বিপ্লব স্পন্দিত বুকে মনে হয় আমিই মুজিব "ভেসে যায় ভেলা এ'বেলা অ'বেলা
একি শব্দে ঘনিয়ে,
আগেও মরেছি এখনও মরবো
প্রেমের দিব্যি দিয়ে। । "
জীবন একদিন হটাৎ করেই ফুরিয়ে যাবে, সুমনের 'জাতিস্মরের' মানে খুজা সফল হবেনা কখনও।
সুমনকে নিয়ে আমার এই অনভিজ্ঞ হাতে একটা কিছু লেখার ইচ্ছা অনেক দিনের । শাহবাগের চলমান আন্দোলনে সুমনের সম্পৃক্ততার পর থেকে কি রকম যেনো একটা দায়িত্ব অনুভব করছি সুমন কে নিয়ে লেখার ।
আমি যখন মাইলস,সোলস,প্রমিথিউস আর ওয়ারফেজ কে নিয়ে লাফালাফি করতাম, আমার বড় ভাইটি তখন সারা দিন সুমন,নচিকেতা আর অঞ্জন দত্তকে নিয়েই পরে থাকতো ।
ওর তীব্র চাপাচাপিতেই "প্রথমত আমি তোমাকে চাই" দিয়ে আমার সুমনের গান শোনা শুরু করা । এর পর থেকে আর থামি নি । গানওয়ালা সুমনের গান আমায় যেভাবে গ্রাস করেছে, আমি থামতেও পারি নি।
১৯৪৯ সালের আজকের দিনে(১৬ই মার্চ) ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের কটক জেলায় জন্মগ্রহন করেন সুমন ।
বাবা মায়ের রাখা নাম সুমন চট্টোপাধ্যায়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে অনার্স পাশ করা সুমন বাংলাদেশের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী
সাবিনা ইয়াসমিনকে বিয়ে করার জন্য ২০০০ সালে ধর্মান্তরিত হয়ে নিজের নাম নিজেই রেখেছেন কবীর সুমন ।
আধুনিক গানের পাশাপাশি সুমন একজন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীও। সাধারনত নিজের গান নিজেই লিখেন,নিজেই সুর করেন ।
শিল্পী জীবনের প্রথম পর্যায়ে সুমন "নাগরিক" নামের কলকাতার একটি ব্যান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন ।
পরবর্তীতে সুমন নিজেই একটা ব্যান্ড খুলেন, নাম দিলেন "সুমন দ্যা ওয়ান ম্যান ব্যান্ড। " সুমনই সুমনের ব্যান্ডের একজন এবং একমাত্র সদস্য।
উনার কনসার্টে অন্য কোন যন্ত্রশিল্পীর প্রয়োজন পরে না । একই সাথে গিটার , হারমোনিকা/কিবোর্ড বাজিয়ে নিজেই নিজের গান করেন ।
ধর্মীয় বিশ্বাসে অজ্ঞেওবাদী(এগনস্টিক) সুমনের একটা রাজনৈতিক পরিচয়ও আছে অবশ্য ।
সুমন কলকাতাস্থ যাদবপুর সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত হয়ে ভারতের ১৫তম লোকসভার একজন সদস্য ছিলেন ।
এছাড়াও প্রথম জীবনে রেডিও জার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন ডয়েচ ভেলে তে,কাজ করেছেন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে। কেরানী ছিলেন ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়াতে । বন্ধু অঞ্জন দত্তের অনুরোধে অভিনয় করেছেনরঞ্জনা আমি আর আসবো না সহ কিছু ভারতীয় বাংলা সিনেমাতেও ।
সুমন মূলত ভক্তদের কাছে পৌছতে পেরেছেন তার জীবনমুখী গানের জন্যই।
কোন ইন্সট্রুমেন্টের বাড়াবাড়ি বা প্রযুক্তির কারসাজি নেই তার গানে। অসম্ভব সুন্দর গানের কথা , প্রত্যেকটা গানই শ্রোতাকে তার বিস্ময়ের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যায় । সুমন বলেছিলেন, গান লেখার জন্য কল্পনা করার প্রয়োজন নেই, তোমার আশে পাশের পরিবেশ নিয়েই গান বাধো । আত্ম শুদ্ধির স্বাদ পাবে । এই জন্যই হয়তো সুমনকে বলা হয়ে থাকে নাগরিক কবিয়াল ।
" প্রথমত আমি তোমাকে চাই
দ্বিতীয়ত আমি তোমাকে চাই
তৃতীয়ত আমি তোমাকে চাই শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই... "
- জীবনের প্রথম প্রেমপত্রে লিখেছিলাম সুমনের এই চার লাইন , তখন অবশ্য জানতাম না সুমন এই গান, সিগারেট নিয়ে লিখেছিলেন ।
সুমনের প্রথম এ্যালবাম "তোমাকে চাই " বের হয় ১৯৯২ সালে । প্রথম এ্যালবাম বের হতে সময় লেগেছে কিন্তু হিট হতে কোন সময় লাগে নি ।
এর পর থেকে প্রতি বছরই সুমনের নতুন নতুন একক এ্যালবাম বাজারে আসতে থাকে । তার মধ্যে আছে,
১৯৯৩: বসে আঁকো ডাউনলোড .
