একুয়া রেজিয়া বাপ্পিকে দেখলেই সবার আগে মানুষজন ওর ঝাঁকড়া চুলের দিকে তাকিয়ে থাকতো। ওর চুলগুলো এতোটাই বড় ও ঝাঁকড়া যে বাবা,মা ও দুই শাবকসহ যে কোন পাখিদের ছোট পরিবার ও সুখী পরিবার বাসা বেঁধে আরামসে বসবাস করতে পারবে। এমনকি কারণে কিংবা অকারণে কাক কিংবা অন্যান্য পাখিরা কেন জানি বাপ্পির মাথাতেই টয়লেট করে দিতে ভাল বাসতো। তাই পাখিদের এহেন ভালোবাসাকে টয়লেট নাম না দিয়ে আমরা বলতাম- বাপ্পি কাকটা তোকে ভালোবাসা জানিয়েছে। এতকিছুর পরেও বাপ্পি কখনো নিজের ঝাঁকড়া চুল কাটার ব্যাপারে উৎসাহ অনুভব করেনি।
কিছুদিন পর পর কাক,শালিকের ভালুবাসা নিয়ে বাপ্পির দিন ভালই কেটে যাচ্ছিলো কিন্তু কাহিনী হল যখন থেকে মোনা আমাদের ব্যাচ জয়েন করলো। যেই সব মেয়ে প্রতিদিন মেক-আপ বক্সের থেকে গোটাকয়েক গয়ড়ানি দিয়ে তারপর ক্লাশ করতে আসে, তাদের কে দেখলেই আমার মাঝে ব্যাপক বিনোদন কাজ করে। আস্ত একেকটা অদ্ভুত আইটেম মনে হয়। মোনাও তেমনি একটা আইটেম। বাপ্পির পড়ালেখায় খুবই ভালো, তাই ক্লাশে সুনামও বেশি।
মোনার নজরে তাই পড়তে বেশি সময় লাগলো না বাপ্পির। আর মোনা সবার মাঝেও যেভাবে বাপ্পির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতো তাতে ক্লাশের কারোই বোঝা বাকি ছিল না যে খুব জলদিই ফিল্মি কোন কাহিনী ঘটতে যাচ্ছে।
কিছুদিন পরে শুনলাম যে মোনা নাকি রনিকে বলেছে বাপ্পির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। পরিচয়ের সময় বাপ্পি বেশি ড্যাম কেয়ার ভাব দেখাতে গিয়ে কি জানি গোলমাল লাগিয়ে ফেললো। মোনা কান্নাকাটি করে একাকার।
সেই রাতে রনি, ফোনে বাপ্পি ও মোনার কনফারেন্স করিয়ে দিল। এবং তাদের মাঝে ব্যাপক ব্যাপক গল্প শুরু হল। আমি সবই দেখি কিছু বলিনা। মাঝে মাঝে রনি এসে আমাকে আর তাজরিনকে সব কাহিনী বলে যায়। এরপর শুনলাম বাপ্পি ও মোনা নিয়মিত রাইফেলস স্কয়ারে, আর বসুন্ধরা সিটিতে ঘুরে বেড়ায়।
বুঝলাম সিনেমা পুরোদমে চালু হয়ে গেছে। মোনা আর বাপ্পিকে সারাক্ষণ একসাথে থাকতে দেখা যায়। ক্লাশের অন্যান্য ছেলেরা বাপ্পির ভাগ্য দেখে জ্বলে পুড়ে কাইমাই হয়ে আছে। মাসখানেক পরে একদিন দেখা গেলো বাপ্পির বিখ্যাত ঝাঁকড়া চুলগুলো আর নেই। পুরো ক্লাস তব্দা খেয়ে গেলো।
রনির মাধ্যমে জানা গেলো, মোনা শর্ত জুড়ে দিয়েছে এমন চুল রাখলে বাপ্পিকে আর তার পাশে হাটতে দিবেনা।
অতএব বাছাধন তার সখের চুলগুলো জলাঞ্জলি দিয়ে দিয়েছে। এরপর একেকদিন শুনি একেক কাহিনী, যেমন- মোনার সাথে বাপ্পি এখন প্রতিদিন শপিং করতে যায়, মোনাকে বাসায় দিয়ে আসা আর বাসা থেকে নিয়ে আসা বাপ্পি ডেইলি রুটিন। ধানমন্ডির সব শপিং মল, বুটিক আর ফাস্ট ফুডের দোকানের নাম বাপ্পির মুখস্ত হয়ে গেলো। আমরা সবাই বাপ্পির এই বিরাট পরিবর্তন দেখে পুরাই টাস্কিত হয়ে গেলাম।
