বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ একটা সিগারেট ধরিয়েছে, সনি এরিকসনটা বেজে উঠল। এন্ড্রোরয়েডের নীলাভ ডিসপ্লেতে নাবিলার নাম । আবির খানিকটা বিস্মিত ।
নাবিলা তো ওকে ফোন করে না। মাঝেমাঝে দেখা হয় পারিবারিক অনুষ্ঠানে, তখন দু-চারটে কথা হয়-এই। নাবিলাকে এক রকম এড়িয়ে চলে আবির। মেয়েটা সামনে এলে আবির লজ্জ্বা পায়।
নাবিলা বলল, হ্যালো, আবির ভাই।
হ্যাঁ। বল।
আপনার সঙ্গে আমার কিছু জরুরি কথা ছিল। নাবিলার গলার টোনটা কেমন সিরিয়াস শোনাল।
বল, শুনি।
ফোনে নয়।
তাহলে?
আপনি কি আজ খুব ব্যস্ত আবির ভাই?
ব্যস্ত ঠিক না।
তাহলে আপনি কি চারটার মধ্যে চারুকলার সামনে আসতে পারবেন?
বাইরের এই মুহূর্তে খটোমটো রোদ। বেরুতে ইচ্ছে করছিল না, তার ওপর আজ সকাল থেকে বড় অস্থির হয়ে আছে আবির। তাছাড়া গাড়িও নেই।
আবির বলল, বরং তুমিই আমাদের বাসায় চলে এসো না নাবিলা। আমি বাসায় আছি।
নাবিলা বলল, আপনার সঙ্গে আমার একান্তে কথা বলা দরকার। বাসায় আন্টি আছেন।
আবির বলল, না, না, বাড়িতে আমি একা।
আজ দাদুর মৃত্যুবাষির্কী। আজ সকালে সবাই মানিকগঞ্জ গেল।
ওহ্। তাহলে আমিই আসছি ।
তারপর থেকেই আবির নার্ভাস ।
সেই সঙ্গে তীব্র এক কৌতূহল আচ্ছন্ন করে রেখেছে ওকে । নাবিলা কেন দেখা করতে চাইছে? কি বলতে চায় ও? অবশ্য নাবিলাকে আমারও কিছু বলার ছিল । আমার চোখের গুরুতর সমস্যা হয়েছে, সে কথাটা নাবিলাকে জানানো দরকার ...আমার সঙ্গে ওর ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে।
প্রকান্ড বাড়িটা খাঁ খাঁ করছিল। দোতলার বারান্দায় বসে ছিল আবির ।
বেশ ছড়ানো বারান্দা। মেঝেতে ঝকঝকে মোজাইক। কয়েকটি বেতের চেয়ার ছটানো ছিটানো। তারই একটিতে বসে ছিল আবির। ওর বসার ভঙ্গিটি কেমন অসুখী।
চশমা পরা সুন্দর ফর্সা মুখটিতে উৎকন্ঠার চিহ্ন স্পষ্ট। দুপুরের রোদ গড়িয়ে ওর পায়ের কাছে এসে পড়েছে। রোদের তাপে সামনের ওই রেলিংটা তেতে ছিল। কিছুক্ষণ আগে ওই রেলিংএর ওপর একটা কাক বসার চেষ্টা করছিল, তাপের চোটে আবার উড়ে গেছে। ওই দৃশ্যটা আবির দেখছিল মন দিয়ে ।
মনের ভিতরে গেঁথে নিতে চাইছিল দৃশ্যটা। আশ্চর্য এখন আমি দৃশ্যগুলি যেভাবে দেখছি সেভাবে আর দেখব না! দূরের ওই ফিরোজা আর সাদা রঙে মেশানো ছড়ানো বিশাল আকাশ। সে আকাশের শুভ্র মেঘখন্ড, সেই মেঘখন্ডের আশেপাশে বিন্দু বিন্দু উড়ন্ত চিল, তার অনেক ... অনেক নীচে এ বাড়ি দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা সার সার পামগাছের পাতায় পাতায় সোনালি রোদের নাচানাচি, তারই এ পাশে সবুজ ঘাসের নির্জন লন, গোলাপ গাছ, দোলনা, পানিশূন্য ফোয়ারা, মার্বেল পাথরের নগ্ন পরীমূর্তি ... আশ্চর্য আমি আর এই দৃশ্যগুলি দেখব না! এখন যেভাবে দেখছি। আমার চোখের আলো ধীরে ধীরে নিভে যাবে ...
