিয়ে আবেদনপত্র জমা দেন কতজন। সর্বোচ্চ ৫০,০০০।
আর প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হয় গড়ে ২৫-৩০ হাজার। অর্থাত্ পরীক্ষার্থীর অর্ধেকই প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হয়। দেখা যায় ২৫,০০০ প্রার্থীর মধ্যে চূড়ান্ত পরীক্ষা দিচ্ছেন মাত্র ১৬ থেকে ১৮ হাজার। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ১২-১৩ হাজার। অর্থাত্ যারা মনোযোগ সহকারে পরীক্ষা দেয় তারাই উত্তীর্ণ হয়।
এরপর মৌখিক পরীক্ষার বিষয়। এখানে টিকে প্রতি চারজনের একজন। সুতরাং ইচ্ছা নিয়ে বিসিএস দিলে ভাইভা পর্যন্ত যাওয়া সহজ। আর একটু খাটুন, আপনি অবশ্যই বিসিএসে চান্স পাবেন।
সবশেষে বলব, বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য দরকার সঠিক নির্বাচন এবং সেই অনুপাতে প্রস্তুতি সময়ের ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।
আপনার প্রাথমিক প্রস্তুতি যথাযথ হলেই উন্নততর জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়া খুবই সহজ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।