নববর্ষের দিন সবাই বাপ্পি আর মোনার জন্যে অপেক্ষা করছে কিন্তু তাদের খবর নাই। বাপ্পিকে ফোন দিলাম ও বলে- দোস্ত মোনার তো রেডি হওয়া শেষ হয় নাই। আমি মোনার বাসার সামনে। আমি বললাম- তুই না বলেছিলি মোনা সকাল ৭টা থেকে রেডি হচ্ছে। এখন তো বেলা এগারটা।
বাপ্পি একটু কাঁচুমাঁচু করে বলল-আসলে ও এখনো রেডি হচ্ছেরে। আমি গত ২ ঘন্টা ধরে ওর বাসার সামনে অপেক্ষা করছি। আমি আর আমার মুখ খারাপ না করে ফোন রেখে দিলাম। বাপ্পি আর মোনার প্রেম কাহিনী আরও কতদিন চলত তা কেউ জানেনা তবে সব বিগড়ে গেলো যখন আমাদের পরীক্ষার রেসাল্ট দিল। গত কয়েক মাসে বাপ্পির পড়ালেখায় চরম অবনতি হয়েছে।
ওর একেকটা পরীক্ষার রেসাল্ট হয়েছে ভয়াবহ। বাসা থেকে প্রায় বের করে দেয় এমন অবস্থা। এরপরের কাহিনী হল বাসার ভয়াবহ চাপে ও টিচারদের শাসনে বাপ্পি তার সাধের সম্পর্কটি ভেঙ্গে ফেলে। মোনা বেশ কিছুক্ষণ চিল্লাপালা করে সবার সামনে বাপ্পিকে যাচ্ছেতাই বকা দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়।
বাপ্পি আজকাল আবারো তার ঝাঁকড়া চুল বড় করা শুরু করেছে আর পড়ালেখায় মন দিয়েছে।
গোপন সূত্রে জানা গেছে মোনার নসুর(NSU) এক ছেলের সাথে সম্পর্ক হয়েছে। ছেলেও ব্যাপক পাঙ্কু ছেলে। মোনা যদি রেডি হতে ৪ঘন্টা সময় নেয় ছেলেও নাকি হেলাফেলা করে ঘন্টা তিনেক সময় তো নিবেই। আজকাল মোনাকে মাঝে মাঝেই সেই পাঙ্কু ছেলের বাইকে করে ঘুরতে দেখা যায়। তারা বেশ সুখেই আছে।
বেচারা বাপ্পির অবস্থা মাঝে মাঝেই মন বসেনা পড়ার টেবিলে টাইপের হয়ে যায়। তখন সে উদাস পাখি হয়ে আমাদের কে বলে- মোনা মেয়েটা আসলে খারাপ ছিলনা রে। খালি একটু বেশি ফাস্ট ফুড খাইত আর সাজগোজে বেশি সময় নিতো এই আর কি। রনি এক গাল হেসে বলে-এই মেয়ে নিয়ে তোর এমনিতেও কোন ফুটুরি (future) নাই দোস্ত। মেয়ের নামডা ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলে দেখ কি হয়- মো+না মানে হইল মাইয়ার নামেই তো না আছে এর সাথে তোর হ্যাঁ হবার কিছুই নাই।
বাপ্পি বড় বড় দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে। যা দেখে আমার ভয়ঙ্কর মেজাজ খারাপ হয়। মনে নয় এই ন্যাকাটাকে ধরে ধানমন্ডি লেকের পানিতে চুবিয়ে মেরে ফেলি। রনিকে এই কথা বলতেই ও মুচকি হেসে বলে- মাথা গরম করিস না রে একু। এই চিজ রে তো লেকের পানিতে চুবিয়েও লাভ হবে না।
জানিস না প্রেমে মরা জলে ডুবে না। !
লেখাটি সম্পুর্ন কাল্পনিক। কেউ যদি এই লেখার সাথে তাদের ব্যক্তিগত জীবনের কোন মিল খুঁজে পান তাতে একুয়া বাদে বাকি সক্কলেই দায়ী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।