পাখি এক্সপ্রেস
বড় করে দেখার জন্য
শুরুতেই বলি, এ প্রথম ব্লগে কোন মুভির রিভিউ করছি। সে কারণে আমি বেশ রোমাঞ্চিত। মুভিটি দেখার পর বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে একটু বেশি আশাবাদী হয়ে উঠলাম। সিনেমাটোগ্রাফি, চিত্রনাট্য, সংলাপ, কাহিনী এবং সর্বোপরি অভিনয় শিল্পীদের নৈপুন্যসহ আরো যা কিছু, সবই মিউচুয়াল হয়েছে।
মুভির নাম
Mutual Sex (আরেকটি Twilight সিক্যুয়াল)
পরিচালক
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
অভিনয় করেছেন
উইলিয়াম পরিমল, কেট হোসনে আরা, জন মেনন, ডেভিড নুরুলসহ আরো অনেকে।
পরিবেশনায়
BAL Movie
কাহিনী সংক্ষেপ
এটি একটি মিউচুয়াল গল্প থেকে নেয়া। কাহিনী একেবারে চিরায়ত গ্রাম বাংলার নিত্যকার চিত্রায়ন। খুবই সরল একটি কাহিনী। বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য দাতাগোষ্ঠীর চাপের মুখে দেশের জনগণকে প্রতিবাদের পথ থেকে সরিয়ে নিতে "নারী বাড়ি গাড়ি" প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ ঘিরে সিনেমার গল্প এগিয়ে গেছে। যে গল্পে মানুষকে দু:খ কষ্ট ভুলিয়ে কিভাবে ছাগলের ৩ নাম্বার ছা বানিয়ে রাখা যায়, তার চৌকষ নির্মাণ হয়েছে।
গল্পের মূল চরিত্র উইলিয়াম পরিমল নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। সংসারে ছিলো অভাব। সুখ ছিলো না মোটেও। কিন্তু পরিমলকে সুখী হতে হবে। ঘটনাক্রমে পরিমল জানতে পারে সিনেমার আরেকটি শক্তিশালী চরিত্র জন মেননের কথা।
জন মেনন পরিমলকে নিয়ে যান কেট হোসনে আরার কাছে। এরপর শুরু হয় অসম প্রেমের মিউচুয়াল দৃশ্যপট। সিনেমায় ভিলেন থাকলেও দেখা মিলে একেবারে শেষের দিকে। জন মেননের বন্ধু ডেভিড নাহিদ অসম প্রেম জুটিকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলেও শেষমেষ সবাইকে অবাক করে ভিলেনের জয় হয়। - সংক্ষেপে এই হলো সিনেমাটির গল্প।
ভালো লাগার যা কিছু!
অসম প্রেম নিয়ে বাংলাদেশে তেমন কোন সিনেমা হয়নি। এ প্রথম এ ধরনের সিনেমায় প্রথাগত নাকি কান্নার নায়িকা দেখতে হয়নি। বাংলাদেশের নায়িকারা নায়ককে অন্য কোন মেয়ের সাথে দেখলে অশ্রুজলে নয়ন ভাসায়। কিন্তু মিউচুয়াল সেক্স সিনেমায় দেখা গেছে এসব নিয়ে নায়িকা কেট হোসনে আরা'র কোন বুকে ব্যাথা নেই। একটি দৃশ্যে দেখবেন পূর্ণিমা রাতের ঘন অন্ধকারে নায়িকা একা একা আইডিবি ভবন যাচ্ছেন মেমোরি কার্ড কিনতে।
নায়কের জন্মদিনে এ মেমোরি কার্ড তিনি উপহার দিবেন। এখানে দু'টো বিষয়। প্রথমত ডিজিটাল বাংলাদেশ থিওরিকে রূপালি পর্দায় নিয়ে আসা এবং অতিরিক্ত ডিজিটালের নামে হুটহাট গাংয়ের জোয়ারে ভেসে গিয়ে নায়িকা কিন্তু পোর্টাবল হার্ডড্রাইভ কিনেননি। তিনি কিনেছেন মেমোরি কার্ড। এখান থেকে শেখার আছে অনেক কিছু।
সিনেমার সংলাপগুলো অসাধারণ। নায়কের জিহ্বাকে অতিরিক্ত গোলাপী দেখে নায়িকা জিজ্ঞাসা করে "একি রংয়ের ছোঁয়া দিলেগো তুমি!" জবাবে নায়ক বলে, "সামনের অমাবশ্যায় আমরা লিপস্টিকের ফ্রাই খাবো!" আবার নায়িকা নায়ককে বলছে "আমার মাথা ছুঁয়ে কসম নিয়ে বলো, এ মেমোরি কার্ড পুরো ভর্তি না করে আমাকে দিবে না। " তখন কান্না করতে করতে নায়ক বলে "কথা দিলাম প্রিয়তমা, তোমাকে আমি মেমোরি কার্ডে নিবো না। কথা দিলাম, তোমার জন্য পোর্টাবল হার্ডড্রাইভ কিনবো!"। এ সময় বেশ হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
নায়িকা গলা ফাটা আর্তনাদ করতে করতে বলছে "ওরে পরিমল, নারে! মেমোরিকার্ডই ভালো... আমি পোর্টাবল কিছু চাই না। তুই পোর্টাবল দিস না... দিস না!"
