চিন্তা-চেতনা মাত্র একদিন আগে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষের চেয়ারে বসা আম্বিয়া খাতুন আর ওই পদে নেই। ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এ কথা জানান। অধ্যক্ষ নিয়ে জটিলতায় "শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের চাপে তিনি গতকাল অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিতে বাধ্য হয়েছিলেন" বলে উল্লেখ করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে এ বৈঠক হয়। সঙ্গে ছিলেন চার শিক্ষক।
জানা যায় বৈঠকে অধ্যক্ষ হিসেবে তিনটি নাম প্রস্তাব করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারা হলেন- মঞ্জু আরা বেগম, রোখসানা শামীম ও রায়হানা কামাল। অধ্যক্ষের চেয়ারে কে বসবেন এ নিয়ে বৈঠক চলছে। সর্বেশেষ তথ্য মতে, মঞ্জু আরা বেগম নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে সরকারের মনোনয়ন পেয়েছেন।
এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়ের বসুন্ধরা ক্যাম্পাসের শিক্ষক পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর থেকে স্কুলে জটিলতা চলছিলো।
তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্যের সিদ্ধান্তে আম্বিয়া বুধবার অধ্যক্ষের চেয়ারে বসলেও তার এ নিয়োগের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো শুরু থেকেই।
অন্যদিকে অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমও বলেন, তিনি পদত্যাগ না করায় ওই পদে কারো বসার বৈধতা নেই।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আইনতভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ এখনো হোসনে আরা বেগম। বিলুপ্ত পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্যের ওই সিদ্ধান্তের বৈধতা নেই । তবে তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তিনি গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষক পরিমলকে রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন।
যদিও হোসনে আরা এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। গত ৬ জুলাই পরিমলকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তিনি পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। পরিমলের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, তাতে হোসনে আরাও আসামি।
এমনই এক পরিস্থিতিতে ১১ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের পাঁচজন সভা করে হোসনে আরাকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। এর নেতৃত্বে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহকারী একান্ত সচিব জাকিরুল ইসলাম ছিলেন বলে অভিযোগ এসেছে।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার আম্বিয়ার বিরুদ্ধে কিছু পোস্টার দেখা গেছে, যাতে তাকে 'মৌলবাদী' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তবে এটা অপপ্রচার বলে দাবি করেন আম্বিয়া।
বৃহস্পতিবার সকালে বেইলি রোডে ভিকারুননিসার মূল ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ক্লাস না করে দল বেঁধে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে। কোনো ক্লাস-পরীক্ষা চলছে না।
সকাল ১০টার দিকে মিলনায়তনে প্রায় হাজার পাঁচেক শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে হোসনে আরা বেগমের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।
হোসনে আরার বিরুদ্ধে স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ডও ছিলো তাদের হাতে। তারা বলছে, হোসনে আরা যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেপ্তার শিক্ষক পরিমলকে রক্ষার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তাই তাকে মেনে নেবেন না তারা।
সকালে প্রতিষ্ঠানের ফটকের সামনে আরেক দল শিক্ষার্থী অবস্থান নেয়। তারা হোসনে আরার পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করে বলে, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।
তবে এ দলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো কম। দুপুরের পর তাদের আর দেখা যায়নি।
বিদ্যালয়ের ফটকের সামনে অনেক অভিভাবক ছিলেন, তাদের কয়েকজন চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি।
অপরদিকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের সাম্প্রতিক সঙ্কটের পেছনে কোনো মহলের ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, "শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শোক কর্মসূচি চলাকালে মেয়েদের সামনে দুটো কেক হাজির হয়ে গেলো, এ থেকেই বোঝা যায় কেউ কেউ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছিলো।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি এসব বিষয়ও তদন্ত করবে। "
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।