আবির দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
সিগারেটে টান দিয়ে চারপাশে তাকায়।
লাল রঙের সিরামিক ইঁটের চমৎকার দোতলা বাড়ি। রাস্তার লোকজন একবার না তাকিয়ে পারে না। এ বাড়ির নকশা করেছিলেন বাবার বন্ধু রহমান আঙ্কেল । রহমান আঙ্কেলরা ধানমন্ডি থাকেন। ধানমন্ডির বাড়ির নকশা করে দিয়েছিলেন বাবা ।
দু’জনেই আর্কিটেক্ট। দু’জনেই খুব ভালো বন্ধু। আজও সে গভীর বন্ধুত্ব অক্ষুন্ন আছে। রহমান আঙ্কেলের মেয়ে নাবিলা ।
সনি এরিকসনটা বাজল।
পাশের ছোট্ট টেবিল থেকে তুলে নিল আবির। এন্ড্রোরয়েডের নীলাভ ডিসপ্লেতে আম্মুর ছবি।
হ্যাঁ। মা, বল ।
সব ঠিকঠাক আছে তো রে?
হ্যাঁ।
খেয়েছিস?
হ্যাঁ। মিথ্যে বলল আবির।
ফ্রিজে খাবার আছে; মান্নানকে বলিস ও গরম করে দেবে।
আচ্ছা বলব।
মান্নান এ বাড়ির দারোয়ান।
নীচের গ্যারেজে থাকে। বুড়ো লোকটা খুব বিশ্বস্ত। ফ্রিজের খাবার সকালে সেই গরম-টরম করে রেখেছিল। মান্নান যেন ফ্রিজের খাবার গরম করে দেয় - এই কথাটা মা মানিকগঞ্জ যাওয়ার আগে অন্তত একশ বার বলেছে। মা এখন বলল, আমরা কাল সকালে রওনা দেব।
ঠিক আছে।
মাকে কি বলব যে আমি আজ সকালে ডাক্তার জায়েদ আলীর কাছে গিয়েছিলাম? তিনি আমাকে একটা দুঃসংবাদ দিয়েছেন? না থাক। মা আগে ফিরে আসুক। তারপর ধীরেসুস্থে বলা যাবে।
আবির দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
অন্যমনস্ক হয়ে একমুখ ধোঁয়া ছাড়ে। ধোঁয়ায় একটা মুখ তৈরি হয়। ওই মুখটা মনে গেঁথে নিতে চায় আবির। ... তখন কলেজে পড়ত আবির। ক্লাসমেট ফুয়াদের সঙ্গে বেশ ভাব হয়ে গিয়েছিল।
আবির কি-বোর্ড বাজাত। ওরা একটা ব্যান্ড ফর্ম করেছিল। ফুয়াদরা থাকত লালমাটিয়ায় । চমৎকার গিটার বাজাত । আর গাড়ির ঝোঁক ছিল ফুয়াদের।
বৃষ্টির দিনে লং ড্রাইভে বেড়িয়ে পড়ত ওরা। সঙ্গে থাকত ফুয়াদের ছোট বোন তাহসিন। ফর্সা। এক মাথা চুল। কম কথা বলা পুতুল-পুতুল চেহারা।