বাংলা সিনেমায় প্রচুর ক্লোজআপ শট থাকে। কিন্তু এ সিনেমায় প্রয়োজন ছাড়া এ শটের ব্যবহার হয়নি। গোধুলি বেলায় নয়নাভিরাম ভেড়ি বাঁধে নায়ক নায়িকা রোমাঞ্চ করতেছেন। ওপারে তখন কটকটে লাল আকাশ।
এ দৃশ্যটি চিত্রগ্রাহক এতো দূর থেকে নিয়েছেন যে, মনে হচ্ছিলো দু'টি সুইট ডগ বসে বসে খোশগল্প করতেছে। কখনো হাঁটুগেঁড়ে, কখনো দাঁড়িয়ে, বসে...।
বাংলা সিনেমার গানের কথা নিয়ে অনেকেরই বিরক্তি আছে। আমি শিওর আপনাদের সে বিরক্তি কেটে যাবে এ সিনেমাটি দেখার পর। প্রত্যেকটি গানের কথা অসাধারণ মিউচুয়াল।
যেমন-
"বিকেল শেষের ওড়না বেলায় নেতিয়ে চাঁদের জুয়াল
দেখো... সূর্য মরে প্রেমের জ্বরে, খাঁটি মিউচুয়াল
দোস্ত... তুমি জিনিস অ্যাকচুয়াল"
যা কিছু সমালোচনার
শেষের দিকে এসে গল্পের মেরিট নষ্ট হয়ে যায়। নায়িকা যেখানে মিউচুয়াল সেক্সে বিশ্বাসী, সেখানে নায়ক গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গেলে নায়িকা হতাশ হয়ে যায়! এটাতো হলো না। নায়িকা হতাশ হয়ে তিন মাসের জন্য তাবলীগে চলে যায়। মিউচুয়াল তত্ত্ব এখানে মার খায়। পরিচালক এখানে পলিটিক্যালি ডেড হয়ে গেছেন।
অপরদিকে একেবারেই আচমকা ভিলেন গোষ্ঠীকে নিয়ে আসেন। দর্শক প্রস্তুত ছিলো না এসবের জন্য। ভিলেন এসেই আবার জয়ী হয়ে গেলো। নায়িকার হৃদয়ে শান্তি নাই, কারণ নায়ক কারাগারে। আবার নায়কের হৃদয়েও শান্তি নাই।
কারণ নায়িকা যাচ্ছে তাবলীগে, না জানি কি করে এবার পাবলিকে!
তবে সবকিছু মিলিয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার মতো একটি মিষ্টি মিউচুয়াল সিনেমা। সিনেমার সাউন্ডও একেবারে প্রাকৃতিক হয়েছে। যারা বাংলা সিনেমা দেখতে হলে যেতে চান না, তাদের জন্য নির্মল বিনোদনের এক জংগল নির্মাণ করেছেন পরিচালক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
পোস্ট শেষ, খুদাপেজ! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।