এখানে বিনামূল্যে বিশ্ব-বিখ্যাত মাইন্ড বৈজ্ঞানিক দ্বারা মাইন্ড রিলেটেড এনি প্রবলেম অতি যত্ন সহকারে সলভ করা হয় । নারায়ণগঞ্জের পরিবহন সেক্টর শামীম ওসমানের হাতে জিম্মি : কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ কবরীর, দুর্গন্ধযুক্ত কারও কথার জবাব দিতে চাই না-শামীম
Added on - June 22, 2011, by admin
নারায়ণগঞ্জে পরিবহন সেক্টর জিম্মি হয়ে পড়েছে সরকারি দলের প্রভাবশালী একটি পরিবারের কাছে। এক সময়ের আলোচিত গডফাদার শামীম ওসমান ও তার ঘনিষ্ঠজনদের বড় অংকের মাসোহারা না দিয়ে নারায়ণগঞ্জে পরিবহন ব্যবসা চালানো যায় না। বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির মালিক সমিতির নামে যে চাঁদা উঠানো হয় তার বড় অংশই দিতে হয় শামীম ওসমান ও তার শ্যালক নীপুকে। মাঠে নীপু সক্রিয় থাকলেও শামীম ওসমানের কাছে টাকা পৌঁছে যায়।
সরকারি দলের নারায়ণগঞ্জের এমপি সারাহ বেগম কবরীর মতে, চাঁদাবাজি থেকে মাসে শামীম ওসমান ও তার সহযোগীদের আয় কোটি টাকা। কবরী বলেন, পরিবহন সেক্টর থেকে কোটি টাকা চাঁদা নেন শামীম ওসমান, নাসিম ওসমান, পরিহন সন্ত্রাসী ইব্রাহিম চেঙ্গিস, মোক্তার হোসেন, তার শ্যালক এহসানুল হক নীপুসহ শামীম সিন্ডিকেট। মূলত এদের কারণেই নারায়ণগঞ্জের পরিবহন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
দলে কোনো পদ-পদবী না থাকার কারণে বর্তমানে শামীম ওসমান মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, আমি এ এলাকার এমপি অথচ আমিও তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আক্রান্ত।
তবে বাস বিক্রি করে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়া বেশ কয়েকজন পরিবহন মালিক সুনির্দিষ্ট করে বলেছেন, তারা শামীম ওসমানকে ২৫ লাখ ও তার শ্যালক এহসানুল হক নীপুুর কাছে ৫ লাখ টাকা পৌঁছে দিতে পারলেই নিশ্চিন্তে থাকতেন।
শামীম ওসমানের সঙ্গে গতরাতে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি চাঁদাবাজি করার জন্য রাজনীতি করি না। আল্লাহকে খুশি করার জন্য আমি রাজনীতি করি। কবরী সারোয়ারের অভিযোগ বিষয়ে শামীম ওসমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের দুর্গন্ধযুক্ত ব্যক্তির কথার জবাব দিয়ে আমি নিজেকে দুর্গন্ধযুক্ত করতে চাই না। তার কথার জবার দিতে আমার ঘৃণা হয়।
তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে তার কাছে চাঁদাবাজির প্রমাণ থাকলে তিনি প্রমাণ দিন। অযথা আজেবাজে কথা বলার কোনো মানে হয় না।
আমরা তিন পুরুষ ধরে রাজনীতি করি। নেয়ার জন্য নয়, দেয়ার জন্য রাজনীতি করি। এজন্য আজ পর্যন্ত জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হইনি।
আমাদের নিয়ে অনেক প্রোপাগান্ডা হয়েছে, হত্যার চেষ্টা হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু আমরা জনগণকে ছেড়ে যাইনি।
আছি এবং থাকব ইনশাআল্লাহ। আমি রাজনীতিকে আল্লাহকে খুশি করার একটি মাধ্যম হিসেবে দেখি। মানুষকে ভালোবেসে আল্লাহকে খুশি করার রাজনীতি নিয়ে আমি এগিয়ে যাব।
তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে লিখে পত্রিকার পাতা নষ্ট না করে আরও অনেক বিষয় আছে সেগুলোর ব্যাপারে সাংবাদিকদের মনোযোগী হওয়া উচিত। আমরা ভাগ হয়ে এভাবে কথা বললে দেশটা এগুবে না। কেউ যদি চাঁদাবাজি করে তবে কি সে বলবে, আমি চাঁদাবাজি করি। ২০ বছর বয়স থেকে আমি রাজনৈতিক কারণে জেল খেটে অভ্যস্ত।