আবিরকে মনোযোগ দিয়ে দেখত তাহসিন । আবির সতর্ক হয়ে উঠেছিল। ও কাকে বিয়ে করবে সেটা ওর পরিবার একরকম ঠিক করে রেখেছিল । ফুয়াদ এখন অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে ফুয়াদ বছর খানেক বুয়েটে পড়েছিল আবিরের সঙ্গে ।
ফেসবুকে মাঝেমাঝে কথা হয় ফুয়াদের সঙ্গে । তাহসিন এখন পড়ছে Applied linguistics নিয়ে । ... আবির রোদেলা বারান্দায় একমুখ ধোঁয়া ছাড়ে। কী আশ্চর্য! ধোঁয়া ঘুরে ঘুরে অবিকল তাহসিন-এর মুখ তৈরি হয়ে যায়। আবার ভেঙেও যায়।
নীচে গাড়ির হর্নের আওয়াজে ভাবনা ছিন্ন হল ।
নাবিলা এল বুঝি।
উফঃ, রাস্তায় যা জ্যাম। এই দুটো রাস্তা পেরুতে দুই ঘন্টা লাগল।
আবির ম্লান হাসল।
ভীষণ নার্ভাস লাগছে ওর । সিরামিক ইঁটের প্রকান্ড বাড়িটা খাঁ খাঁ করছিল। এখন নাবিলা এসে একাই যেন সেই শূন্যতা ভরিয়ে তুলল। কিন্তু, নাবিলা কি বলতে চায়? ভাবতে ভাবতে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পেপসির বোতল বার করে আবির। তারপর ওয়াল কেবিনেট থেকে একটা ঝকঝকে গ্লাস বার করে ঢালে।
নাবিলা মিষ্টি হেসে ‘থ্যাঙ্কস’ বলে সে গ্লাস নেয়।
নাবিলার গায়ের রং শ্যামলা। যদিও মুখের ছাঁচটা বেশ মিষ্টি। থুতনির নীচে ভাঁজ। তাহসিন-এরও থুতনির নীচে ভাঁজ ছিল।
যদিও তাহসিন-এর গায়ের রং ছিল ফর্স। । নাবিলার চোখে ছোট্ট চারকোণা ফ্রেমের চশমা। আজ সাদা রঙের সালোয়ার কামিজ পড়েছে নাবিলা। সাদা ওড়না।
কেমন স্কুল গার্ল স্কুল গার্ল মনে হচ্ছে ওকে । অবশ্য নাবিলা আর্ট কলেজে পড়ছে ।
চল বসি। আবির বলে।
নাবিলা মাথা নাড়ে।
ওরা বারান্দায় এসে বসল।
ততক্ষণে রোদ অনেকটাই সরে গেছে। রোদময় শ্রাবণের দিনটা ধীরে ধীরে হেলে পড়েছে বিকেলের দিকে। রোদ কেমন মরে গেছে। হাওয়া হয়ে উঠেছে এলোমেলো ।
আজ বৃষ্টি হবে নাকি। সেই বৃষ্টিতে যদি নাবিলা আটকে যায়? ওহো, নাবিলা তো গাড়ি নিয়ে এসেছে। ওকে আটকানো মুশকিল। আশ্চর্য, নাবিলা আজই এল ... যখন ...যখন চোখের ডাক্তার ভয়ানক দুঃসংবাদ দিলেন ...
