আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাহবাগ ও গামছা পীর

সৃষ্টি‌শীল গামছা পীরের মাথা অতি গরম। কেন? ভাবছেন তিনি আবার কোন পীর? ধীরে। উনার চেলাচামুন্ডাদের ভাষ্যমতে, দেশে এখন একমাত্র তিনিই (কু) চিন্তা করছেন। যদিও তাঁর দুশমনেরা বলছে, এই লোক কুকথায় পঞ্চ মুখ, ও তাঁর কণ্ঠ ভরা বিষ, কুচিন্তার জন্ম দেন অহর্নিশ। রাবিশ।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী কুখ্যাত সব রাজাকারের ফাঁসির দাবি উড়িয়ে দিতে আর একাত্তরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শাহবাগসহ সারা দেশে তরুণ প্রজন্মের আন্দোলন নস্যাৎ করতে, ওদের নাস্তিক বলা থেকে শুরু করে যত ধরনের নোংরা মিথ্যাচার বাজারে ছাড়া হয়েছে, টকশোতে বিতরণ করা হয়েছে, সবকটার জনক তিনি। ইনি গামছা দিয়ে ন্যাংটি পরেন। কেন পরেন, তা অন্যদিন বিস্তারিব। এই মহান পীরের দরবার শরীফে এইমাত্র তাঁর অতি প্রিয় এক মুরিদ ঢুকেছে। গুপ্তচর সে।

বহু সংবাদ সংগ্রহ করে এনেছে। সেগুলো পীরকে শুনাচ্ছে, ওরা এখনো আমাদের আব্বা হুজুরদের ফাঁসির দাবিতে অটল। তারা নাকি শুভ বুদ্ধির মানুষ। একাত্তরের চেতনা। এদের অনেকে শহীদ পরিবারের সদস্য।

হাল ওরা ছাড়বে না। বুকে ওদের স্বজন হারানোর গভীর ব্যথা, নিরাময়ের অতীত ক্ষত। এই ক্ষত না সারিয়ে বাড়ি ফিরবে না। আর আমরা নাকি পাকিস্তানের প্রেতাত্মা। স্লোগানে স্লোগানে পাকিস্তানে চলে যেতে বলছে।

কান তো আর আকাটা থাকে না, জনাব। হুজুর, ওদের শায়েস্তা করতে আমরা আচ্ছা মতো নাস্তিক বলে প্রচার-প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছি। ম্যাডামও সোচ্চার। কিন্তু আপনি নিজেও তো জানেন, আপনি ছাড়া, এ দেশের নাস্তিক পাওয়া দুষ্কর। একটা মিথ্যাকে শত বার, হাজার বার বলতে থাকলে এক সময় তা সত্য বলেই প্রমাণিত হয়, এই ত্বরিকা মতোই কাজ চালাচ্ছি।

‘তরুণরা, আল্লাহ রসুল মানে না। ওরা নাস্তিক, মুরতাদ। বলছি তো বলছিই। কিন্তু এই অস্ত্র ভোতা হয়ে আসছে। যদিও একেবারে অকেজো হয়ে যায়নি।

এখনো তরুণেরা এই অস্ত্রের মোকাবিলায় নাস্তানাবুদ। যদিও ওরা বলছে, ফাঁসির দাবিতে যখন আন্দোলন তুঙ্গে, লাখো মানুষ একাত্ম, তখনই ওদের নাস্তিক বলে প্রচার চালানোর এই বদকৌশল খুবই হাস্যকর ও অতি নোংরা চাল। নাড়ির খবর। এখন শাহবাগের তরুণদের ‘নাস্তিক’ বললে পাবলিক খুব একটা খায় না। বরং রিঅ্যাক্ট করে।

আপনাকেই ইবলিশের পীর বলে। আর আমাদের বাচ্চা ইবলিশ বলে গালি দেয়। আমাদের মুসলমানি করা হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখতে চায়। আপনিও সাবধানে থাকবেন, বলা তো যায় না আপনার লুঙ্গি ধরে টান মারে যদি! আর ইহাই তো সত্য, আপনার খৎনা করা হয়নি। জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে ইসলামকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে গৃহযুদ্ধ বাঁধানোর হম্মিতম্মির বিষয়ে আপনার প্রকল্পও ফেল খাইছে।

কারণ এদের মানুষের মনে ধর্ম থাকলেও, এরা কট্টর না। অধিকাংশ মানুষই কোমল প্রকৃতির। এরা হিংস্রতা, মারামারি কাটা-কাটি পছন্দ করে না। অতএব আখেরে আমাদের বেইজ্জতি হওয়ার ছাড়া আর গতি নাই। পাহাড়িরাও এমন বেকুব।

এত চেতানোর চেষ্টা করলেন, চেতল না। ওরাও শাহবাগ চত্বরে গিয়ে বাঙালি বাঙালি স্লোগান দেয়, আর খালি ফাঁসি চায়। লোকে কয়, খান সাবের এক থাপ্পরেই নাকি অাপনার আক্কেল দাঁত শাহাদত বরণ করেছে। জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে ধর্মকে খাড়া করানোর চেষ্টা বৃথা হইছে। তরুণরা জাতিরে বিভক্ত করে ফেলছে, আপনার এই থিওরিও আর বিকাচ্ছে না।

