আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোহাম্মদপুর বস্তীর রেশমা অথবা আম্বিয়া খাতুনের গল্প

থালা ভর্তি গরম ভাত একমাত্র ন্যায়, আর সবই অন্যায়।
রাত ১১টা হয়তো তারো কিছু বেশী মোহাম্মদপুর বস্তিবাসীদের জন্য খুব বেশী রাত না হলেও একা একটি মেয়ের জন্য অনেক রাততো বটেই। তবুও রেশমা যখন এই রুটের শেষ সিটিং বাসটা থেকে নেমে গলি দিয়ে হেটে তাদের বাসার দিকে যায় মহল্লার লোকেরা অবাক হয় না। রেশমারা রাতে একা একা চলাফেরা করবে এটাই যেন স্বাভাবিক। মহল্লার দুয়েকটা উঠতি ছেলে প্রথম দিকে রেশমাকে রাতে একা বাড়ী ফিরতে দেখলে যারা শিষ-টিস দিতো তারাও এখন আর এতে উৎসাহ দেখায় না।

মোড়ে আবুল মিয়ার চায়ের দোকানে বখাটেদের আড্ডা, ইয়াং স্টার মর্ডন সেলুনে উচ্চ আওয়াজে হিন্দি গান বাজানো কিংবা অবসরপ্রাপ্ত নাযেব সুবেদার তোরাব আলীর সাথে তার স্ত্রী জাহানারর নিত্যদিনের ঝগড়ার মতো রেশমার একা একা বাড়ী ফেরাটাও মহল্লার লোকেরা অলংঘনীয় বলেই মেনে নিয়েছে। -এতো দেরী হলো কেনরে রেশমা? বাড়ীতে ঢুকতে না ঢুকতেই আম্বিয়া খাতুনের উদ্বিগ্ন স্বর শুনতে পায় রেশমা। - ঢং কইরোনাতো মা। প্রতিদিন যে সময় আসি ঐ সময়েই আইছি। খালি খালি প্রশ্ন কইরো না।

গরম পানি দিছো? - হ, চুলার উপর দিছি। গোসল কইরা নেয় তাড়াতাড়ি। তর সাথে খাইবো বইল্যা রতনইন্না বইয়া আছে। এত কইরা কইলাম হেয় খায়না। কয় বুবুর লগে খাইবো।

- হে এতরাতে জাইগ্যা আছে কিল্লাই? ঢং করে, না? বলতে বলতে রেশমা বাথরুমে ঢুকে যায়। পানির পর পানি ঢালে শরীরে। আম্বিয়া খাতুন ডাক দেয় তবুও রেশমার পানি ঢালা থামে না। পানি দিয়েই সবকিছু মুছে ফেলতে চায় রেশমা। - কি আইলো আর কতক্ষণ লাগাবি? খাইতে আয়।

আবার তাগাদা দেয় আম্বিয়া খাতুন। - আইতাছি তো, এত চিল্লাও কিল্লাই? - বুবু কাল আমারে ১০০ টাকা দিবা। বুবুর সাথে খেতে খেতে আব্দার করে রতন। - ক্যান, টাকা দিয়া কি করবি? - আমাগো স্কুলের সাথে নিমতলী স্কুলের ক্রিকেট খেলা হইবো শুক্রবার, আমরা চাঁদা দিয়া ক্রিকেট ব্যাট কিনবো। - ঠিক আছে দিবো।

- অহনই দেও। - কইছি না দিবো, অহন ভাত খা। রান্নাঘরে আম্বিয়া খাতুনকে উসখুস করতে দেখে রেশমা জিজ্ঞেস করে মা কিছু কইবা? - হেরে রেশমা তোদের গার্মেন্টেসে বেতন কবে দেবে? - কিল্লাই? সবারটা যহন দেয় তহন দিব, মাসের পইল্যা সাপ্তা। - আমারে দুইশ টাহা দিতে পারবি? - টাকা দিয়া কি করবা? - বাবুইল্লারে একটু দেখতে যামু, কতদিন দেহিনা পোলাডারে। বলতে বলতে আম্বিয়া খাতুনের গলা ধরে আসে।

- ঢং কইরো নাতো মা। আদর উছলাইয়া পড়ে, না? হে তো জেলে সুখেই আছে। ফ্রি খাওয়া দাওয়া, থাকার জন্য ঘর ভাড়া নাই। যত জ্বালাতো আমার। তার মা ভাই-বোন কিভাবে চলে কোন চিন্তা আছে তার।

নেশা করা আর জেলে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করছে তোমার পোলায়? রেশমার কথায় আম্বিয়া খাতুন শাড়ীর আচল টেনে নেয় মুখে। প্রৌড়ার অশ্রু বেগ মানতে চায় না। - কাঁনবা না। ব্যাগে টাকা আছে নিয়া যাও। আম্বিয়া খাতুন রেশমার ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে টাকার জন্য।

টাকা আছে বেশ কিছু সাথে আরো অনেক কিছু। একটি স্যাভলন, একটি ব্লেড, চারটি প্যারসিটামল ট্যাবলেট তিনটি প্যানথার কন্ডম। আম্বিয়া খাতুন আরো অনেকবারের মতো ওগুলো না দেখার ভান করে নিঃশব্দে দুইশ টাকা তুলে নেয় ব্যাগ থেকে। খাবার ঘর থেকে রতনের কান্না আর রেশমার ধমক শুনতে পায় আম্বিয়া খাতুন। আম্বিয়া খাতুন কিছু বলে না, নিঃশব্দে দাড়িঁয়ে থাকা আম্বিয়া খাতুনের হঠাৎ করে তার মৃত স্বামী গফুর মোল্লার প্রতি খুব ঈর্ষা হয় হতে থাকে।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.