বেতের সোফায় বসেই নাবিলা বলল, আবির ভাই, আপনি তো জানেন আমরা যখন ছোট ছিলাম তখনই আমাদের মা-বাবা আমাদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছে।
আবির মাথা নাড়ে।
কথাটা শুনে খানিকটা লজ্জ্বা পেল। বাবার সঙ্গে রহমান আঙ্কেল-এর গভীর বন্ধুত্বের সুবাদে ওইরকম সিদ্ধান্ত । সবকিছু বুঝে ওঠার পর থেকেই আবির শুনে আসছে যে নাবিলার সঙ্গেই ওর বিয়ে হবে । কৈশরে মনে মনে নাবিলাকেই ভালোবাসত। অন্য মেয়েদের কাছে ঘেঁষত না ।
ওর মা-বাবার এইরকম ইচ্ছার সবচে বড় বলি তাহসিন । অথচ তুমুল বৃষ্টির ভিতর ছুটে চলা ফুয়াদের গাড়ির ভিতরে তাহসিন একবার আবিরের আঙুল স্পর্শ করেছিল। আবির কেঁপে উঠলেও প্রাণপন নিজেকে সংযত রেখেছিল। নাবিলার মুখটি ভেবেছিল।
নাবিলা শ্বাস টানে।
তারপর সরাসরি আবিরের দিকে তাকায়। আবির ভাই মুখ নীচু করে বসে আছে। মনে হয় লজ্জ্বা পেয়েছে। আবির ভাই ভীষণ লাজুক। এ নিয়ে নাবিলার মা খোঁচাও মারে নাবিলাকে।
নাবিলাও যে বালিকা বয়েসে আবিরের কথা ভেবে লাল হত না-তাও না। হত। তবে চারুকলায় লম্বা ঝাঁকড়া চুল আর আয়ত চোখের আশীষকে দেখার মুহূর্তে বুকের ভিতরে কি যে হয়ে গেল। কেবল মানুষেরই বুঝি এরকম হয় । হয়ে যায়।
আশীষ বগুড়ার ছেলে। ঢাকার কল্যাণপুরে মেজ ফুপুর বাড়িতে থেকে চারুকলায় পড়ছে। আশীষ দুর্দান্ত ছবি আঁকে ভালোলাগাটা ঠিক সে জন্য নয়; আশীষ দেশকাল ও সমাজসচেতন, সে জন্যও নয়, আশীষের ঋষিসুলভ শান্ত স্বভাব স্বভাব, সে জন্যও নয় ... আসলে ...আসলে এসব মানবিক আকর্ষনের ব্যাপারটা ঠিকঠাক কখনোই ব্যাখ্যা করা যায় না।
কথাটা নাবিলা শেষ পর্যন্ত বলেই ফেলল। আমার পক্ষে আপনাকে বিয়ে করা সম্ভব না।
আবির চমকে ওঠে। মুখ তুলে তাকায়। তার চশমা পরা ফর্সা মুখে গভীর বিস্ময়। আশ্চর্য আজই নাবিলা কথাটা বলল যখন ... যখন চোখের ডাক্তার দুঃসংবাদ দিলেন...
নাবিলা নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে, আমি একজনকে ভালোবাসি; খুব খুব ভালোবাসি। আমাদের রিলেশন খুব ডিপ ।
ওকে ...ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
ওহ্ । ভূমিকম্প হচ্ছে যেন। পায়ের নীচে মেঝে অল্প অল্প দুলছে না? নাবিলারও কি এমনই মনে হচ্ছে? কিন্তু নাবিলা চিৎকার করে উঠছে না কেন? একি! আমার হাতের তালু এমন ঘেমে যাচ্ছে কেন? চুলের গোড়ায় মাথার তালুতে ছড়িয়ে পড়ছে ঘাম। কই, আজ তো সেরকম গরম পড়েনি।
তাহলে আমি ঘামছি কেন? আশ্চর্য!
নাবিলা বলল, এই কথাটা বলবার জন্যেই আমি একান্তে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম আবির ভাই। আমি এখন যাই।
বলে নাবিলা উড়ে দাঁড়ায়।
আবির বসে থাকে। কে যেন তাকে জোর করে বসিয়ে রাখে।
তার অবশ অবশ বোধ হয়। অথচ নাবিলাকে বিদায় জানাতে ওর দরজা পর্যন্ত যাওয়া উচিত ছিল । হাজার হলেও মেয়েটি ওর স্বপ্নের সঙ্গী। আর বুকের ভিতরে যাই ঘটুক - তুলকালাম কান্ড, ঝড়তুফান, ভূমিকম্প, তার বশে থাকা তো মানুষকে মানায় না। মানুষ অনেক দুস্তর পথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসেছে।
তাছাড়া ভদ্রতা বলেও একটা কথা আছে । কিন্ত আবির বসেই থাকে। বসেই থাকে। তার বসে থাকার ভঙ্গিটা আরও শোকাবহ হয়ে ওঠে।
নাবিলা কখন চলে গেছে ...