লোকজন বলতেছে, বাঙালি-বাংলাদেশি তর্ক আজকের নতুন না। তর পীরের গিয়া ক একটা নতুন কিছু করতে। এই দিকে ঘটছে আরেক কাণ্ড। ইনেড কলেজের একজন ছাত্রী হত্যার দায়ে তিনজনের ফাঁসির রায় বেরিয়ে গেছে। এই ঘটনায় আপনি টু শব্দও করলেন না।

সমানে প্রশ্ন উঠতেছে। আপনে না মানবাধিকার কর্মী? বেশ কয়েক দিন ধরে বলে আসছেন, ‘আমি ফাঁসির বিপক্ষে?’ এখন লোকজন আপনারে নিয়া হাসাহাসি করে। ছড়া কাটে, পানিরে পানি তর মতলব জানি। আমরা যতই বলি, দেশ ও দশের মঙ্গলের জন্য একজনের মাথাই এখন সক্রিয়। আর তিনি হলেন, আমাদের মহান গামছা পীর।

তিনিই কেবল মানবতার কল্যাণে চিন্তা ভাবনা করছেন। পাবলিক বরং ঘাস খাইতে রাজি, তবু এসব কথা বিশ্বাস করবে না। মনীষী আহমদ ছফার দোহাই দিয়ে ওরা বলছে, আপনি নাকি কুচিন্তার হেডমাস্টর। আপনার করোটির ভেতর শিয়ালের মগজ ঢোকানো। ক্রমাগত নোংরা মিথ্যাচার পয়দা করাই আপনার একমাত্র কাজ।

ছফা নাকি আপনাকেই খুনি বলে সন্দেহ করতেন। এই সূত্র ধরে তরুণরা মুখ ভেংচায়। বলে, খুনি খুনি ‍মাসতোতু ভাই। ওরা পুছ করে, আমাদের নাবালেগ ঠাহর কর মিয়া? একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী কুখ্যাত রাজাকারদের বাঁচানোই তোমার পীর, বহুরূপী মানবাধিকার কর্মীটার এখন একমাত্র কাজ? ধাপ্পাবাজির দিন কি আর আছে? হুজুর, ওরা আপনারে মহাধুরন্দর ও মহাশয়তান বলে গালি দেয়। শুনে আমাদের ব্রহ্মতালু গরম হয়ে যায়।

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের আগে আমরা যে, পুলিশ ভাইদের রজনীগন্ধা পুষ্প বিতরণ করি, সারা দেশে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করি, সেই উদাহরণও টানা হচ্ছে। ওরা বলছে, তখন তো পুলিশ কাউরে ফুলের টোকাটিও দেয়নি। তাইলে, সরকার ফ্যাঁসিবাদী আচরণ করছে, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার (গাড়ি, বাড়ি, রেলগাড়ি পোড়ানো) হরণ করে বল প্রয়োগে বাধ্য করছে বলে আপনি যে, থিওরি বিতরণ করেছেন, তাও নাকি ধোপে টিকে না। এটা যে মহামিথ্যাচার পুরান ঢাকার ঘোড়ারাও নাকি জানে। এদেশে দাঙ্গা চলতেছে, গণহত্যা চলতেছে, এই প্রচারণায়ও তো ফেল।

বেয়াক্কেলের মতো প্রথম দিকে আমাদের ভাই-বেরাদরেরা দিনের বেলা হামলা চালিয়েছে। জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে দিয়েছে। হিন্দুদের বাড়িতে আগুন ধরিয়েছে। লুটপাট চালিয়েছে। বেকুবের দল।

এখন যতই বলি, এগুলো সরকার পক্ষের কাজ। লোকজন কানেই তুলছে না। কারণ তারা তো প্রত্যক্ষদর্শী। তারা জানে, এটা আমাদেরই কাজ। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের নেতারা সরকারের কোলে বসে ইয়ে খাচ্ছে বলে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, তাও নাকি ঠিক না।

আপাতত ওদের দাবির সঙ্গে সরকারের দাবি মিলে গেছে। তাই অহেতুক সরকারের সঙ্গে কুস্তি লাগতে যাবে কোন আক্কেলে? হুজুর আপনার পড়া উতার আমরা তো ওদের মেকলামেকলিতে কম ঢালিনি। ফেল। ওরা বলছে, আগে কসাইদের ফাঁসি হোক। জাতি কলঙ্ক মুক্ত হোক।

জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক। পরে সরকারের মুখোমুখি দাঁড়ানো যাবে। পীরসাবের চোখ ঘোরগ্রস্ত। টু শব্দটিও করছেন না। তাঁকে খুব চিন্তাযুক্ত মনে হচ্ছে।

সাপের মতো মাথা দোলাচ্ছেন। হয়তো ভাবছেন, এবার কোন চালটা দেবেন! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.