আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজকন্যের "শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল স্যার কে বলছি"র জবাবে

পানি ও বিদ্যুতের অপচয় রোধে এগিয়ে আসুন! কমেন্ট করতে গিয়ে দেখি অনেক বড় হয়ে গেল, জানিনা সবাই পড়বে কিনা, তাই পোস্ট আকারে দিয়ে দিলাম। ধৃষ্টতায় ক্ষমাপ্রার্থী। ---------------------------------------------------------- রাজকন্যে, আপনার আর ভিকারুন্নেসায় আপনার সতীর্থদের জন্য শুভ কামনা। আসলে, সবাইকে সব কাজে পাওয়াটা খুব মুশকিল, মানুষের সাধ্য অসীম নয়, তারও সীমাবদ্ধতা থাকে। আপনার লেখা দেখেই বুঝতে পারছি, আপনি আশাবাদী মানুষ, আর ভিকিদের পক্ষে যখন দাঁড়িয়েছেন, তখন বুঝতেই পারছি, আপনি ন্যায় আর সত্য পথের মানুষ।

এখন আপনাকে একটা প্রশ্ন করি, গত ১০ বছরে এদেশের শিক্ষাঙ্গনে যতগুলো অনাচার, অন্যায় হয়েছে, তার কতটিতে আপনি সক্রিয়ভাবে প্রতিবাদ করেছেন? কতগুলো অন্যায়ের সময় শুধুমাত্র খবরের কাগজে দেখে আস্তে করে পরের পাতায় চলে গিয়েছেন? আপনি ন্যায়বান মানুষ, তাই জানি, স্বীকার করবেন যে এরকম হয়ে থাকতে পারে। এখন একটু খুলে বলি যে কেন এই কথা জিজ্ঞাসা করলাম। আজ থেকে বছর দশেক আগে, ঢাকার বাইরের এক স্বপ্নের ভার্সিটিতে তখন সবে ভর্তি হয়েছি, তার মধ্যেই বিশাল এক রাজনৈতিক গন্ডগোলে পড়ে প্রায় ৭ মাস ভার্সিটি ছিল বন্ধ, এক কুৎসিত লড়াইয়ের বলি হয়েছিলাম আমরা। ঢাকায় এসে অনেক আন্দোলন করতে হয়েছে আমাদের, ঢাকার কত কত ছাত্র শিক্ষক বিবেকবান মানুষকে যে বলেছি আমাদের আন্দোলনে শরিক হতে, কিন্তু খুব কমই এসেছেন শরীক হতে। প্রথম প্রথম খুব রাগ হত, পরে বুঝেছি, এটা আসলে এক্সপেক্ট করাটাও ঠিক না।

কত মানুষ মুখে বলেছেন যে মানববন্ধন/মিছিল/মৌন-মিছিল/অবস্থান-ধর্মঘটে আসবেন, কিন্তু কেউ আসেননি। এমনকি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জাফর ইকবালকেও যে খুব বেশী পেয়েছি, তা নয়। শেষ পর্যন্ত নিজেদের লড়াই নিজেদেরই করতে হয়েছে, শহীদ মিনারে ৪ দিনের অমরণ অনশন শেষে প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপে ব্যাপারটার সুরাহা হয়। সেই ৪ দিনেও আমাদের শিক্ষক জাফর ইকবালকে আমরা পেয়েছি প্রথম দিনে খুব অল্প সময়ের জন্য (তবে ইয়াসমীন ম্যাডাম সহ অনেককে পেয়েছি সব সময়, সেটা অন্য প্রসঙ্গ)। এর জন্য কি জাফর ইকবালের উপর আমাদের ক্ষোভ আছে? আমার নেই, কারণ আমি জানি, উনি দেবতা নন, উনার ১০টা হাত আর ১০০টা মাথা নেই, এমনকি অনেক বিষয়ে তার সাথে আমার মতের অনেক অমিল, কিন্তু তার উপর রাগ নাই।

রাগ করতাম তখনই, যদি দেখতাম যে ঐ ব্যাটা তার ক্লাস ঠিকমত নেয় না, একাডেমিক কাজে ফাঁকি দেয়, বা ভার্সিটিতে সময় কম দেয়--কারণ এগুলি তার দায়িত্ব। সেটা কোনদিন দেখিনি। আজ আপনি জাফর ইকবালের সমর্থন চাইছেন, জানি উনাকে ভাল ভাবেন দেখেই চাইছেন, এবং আমি জানি আরো অসংখ্য অনেকেই অনেক অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেই তার দিকে চেয়ে থাকেন (এই পোস্টেই দেখেন আছে!) কিন্তু সেটা তো সম্ভব না, উনি মানুষ, দেবতা নন, সীমাবদ্ধতা-দোষ-গুণ সবি তার আছে, সব অন্যায়ের প্রতিবাদে তাকে সাথে পাওয়ার আশাটা বোকামী। তাই আপনাদেরও বলছি, নিজেরাই এগিয়ে যান, জাফর ইকবাল থাকলে ভাল, না থাকলে নাই। আমরাও পেরেছি, আপনারাও পারবেন অবশ্যই।

আপনি হয়ত বলতে পারেন, আপনাদের ব্যাপারটা খুব ইউনিক, তাই তার অংশগ্রহণ কাম্য। আপনাকে শুধু একটা কথাই বলব, এই দেশের প্রত্যেকটা রেপের ভিক্টিমের কষ্টটা একই রকম নীল, নিজের আপনজন যখন তার শরীরের দিকে হাত বাঁড়ায়, তখন সবার মনে ভর করে একই রকমের কালো অন্ধকার। রুমানা ম্যাডামের ঘটনার পর যখন সবাই এমন ভাব করেন যে এই প্রথম কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা এরকম ভয়াবহ ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার--তখন মনে পড়ে যায় আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার কথা, যাকে তার স্বামী আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। নেহায়েতই ঢাকায় থাকেননা দেখে তার কথা খুব বেশী কেউ মনে রাখেনি। যাক সেসব অন্য প্রসঙ্গ।

আমি জানি, আপনার বোনের কষ্টটা আপনার মনে যতটা রেখা ফেলবে, আমার মনে তার থেকে কম, আমার পাশের কোন মানুষের মনে আরো কম। তাই, যা করার, আপনাদেরই করতে হবে। হয়ত সাথে পাবেন অনেক নিঃস্বার্থ স হযোদ্ধা, আবার দেখবেন যাকে ভেবেছিলেন পাবেন, সেই হয়ত আসেনি। এসব হিসেব না করে এগিয়ে যান। কালকে যদি জাফর ইকবাল কোনো স্টেটমেন্ট দিয়ে আপনাদের পাশে দাঁড়ান, ওয়েল এন্ড গুড।

আর নাহলে, যুদ্ধ চালিয়ে যান নিজেদের মত। আমার দোয়া রইল, আপনাদের এই যুদ্ধের জন্য। ন্যায়ের পক্ষে আপনার এই আন্দোলন আপনাকে করে তুলুক বিশুদ্ধতম মানুষ, আপনাদেরকে দেখেই যেন প্রেরণা পায় আগামী দিনের ন্যায়যোদ্ধারা। বেস্ট অফ লাক ইন ইয়োর ওয়ার। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।