(বাস্তববাদীরা দয়া করে এই লেখাটি পড়তে আসবেন না। )
সকাল থেকেই মনটা কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছিলো সজলের। দুপুরের ফোনটা পাবার পর অস্থিরতা টা আরো বেড়ে গিয়েছে। অফিস থেকে চলে এসেছে তাড়াতাড়ি। এতদিন পর আবারও সেই ফোনটা।
শিরিন অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছে কী হয়েছে? কী বলবে সজল? ও কীভাবে শিরিনকে বলবে যে শারমীনের ফোন এসেছিল? ও নাহয় বলল, কিন্তু শিরিন কীভাবে নেবে বিষয়টা। ওদের বিয়ে হয়েছে এক বছর হলো। শারমীনের বিয়ে হয়ে যাবার পর অনেকদিন মানসিকভাবে একটু এলোমেলো অবস্থায় ছিলো সজল। এর মধ্য দিয়েই পড়ালেখা চালিয়ে গিয়েছে। বিএসসি শেষ হবার সাথে সাথেই একটা মডারেট চাকরি ও পেয়ে গিয়েছিলো।
ওখানেই পরিচয় হলো শিরিনের সাথে। তারপর বিয়ে। এই এক বছরে সংসার অনেকখানি ই গুছিয়ে নিয়েছে শিরিন। সাজানো সংসারটাতে যদি আবার ঝড়-ঝাপটা আসে?
আজকে অফিসে একটু সকাল সকাল যেতে হয়েছে। কাজের চাপটা একটু বেড়ে গেছে এখন।
তবে দুপুরে লান্চের পর বেশ খানিকটা অবসর থাকে। রিল্যাক্স মুডে বসে ব্লগ পড়ছিলো সজল। তখনি মোবাইলে একটা কল আসলো।
- হ্যালো।
-কেমন আছো? চিনতে পেরেছো?
মনের ভেতর একটা শিহরন অনুভব করলো সজল।
শারমীন.......। এতোদিন পর?
- হ্যা। তোমার নম্বরটা পাচ্ছিলাম না। তাই এতোদিন যোগাযোগ করতে পারিনি। কেমন আছো তুমি?
- ভালো।
তোমার কী খবর?
- এইতো। যেমন দেখছো।
- দেখতে তো পাচ্ছিনা। শুধু শুনতে পাচ্ছি।
হেসে ফেলল শারমীন।
- তুমি একদম আগের মতই আছো।
- ঠিক বলনি। কিছু অভ্যাস আগের মতই আছে। মানুষ হিসাবে বদলেছি অনেকটাই।
- তাই নাকি?
- বাদ দাও।
তোমার খবর বল। তোমার হাসব্যান্ড কেমন আছে?
- ভালো।
- বাচ্চা নিয়েছো? নাকি এখনো ইচ্ছা হচ্ছেনা?
- একটা ছেলে।
- তাই? বাচ্চা কত বড় হয়েছে?
- এইতো সামনের সেপ্টেম্বরে ২বছর হবে।
- বাব্বাহ।
অনেক বড় হয়ে গিয়েছে দেখি। অবশ্য তোমার বিয়ের ও তো অনেকদিন হোল, তাই না।
- হ্যা, ৬ বছর পেরিয়ে ৭ এ পড়লো।
- ২৯ শে আগস্ট ছিলো না তারিখটা?
- ৩০ শে আগস্ট।
- আমার কাছাকাছিই তো দেখছি।
- তুমি বিয়ে করেছো?
- হ্যা।
- কবে?
- এইতো কিছুদিন হোল। গত বছরের ৭ ই সেপ্টেম্বর।
- আমাকে একবার জানাতে তো পারতে।
- জানালে কি হতো?
- তোমার বিয়েতে নাহয় না-ই আসতাম।
তারপরও আমি কী জানার অধিকার টা রাখিনা।
- আসলে তোমার সাথে যোগাযোগ করিনি কারন হলো, আমি চাইনি নতুন করে কোন অশান্তি হোক। তোমার বিয়ের খবর যখন পেলাম, তখন তোমাকে অনেক কিছু বলেছিলাম। যেমন, তুমি কখনো সুখী হবেনা ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু মন থেকে ওটা চাইনি।
সবসময় চেয়েছি তুমি সুখী হও। তাছাড়া তোমার মোবাইল তোমার হাজব্যান্ড চেক করে কিনা সেটা ও তো জানিনা। সেক্ষেত্রে তোমার সমস্যা ও হতে পারতো। তাই জানাইনি।
- আমার স্বামীর অত সময় কোথায় তার বউ বাচ্চার জন্য? সারাদিন আছে নিজের ব্যবসা নিয়ে।
কোনদিন দুপুরে খেতে, কোনদিন একবারে রাত ১২টায় আসে।
- আমি তোমাকে সব সময় সুখী দেখতে চেয়েছি। তাইতো তোমার বিয়ের আর তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করিনি।
- আমি কি সত্যিই সুখী?
- তুমি কি সুখী নও? তাহলে কেন আমাকে ছেরে চলে গিয়েছিলে?
- আমি চলে যেতে চেয়েছিলাম কি? আমাকে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। তুমি তো সবই জানো।
বাদ দাও সে কথা। তোমার বউ এর কথা বল। দেখতে কেমন? আমার থেকে সুন্দর?