মালিক সমিতির নামে কোনো পরিবহন থেকে কত চাঁদা আদায় হয় সেই হিসাব পরিবহন ব্যবসায়ীরা দিয়েছেন।
তাদের দেয়া তথ্যমতে বন্ধন, উত্সব, আনন্দ, নসিব, সেতু, বাঁধন, একতা ও আল্লাহ ভরসা নামের ৮টি পরিবহন সংস্থা থেকে প্রতিদিন শুধু মালিক সমিতির চাঁদা তোলা হয় ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
মালিক সমিতির নামে বন্ধন পরিবহনের ৬০টি বাস থেকে প্রতিদিন ৬০০ করে, উত্সব পরিবহনের ৪০টি বাস থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা করে, আনন্দ পরিবহনের ৭০টি বাস থেকে ৬০০ টাকা করে, নসিব পরিবহনের ২৮টি বাস (ফিটনেসবিহীন) থেকে আড়াইশ’ টাকা করে, সেতু পরিবহনের ৩০টি বাস থেকে ৩০০ টাকা করে, বাঁধন পরিবহনের ৪৫টি বাস থেকে ৩০০ টাকা করে, একতা পরিবহনের ৪০টি বাস থেকে ৫০০ টাকা করে এবং আল্লাহ ভরসা পরিবহনের ৩০টি গাড়ি থেকে ২০০ টাকা করে এ চাঁদা তোলা হচ্ছে।
শামীম ওসমান, তার শ্যালক ও ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের তৈরি একটি সিন্ডিকেট এ চাঁদার সিংহভাগ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি এখন নারায়ণগঞ্জে ওপেন সিক্রেট। শনিবার জেলা প্রশাসকের আহ্বানে বাস ভাড়া সংক্রান্ত সমঝোতা সভায় শামীম ওসমানের ন্যক্কারজনকভাবে পরিবহন মালিকদের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় আরও পরিষ্কার হয়ে উঠেছে চাঁদাবাজির বিষয়টি।
শহরবাসী বলছেন, আসলে শামীম ওসমান পরিবহন সেক্টর থেকে যে বিশাল অংকের টাকা নেন তা জায়েজ করতেই এমপি কবরীর ওপর মারমুখী আচরণ করেন।
যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম নামে একটি সংগঠন অযৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে মাঠে নামে। জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের একাংশ বাদে সব রাজনৈতিক দল, শহরের প্রতিনিধিত্বকারী ৬০টি সংগঠন ও এ জেলার আপামর জনগণ যাত্রী ফোরামের এ আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন। আওয়ামী লীগ এমপি সারাহ বেগম কবরীও যাত্রী ফোরামের স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর দেন। শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনসহ আওয়ামী লীগের বিশাল অংশ যৌক্তিক ভাড়া আদায়ের পক্ষে মত দেন।
তারা এ সরকারের আমলে পরিবহন সেক্টরের কিছু সিন্ডিকেটের কারণে জেলাবাসীর বিপক্ষে অবস্থান নেন। তারা মনে করেন, বর্ধিত বাসভাড়া কমানোর এ দাবি, জেলাবাসীর প্রাণের দাবি। যারা এ আন্দোলনের বিরোধিতা করছেন তারা ডাকাতি স্টাইলে পরিচালিত এ পরিবহন ব্যবসার প্রধান সুবিধাভোগী।
সিটি মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াত্ আইভী বলেন, পরিবহন সেক্টর থেকে কোটি টাকা চাঁদা আদায় কি কেউ এমনিতেই ছেড়ে দেয়। কারও কাছ থেকে অনৈতিক অর্থনৈতক সুবিধা নিলে তার পক্ষে পেশিশক্তি ব্যবহার করাই তো অনৈতিকতার নৈতিক অবস্থান।
সেদিন ডিসি অফিসে সে কাজটিই করেছেন শামীম ওসমান। তার সম্পর্কে কিছু বলার নেই। তিনি নিজেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে নতুন নতুন ঘটনার জন্ম দেন। অতীতের ভুল থেকে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেননি এটিই তাকে ডুবাবে। নিজের তৈরি ফাঁদেই পড়তে শুরু করেছেন তিনি।
শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, শামীম ওসমান তার চাঁদাবাজি টিকিয়ে রাখতেই পরিবহন মালিকদের পক্ষ নিয়েছেন। মালিকরা বাসভাড়া কমাতে চাইলেও শামীম ওসমান ও তার সিন্ডিকেটের কারণে পারছেন না। দলে কোনো অবস্থান না থাকলেও শামীম ওসমান ও তার বাহিনী টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জমি দখল, ঝুট সেক্টর দখল ও বালু সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ যখন তাদের হাতে নিষেমষিত হচ্ছে তখনই আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে। শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ রাজনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ রাজনীতিক আবদুর রহমান বলেন, গডফাদার হিসেবে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সঙ্গে শামীম ওসমানের বিরোধ লেগেই থাকে। নারায়ণগঞ্জবাসী একটি পরিবারের কাছে জিম্মি।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়ক এ দেশের মধ্যে সবচেয়ে চালু রুট। এ পথে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রচুর যাত্রী চলাফেরা করেন। স্বাধীনতার পর পেশিশক্তি ও প্রতারণার মাধ্যমে বাস মালিকরা এ পথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছেন।
সে সময় অতিরিক্ত ভাড়া দিতে কেউ অস্বীকার করলে বা বাগবিতণ্ডা করলে তাকে বাস টার্মিনালে ধরে এনে পেটানো হতো।
আশির দশকে বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে তোলারাম কলেজের ছাত্ররা আন্দোলন করলে বাস মালিকরা কয়েকজন ছাত্রনেতাকে কিনে ফেলে। সে সময় ছাত্রনেতা মাঈনুদ্দিন মানিক ও আওলাদ হোসেন অনমনীয় মনোভাব নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে গেলে তারা বাস মালিকদের ভাড়া করা মাস্তানের হাতে নিগৃহীত হন।
আশির দশকের শেষ ভাগ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত কয়েক দফা বর্ধিত ভাড়া প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে পেশিশক্তির বলে। সে সময় এ রুটের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে প্যান্ডেল করে মাস্তান সমাবেশ করে বাস মালিকরা পোলাও বিরিয়ানি দিয়ে আপ্যায়ন করেছেন।
মাস্তানদের কাজ ছিল বর্ধিত ভাড়া নিয়ে গোলমাল বা বেয়াড়াপনা করা যাত্রীকে বাস থেকে টেনে নামিয়ে ধোলাই সাফাই করা। ২০০১ সালের পর কাউন্টারে টিকিট কেটে বাসে চড়ার নিয়ম প্রবর্তনের পর বাস মালিকদের জন্য বর্ধিত ভাড়া বহাল করা আরও সহজ হয়ে যায়। এ সময় প্রতারণামূলকভাবে বাস মালিকরা ১৬ টাকা থেকে ভাড়া ২২ টাকায় উন্নীত করে।
ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কথা বলে এ অসম্ভব ভাড়া বৃদ্ধি করা হলেও বর্ধিত ভাড়া প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর রাতারাতি এ রুটের সব বাসের ইঞ্জিন গ্যাসে রূপান্তর করা হয়। এতে বর্ধিত ভাড়ার লাভের পর শুধু জ্বালানি সাশ্রয় থেকে প্রতিদিন প্রতি গাড়ির আড়াই হাজার টাকা আয় বেড়ে যায়।
এ রুটে বর্ধিত ভাড়ার প্রতিবাদ করে ছাত্রনেতা, রাজনৈতিক নেতা, ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশও পরিবহন শ্রমিক ও বাস মালিকদের মাস্তানের হাতে প্রহৃত হয়েছেন। সাধারণ যাত্রীদের কথা বলা বাহুল্য। বর্তমানে এ রুটে বাসভাড়া যেখানে ২৮ টাকা সেখানে রেলের ভাড়া মাত্র ৬ টাকা। রেল ও বাসের ভাড়ার এত বৈষম্য বাংলাদেশে আর কোনো পথে নেই।
সূত্র : আমার দেশ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।