তারপর শ্রাবণের বিকেল আরও গভীর হয়ে উঠেছে।
কখন যে রোদ মুছে গেল। বাতাস অস্থির হয়ে উঠল। পাম গাছের পাতারা ভীষণ নড়ল। । ধীরে ধীরে আকাশে ছড়িয়ে পড়ল পুঞ্জ পুঞ্জ কালো মেঘ ।
ক’দিন ধরে সন্ধ্যার দিকে বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। আজও কি সেরকমই হতে যাচ্ছে? তখন ... তখন কী রকম অন্ধকার হয়ে উঠবে শহরটা। অবিরাম বৃষ্টি পড়বে শহরময়। মাঝে মাঝে শোনা যাবে বাজের আওয়াজ।
চোখের আলো নিভে গেলে কেমন লাগবে আমার?
ভাবতে চেষ্টা করে আবির।
চোখ থেকে চশমা খুলে রেখে পাশের টেবিলে রাখে । তারপর চোখ বন্ধ করে উড়ে দাঁড়ায়। অন্ধকার ঘিরে ধরে ওকে। ও বাঁ দিকে ঘুরে যায়। সাবধানে পা ফেলে ফেলে এগোতে থাকে।
দরজা ওদিকেই । তারপর ড্রইংরুম। ড্রইংরুমটা বেশ বড়। ও টক্কর খেতে খেতে এগোতে থাকে। বেশ অসুবিধে হয়।
অসুবিধে হলে চলবে কেন? মানিয়ে নিতে হবে। জীবন এখন এমনই অন্ধকার হয়ে যাবে যে।
আসলে চোখ বুজে হাঁটা হল অনেকটা কানামাছি খেলার মতন। সে খেলাটা ও খেলতে থাকে চোখ বুজে ... খেলতে থাকে একা একা
এই কানামাছি খেলা ...বাহ, বেশ খেলা কিন্তু।
একা একা কানামাছি খেলতে খেলতে আবির বিড়বিড় করে নাবিলাকে বলতে থাকে : নাবিলা আজ সকালে আমি ডাক্তার জায়েদ আলীর চেম্বারে গিয়েছিলাম।
আজ তিনি সব রিপোর্ট পরীক্ষা করে আমাকে ভয়ানক একটা দুঃসংবাদ দিলেন। দেখতে অসুবিধে হচ্ছিল বলে গত এক বছর ধরে আমি ডাক্তার জায়েদ আলীর কাছে নিয়মিত যাচ্ছি। আমার চোখের আলো নিভে আসছে। এখন যেভাবে দেখতে পাচ্ছি সেভাবে বেশি দিন আর আমি ওই আকাশ মেঘ চিল পাম গাছের পতা সবুজ ঘাসের লন গোলাপ গাছ দোলনা ফোয়ারা এসব দেখতে পাব না । যখন আমার চোখের আলো পুরোপুরি নিভে যাবে তখন আমি একা হয়ে যাব।
তখন আমি নিঃসঙ্গ হয়ে যাব। আসলে একজন দৃষ্টিহীন মানুষ আসলে এ পৃথিবীতে ভীষণ একা। তার পাশে কে থাকে বল? না, নাবিলা। তুমিও আমার পাশে থাকবে না। এই ভালো।
এই আমার চোখের আলো নিভে যাওয়া ... আমার চোখের আলো নিভে গেলে আমার পাশে কেউ থাকবে না কেউ না
একা একা কানামাছি খেলতে আবির কখনও ঠোক্কর খায় দেয়াল কিংবা ডাইনিং টেবিলের সঙ্গে ... বাইরে তখন ঘনিয়ে উঠেছে ঘন অন্ধকার। আর সেই ঘন অন্ধকারে একটি শহর অঝোর বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে।
বারান্দার বেতের টেবিলের ওপর আবিরের সনি এরিকসন পড়ে আছে। ওটা বেজে চলেছে, আবির শুনতে পাচ্ছে না ...
ও বৃষ্টিমগ্ন অন্ধকার বাড়িতে একা একা কানামাছি খেলতে থাকে ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।