- আমি তুলনায় এক্সপার্ট না।
- সে আমার থেকে কেউ ভাল জানেনা। তোমার বউ এর একটা বর্ণনা তো দিতে পারো।
- আমি আর কী বর্ণনা দেব? এই ধর হাইট ৫'-২'', উজ্জ্বল শ্যামলা। তবে চুল আছে অনেক। তোমাকে আগেও বলেছি শারিরীক সৌন্দর্য্য আমার কাছে বড় কোন ব্যাপার না। সে আমাকে কতটুকু ভালবাসে, বিশ্বাস করে সেটাই হল বড় কথা। এই ব্যাপারে আমি অনেক লাকি।
আমার বউ আমাকে অনেক ভালবাসে। অনেক বিশ্বাস করে। আর আমি তুলনা করতে পারিনা আগেই বলেছি। তোমার সাথে তো নয়ই। তুমি তোমার জায়গায়, সে তার জায়গায়।
সে এখন আমার বাকিটা জীবনের সাথী। যতটুকু সে আমাকে ভালবাসে তার অর্ধেক ও আমি তাকে বাসতে পারিনা।
- ও আচ্ছা। ভাল লাগলো শুনে।
- তুমি খুশি হওনি?
- জানিনা।
- জাননা কেন? আমি তো সবসময় চেয়েছি তুমি ভাল থাক। আমি যে ভাল আছি সেটা কী তোমার মানতে কষ্ট হচ্ছে?
- বুঝতে পারছিনা কী বলা উচিত? নিয়তি আমাকে তোমার জীবন থেকে সরিয়ে নিয়েছে। তোমার আমার কোন হাত ছিলনা তাতে। তুমি ভাল আছো শুনে আমার তো ভাল লাগাই উচিত। কিন্তু কেন যেন মন থেকে মানতে পারছিনা।
তুমি অন্য কারো হবে এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে।
- শারমীন, তোমাকে একটা কথা বলি। তোমার বিয়ের ৭ বছর হয়ে গিয়েছে। এটাই এখন তোমার জীবন। এই জীবনে মানিয়ে নেবার চেষ্টা কর।
খামাখা কষ্ট পেয়ে লাভ কি?
- সজল, বলাটা অনেক সহজ। তুমি কী ভুলতে পেরেছ আমাকে?
- আমি কোন কথাই ভুলিনা। তুমি আমার প্রথম প্রেম। কখনই ভুলবনা তোমাকে।
- তাহলে বল কেন? আমি তোমার স্মৃতি নিয়েই সামনের দিনগুলোতে বাচতে চাই।
আমরা কী বন্ধু হয়েও থাকতে পারিনা?
- শারমীন, এই রকমের বন্ধুত্বে আমি বিশ্বাস করিনা। আমাদের যে সম্পর্ক ছিল সেটার উপর আর কোন রিলেশন হতে পারেন। তাই বন্ধুত্ব বলে আমি সেই সম্পর্কটাকে ছোট করতে পারিনা।
- ও আচ্ছা। তুমি ভুল বলেছিলে যে তুমি চেঞ্জ হয়েছো।
কোন সিদ্ধান্তে অটল তো আগের মতই থাকতে পারো।
- চেঞ্জ বলতে এখন বিয়ে করেছি। আমার বউ আছে। আসলে এটুকুই চেঞ্জ।
- তোমার বউ আমার কথা জানে?
- বলেছি তাকে।
তার কাছে কিছু লুকাতে চাইনা। সে আমাকে যে পরিমান ভালবাসে, বিশ্বাস করে তাতে করে তার কাছে কিছু লুকানো উচিত না।
- কী বলে সে?
- তার কথা সাধারন। বলেছে সে তোমার অতীত, তোমার সম্পর্কের প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ আছে। কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা বর্তমান ও ভবিষ্যতের।
এটার প্রতি তোমার শ্রদ্ধাবোধের সাথে সাথে দায়িত্বও থাকতে হবে। কখনো এমন কিছু কোরোনা যাতে আমাদের এই সম্পর্কটার অসম্মান হয়।
- তোমার বউ তো দেখি অনেক ভাল। তুমি আসলেই অনেক লাকি। যাহোক ভাল থেকো।
আর বউয়ের দিকে খেয়াল রেখ। তোমার অনেক সময় নষ্ট করলাম। এখন রাখি। তুমি বোধহয় এখন অফিসে।
- হ্যা, আমি অফিসে।
সময় আর কি নষ্ট করলে? তবে যেটা করলে সেটা হলো পুরানো চাপা পড়া ব্যথাটাকে জাগিয়ে দিলে।
- তোমার যে ব্যাথাটা আজ জেগেছে আমাকে সেটা কুরে কুরে খাচ্ছে গত ৭ বছর ধরে। যাই হোক, ভালো থেক। আল্লাহ হাফিজ।
- তুমি ভাল থেকে শারমীন।
আল্লাহ হাফিজ
(২ জনের একঘেয়ে কথোপকথনের এখানেই শেষ। একঘেয়ে বললাম এজন্য যে বাস্তববাদী/অতি বাস্তববাদী দের কাছে একঘেয়ে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমার কাছে অবশ্য একঘেয়ে মনে হয়না। ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।