[আজকাল ব্লগে গান নিয়ে বেশ হইহল্লা হচ্ছে,দেখে মনে হলো গানমূর্খ হয়েও কিছু লিখে ফেলি। তবে খাপছাড়া অগভীর মানুষ বলেই কিনা, খাপছাড়া গান,যেগুলোকে ঠিক কোন দলেই ফেলা যাবেনা,সেগুলোই মাথায় চলে এলো,কাজেই একজায়গায় জড়ো করে ফেললাম]
বাংলা গানের মাঝে ইদানিংকার জীবনমুখী গান বাদে বিষয়বিচিত্রিতা একটু কম বলেই আমার ধারণা। রোমান্টিক,প্রেমের গান,প্রকৃতি,আধ্যাত্মবাদ,ঘুরেফিরে এই চলে এসেছে সেই রবিবুড়োর আমল থেকে,এখনো এগুলোর প্রাধান্যই বেশি। যদিও নচিকেতার পথ ধরে সুমন চট্যোপাধ্যায় আর অন্ঞ্জন কে অনুসরণ করে জীবনমুখী একটা গানের ধারা শুরু হয়েছে,কিন্তু সেটা তাদের পরে খুব বেশি প্রভাববিস্তারী হয়েছে বলে মনে হয়না,বরং এখনো "হিট" গানের তালিকায় সনাতন ধারার গানই প্রায় সব। আবার জীবনমুখী গানের বিষয়ের মাঝেও ক্ষোভ আর হাহাকারটাই বেশি,সুমন বা অন্ঞ্জনের পর কারোটা সেরকম নতুনও মনে হয়নি।
অফস্প্রিংয়ের "মাই ফ্রেন্ড'স গট আ গার্লফ্রেন্ড অ্যান্ড হি হেটস দ্যাট বিচ" এই জাতীয় ভাষা বা বিষয় নিয়ে গান লিখলে আমাদের হজম হবে বলে মনে হয়না,বা ভ্যান হেলেনের "জাম্প জাম্প",বা পিংক ফ্লয়েডের "উই ডোন্ট নিড নো এজুকেশান" ধরণের গান এখনো দুর্লভ,বা শুধুই মজা করার জন্য গান,সে-ও তেমন দেখা যায় না বাংলাতে।
তবে,বলেছি তেমন দেখা যায়না,একদমই যে নেই তা-ও না,লেখাটা লিখতে লিখতেই মনে পড়লো বেশ কিছু "অফ দ্য ট্র্যাক" গানের কথা,কি কথায় কি সুরে একদম আলাদা,আমি বলবো,মজার। কখনো জীবনমুখী,কখনো শুধুই হাস্যমুখী,কখনো চটুল,কিন্তু সব মিলিয়ে একদম "অফ দ্য ট্র্যাক",খাপছাড়া,অন্য গানগুলোর সাথে মেলানো কঠিন,বোদ্ধারা এগুলোতে নাক সিঁটকাবেন,সন্দেহ নেই।
এমন খাপছাড়া গানের কথা ভাবলে প্রথমেই মনে ভাসে একদমই ছোটবেলায় নানাবাড়ির সাদা-কালো টিভিতে দেখা গুরু আজম খানের "আলাল ও দুলাল" এর কথা। গ্রামের আইল ধরে এক ছাগলদাড়ি সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন, তার দুই সুপুত্তুর দু'দিকে ভোঁ দৌড় ধরেছে,আর ব্যাকগ্রাউন্ডে হেঁড়ে গলায় গুরু গান ধরেছেন--
"আলাল ও দুলাল,আলাল ও দুলাল,
তাদের বাবা হাজ্বী চান,
চান খাঁর পুলে প্যাডেল মেরে পৌঁছে বাড়ি।
"
গুরুর হেঁড়ে গলার পরই যার কথা মনে পড়ছে সে চাইমের খালিদ,সেসময় একটা গান বেশ মজার ছিল,সেটাও ঐ সাদাকালো টিভিতে দেখা,তখন আমাদের টিভি ছিল না,নানাবাড়ি গেলে টিভি দেখার কপাল মিলতো। তো দেখি একপাল লোকজন(তখনো ব্যান্ডের ধারণাটা নতুন) ঘটিবাটি নিয়ে হাহাকার করছে--
"ও.. ও.....আমার হাঁসের ছাও রে..
কাউয়ায় নেয় নাই, চিলে নেয় নাই,
নিছে মরার গুইলে রে
ও আমার হাঁসের ছাও রে!!"
গানটা অনেক খুঁজেছি পরে,পাইনি,কারো কাছে হবে কি?