১৯৯৩: ইচ্ছে হলোডাউনলোড
১৯৯৪: গানওয়ালা ডাউনলোড
১৯৯৫: ঘুমাও বাউণ্ডুলে ডাউনলোড
১৯৯৬: চাইছি তোমার বন্ধুতা মিডিয়াফায়ার ডাউনলোড
১৯৯৭:জাতিস্মরডাউনলোড
১৯৯৮: নিষিদ্ধ ইস্তেহার
১৯৯৯: পাগলা সানাই
২০০০: যাবো অচেনায়
২০০০: নাগরিক কবিয়াল
২০০২: আদাব ডাউনলোড করুন
২০০৩: রিচিং আউট (Reaching Out, ইংরেজী)
২০০৫: দেখছি তোকে
২০০৬: তেরো (সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে গাওয়া)ডাউনলোড এইখানে
২০০৭: নন্দীগ্রাম
২০০৮: রিজওয়ানুরের ব্রিত্ত
২০০৮: প্রতিরোধ
২০১০ : সুপ্রভাত বিষণ্ণতা
২০১০: ছত্রধরের গান
২০১০: লালমোহনের লাশ
২০১২ : ৬৩ তে
এছাড়াও অনেক গুলো মিক্সড এ্যালবামে গান গেয়েছেন সুমন , যার মধ্যে কয়েকটি রবীন্দ্র সঙ্গীতের এ্যালবামও রয়েছে ।
ডাউনলোড করুন এখান থেকে
"কে বেশী পাগল কবি না কবিতা
দরকার নেই সেই হিসেব দেবার
ঘুমোও বাউন্ডুলে,ঘুমোও এবার । "-
-বাউন্ডুলে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়েই এই গান বেধেছিলেন সুমন ।
হুমায়ূন আহমেদ মারা যাবার পর গান বেধেছেন হুমায়ূনকে নিয়েও ।
শুনুন এইখানে
কবীর সুমন বাংলা গানের নতুন একটা ধারার জন্ম দিয়েছেন । ওপার বাংলার নচিকেতা, অঞ্জন দত্ত,লোপা মুদ্রা , শ্রীকান্ত আচার্য এবং এপার বাংলার শায়ান,শাহেদ দের গানের মধ্যে সুমনের প্রভাব লক্ষণীয় ।
সুমনের নিজের গানেও অবশ্য জন লেনন , বব ডিল্যান , পল সাইমনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। কিছু কিছু গানের কথা না শুনে শুধু গিটারের স্ট্রামিং শুনলে আমি এখনও বুঝতে পারি না যে এইটা সুমনের গান নাকি বব ডিল্যানের গান ।
সুমনের ইচ্ছে হলো(১৯৯৩) এ্যালবামের জনপ্রিয় গান "কতটা পথ পেরুলে তবে পথিক বলা যায়?" বব ডিল্যানের আরেক বিখ্যাত গান Blowing in the wind এরই বাংলা সংস্করন ।
সুমন এই যুগের জর্জ হ্যারিসন । বাংলাদেশের জন্য তিনি সবসময়ই একজন নিবেদিত প্রাণ , যখনই ডাক পড়েছে ছুটে এসেছেন ।
ছিয়ানব্বই এ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর নির্মাণের তহবিল সংগ্রহের জন্য সুমনকে বলা হইয়েছিলো গান গাইতে । সুমন ছুটে এসেছিলেন । হাতে গিটার,মুখে হারমোনিকা নিয়ে একের পর এক গান গাইলেন,বিনিময়ে এক পয়সাও পারিশ্রমিক নেন নি ।
আটানব্বই এ আবার এসেছিলেন তহবিল সংগ্রহের জন্য ফ্রি কনসার্ট করতে । ২০০৭ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাতে হানে বাংলাদেশে, তখনও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে সাহায্যের জন্য ছুটে আসেন সুমন ।
শাহবাগের গণ মানুষের আন্দোলন নিয়ে সুমন গেয়েছেন , গেয়েছেন শহীদ রাজিবের জন্যও ।
তিন মিনিট
শাহবাগে রাতভর
গণদাবী
শহীদ রাজীব
বাংলাদেশের জন্য সুমনের এই অবদানের প্রতিদানস্বরূপ বাঙ্গালীরা সুমনকে যোগ্য সম্মান দিতে পেরেছি কিনা,সে প্রশ্নের উত্তর জানা নেই। উত্তর খুজতেও চাই না ।
জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলাম,শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলাম ।
শেষ করবো সুমনের "বাশুরিয়া" গানের প্রিয় কয়েকটি লাইন দিয়ে ...
"এ শহরে এসছো তুমি কবে কোন রাজ্য থেকে,
তোমাদের দেশে বুঝি সব মানুষই বাঁশি শেখে?
আমাদের স্কুল কলেজে শেখে লোকে লেখাপড়া,
প্রাণে গান নাই মিছে তাই রবী ঠাকুর মূর্তি গড়া।
। "
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।