একটু অন্যরকম গান করার ঝোঁকটা মনে হয় তখন শুধু চাইমেরই ছিল,হাঁসের ছাও ছেড়ে এরপর তারা পড়লো "জগানন্দন" কে নিয়ে। মজার সুরে হলেও,ভেতরটা করুণ,খুঁজলে নির্মম রূপটা পাওয়া যায় সহজেই,যখন খালিদ গেয়ে ওঠে--
"জয় জগানন্দন,ঘটিবাটি বন্ধন,পয়সা নাই তার করব কি?
ট্যারা কচুর পাতা,টাকি মাছের মাথা,মসল্লা নাই তাতে হইসে কি?"
এখনো এই দেশের অর্ধেক বা তারো বেশি লোক হয়তো এই জগানন্দের মতই,যাদের--"অভাবের সংসার,পোলামাইয়ার হাহাকার,
ঘরবাড়ি ছাইড়া ভাগবো নি?"
তবে,আমার বাচ্চাকালে যখন পত্রিকা মাত্র পড়তে শিখেছি,হঠাৎ করেই এক ভণ্ড পীরসাহেব বেশ "হিট" হয়ে গেলেন। ধরা খেলেন পাবলিকের হাতে,বেয়াদব জনতা পীরবাবাকে রামধোলাই দিয়ে থানায় পাঠালো, এদিকে অবসকিউরের টিপু লিখে গেয়ে ফেললো ভণ্ডবাবার গান--
"কলিকালের ভণ্ডবাবা খাজা বাবার নাম ভাঙায়া
ধর্মটারে ল্যাং মারিয়া ভাঁওতাবাজির এমডি সাজে। "
সেদিন হঠাৎ করেই পাশের বাসার ছাদে দেখি কে যেন মোবাইলে বাজাচ্ছে গানটা,আপনমনেই অনেকক্ষণ হাসতে হলো।
আহা, আরো কত রাজনৈতিক বামনৈতিক ভদ্রবেশী ভণ্ডবাবা আমাদের চারপাশে স্যুটকোট কালোচশমা পেঙ্গুইন কোটে ঘুরে বেড়াচ্ছে,কিন্তু তাদের নিয়ে গান বাঁধার সাহস এখন আমাদের কোথায়?
অবশ্য এসব রাজনৈতিক ভণ্ডবাবাদের ল্যাং মারার চেষ্টা একেবারে যে কেউ করেনি সেটা বলা যাবে না। অবসকিউরেরই প্রায় সমসাময়িক ব্যান্ড ডিফারেন্ট টাচ,তখন শ্রাবনের মেঘগুলো গেয়ে বেশ
তোলপাড়,কিন্তু অনেকের স্মৃতিতে রাজনীতি গানটাও বেশ ভাল জায়গা করে থাকার কথা,কিভাবে--
"হালজামানার রাজনীতি ভাই করতাসি যে আমরা সবাই,
পিছন পকেট সদাই গরম গলাবাজির আছে যে সাঁই,
এ মন হায়,একবার দুইবার নেতা হইতে চায়,
হুনসি নাকি নেতারা সব অ্যারকন্ডিশান খায়। "
তারপরেও আমাদের শিক্ষা হয় না,নেতার চাঁদবদন দেখে আমাদের শান্তি,যদিও আমরা জানি--
"বাইরে গরম চলতে আছে সেইখানে স্যার নাই,
মরলে মরবো যুবকরা সব,আর মরলে টোকাই। "
খাপছাড়া গানের ওস্তাদ মানি অবশ্য মাকসুদকে,ফিডব্যাক,আর ঢাকার মাকসুদ। অতিবিশুদ্ধবাদী রবীন্দ্রপ্রেমীরা যতই তাঁর নিরীক্ষা নিয়ে ছাল তোলার দাবী করুক,মাকসুদের আগুনে কথা আর ব্যতিক্রমী
গানের আবেদন তাতে কমে যায় না।
ভণ্ড সুশীলদের ধোলাই দিয়ে তখনই মাকসুদ গেয়েছিলেন--
"হেরোইনের ব্যবসা করে তুমি পুরিয়া ওড়াচ্ছো মানবতার,
আর তেজষ্ক্রিয় দুধ আমদানি করে গড়ে তুলছো কালো টাকার পাহাড়।
তবে সন্ধ্যে এলে শুদ্ধ সংগীতের আসরে তুমি হুইস্কি সেবন কর।
এযুগের পাদুকা এযুগের প্রসাধনী এযুগের বড় কথা এযুগের হয়রানী,
তুমি যুগের দোহাই দিয়ে সেমিনারে লেকচারে নাক সিঁটকিয়ে বলো
বন্ধ কর এই অশ্লীল ব্যান্ডবাণী। "
গা জ্বালানো কথা বটে। তবে এখানেই শেষ নয়--
"এরপর যদি কেউ চাপাবাজী করে,ঢাকার ছেলেরা চিৎকার করে বলে,
ধন্যবাদ,ভালো দিয়া গেলেন,ধন্যবাদ,ভালোই দিয়া গ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।